শিশুদের মন নরম কাদামাটির মতো, আর কাদামাটিকে বিভিন্ন রূপে গড়ে নেয়া খুব সহজ কাজ। মূলত এক থেকে সাত বছর বয়স পর্যন্ত একটি শিশুর ব্যক্তিত্ব গঠিত হয়ে থাকে। তাই এই সময় সে যে পরিবেশে থাকে, সেই ভাবেই বেড়ে উঠে। পরিবেশ-পরিস্থিতি, পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সবার সাথে বসবাস করার মাধ্যমে শিশু আত্মবিশ্বাসী হয়ে গড়ে উঠে। এছাড়া বিভিন্ন প্রতিযোগিতা মূলক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা, যেমনঃ বিতর্ক প্রতিযোগিতা, রচনা প্রতিযোগিতা, Science Project ইত্যাদি শিশুর আত্মবিশ্বাস তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।
শিশুদের মধ্যে কীভাবে আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠতে পারে? কিছু সমাধানমূলক বিষয় দেখে নেয়া যাক-
১। যে যেরকম তাকে সেই ভাবেই গ্রহণ করা
পৃথিবীর প্রত্যেকটা মানুষই আলাদা। তাদের বেড়ে উঠা জীবন-যাপন সবই ব্যতিক্রম। একটি শিশুর আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠে মূলত পরিবার থেকে, পরিবারই শিশুর প্রাথমিক বিদ্যালয়। একটি শিশু সে যে রকমই হোক না কেন, তাকে তার মতো করে ভালোবেসে গ্রহণ করে নেয়া পরিবারের দায়িত্ব কর্তব্য।
২। মানুষের সামনে কথা বলতে দিন
অনেক শিশু আছে যারা আত্মবিশ্বাসের অভাবে মানুষের সামনে কথা বলা তো দূরে থাক, সামনেই আসতে চায় না। সেক্ষেত্রে বাচ্চাকে মানুষজনের সাথে সহজভাবে মিশতে, কথা বলতে উৎসাহ দিন। একটি বাচ্চা যখন আপনার সাথে কথা বলবে, তখন তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। তার দিকে তাকিয়ে হাসা এবং তার কথা শুনে মন্তব্য করা, তাকে আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলবে। আর এতে বাচ্চার আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাবে।
৩। ভালো কাজে উৎসাহ দিন
আপনার বাচ্চা যখনি কোন ভালো কাজ করবে, যেমন ধরুন সে স্কুলের Science Project এ ভালো করলো। তখনি তাকে উৎসাহ দিন এবং কাজের ধরণ অনুযায়ী পুরস্কার দিন। এতে বাচ্চার আত্মবিশ্বাস বেড়ে দ্বিগুণ হবে। বাচ্চারা অনুকরণ প্রিয়। আপনার বাচ্চা আপনাকে দেখেই কিন্তু সবকিছু শিখবে। সুতরাং আপনার ইতিবাচক আচরণ ও কাজের ধরণও যেন ঠিক থাকে।
৪। অতিরিক্ত চাপ দিবেন না
যেকোন বিষয়েই বাচ্চাকে অতিরিক্ত চাপ দিলে তার ফলাফল ভালো হয় না। পড়াশুনা, খেলাধুলা, খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদি যেকোনো ব্যাপারেই তাকে চাপে না রেখে, নিজে নিজে বুঝে শুনে কাজ করার এবং পথ চলার শিক্ষা দিন। সে যদি বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহী হয়, তবে তাকে বিভিন্ন Science Project এ অংশগ্রহণ করতে দিন।
৫। সমালোচনা না করে বুঝিয়ে বলুন
মানুষ মাত্রই ভুল করে। বাচ্চা কোন কাজে ভুল করলে, তাকে সমালোচনা না করে বুঝিয়ে বলুন। সমালোচনা করলে বাচ্চা নার্ভাস বোধ করবে। আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি দেখা দিবে, তারচে’ বরং একই কাজ বার বার করতে দিন। ভুল থেকেই শুদ্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়, দেখবেন এক সময় ঠিকই সঠিক কাজ করতে পারবে।
৬। শাস্তি দিবেন না
বাচ্চাকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে শাস্তি দিবেন না। শাস্তি দিলে তার প্রতিক্রিয়া সারা জীবন থেকে যায়। বরং বাচ্চা ভুল করলে তাকে ভুল শোধরানোর সময় দিন, বুঝিয়ে বলুন। এমনকি বকা না দিয়ে বলুন যে, ‘তার এই কাজে আপনি কতটা কষ্ট পাচ্ছেন।’
৭। অতিরিক্ত নির্ভরশীল বানাবেন না
বাচ্চা যাতে আপনার উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল না হয়ে পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখুন। অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা মানুষকে পঙ্গু করে তোলে, আত্মবিশ্বাস ধ্বংস করে দেয়। তাকে স্বাবলম্বী হতে দিন, নিজের কাজ নিজে করতে দিন।
৮। ভালো বন্ধুত্ব গড়ে তোলা
কথায় আছে ,“সৎ সঙ্গে স্বর্গে বাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।” খেয়াল রাখুন আপনার বাচ্চা কাদের সাথে মিশছে। সন্তানের বন্ধুদের সাথে মিশুন, কথা বলুন, তাকে বন্ধুত্ব গড়তে সাহায্য করুন। ভালো বন্ধুদের সংস্পর্শে তার আত্মবিশ্বাস আরও বহু গুণে বেড়ে যাবে।
৯। সামাজিকতা শেখান
সন্তানকে সামাজিকতা শেখান। মানুষের সাথে মিশতে দিন, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিয়ে যান। আত্মীয়স্বজন, অসহায় মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করতে শেখান। বিভিন্ন মানুষের সংস্পর্শে সে সামাজিক হতে শিখবে এবং তার আত্মবিশ্বাসেরও ঘাটতি হবে না।
১০। ভাল-মন্দের পার্থক্য বুঝতে শেখান
সন্তানকে ভাল মন্দের পার্থক্য বুঝতে শেখান। সে যেন জীবনে চলার পথে সঠিক পথ চিনতে পারে এবং আত্মবিশ্বাসের সাথে মাথা উঁচু করে চলতে পারে সেই শিক্ষা তাকে দিন।
১১। সুপ্ত প্রতিভার বিকাশে সহায়তা করুন
বাচ্চাকে একাডেমিক পড়াশুনার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হতে দিন। নাচ, গান, বিতর্ক, ছবি আঁকা ইত্যাদি শিখতে দিন। স্কুলের বিভিন্ন অনুষ্ঠান যেমন, বাৎসরিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ক্লাব ফেয়ার, Science Project ইত্যাদির মধ্যে অংশ গ্রহণ করতে দিন। এসবের মাঝে থাকলে বাচ্চার আত্মবিশ্বাস অনেক বেশি বেড়ে যাবে।
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
1,576 total views, 1 views today