ডিহাইড্রেশন মানে পানিশূন্যতা। গ্রীষ্মকালের এই গরমে শরীর থেকে পর্যাপ্ত পানি বেরিয়ে যে কারোরই ডিহাইড্রেশন হতে পারে। আর এক্ষেত্রে শিশুরা থাকে বেশি ঝুঁকিতে। গরমে কিংবা গরমের কারণে হওয়া যেকোন অসুখ যেমন-ডায়রিয়া, বমি, পেটের পীড়া ইত্যাদির ফলে শরীর থেকে পর্যাপ্ত পানি বের হয়ে শিশুদের ডিহাইড্রেশন হতে পারে। তাছাড়া বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাল ইনফেকশন, মেডিকেশন ইত্যাদির জন্য শিশুদের ডিহাইড্রেশন হতে পারে। শিশুদের ডিহাইড্রেশন থেকে মুক্ত রাখার জন্য বিজ্ঞানবাক্স ব্লগ আপনাকে জানিয়ে দিচ্ছে ডিহাইড্রেশনের লক্ষণ ও প্রতিরোধ।
লক্ষণ
বেশি বেশি পিপাসা লাগা, প্রস্রাব হলুদ হয়ে যাওয়া, তুলনামূলক কম ওয়াশরুমে যাওয়া এইগুলো ডিহাইড্রেশনের প্রাথমিক লক্ষণ। এরপর ধীরে ধীরে ঠোঁট শুকিয়ে যাওয়া, তন্দ্রা ভাব, মাথাঘোরা, মাথা ব্যাথা করা, কাঁদলে চোখে পানি না আসা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়।
এইসব লক্ষণ দেখা দেয়ার পর যদি সঠিক চিকিৎসা বা কোন ব্যাবস্থা না নেয়া হয় তাহলে ডিহাইড্রেশন তীব্রতর পর্যায়ে চলে যাবে। এবং কিছু তীব্র লক্ষণও দেখা দিবে।
• স্কিন শুকিয়ে যাওয়া
• শরীরে ঘাম না হওয়া
• টানা বমি হওয়া
• ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট জ্বর থাকা
• চোখ ছোট হয়ে আসা
• রক্তচাপ কমে যাওয়া
• জ্বরে প্রলাপ বকা
• অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
এই ধরণের লক্ষণ দেখা দিলে কোন ধরণের দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ঘরোয়া প্রতিরোধ
ডিহাইড্রেশন প্রাথমিক পর্যায়ে থাকা অবস্থায় কিছু ঘরোয়া প্রতিরোধে অনেক ক্ষেত্রে ডিহাইড্রেশন সেরে যায়। যেহেতু পানি স্বল্পতার কারণে ডিহাইড্রেশন হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে এর ঘরোয়া প্রতিরোধে পানির অধিক্যই বেশি থাকবে।
পানি সমৃদ্ধ ফল ও সবজি খাওয়ান
ডিহাইড্রেশনের জন্য পানি স্বল্পতাই সবচেয়ে বেশি দায়ী। সেজন্য বেশি বেশি করে পানি সমৃদ্ধ ফল ও সবজি খাওয়ান। যেমন- শশা, পেঁপে, তরমুজ, ধুন্দুল, স্ট্রবেরি, জাম্বুরা, টমেটো, আঙ্গুরসহ অতিরিক্ত পানি সমৃদ্ধ যে কোন ফল ও সবজি।
ইউনিভার্সিটি অফ এভারডন মেডিকেল স্কুলের এক গবেষণায় দেখা গেছে বেশি পানি সমৃদ্ধ ফল ও সবজি দুই-গ্লাস পানি খাওয়ার মতো উপকার করে ডিহাইড্রেশনের ক্ষেত্রে।
ডাবের পানি
ডাবের পানিকে বলা হয় প্রাকৃতিক হাইড্রেশন এজেন্ট। ডিহাইড্রেশনের প্রাকৃতিক প্রতিরোধে সবচেয়ে বেশি উপকারী ডাবের পানি। ডাবের পানির সমৃদ্ধ ইলেক্ট্রোলাইট অনেক দ্রুত শরীরে পানির অভাব পূরণ করে দেয়। ডিহাইড্রেশনের ক্ষেত্রে অনেক এনার্জেটিক পানিয়র চেয়েও বেশি উপকারী ডাবের পানি।
দই
