পৃথিবীতে সাতশ কোটি মানুষ আছে। সব মানুষের কিন্তু রয়েছে আলাদা আলাদা ধরণ। জানার, শেখার, সিদ্ধান্ত নেয়ার, জীবনবোধের আলাদা আলাদা ধরণ ও শক্তির জায়গা আছে সবার। আছে আলাদা আলাদা পার্সোনালিটি টাইপ ।কেউ সবসময় আড্ডা দিতে পছন্দ করে, কেউ নিজের মাঝে থাকতে। কেউ খেলতে পছন্দ করেতো কেউ বই পড়তে, কেউবা পছন্দ করে লিখতে। কেউ হুট করে সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়তো কেউ সিদ্ধান্ত নেয় ভেবে চিন্তে। এবং এই আলাদা ধরণটা তারা জন্মগতভাবে অনেকটা ন্যাচারালি পেয়ে থাকে। এই আলাদা আলাদা মানুষের আলাদা আলাদা শক্তির জায়গাকে কাজে লাগানোর জন্য আমেরিকান শিক্ষাবিদ ক্যাথেরিন কুকস ব্রিকস ও তার মেয়ে ইসাবেলা ব্রিকস মায়ার পৃথিবীর সব মানুষকে ১৬ টা আলাদা আলাদা ক্যাটাগরিতে ফেললেন একটা পরীক্ষার মাধ্যমে। আর ক্যাটাগরি অনুযায়ী ঠিক করলেন কোন ধরণের মানুষের ভেতর থেকে কীভাবে তার সেরাটা বের করে আনা যাবে! আর তারা দুজন একই কাজটা করলেন বাচ্চাদের জন্য। পরীক্ষার মাধ্যমে বাচ্চাদের পার্সোনালিটি প্রোফাইল বের করে সে প্রোফাইল অনুযায়ী তারা দুজন মিলে বাচ্চাদের মাঝ থেকে সেরাটা বের করে আনার জন্য অনেকগুলো পরামর্শ বা কৌশল বের করেছেন। বের করেছেন, কোন ধরণের বাচ্চার সাথে কীভাবে আচরণ করতে হবে তাও। এক কথায় বলতে গেলে, শেখার বা সফল করার একটা ন্যাচারাল উপায় তিনি বাতলে দিয়েছেন। লিখেছেন একটি বইও। এই মহান শিক্ষাবিদের সেই বই অবলম্বনে আমরা বিজ্ঞানবাক্স ব্লগের পাঠকদের জন্য একটা সিরিজ লেখা শুরু করেছি। আগের ব্লগের মাধ্যমে আপনি আপনার সন্তানের পার্সোনালিটি টাইপ বের করতে পারবেন। আর আমরা ধাপে ধাপে সব পার্সোনালিটিরি বাচ্চাদের জন্য আপনাকে পরামর্শ দিবো ও জানাবো আপনার বাচ্চার সেরাটা বের করে আনার জন্য আপনার ভূমিকা কেমন হতে হবে। আপনার বাচ্চার পার্সোনালিটি প্রোফাইল জানা না থাকলে জেনে নিন আমাদের এই টেবিলটা দেখে। আর আজকে জেনে নিন ENFP প্রোফাইল এর বাচ্চাদের জন্য পরামর্শ।
ENFP প্রোফাইল
-অসম্ভব।
-অবশ্যই সম্ভব।
এটাই মূলত ENFP প্রোফাইল। তারা প্রচুর আশাবাদী। ENFP প্রোফাইলের মানুষের জীবনকে সুন্দর ও সফল করে তোলার জন্য তাদের এই আশাবাদী মানসিকতাকে কাজে লাগাতে হবে। তারা অনেক বেশি কৌতূহলী হয়। তাদেরকে আইডিয়াবাজও বলা যায়। প্রতিটা কাজের জন্য তারা নিজেদের নতুন নতুন আইডিয়া কাজে লাগায়। নিজের আইডিয়া নিয়ে আলোচনা করে, একই সাথে আইডিয়া পছন্দ হলে অন্যের আইডিয়া নিয়েও আলোচনা করতে পছন্দ করে। এদের কাছে অসম্ভব বলে কিছু নাই। তারা শুরুতেই হাল ছাড়তে চায় না। প্রতিটা অসম্ভবের বিপরীতে তারা কোন না কোন সম্ভব সমাধান নিয়ে ভাবতে পছন্দ করে।
