আজ থেকে হাজার বছর আগেও ০ সংখ্যাটির কোন প্রচলন ছিলো না! এইটা শুনে তোমরা অবাক হচ্ছো তো? অবাক হলেও এটাই সত্যি, মানব ইতিহাসে ১-৯ পর্যন্ত সংখ্যা থাকলেও, ছিলো না ০। তাহলে কীভাবে এলো ০? ০ না থাকলে তখনকার মানুষেরা কীভাবে গণিতের হিসেব করতেন? কারাই বা প্রথম ০ কে সংখ্যার মর্যাদা দিলেন? শূন্য নিয়ে এমন অনেক না জানা ইতিহাসই আমরা জানবো আজ।
প্রায় ৪০০০-৫০০০ বছর আগে সুমেরীয় সভ্যতায় যখন প্রথম লেখার পদ্ধতি আবিষ্কার হয়, একই সাথে আবিষ্কার হয় গণনা প্রথারও। তখন তারা গণনা বা বিভিন্ন সংখ্যাকে লিখে রাখতেন। যখন কোথাও শূন্যের প্রয়োজন পড়তো তখন সেখানে তারা খালি জায়গা রাখতেন।
পরবর্তীতে তাদের এই গণনা পদ্ধতি অনুসরণ করেছিলেন ব্যাবিলনীয় সভ্যতার মানুষেরা। তারাও তখন শূন্যকে সংখ্যার মর্যাদা দেন নি। তবে তারা শূন্যকে (‘’) এমন কোণাকৃতির সংকেত দিয়ে প্রকাশ করতেন। যেমন, ২০১৯ কে ওনারা লিখতেন ২’১৯। আমরা ২০১৯ কে চারটা সংখ্যা দ্বারা প্রকাশ করলেও তারা প্রকাশ করতেন তিনটা সংখ্যা দ্বারা। শূন্যের স্থানে থাকা চিহ্নকে তারা সংখ্যা ধরতেন না।
কোন কিছু না থাকাকেইতো আমরা শূন্য বলি! যেমন ধরো, তোমার ১ টা বিজ্ঞানবাক্স আছে এটাকে তুমি ১ দিয়ে প্রকাশ করছো। কিন্তু তোমার কোন বিজ্ঞানবাক্স নেই, এটাকে কী দিয়ে প্রকাশ করবে? তুমি কিন্তু বলবে না, তোমার ০ টি বিজ্ঞানবাক্স আছে। বরং তুমি বলবে তোমার কোন বিজ্ঞানবাক্স নেই! যা নেই তাকে আবার সংকেত দিয়ে প্রকাশ করার কি আছে!
কিন্তু শূন্যের গুরুত্বতো আমরা এখন জানি! তাহলে ইতিহাসের এত বাঘা বাঘা পন্ডিতরা এত গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যাকে কেনো গুরুত্ব দেন নি? গুরুত্ব দেন নি ঠিক বলা যাবে না! তবে তারা শূন্যকে মানতে চাইতেন না। ইজিপ্ট বা মিশরের লোকেরা যখন জ্ঞান বিজ্ঞানে অনেক এগিয়ে যাচ্ছিলো, যখন তারা জ্যোতির্বিজ্ঞান, জ্যামিতি আর বিভিন্ন ক্যালেন্ডার আবিষ্কার করছিলেন তখন থেকেই তারা শূন্যের অস্তিত্ব টের পেতে শুরু করেন। বিভিন্ন ভাবে তাদের কাজে শূন্য এসে বলতে লাগলেন “আমাকে ব্যবহার করতে হবে, আমি আছি”। কিন্তু মিশরীয়রা তখনও শূন্যকে কাটিয়ে যেতে লাগলেন। তোমরা হয়তো ভাবছো, শূন্যের যখন এতই প্রয়োজন তখন শূন্যকে ব্যবহার করলেই হয়, পাশ কাটানোর কি আছে! কিন্তু মিশরীয়রা ভাবতেন, শূন্যের মাধ্যমে আসলে ঈশ্বরকে অস্বীকার করা হয়। শূন্য মানে ‘ঈশ্বর নেই’ এই যুক্তিকে সমর্থন করা হয়। তারা শূন্যকে শয়তানের সহচর, ঈশ্বরের পরিপন্থী ভেবে শূন্যকে এড়িয়ে যেতেন।