দইয়ে এক ধরণের ব্যাকটেরিয়া আছে যা ডায়রিয়ার জীবাণুর সাথে লড়তে পারে। তাছাড়া দইয়েও অনেক পরিমাণে ইলেক্ট্রোলাইট আছে যা শরীরে পানির প্রয়োজন মেটাতে পারে। প্রাথমিক ডিহাইড্রেশন এড়ানোর জন্য প্রতিবার খাওয়ার পরে এক কাপ পরিমাণ দই দিতে পারেন সন্তানকে অথবা ভাতের সাথে হালকা লবন দিয়েও খাওয়াতে পারেন।
লেবুর শরবত
লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে ও লেবুর শরবত ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধে বেশ ভালো কাজ করে। লেবুর শরবতের সাথে হালকা মধু ও গোলমরিচের গুড়া ভালোভাবে মিশিয়ে প্রতি ৩-৪ ঘন্টা পরপর সন্তানকে পান করতে দিন।
লবণাক্ত খাবার
লবণ শরীরের পানির অভাব কিছুটা কমাতে সাহায্য করে। ফলে শিশুরা ডিহাইড্রেশন থেকে কিছুটা মুক্তি পায়। ডিহাইড্রেশনের লক্ষণ দেখা দিলে শিশুকে নোনতা বিস্কিট, সামুদ্রিক মাছ ইত্যাদি খাবার খাওয়াতে পারেন।
বুকের দুধ বন্ধ করবেন না
আপনার সন্তান যদি ডিহাইড্রেশনে ভোগে ও সে যদি তখনো বুকের দুধ পান করে তাহলে তাকে কোনভাবেই বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করবেন না।
ডিহাইড্রেশন থেকে মুক্ত রাখবেন কীভাবে?
ডিহাইড্রেশনের মূল কারণ হলো পর্যাপ্ত পানি পান না করা ও ভাইরাল ইনফেকশন বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ। ভাইরাল ইনফেকশন বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলেও পানির অভাব কিন্তু আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। গরমে সন্তানের পর্যাপ্ত পানির চাহিদা নিশ্চিত করতে যা যা করতে পারেন।
• তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকলে সন্তানকে আউটডোরে খেলাধুলা করতে না দেয়াই উত্তম।
• যে কোন ধরণের শারীরিক পরিশ্রমের পর বেশি করে পানি খেতে দিন। এমনকি খেলাধুলার পর, ব্যায়ামের পর, গরমে বাইরে থেকে আসার পর ইত্যাদি।
• গরমের সময় জাংকফুড, রাস্তার খোলা খাবার ইত্যাদি পরিহার করতে হবে। ফলে ভাইরাল ইনফেকশন থেকে মুক্ত থাকা যাবে।
• সন্তানের খাবারের তালিকায় পানি সমৃদ্ধ ফলমূল রাখুন বেশি করে। আর অতিরিক্ত প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার কিছুটা পরিহার করুন গরমের সময়টাতে।
কখন ডাক্তার দেখাবেন?
মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেলে, তীব্র পেটে ব্যাথা দেখা দিলে, শরীর অনেক বেশি দুর্বল হয়ে পড়লে, কোন কিছু করার শক্তি না থাকলে দ্রুত ডাক্তারের ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
আরো পড়তে পারেন আপনি কি আপনার সন্তানের পার্সোনালিটি প্রোফাইল জানেন?
এবারের ঈদে আপনার সন্তানকে সারপ্রাইজ গিফট হিসেবে দিতে পারেন বাংলাদেশের প্রথম সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স
1,682 total views, 3 views today