এই প্রথম মামাবাড়ি বেড়াতে এসেছে অন্তু। চারদিকে কী সবুজ! গাছে গাছে কত পাখি! পথের ধারে ধারে ঘাসের রাজ্যে ফুটে আছে কত ফুল! গাঁয়ের মানুষ নিজেদের ফলানো তরকারি নিয়ে সকাল সকাল যাচ্ছে হাঁটে, মাঠে মাঠে চরছে গরু, শিমুল আর পলাশের ডাল দুলছে বাতাসে—যা দেখে তাই ভালো লাগে অন্তুর।
গ্রামটা যেমন সুন্দর, তেমনি সুন্দর মামাবাড়িটাও। আঙিনার চারপাশে ফুটে আছে কত যে বাসন্তী ফুল! নানাভাই ওকে চিনিয়ে দিয়েছেন সব। কিছু কিছুর নাম মনেও আছে ওর। সাদা রঙের ছোট ছোট ফুলগুলো বেলী; এই যে ডিমের কুসুমের মতো রঙ, হাতের আঙ্গুলের মতো লম্বা আর রূপকথার বইয়ের ডাইনীবুড়ির নখের মতো বাঁকানো পাপড়ি- এটা কাঁঠালচাঁপা; কাগজের মতো পাতলা সাদা পাপড়ি- ওটা দোলনচাঁপা; সাদা ঘন পাপড়ির মাঝে হলুদ ঝুরো ঝুরো, বিস্কুটের গুঁড়োর মতো দেখা যায়, ওই ফুলটার নাম বড় কঠিন— না-গে-শ্বর! কয়েকবার করে আওড়ানোর পর তবেই ওর মুখস্থ হয়েছে নামটা। কিন্তু নামে কী আসে-যায়, ফুলের সৌরভেই মন মাতাল অন্তুর। বাগানে হলুদ, লাল, খয়েরী ফড়িঙের পিছু পিছু দৌড়াতে দৌড়াতে নিজেও যেন ফড়িং হয়ে ওঠে সে।
অন্তুর সবচে’ ভালো লাগে পুকুরপাড়ের গাছটা। এটার নাম কেয়া। উঁচু কেয়া গাছে তিনটি মাত্র ফুল ফুটেছে। কী অদ্ভুত তার গন্ধ! মাথা ঝিম ঝিম করে ওঠে। এটাই কি বসন্তের সবচে’ সুবাসিত ফুল? জানে না অন্তু। তবু, এতসব সৌন্দর্য বিভোর করে তোলে অন্তুকে। এতটাই যে, যাবার দিন ঘনিয়ে আসলে সে আর শহরেই ফিরে যেতে চায় না। মাকে বলতেই মা একটু হেসে মাথার চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে বললেন, “বোকা ছেলে, তোমার স্কুল আছে না?”
বাবা বললেন, “অন্তু বাবুর হলটা কী?”
