Show Categories

চার থেকে ছয় মাস বয়সী শিশুর বিকাশ এবং বাবা-মার করণীয়- ওয়াসিফা জান্নাত

এর আগের ১ থেকে ৩ মাস বয়সী শিশুর বিকাশ এবং পরিচর্যা সম্পর্কে লেখা হয়েছিলো।

এক মাস বয়সী শিশুর বিকাশ এবং বাবা-মার করণীয়

দুই থেকে তিন মাস বয়সী শিশুর বিকাশ এবং বাবা-মার করণীয়

আজ জেনে নিন ৪ থেকে ৬ মাস বয়সী শিশুর বিকাশ এবং পরিচর্যা সম্পর্কে।

সপ্তাহ ১৩

বাচ্চাদের ঘুম নিয়ে অভিযোগ পাওয়া যায় না, এমন হার খুব কম। চার মাসের শুরু থেকেই এই সমস্যা ধীরে ধীরে কমতে থাকবে। এতদিন সে আপনার কথাকে কেবলমাত্র সাউন্ড হিসেবে শুনতো, এখন শব্দগুলো সিলেবলে ভাগ হয়ে তার কানে আসবে। শব্দ করার সময় সেও এই সিলেবলগুলোকে ব্যবহার করার চেষ্টা করবে।

সপ্তাহ ১৪

ঝুনঝুনি এবং মিউজিক্যাল খেলনার সময় অবশেষে শুরু হলো। এই ধরণের খেলনা হাত ও চোখের স্কিল ডেভেলপমেন্টে সাহায্য করে। এই বয়সী শিশুরা সাধারণত মাল্টিটেক্সচার্ড খেলনা, উজ্জ্বল রং, শব্দ করে এমন ধরণের খেলনা পছন্দ করে। সে খেলনা ধরে মুখে দেওয়ার চেষ্টা করে, জানেনই তো এই মুহূর্তে কোন কিছু শিখতে চাওয়ার জন্য এটাই তার সবচেয়ে পছন্দের উপায়!

সপ্তাহ ১৫

চুপচাপ শুয়ে থাকার দিন শেষ! এই সপ্তাহ থেকে আপনার শিশু রোলিং বা এক পাশ থেকে আরেক পাশ হওয়া শুরু করবে। কখনও সামনে থেকে পেছনে, কখনও পেছন থেকে সামনে।

সপ্তাহ ১৬

আপনার চার মাস বয়সী শিশুটি দিন দিন আগের থেকে শক্তিশালী হয়ে উঠছে। এখন তাকে উল্টে রাখলে সে তা খুব সহজে মেনে নাও নিতে পারে। বিকাশের এই স্টেজে টামি টাইম (পেট বিছানাতে লাগিয়ে উপুর করে রাখা) তার গলা, ঘাড়, বুক, বাহুর পেশীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই মাসলগুলো শিশুর গড়ানো, হামাগুড়ি দেওয়া, বসা, দাঁড়ানো, তার দৃষ্টিকে আরও দূরে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করে। এই সময়ে প্রিয়জনদের দেখলে শিশুরা হৈচৈ, কান্নাকাটি থামিয়ে ফেলে।

পাঁচ মাসের পথে (সপ্তাহ ১৭সপ্তাহ ২০)

সপ্তাহ ১৭

এই বয়সে শিশুরা খেলতে খুব ভালবাসে।  সে বিভিন্ন রকমের মজার মজার শব্দ করে, অন্য সবার সাথে মিশতে চায়, খেলতে চায়।  তার পেটে খোঁচা দিলে সে হাসে এবং মজা পায়। আপনার শব্দগুলোকে অনুকরণ করার চেষ্টা করে।  শিশুর ইগো এবং স্পিচ স্কিল উন্নত করার জন্য তার সাথে যতটা সম্ভব বেশি কথা বলুন।  যখন তার ডায়াপার চেঞ্জ করবেন এবং খেলবেন অনেক বেশি আই কন্টাক্ট করার চেষ্টা করুন।  সে এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি বুঝতে পারে।  আপনি তার সাথে কথা বলছেন, সময় দিচ্ছেন- আপনার ভয়েস শোনা এবং আপনার কাছাকাছি থাকার চেয়ে আনন্দময় তার কাছে আর কিছুই নেই।

সপ্তাহ ১৮
আপনার শিশুর এখন নিজের জগৎ তৈরি হচ্ছে।  সে এখন একা একা দশ থেকে পনের মিনিট খেলতে পারে।  খেলা সম্পর্কে তার যে ধারণাগুলো সেগুলো এখন অনেক বেশি গভীর হচ্ছে, অনেক বেশি পরিবর্তন হচ্ছে।  সে এখন নিজের হাত এবং খেলনা নিয়ে খেলা করবে, হাতকে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখবে, এক হাত থেকে আরেক হাতে খেলনা নিয়ে ঘুরাতে ঘুরাতে খেলবে।  তবে একটা খেলনার প্রতি খুব বেশি সময় ধরে আকর্ষণ থাকবে না।

সপ্তাহ ১৯
এই সপ্তাহ থেকে আপনার শিশু ’দা দা তা তা‘ বলা শুরু করবে।  এই সপ্তাহে সে ভাওয়েলের এর সাথে কনসোনেন্ট বলা শুরু করবে।  তাকে বিভিন্ন ছবি দেখান।  ছবিতে কী কী বস্তু আছে সেগুলোর নাম বলুন, সেগুলো শেখান।  কোনটা তার পেট, কোনটা তার কান- প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ স্পর্শ করে শেখান।  অনেক শিশুরা এই বয়সে মা বাবাকে নাম ধরে ডাকা শুরু করতে পারে।