মজার বিষয় হচ্ছে গ্রীক পন্ডিত পিথাগোরাসও শূন্যের অস্তিত্ব টের পান। কিন্তু তিনি ধারণা করতেন শূন্য ও অমূলদ সংখ্যা খুবই বিশৃঙ্খল, এরা নিয়ম মানে না। পিথাগোরাস বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পছন্দ করতেন। কিন্তু যখন বাদ্যযন্ত্রের তার গুলোকে তিনি শূন্যের মানে কিংবা অমূলদ সংখ্যার মানে বাজাতে যেতেন তখন বাদ্যযন্ত্রগুলো খুবই বিচ্ছিরি সুরের জন্ম দিতো। সেজন্য তিনি শূন্য ও অমূলদ সংখ্যা পছন্দ করতেন না।
শূন্যকে যখন কেউই পাত্তা দিচ্ছিলো না। সবাই শূন্যকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিচ্ছিলো, এমন সময়ে শূন্যকে নিয়ে ভাবতে লাগলেন ভারতীয় গণিতবিদরা। তারা শূন্যকে সংখ্যার মর্যাদাও দেয়ার চেষ্টা করলেন। ভারতীয়দের শূন্য নিয়ে ভাবনা ছিলো মিশরীয় ও গ্রীকদের ঠিক উল্টো। ভারতীয়রাও ভাবতেন শূন্য মানে অসীম। আর তারা অসীম দ্বারা ঈশ্বরকে বুঝতেন। ভারতীয়রা শূন্যকে মা ব্রহ্মার প্রতিক ভাবতেন। ধারণা করা হয়, ৬২৮ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় গণিতবিদ ব্রক্ষ্মগুপ্ত সর্বপ্রথম শূন্য দিয়ে যোগ, বিয়োগ ও গুণ করেন। কোন সংখ্যা থেকে শূন্য বিয়োগ করলে সেই সংখ্যাই থাকে, সংখ্যার সাথে শূন্য যোগ করলেও সেই সংখ্যাই থাকে ও কোন সংখ্যার সাথে শূন্য গুন করলে তা শূন্য হয়ে যায়, এই হিসেবটা প্রথম তিনিই করে দেখান। কিন্তু তিনি কোন সংখ্যাকে শূন্য দ্বারা ভাগ করতে গিয়ে ভুল করেন। তার ধারণা ছিলো কোন সংখ্যাকে শূন্য দ্বারা ভাগ করলে শূন্যই পাওয়া যায়। তবে শূন্য দিয়ে কোন কিছুকে ভাগ করলে তার ফলাফল অসিম হয়, এই ধারণা আমাদের প্রথম দেন ভারতীয় আরেক গণিতদিন ভাস্কর।
এরপর ভারতীয়রা সংখ্যা মালাকে ১,২,৩,৪,৫,৬,৭,৮,৯,০ এই ধারায় নিয়ে আসেন। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে তখনও শূন্যের আকৃতি “০” এমন ছিলো না। ভারতীয়রা শূন্যকে হিসেব করতেন ঠিকই কিন্তু তারা শূন্যের “০” এই আকৃতি দেন নি। শূন্যকে সংখ্যা হিসেবে ভারতীয়রা স্বীকৃতি দেয়ার পরে আরবরাও শূন্যকে সংখ্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেন। এরপর আরবদের কাছ থেকে শূন্যের ব্যবহার জেনে নেন পশ্চিমারা। ফিবোনাচি নামক এক ইতালীয় শিক্ষার্থী আরবে পড়তে এসে ০ সম্পর্কে জানেন। এরপর তিনি এই শূন্যকে ইউরোপে নিয়ে যান।
এখন আমরা শূন্যকে বৃত্তের মতো যে আকৃতিতে লিখি, এই আকৃতি সর্বপ্রথম দেন পারস্য গণিতবিদ মুসা আল খোয়ারেজমি। তিনি এর নাম দেন ‘সিফর’। এরপর ধীরে ধীরে একসময় পাত্তা না পাওয়া শূন্য০ পৌঁছে যায় পৃথিবীর সকল কোনায়। আর গণিতে খুলে দেয় এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার।
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
1,765 total views, 2 views today