একই সাথে তারা বেশ স্পর্শকাতরও হয়ে থাকে। সেজন্য তাদের অনুভূতিকে বোঝার চেষ্টা করতে হবে ও তাদের অনুভূতিকে সম্মান করতে হবে।
প্রি-স্কুলার ENFP (বয়স ০-৪ বছর)
প্রতিটা ENFP প্রোফাইলের বাচ্চাদের কিছু কমন ক্ষমতা হচ্ছে তাদের প্রচুর প্রাণশক্তি, হাইলি এনার্জি লেভেল ও প্রচুর কথা বলার অভ্যাস। তারা নতুন নতুন যে কোন অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য সবসময় মুখিয়ে থাকে। নতুন সবকিছুর প্রতি তাদের আগ্রহ থাকে অনেক, নতুন কোন কিছুকে গ্রহণ করতে তাদের মাঝে তেমন কোন দ্বিধাবোধ থাকে না। নতুন খেলনা, নতুন মানুষ, নতুন বন্ধু, নতুন অভিজ্ঞতার জন্য তারা অপেক্ষায় থাকে। নতুনের প্রতি তাদের এতটাই আগ্রহ থাকে যে, তারা সবসময় বাইরের পৃথিবী ঘুরে দেখতে চায়, বাইরের পৃথিবীর নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চায়। ছোট বয়স থেকেই এক জায়গায়, এক রুমে বা এক ঘরে বসে থাকাটা বেশ বিরক্তিকর তাদের জন্য।
তারা নিজেকে সবসময় সৃজনশীল উপায়ে প্রকাশ করতে পছন্দ করে। ছোট বেলা থেকে তাদের মাঝে অদম্য উদ্যম আর সৃজনশীলতার ছাপ পাওয়া যায়। তাদের কিছু নতুন আইডিয়া বা চিন্তা দেখে কখনো কখনো আপনিও অবাক হয়ে যাবেন। তারা প্রশ্ন করতে পছন্দ করে। তাদের কাজ দেখে চমকে যেতে হলে তাদেরকেও প্রশ্ন করার স্বাধীনতা দিতে হবে, তাদের প্রতিটা কৌতূহল মেটাতে হবে। তাদের কৌতূহলকে আরো বাড়িয়ে দেয়ার জন্য নতুন জায়গায় নিয়ে যাওয়া, নতুন নতুন সৃজনশীল খেলনা দিয়ে তাকে সাহায্য করতে হবে।
আর্টের প্রতি ছোট থেকেই তাদের অনেক আগ্রহ থাকে। ছবি আঁকা, কালচারাল এক্টিভিটিস, পেইন্টিং, মিউজিকের প্রতি তাদের অনেক আগ্রহ থাকে। আগ্রহ থাকে নতুন কোন চ্যালেঞ্জের প্রতিও। চ্যালেঞ্জ নিতে কখনো পিছপা হয় না তারা। একই সাথে তারা তাদের এইসব এক্টিভিটিস অন্যকে দেখাতে, তাদের চ্যালেঞ্জের কথা, অর্জনের কথা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে অন্যকে জানাতে তাদের মাঝে একটা স্বতস্ফূর্ততা লক্ষ করা যায়।
ENFP প্রোফাইলের বাচ্চারা অনেক বেশি সেনসেটিভও হয়। তারা তাদের আবেগ, অনুভূতি, হতাশা, ভালো লাগা, খারাপ লাগা, পছন্দ, অপছন্দ ইত্যাদিসহ গভীর কোন কিছু বাইরের কারোর সাথে শেয়ার করতে পছন্দ করে না। এইগুলো তারা সবসময় পরিবারের কারোর সাথে শেয়ার করতে বেশি পছন্দ করে। একই সাথে অন্যের অনুভূতি নিয়েও তারা কিছুটা সচেতন থাকে। তারা কখনো চায় না, তাদের দ্বারা বা তাদের জন্য কেউ কষ্ট পাক। বিশেষ করে, বাবা-মায়ের কোন দুশ্চিন্তার কারণ হলে তারা খুবই আপসেট হয়। বাবা-মার দুশ্চিন্তা তাদেরকেও চিন্তিত করে তোলে।
