Show Categories

সন্তানকে শারীরিক আঘাত করার নেতিবাচক প্রভাব

শারীরিক আঘাত

সন্তান পড়তে বসতে চাচ্ছে না, পড়ায়ও মনোযোগ নেই।  অসময়ে টেলিভিশন দেখছে, ছোট ভাইকে মেরেছে, স্কুলে যেতে চাচ্ছে না, এইসব কারণে মেজাজ বিগড়ে যায় আপনার! কী করেন তখন? চড়, থাপ্পড় দেন; হাতের কাছে কিছু থাকলে তা দিয়ে শারীরিক আঘাত করেন।
দেখা যায় শারীরিক আঘাতের পরই ঠিক হয়ে গেছে সব। ভয়ে ভয়ে সন্তান আর করছে না কোন ভুল। আসলেই কি ঠিক হয়ে যায় সব? নাকি সন্তানের উপর পড়ে বড় ধরণের কোন নেতিবাচক প্রভাব? আগের পর্বে আমরা সন্তানের উপর শারীরিক আঘাত নিয়ে লিখেছি। এই পর্বে জানাবো সন্তানের উপর শারীরিক আঘাতের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে।

শিশুর মধ্যে আক্রমণাত্মক আচরণ গড়ে ওঠে

আপনি সন্তানের ভুলের জন্য তাকে মারার সাথে সাথে সন্তানকে একটা মেসেজ দিয়ে দিলেন যে, কোন ধরণের ভুল করলে শাস্তি স্বরুপ শারীরিক আঘাত করতেই হবে। পরবর্তীতে সন্তানের আচরণের মাঝেও এমন ভায়োলেন্স লক্ষ্য করা যাবে। দেখা যাবে সে তার থেকে ছোট কাউকে অনেক ছোটখাটো বিষয়েও মারধর করছে। অনেক সময় অনেক বাচ্চাকে প্রাণীদের উপর নৃশংস আচরণ করতে দেখা যায়। ছোটবেলায় মারধোরের কারণেই তার ভেতরে এমন আচরণ গড়ে উঠে।

সন্তানের সাথে দূরত্ব সৃষ্টি হয়

ছোটবেলায় আপনি কাকে সবচেয়ে বেশি ভয় পেতেন? বাবাকে নাকি মাকে? কেন পেতেন? ধমক দিতো, মারধোর করতো সেজন্য না? এই ভয় থেকেই বাবা-মার সাথে সন্তানের একটা বিশাল দূরত্ব সৃষ্টি হয়। অনেকক্ষেত্রেতো এই দূরত্ব বড় হলেও থেকে যায়। আপনি নিশ্চই চাইবেন না, আপনার সন্তানের সাথে আপনার একটা দূরত্ব তৈরি হোক? আপনার ও আপনার সন্তনের মাঝে স্নেহের, ভালোবাসার, ভরসার আর বিশ্বাসের সম্পর্কটা নষ্ট হয়ে যাক?

সন্তানের মাঝে মিথ্যা বলার প্রবণতা দেখা যায়

সন্তান ভুলে টিভির রিমোট ভেঙে ফেলছে কিংবা ফুলদানিটি ফেলে দিয়েছে ভুলে। আপনি সেটা জানলেন বা সন্তান আপনাকে জানালো। সাথে সাথে আপনি তাকে ধমকালেন, মারলেন। এই ধমক আর মারধোর থেকে আপনার সন্তান কি মেসেজ নিবে জানেন? মিথ্যা বলার মেসেজ। সে আর কখনোই নিজের ভুল আপনাকে জানাবে না। বরং নিজের অপরাধগুলোকে আপনার কাছ থেকে লুকানোর চেষ্টা করবে। ধীরে ধীরে এইসব আচরন বাড়তে থাকবে ও একটা সময় তার কাছে মিথ্যা বলা স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

শেখার প্রতি অনীহা জন্ম নেয়

ভয়ে কোন কিছু শেখা আর মনের আনন্দে নিজে থেকে শেখার মাঝে বিস্তর ফারাক; এটা আমরা সবাই জানি। আপনিও নিশ্চই জানেন? মারধোরের ভয়ে যখন সন্তান কোন কিছু শিখবে সেখানে শেখার আনন্দটা থাকবে না, ফলে তার শেখাটাও পরিপূর্ণ হবে না। সে কেবল মার বা ধমকের হাত থেকে বাঁচার জন্য কোন রকম শিখে নিবে। তার ওপর নিয়মিত ধমকের ভয়ে শেখার প্রবণতা তার ভেতরে পড়ালেখার প্রতি অনীহা সৃষ্টি করবে।

সঠিক বোধ জন্ম নিবে না

ভাই-বোনের মারামারি, কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করা, উশৃঙ্খল আচরণ করা; ইত্যাদির জন্য আপনি আপনার সন্তানকে শারীরিক আঘাত করে, ধমক দিয়ে শৃঙ্খলা শেখাতে চাচ্ছেন। আপনার সন্তান হয়তো আপনার ভয়ে পরে আর এই ধরণের কাজ করেনি। কিন্তু এই কাজগুলো কেন খারাপ, কেন উশৃঙ্খল আচরণ করা যাবে না, কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করলে কি হবে; ইত্যাদি নৈতিক বোধগুলো সঠিকভাবে তার ভেতরে জন্ম নিবে না। ফলে আপনার অগোচরে এই কাজগুলো তার দ্বারা আবারো করার সম্ভাবনা থেকেই যাবে।

সন্তানের ভেতর হতাশা জন্ম নিবে

নিয়মিত শারীরিক আঘাত সন্তানের ভেতর হতাশার জন্ম দেয়। সে নিজেকে অযোগ্য ও অসহায় ভাবতে শুরু করে। নিজেকে খারাপ ভাবার একটা প্রবণতা তার ভেতরে জন্মে। সে ধীরে ধীরে নিজেকে গুরুত্বহীনও ভাবতে শুরু করে। কিন্তু আপনি যদি মারধোর না করে তার সমস্যাগুলো শোনার চেষ্টা করেন ও একসাথে তা সমাধানের চেষ্টা করেন তাহলে সমস্যার সমাধান তো হবেই সাথে তার সমস্যাগুলো নিয়ে আপনার সিরিয়াসনেস তাকে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবতে শেখাবে। ফলে তার সমস্যা সমাধানে সে নিজেও সাহায্য করবে আপনাকে।

শারীরিক নয়, সন্তানের সমস্যাগুলো শুনুন, বুঝুন ও বোঝান।

বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।

 1,239 total views,  2 views today

What People Are Saying

Facebook Comment