নানী বললেন, “এই বাড়ি তো আমার অন্তু ভাইয়েরই। সামনের বার স্কুল বন্ধ হলে আবার আসবে।“
ছোট মামা বললেন, “গ্রাম বেড়ানোর জন্য ভালো, কিন্তু সারা বছর থাকার জন্য না। বর্ষাকালে খুব কাদা হয়। পঁচা।“
অন্তুর খুব, খু-উ-ব মন খারাপ হল। সবার ওপর ভীষণ অভিমান হল ওর। সেদিন সে ভাত খেল না, কারো সঙ্গে কথাও বলল না। নানাভাই সব শুনে সবাইকে ডেকে আচ্ছামতো শাঁসিয়ে দিয়ে বললেন, ‘আমার নানুভাই যদি এখানে থাকতে চায়, এখানেই থাকবে। পরে যদি শহরে যেতে ইচ্ছে হয়, চলে যাবে।“
কিন্তু আব্বুর যে অফিস? আম্মুর যে অফিস? তাদের তো চলে যেতেই হবে। অন্তুকে রেখে তারা যাবেন না কিছুতেই। তাই নানাভাইয়ের শাঁসানোতেও বিশেষ কাজ হল না।
সেদিন সারা রাত ঘুম হল না অন্তুর। নারকেল গাছের দীর্ঘ ছায়া, বিকেলের সোনা রোদে বিস্তৃত ন্যাড়া মাঠ, যশোরে লতার ফুল, গাছঘেরা শান্ত পুকুর, তারার মতো জোনাকপোকা, আর ঝাঁ-ঝাঁ গন্ধের কেয়া ফুল কেঁদে কেঁদে যেন বলল, “যেয়ো না অন্তু, যেয়ো না আমাদের ছেড়ে।“
অন্তু ঘুমন্ত নানাভাইয়ের পাশ থেকে উঠে গিয়ে জানালার পাশে দাঁড়ায়। নানাভাইয়ের পোষা ঘোড়াটা শুয়ে শুয়ে বেঘোরে ঘুমুচ্ছে। পাশের বাগান থেকে ভেসে আসছে অদ্ভুত গন্ধ। ছোট মামা বলেছেন, ওটা নাকি হাসনাহেনা আর কেয়া ফুলের মিলিত গন্ধ। অন্তু শুনেছে, এমন তীব্র গন্ধে আকৃষ্ট হয়েই নাকি ছুটে আসে ভয়ংকর বিষাক্ত কালনাগিনী সাপ। সাপের কথা মনে হতেই আগের দিন খেলা দেখাতে আসা সাপুড়েদের কথা মনে পড়ল ওর। দুই দিকে লাঠিওয়ালা একটা পেটমোটা বাঁশি বাজাচ্ছিল সাপুড়ের দল, আর বাঁশির শব্দ কানে যেতেই ফণা তুলে তুলে নাচছিল তাদের পোষা সাপগুলো। ছোট মামা বলেছিল, ঐ বাঁশিকে বলে লাউবাঁশি। কয়েক মূহূর্তের মধ্যে এই কয়দিনে দেখা গ্রামটা যেন অন্তুর চোখের সামনে একটা বিশাল পর্দা তৈরি করে দিল, আর তাতে একের পর এক ভেসে আসতে লাগল দৃশ্যগুলো।
যাবার দিন অন্তু খুব কাঁদল। আবার কবে গ্রামে আসা হবে জানে না অন্তু। গাড়িতে উঠে কোন কথা বলল না ও। মাথাটাকে গাড়ির কালো জানালায় ঠেকিয়ে নিস্তেজ হয়ে রইল। কী হত আর ক’টা দিন থাকলে? আর ক’টা দিন আম্মু আর আব্বু অফিসে না গেলে কী এমন ক্ষতি হত? অফিসের বড় সাহেব খুব রেগে যেতেন বুঝি? অন্তুর এমনকি আম্মু-আব্বুর অফিসের বড় সাহেবের ওপরও অভিমান হল। এত খারাপ হয় কেন তারা? এর মধ্যে অন্তু একবার দেখল, আব্বু কার সঙ্গে যেন কথা বললেন, আম্মুও বললেন। আর তারপর! তারপরই তারা অন্তুকে ভীষণ অবাক করে দিয়ে ড্রাইভারকে বললেন,
-গাড়ি ঘোরাও। আমরা আজকে যাব না।
সঙ্গে সঙ্গে অন্তুর মুখ হাসিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠল। অফিসের বড় সাহেবরা সবাই খারাপ নয় তাহলে?
নটে গাছটি মুড়োলো, গল্পও ফুরোলো। কিন্তু গল্পটা কি মন দিয়ে পড়া হলো? হয় যদি, গল্পে কী কী ভুল আছে তা কি এখন বলা যাবে তাহলে?
উত্তর দিতে এই লিঙ্কে ক্লিক কর – “অন্তুর মামাবাড়ি গল্পের ভুল”
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
1,534 total views, 1 views today