তারা অনেক বেশি চঞ্চল হওয়ার কারনে এত বেশি দুষ্টামি করে ও এনার্জেটিক থাকে যে তাদেরকে কখনো ক্লান্ত মনে হয় না। তাদের দুষ্টামি একদম অতিষ্ট করার মতো। একা থাকতে একদম পছন্দ করে না। সবসময় কোন কিছুর সাথে যুক্ত থাকতে পছন্দ করে। তাদের কৌতূহল এত বেশি থাকে যে, তারা যে কোন কিছু জানার ব্যাপারে আগ্রহী হয়। প্রচুর প্রশ্ন করে। যে বিষয় সম্পর্কে সে বুঝতে পারবে না সে বিষয় সম্পর্কেও তার প্রশ্ন করা চাই। সোজা কথা নতুন কোন কিছু সামনে আসা মানে সে তা সম্পর্কে জানতে চাইবে। কখনো কখনো তা মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার মতো মনে হতে পারে। মনে হতে পারে, সে কাউকে সম্মান করে না, যাকে তাকে যা তা জিজ্ঞেস করে বসে। আসলে এটাই তার স্বভাব। তার ভেতরে এই স্বভাবটা একদম শুরু থেকেই থাকে। তারা নতুন তথ্যের জন্য মুখিয়ে থাকে, কে কী মনে করলো এই ব্যপারে খুব একটা ভাবে না। তাদের এই কৌতূহল ও জানার আগ্রহকে ধরে রাখতে হবে। তার সব প্রশ্নের উত্তর দেয়া, তার সব কৌতূহল মেটানো হয়তো সম্ভব নাও হতে পারে। কিন্তু মনে রাখতে হবে তার ভেতর থেকে এই কৌতূহল টা দূর করা যাবে না। প্রশ্ন করার জন্য পূর্ণ স্বাধীনতার সাথে সাথে উৎসাহও দিতে হবে। প্রয়োজনে কোন কিছু তাকে জানানো সম্ভব না হলে কেন সম্ভব না তা তাকে বলতে হবে ও একই সাথে তার অন্যকোন কৌতূহলও জানতে চাইতে হবে।
তারা কোন কিছুতে এনগেইজড থাকতে পছন্দ করে, খুব দ্রুত বন্ধু জোটায়, সবাইকে মজার মধ্যে রাখে, সবসময় তার চারপাশ সরগরম করে রাখে। ENFP দের হাই লেভেল এনার্জির কারণে তারা ঘরে কিংবা ঘরের বাইরে কিংবা সম্পূর্ণ নতুন কোন জায়গায় কিছু বন্ধু জুটিয়ে ফেলে প্রচুর দুষ্টামি করে, লাফালাফি করে। যা বড়দের জন্য বিরক্তিকর ও শিশুদের জন্য ক্ষতিকরও বটে। তাদের দুষ্টামি কখনো কখনো ছোট খাটো দুর্ঘটনাও নিয়ে আসতে পারে। বড় ENFP রাও কখনো কখনো বোঝে না, কোথায় তার দুষ্টামি বা অতিরিক্ত চঞ্চলতা খাপ খাবে, কোথায় খাবে না। তবে হ্যাঁ, ENFP দের এই আচরণ বন্ধ করতে চাইলে অবশ্যই একটু সাবধানতার সাথে করতে হবে। আচরণ সাময়িক বন্ধ করতে গিয়ে যেন তাকে একদম ধমিয়ে দেয়া না হয়। সে যেন তার ন্যাচারাল এনার্জি লেভেলের জন্য অপরাধবোধে না ভোগে বা এটা যেন তার কাছে খারাপ কোন অনুভুতি নিয়ে না আসে। আপনার কাছে তার দুষ্টামি মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়া মনে হলে তাকে তা বুঝিয়ে বলতে হবে। ধমক দেয়া, অতিরিক্ত বকাঝকা না করাই ভালো। তাকে যদি আপনি তার সীমারেখাটা ভালোভাবে বুঝিয়ে দিতে পারেন তাহলে তার আগ্রহও কমবে না একই সাথে আপনাকে তার আচরণ নিয়ে চিন্তা করা লাগবে না। তারা কথা বলায়, মজা করায়ও বেশ পটু হয়, তাদের আচরণে অনেক হিউমার থাকে। এখন যদি আপনি তাকে ধমক দিয়ে থামিয়ে দেন তাহলে তার ভেতরের এই সৃজনশীলতা ধীরে ধীরে হয়তো কমে যাবে। তার কোন কোন আচরণ অতিমাত্রায় চলে গেলে তা দুর্ঘটনা ডেকে আনতে পারে তা তাকে বুঝিয়ে বলুন। একই সাথে তার ভেতরকার সৃজনশীলতা ও নতুন কিছুকে সাদরে গ্রহণ করার মানসিকতাকে উৎসাহী করে তুলতে হবে।
