আমরা মাতৃভাষা শিখে ফেলি মাত্র ৩ বছরে। এরপর দ্বিতীয় কোন ভাষা শিখতে লেগে যায় অন্তত ১৫-২০ বছর। আর তৃতীয় ভাষা শিখতে গিয়ে শুধু প্রাথমিক ধাপ শেখার জন্যই করতে হয় অনেক সংগ্রাম। কেন হয় এমন? বিষয়টা খুবই স্বাভাবিক। ছোট বয়সে আমাদের মস্তিষ্ক থাকে একদম কাদামাটির মতো। সেই কাদামাটিকে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে গঠন করে নেয়া যায়। এজন্যই ছোট বয়সে আমরা যে কোন কিছু দ্রুত ও সহজে শিখতে পারি। ভাষার বিষয়টিও এমন।আমরা ছোট থেকে কত সহজে বাংলা শিখে ফেলি। কীভাবে? কারণ চারপাশটা বাংলা দ্বারা আবৃত থাকে। এই ছোট বয়সেই যদি বাংলার পাশাপাশি ইংরেজির দিকেও একটু নজর দেয়া হয় তাহলে বাচ্চাদের ইংরেজি শিক্ষা হবে আরো সহজ, সাবলীল ও দ্রুত। আর আজকের বিশ্বে ইংরেজির গুরুত্ব তো আসলে নতুন করে বলার কিছু নেই।
আজকে আমরা শিশুকে ছোট থেকেই ইংরেজির সাথে সম্পৃক্ত করার কিছু দারুণ ও মজার টিপস নিয়ে জানবো। এই টিপসগুলো কাজে লাগালে বাচ্চাদের ইংরেজি শিক্ষা সহজ হবে।
ডায়েরি লিখতে শেখান
ইংরেজি শেখার জন্য ডায়েরি লেখা হতে পারে দারুণ একটি উপায়। তার প্রতিদিনের ছোট ছোট ঘটনাগুলো ডায়েরিতে লিখে রাখতে বলুন। অনেকে বাংলাতে ডায়েরি লেখে। আবার ইংরেজিতে লেখা! বিরক্তিকর হয়ে যায়? শুনুন, ডায়েরি লিখতে যাদের ভালো লাগে তারা কখনো বিরক্ত হয় না। আর বাংলা ইংরেজি দুটোর জন্য আলাদা ডায়েরি রাখারও দরকার নাই। যদি সে বাংলায় লিখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে তাহলে একই ডায়েরিতে বাংলার নিচে ছোট করে ইংরেজিতেও লিখতে বলতে পারেন।
ভ্রমণ কাহিনী লেখা
আমরা টুকটাক ঘুরতে তো যাই! পার্কে, শপিংমল কিংবা বাইরে খেতে। কিংবা এতসব না হলেও নানা বাড়ি, দাদাবাড়ি তো যাওয়া পড়ে। এই ছোট ছোট ভ্রমণগুলো নিয়ে সন্তানকে ইংরেজিতে পটাপট লিখে ফেলতে বলুন না। আর ভুল? হতে দিন। আবার আপনিই ঠিক করে দিন। তার লেখা পড়ার সময় খুনসুটি করে বলুন, আমার এই কাহিনীটা তুমি লেখোনি কেন? মজা করুন, আনন্দ করুন। তার লেখা পড়তে পড়তে আপনার কথাও বলুন।
চিঠি লেখা
বেশি পুরোনো যুগে চলে যাচ্ছি? কিন্তু জানেনতো, আপনার কাছে পুরোনো হলেও চিঠি লেখাটা আপনার সন্তানের কাছে নতুন। আপনি আপনার সন্তানকে সপ্তাহে একটা করে চিঠি লিখুন। ইংরেজিতে। তাকে বলুন সেই চিঠির উত্তর দিতে। কিছুটা দূরে কোন আত্মীয় স্বজন থাকলে বা তার প্রিয় কেউ থাকলে তাকে চিঠি লিখে পাঠাতে বলুন। চিঠি লেখায় বাচ্চারা বেশ আনন্দ পায়।
সন্তানের সাথে ইংরেজি গল্প পড়ুন
ইংরেজি শেখানোর দারুণ একটা উপায় হতে পারে সন্তানের সাথে ইংরেজি গল্প পড়া। শুধু পড়া না। ইংরেজি গল্পটির প্রতিটি লাইনকে বাংলা অনুবাদ করে তাকে ইংরেজি লাইনটির সাথে বাংলা লাইনটি মিলিয়েও দিন। এভাবে নিয়মিত অনুশীলন করতে করতে ইংরেজির বেশ ভালো একটা গাঁথুনি সন্তানের মাঝে গড়ে উঠবে। ইংরেজি গল্পের বই কিনতে পারেন কিংবা তার স্কুলের ইংরেজি বইয়ের গল্পগুলোও পড়তে পারেন। সবচেয়ে ভালো হয় কমিক বই দিয়ে শেখালে। কমিক বই বাচ্চারা এমনিতে পছন্দ করে। তার উপরে কমিক বইতে ডায়লগসহ থাকায় বাচ্চারা তার সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারে বেশি। মাঝে মাঝে তাকে ইংরেজিতে প্রশ্ন করতেও পারেন। যেমন “What is the girl’s name in this story? এমন ছোট ছোট প্রশ্ন করতে পারেন গল্পের ফাঁকে ফাঁকে।