সপ্তাহ ২০
এখন সে জানে আপনি কে এবং সাথে সাথে সে নিজেও কে- এটা জানা শুরু করেছে।  আয়নাতে নিজেকে দেখলে সে খুশি হয়।  মজার ব্যাপার হলো, দুই বছর বয়সের মধ্যে শিশুর পূর্ণাঙ্গ ব্যক্তিত্ব গঠন হলেও এই  সপ্তাহ থেকেই তার কিছু কিছু পার্সোনালি টাইপের কথা বোঝা যাবে।  যেমন- সে চুপচাপ ধরনের হবে নাকি প্রচুর কথা বলবে, হাসি খুশি হবে, শান্ত নাকি চঞ্চল প্রকৃতির হবে তা এখন থেকেই বোঝা যাবে।  এমনকি আপনি তার চেহারার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারবেন সে কোন কোন অনুভুতিকে কিভাবে প্রকাশ করে।

ছয় মাসের পথে (সপ্তাহ ২১সপ্তাহ ২৪)

সপ্তাহ ২১
শিশু এখন বুক ঘষে সামনে আগানোর চেষ্টা করবে।  ফ্লোরের উপর চলার দিক নিজেই ঠিক করবে। সে আপনার সাথে খেলার জন্য খুব অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করবে তারপরও যতটকু পারা যায় তাকে একা একা সময় কাটাতে উৎসাহিত করুন।  তাকে ফ্লোরে ছেড়ে দিন অথবা খেলার মাঠে ছেড়ে দিন এবং নিজের সাথে নিজেকে সময় কাটাতে দিন।  সাবধানতার জন্য তার ওপর চোখ রাখতে হবে সবসময়।

সপ্তাহ ২২
আপনার শিশুর মধ্যে এই সময় আবিষ্কার করতে চাওয়ার প্রবণতা দেখা যাবে।  এই মুহূর্তে তাঁর সবচেয়ে প্রিয় খেলা হল এক্সপেরিমেন্ট করা।! সে যা সামনে পাবে সেটা মুখে দেওয়ার চেষ্টা করবে।  তার খেলনাগুলো মাটিতে ছুঁড়ে মারবে, মাটিতে পড়ার পরে বিভিন্ন খেলনা থেকে যে বিভিন্ন ধরণের শব্দ হয় তা শুনে মজা পাবে।  এর ফলে তার অডিটরি স্কিল ডেভেলপ করবে।  এই স্কিল সে এরপর বাস্তব জীবনেও কাজে লাগাবে।  যেমন যদি মাথার উপর দিয়ে একটা প্লেন চলে যায় কিংবা একটা অ্যাম্বুলেন্স যদি রাস্তা দিয়ে শব্দ করতে করতে যায় সেটা সে শোনার চেষ্টা করবে।

সপ্তাহ ২৩
এই সপ্তাহে শিশুদের মাসল কোঅর্ডিনেশন এবং মাথা তোলা ও সোজা করে রাখার জন্য ক্ষমতা ডেভেলপ হবে।  শরীরের উপরের অংশটা সে নিজে নিয়ন্ত্রণ নিতে শিখবে এবং এই অংশটা শক্ত হওয়া শুরু করবে।  তাকে আপনার পায়ের উপরে দাঁড় করিয়ে দিন।  হাঁটুর উপরে দুই পায়ের উপর ভর দিয়ে, সামনে দুটো হাত রেখে, হাতের উপর ভর দিয়ে -তাকে ব্যাঙের মতো করে বসানোর চেষ্টা করুন।

সপ্তাহ ২৪
এখন শিশু কিন্তু বেশ কিছু জিনিস মনে রাখতে পারে।  এই সময় তার স্মৃতি জমা হওয়া শুরু হয়েছে। সে নাম মনে রাখতে পারে।  বেশ কিছু শব্দ যেমন ’না’ মানে যেটাকে না করা হচ্ছে সেটা বুঝতে পারে, টা টা বাই বাই বুঝতে পারে।  আপনি কোন জিনিসের দিকে আঙ্গুল দিয়ে তাকে কী বোঝাচ্ছেন এবং কোন জিনিসের নাম কি বলছেন সেটা বুঝতে পারবে।  এখন থেকেই তার কথা বলার চেষ্টা শুরু হবে।  সে তার ডেইলি রুটিন মনে রাখতে পারবে। এ কারণেই সকাল বেলা তাকে একই বাক্য বা শব্দ বা ছড়া প্রতিদিন নিয়ম করে বলতে থাকুন, তাহলে সে দ্রুত শিখতে পারবে।

প্রতিটি শিশুই ইউনিক। তাই সব শিশুর বিকাশ একই রকমভাবে হবে না। কেয়ারগিভার হিসেবে আপনার যা যা করা উচিত তা করুন। অনেক সময় সঠিক স্টিমুলেশনের অভাবে শিশুর বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়। শিশুর কোনরকম শারীরিক সমস্যা মনে করলে পেডিয়াট্রিকস বা অকুপেশনাল থেরাপিস্টের সাহায্য নিন।

আপনার শিশুর বিকাশ তরান্বিত করতে সাহায্য করতে পারে বিজ্ঞানবাক্স, আমাদের সায়েন্স কিট। তবে সেটা ৫+ বয়সী শিশুদের জন্যে।

 1,343 total views,  2 views today

What People Are Saying

Facebook Comment