স্কুল গোয়িং ENFP (বয়স ৫-১০ বছর)
প্রি-স্কুলার সময়টার তুলনায় এই সময়টাতে ENFP দের হাই এনার্জি লেভেলটা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। এই সময়টাতে তারা আসলে অনেক কিছু বুঝতে পারে, বোধ কিছুটা বাড়ে। পরিস্থিতি বিচারে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। আগ্রহী শিক্ষকের সান্নিধ্য পেলে এই সময়টাতে সে অনেক বেশি হার্ড ওয়ার্কিং হয়। নিজের অগ্রহণযোগ্য আচরণ একই সাথে নিয়ন্ত্রণ করা ও তার সৃজনশীল এবং কল্পনাশক্তির সঠিক ব্যবহার করতে পারে। তাদের শৈল্পিক সত্তাটি এই সময়টাতে সবচেয়ে বেশি বিকাশ লাভ করে। নাচ, গান ও অন্যান্য আর্টিস্টিক এক্টিভিটি, ক্রিয়েটিভ খেলাধুলা, হিউমার চর্চা, নিজের ফ্যান্টাসির জগত তৈরি করা ইত্যাদি গুণগুলো এই সময় তাদের ভেতর বিকশিত হতে শুরু করে। তাদের একটা ভালো দিক হলো-তারা একসাথে অনেকগুলো কাজ করলেও তাদের আগ্রহের জায়গা নিয়ে গভীরভাবে কাজ করতে পছন্দ করে।
ENFP প্রোফাইল এর মানুষরা অনেক আশাবাদী হয়। তারা সব জায়গায় ইতিবাচক সম্ভাবনা আবিষ্কার করতে পারে। নিজেদের আইডিয়া নিয়ে গভিরভাবে ভাবে, অনেকের সাথে সেই আইডিয়া নিয়ে আলোচনা করে। কীভাবে তার আইডিয়া কাজে লাগানো যায় তা নিয়ে অনেকের সাথে কথা বলতে ও অনেকগুলো অপশন রাখতে পছন্দ করে। তারা তাদের সিদ্ধান্ত ও আইডিয়ার প্রতি অনেক আত্মবিশ্বাসী থাকে। তাদের আরেকটা গুণ হলো তারা বেশ সম্মোহনী শক্তি সম্পন্ন হয়। সহজেই অন্য বাচ্চাদের তাদের পক্ষে নিয়ে আসতে পারে। খেলাধুলায় তাদের নিজের বানানো নিয়ম সহজেই অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারে। তবে একটা সমস্যা হলো, এরা কোন কাজ অনেক আগ্রহের সাথে শুরু করার পর কিছুদূর এগিয়ে, কোন ক্রিয়েটিভ সমস্যা সমাধান করার পর সামনে আর কোন চ্যালঞ্জ না পেলে সে কাজের প্রতি কিছুটা আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।
বৈশ্বিক ইস্যু নিয়ে তাদের অনেক আগ্রহ থাকে। স্কুলে অন্যান্য সাবজেক্টের চেয়ে বিভিন্ন কালচার, ইতিহাস, মানব সভ্যতা ইত্যাদি সম্পর্কিত বিষয়গুলোর প্রতি তাদের আগ্রহ থাকে অনেক। তারা একই সাথে বৈষম্য নিয়েও ভাবে। দারিদ্রতা, বর্ণবাদ, মানুষে মানুষে ব্যবধান, এথিকস ইত্যাদি বিষয় নিয়ে তারা চিন্তিত থাকে। তারা আসলে বড় ছবি, বড় স্বার্থটা দেখে। নিজের জন্য ও অন্যের জন্যও ভাবে।