ইংরেজি গান শোনা ও গাওয়া
শিশুরা ইংরেজি শিখবে কিন্তু বিরক্ত হবে না। শিখবে আনন্দ ও মজা নিয়ে। এর জন্য সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হতে পারে গান ও ছড়া। ইংরেজি ভাষার গান শোনা ও গাওয়া ইংরেজি উচ্চারণ শেখার জন্য খুবই দারুণ একটি কৌশল। কিছুটা সহজ লিরিকের ইংরেজি গান বা ছড়া শিখে ও সন্তানকে শিখিয়ে একসাথে গাইতে পারেন। গান শেখানোর ক্ষেত্রে গানের ইংরেজি লিরিকের সাথে অবশ্যই বাংলাটা ভালোভাবে বুঝিয়ে দিবেন। গান পছন্দের ক্ষেত্রে চেষ্টা করবেন কোরাস গান পছন্দ করতে কিংবা ছড়া গান পছন্দ করতে। ছড়া গান বা কোরাস গানে অন্তমিল থাকায় শিশুরা বেশ মজা নিয়ে এই গানগুলো গায়।
ইংরেজি সিনেমা দেখা
বাচ্চারা কার্টুন ও অ্যানিমেশন সিনেমা অনেক পছন্দ করে। তাদের সাথে একসাথে বসে ইংরেজি কার্টুন ও অ্যানিমেশন সিনেমা দেখতে পারেন। এক্ষেত্রে সিনেমা যেন বাচ্চাদের উপযোগী ও একই সাথে মজার ও উপভোগ্য হয় তা খেয়াল করুন। সিনেমা দেখার আগে বা পরে স্টোরিলাইন নিয়ে তাদের সাথে আলোচনা করতে পারেন ইংরেজিতেই। বাচ্চারা মোটামুটি ইংরেজিতে কিছুটা দক্ষ থাকলে তাকেই বলতে পারেন স্টোরিলাইন লিখতে। ভুল হবে। হোক। আপনি তার স্টোরিলাইনের গ্রামার ও অন্যান্য ভুলগুলো শুধরে দিতে পারেন। এভাবে নিয়মিত অনুশীলনের ফলে বাচ্চাদের ইংরেজি শিক্ষা সমৃদ্ধ হবে ও সে আরো দক্ষ হয়ে উঠবে। শিশুদের উপযোগী বেশ কিছু অ্যানিমেশন সিনেমা সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন।
গ্রামারের দিকে মনোযোগ দিন
গ্রামার শেখানো কিছুটা কঠিন। তার উপর যদি “থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার হলে ভার্বের শেষে s বা es যোগ হয়” এই লাইনে যান তাহলে বাচ্চাদের জন্য এটা এক প্রকার অত্যাচারই হবে। গ্রামার শেখানোকে চলমান প্রক্রিয়া হিসেবে নিতে পারেন। প্রতিদিনের ছোট ছোট অনুশীলনের গ্রামারগুলো প্রতিদিন ঠিক করে দিন। এভাবে প্রতিদিন করতে করতে গ্রামার আপনা-আপনিই তার কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে।
শিশুদেরকে ইংরেজি বানানে দক্ষ করে তুললে পড়ুন-মজায় মজায় ইংরেজি বানান।
শুধুমাত্র বই, হোমওয়ার্ক, মুখস্ত করা, লেখা ইত্যাদি প্রক্রিয়ায় না গিয়ে শিশুদের পড়ালেখাকে যথাসম্ভব মজার ও উপভোগ্য করে তুলতে পারবেন তারা তত বেশি আনন্দ নিয়ে শিখবে। প্রতিটি বিষয়ের জন্য এমন মজার ও আনন্দের উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন। আপনার সন্তানের ভালো লাগার জায়গা খুঁজে বের করে সেভাবেই তাকে শিখতে সাহায্য করুন। আমরাতো আমাদের সাধ্যমত আপনাদেরকে দারুণ দারুণ প্যারেন্টিং টিপস দিয়ে সাহায্য করবোই। সাথে সাথে আপনারা নিজেরাও নিজেদেরকে সমৃদ্ধ করার জন্য পড়ালেখা করতে পারেন।
ওহ! একটা কথা বলতে ভুলে গেছি। বাচ্চাদের ইংরেজি শিক্ষা’র জন্য উপরের কোন কাজকে দয়া করে হোমওয়ার্কের মতো করে বসবেন না। স্রেফ আনন্দ হিসেবে, বিনোদন হিসেবে বা পারিবারিক সময় বা ফ্যামিলি এক্টিভিটি হিসেবে নিন। একদম ওটা করতেই হবে নীতি থেকে বের হয়ে আসুন। সন্তান যেটাতে মজা পায়, যখন করতে তার মন সায় দেয় তখনই করুন।
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
3,645 total views, 2 views today