ENFP প্রোফাইল-রা তার চারপাশে নিজের একটা ভালো ছাপ রাখতে পারে। মানুষকে নিয়ে তাদের ভাবনা, তাদের সৃজনশীলতা, মানুষের আবেগ ধরতে পারা, মানুষকে সাহস যোগাতে পারা, মোটিভেট করতে পারা এমন অনেক ক্ষমতার কারণে সে চারপাশে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।তারা সাধারণত নিয়ম কানুনের কিছুটা বাইরে থাকতে চায়। কম নিয়ম কানুনে নিজেকে ভালোভাবে খাপ খায়ে নিতে পারে। তারা তাদের সিদ্ধান্তগুলো অনেক সময় ধরে সম্ভাব্য ভালো কোন বিকল্পের জন্য খোলা রাখে, অপেক্ষা করে নতুন কোন ভালো আইডিয়ার।
ENFP প্রোফাইল এর বাচ্চাদের মনোযোগ দ্রুত সরে যাওয়ার বিষয় কিছুটা ভাবাতে পারে আপনাকে। তারা একসাথে অনেক কাজ করে বলে অনেকক্ষেত্রে এদের কাজে মনোযোগ নষ্ট হয়ে যায়। তারা তাদের অনেক কাজই বীরবিক্রমে শুরু করার পর শেষ করতে পারে না। কিংবা শেষে তারা মনোযোগ দেয় না। তাদের আরেকটা সমস্যা হলো এরা কাজ শুরু করার পর কিংবা শুরু করার আগে নতুন কোন অপশনের জন্য অপেক্ষা করতে গিয়ে সঠিক সময়ের মধ্যে প্রায় কাজ শেষ করতে পারে না। ENFP প্রোফাইল এর বাচ্চাদের এই দুইটা বিষয়ের দিকে একটু নজর দিতে হবে। তাদেরকে কাজ শেষ করা ও সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি শেষ করার ব্যাপারে কিছুটা তাগাদা দিতে পারেন বা একটু মোটিভেট করা যেতে পারে।
নিজের প্রাইভেসি নষ্ট হলে, তার কোন ব্যর্থতার জন্য তাকে ক্রিটিসাইজ করা হলে কিংবা ব্যর্থ হওয়ার পর তাদের কাজ করার পদ্ধতি নিয়ে ক্রিটিসাইজ করলে তারা আপসেট হয়ে পড়ে, নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ে। সেজন্য ENFP প্রোফাইল এর বাচ্চাদের গাইড করার ক্ষেত্রে কিছুটা সাবধানতা অবলম্বন করত হবে। তাদেরকে তাদের মত করে কাজ করতে দিতে পারেন। যদি মনেও হয় এটা সঠিক পন্থা না তাও তাকে তার মতো করে করার সুযোগ দিবেন। এরপর তার ভুলগুলো তাকেই খুঁজে বের করার সুযোগ দিন ও তার সাথে আলোচনা করেই তা শোধরানোর চেষ্টা করবেন। “তোমাকে বলেছিলাম কাজটা এভাবে না করে আমার মতো করে করো, শুনলে না, হলোতো এবার ভুল!” ব্যার্থতার পর এই টাইপ কথা শুনতে কারোরই ভালো লাগে না।
মজার বিষয় হচ্ছে, একজন ENFP প্রোফাইল এর বাচ্চাদের মাঝে দুইটা সত্তা বাস করে। তার যে সত্তা বাইরে বাস করে সে অনেক বেশি চঞ্চল, আত্মবিশ্বাসী, এন্টারটেইনিং, বুদ্ধিমান, ও পরিবেশ জমিয়ে রাখতে পারে। কিন্তু একই সাথে তার সাথে ঘটে যাওয়া কোন ঘটনার জন্য, তার কোন একান্ত ব্যক্তিগত কিছু অনূভুতির জন্য সে কিছুটা উদ্বিগ্ন থাকে, ভয়ে থাকে, হীনমন্মতায় ভোগে। কখনো কখনো তার আত্মবিশ্বাসেও ঘাটতি দেখা যায়। সেজন্য বাবা-মার উচিত তার অনুভূতিকে বোঝার চেষ্টা করা। সে যেন তার সব কিছু বাবা-মায়ের সাথে শেয়ার করে এমন বিশ্বাস তার ভেতর জন্মাতে হবে। এরপর সেভাবে তার কেয়ার করতে হবে। সাথে সাথে আরেকটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে-তারা অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী, কোন কারনে তার এই আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি পড়লে বাবা-মারই উচিত তাকে বোঝানো যে তার দ্বারা অনেক কিছুই সম্ভব। সোজা কথা তার আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি দেখা দিলে তাকে মোটিভেট করার দায়িত্বও বাবা-মাকেই নিতে হবে।
টিনএজ ENFP (বয়স ১১-১৬ বছর)
ENFP প্রোফাইল এর নিজেদের আলাদা একটা লাইফস্টাইল থাকে। তাদের লাইফস্টাইল দেখলেই আলাদা করা সম্ভব। পোশাক-আশাক, চালচলন, বোধ, প্যাশন সবকিছু অন্যদের চেয়ে আলাদা। প্রচলিত ট্রেন্ড থেকে আলাদা। তাদের প্রতিটা কাজেই নিজেকে স্পেশাল ভাবে উপস্থাপণ করার চেষ্টা থাকবে।
একটু টিনএজে তারা চেষ্টা করবে বড়দের আলোচনায় যোগদান করতে, নিজের যুক্তিগুলো উপস্থাপন করতে। মজার বিষয় হলো তারা বড়দের আলোচনায় অংশগ্রহণ করার জন্য যথেষ্ট তথ্যসমৃদ্ধ ও যথেষ্ট বোধ সম্পন্ন হয়ে যায় ততদিনে। এবং তাদের জানার ও যুক্তির পরিসর কখনো কখনো আপনাকে অবাক করে দিবে। তবে আগে থেকেই তাদের পরিস্থিতি পড়তে পারার গুণ সহজেই তাদেরকে তাদের লিমিট সম্পর্কে ধারণা দিতে পারবে। তাদের ভেতর কিছুটা জেদ কাজ করে কখনো কখনো। সে যদি বুঝতে পারে কোথাও তার যুক্তিকে সে প্রতিষ্ঠিত করতে পারছে না, বা তার ভিউপয়েন্ট সে অন্য কাউকে ধরাতে বা বোঝাতে পারছে না তাও সে চেষ্টা করে যাবে। সে যদি বুঝেও ফেলে এটা সম্ভব না আর, তাও তার চেষ্টার কমতি থাকবে না।
ENFP প্রোফাইল এর বাচ্চাদের শিল্পি সত্তাটি এই সময়ে আরো বেশি করে বিকাশ লাভ করে। টিনএজ বয়সে তারা তাদের আগ্রহের জায়গা নিয়ে কাজ করার জন্য অনেক বন্ধু ও গ্রুপ পেয়ে যায়। তারা একই সাথে সমাজিক সমস্যাগুলো নিয়ে চিন্তিত থাকে। সেজন্য বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী কাজ, কোন সমস্যা সমাধানের জন্য জনমত সংগ্রহ, কোন সমস্যার জন্য তহবিল কালেকশন করা ইত্যাদি কাজে এদের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখা যায়। তাদের মাঝে একটা ভলান্টিয়ার সত্তা থাকে।
তাদের একটা ভালো দিক হলো তারা তাদের কাজের প্রায়োরিটি লিস্ট করতে পারে ভালোভাবে। খাওয়া, বিশ্রাম নেয়া, নিজের আগ্রহের কাজগুলো সম্পর্কে একটা ধারণা রাখা, স্বাস্থ্য সচেতনতা ইত্যাদি সম্পর্কে প্রায়োরিটি লিস্ট করতে পারে এবং একই সাথে তারা তাদের আগ্রহের কোন কিছু মিস করতে চায় না। সেজন্যই তারা একটা সময় নিজের পছন্দের রুটিনে চলে আসে। তারা বেশ স্বাস্থ্য সচেতন হয়!
ENFP প্রোফাইল এর টিনএজাররা অনেক বেশি বন্ধুভাবাপন্ন হয়। তারা যে কোন মূহূর্তে যে কোন ইস্যুতে বন্ধুদেরকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে যায়। এক্ষেত্রে সমস্যা যেটা হয়, তা হলো কখনো কখনো কোন অনৈতিক কাজেও সে বন্ধুকে সাহায্য করে তা তার নিজের অপছন্দের বিষয় হলেও। তারা সম্পর্কের প্রতি এতটাই যত্নশীল থাকে যে, সাহায্যের হাত বাড়ানোর সময় অনেক ক্ষেত্রেই ভালো খারাপ বিচার করতে পারে না। ফলে নিজেও কিছুটা বিপদে পড়ে যায়। কিন্তু সে সম্পর্কের খাতিরে তা সাফার করতে দ্বিধাবোধ করে না।
ENFP প্রোফাইল এর বাচ্চাদের অনুভূতি নিয়ে আপনি যদি তাদের সাথে কথা বলেন তারা অনেক নিরাপত্তা অনুভব করে। তারা চায় আপনি তাদের সমস্যাগুলো নিয়ে তাকে পরামর্শ দিন। কিন্তু অতিরিক্ত সমালোচনা ও জ্ঞান দেয়া বা তাকে ক্রিটিসাইজ করা সে খুব একটা সহ্য করতে পারবে না। সেক্ষেত্রে আপনি তার অনুভূতিগুলো্র, তার ভুলগুলোর প্রতিফলক হতে পারেন। তাকে সঠিক পয়েন্ট ধরিয়ে দিতে পারেন ও তার সাথে তা নিয়ে আলোচনা করতে পারেন, আলোচনা করতে পারেন সমস্যা সমাধানের সম্ভাব্য সকল সমাধান নিয়েও। তার অনুভূতি গুলোর প্রতি আপনার আগ্রহ তাকে অনেক বেশি নিরাপত্তা দিবে।
কেমন হবে ENFP প্রোফাইল এর প্রতি আমাদের আচরণ? জেনে নিন এক নজরে!
• তাদের হাই এনার্জি লেভেল কাজে লাগানোর জন্য তাদেরকে আউটডোরে খেলার সুযোগ করে দিন।
• নতুন নতুন সৃজনশীল খেলনা দিয়ে তাদের সৃজনশীলতাকে সমৃদ্ধ করতে হবে।
• আপাতদৃষ্টিতে তাদের প্রশ্ন ও আগ্রহকে প্রয়োজনীয়, অসামঞ্জস্য, পাকনামি মনে হলেও তা মেটানোর চেষ্টা করুন।
• তাদের আইডিয়াগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনুন। তার সাথে তাদের আইডিয়াগুলো নিয়ে গভীরে ভাবুন। তাদের আইডিয়াগুলোকে দৃশ্যমান করার জন্য কাজ করুন একসাথে।
• জোর করে তাদের কোন ভাবনাকে পরিবর্তনের চেষ্টা করবেন না। সম্ভাব্য অপশন দিয়ে তাকে সাহায্য করুন। এরপর সেগুলো তার কাছে যুক্তিযুক্ত মনে হলে সে অবশ্যই গ্রহণ করবে।
• তাদের ফ্যান্টাসির জগতে তাদের বাস করতে দিন।
• তারা যেহেতু একটু সৃজনশীল ও আর্টিস্টিক ঘরানার হয়ে থাকে, সেহেতু তাদেরকে সৃজনশীল ও আর্টের উপরকরণ যেমন-ছবি আঁকার উপকরণ, সায়েন্স কিট ইত্যাদি সরবরাহ করুন।
• তাদের শখ ও আগ্রহের জায়গাগুলোতে কখনো লাইফটাইম লাভ খুঁজতে যাবেন না। সেগুলো সে করুক স্রেফ মানসিকভাবে ফুরফুরে থাকতে ও শক্তি অর্জন করার জন্য।
• তাদের প্রাইভেসিকে সম্মান করুন। তাদের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য তাকে কিছুটা সাহায্য করতে পারেন। কিন্তু তার মনের বিরুদ্ধে কোন কিছু করা যাবে না।
• তারা কোন কাজের ডেডলাইন ও টাইমলাইনের ব্যাপারে কিছুটা উদাসিন থাকে। সেজন্য তাদেরকে মাঝে মাঝে তাদের কাজের ডেডলাইনের কথা মনে করিয়ে দিন।
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
1,549 total views, 1 views today