পৃথিবীতে সাতশ কোটি মানুষ। এতসব মানুষের কিন্তু রয়েছে আলাদা আলাদা ধরণ। জানার, শেখার, সিদ্ধান্ত নেয়ার, জীবনবোধের আলাদা আলাদা ধরণ ও শক্তির জায়গা আছে। আলাদা আলাদা পার্সোনালিটি টাইপ ।কেউ সবসময় আড্ডা দিতে পছন্দ করে, কেউ নিজের মাঝে থাকতে। কেউ খেলতে পছন্দ করেতো কেউ বই পড়তে, কেউবা পছন্দ করে লিখতে। কেউ হুট করে সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়তো কেউ সিদ্ধান্ত নেয় ভেবে চিন্তে। এবং এই আলাদা ধরণটা তারা জন্মগতভাবে অনেকটা ন্যাচারালি পেয়ে থাকে। এই আলাদা আলাদা মানুষের আলাদা আলাদা শক্তির জায়গা কাজে লাগানোর জন্য আমেরিকান শিক্ষাবিদ ক্যাথেরিন কুকস ব্রিকস ও তাঁর মেয়ে ইসাবেলা ব্রিকস মায়ার পৃথিবীর সব মানুষকে ১৬ টা আলাদা আলাদা ক্যাটাগরিতে ফেললেন একটা পরীক্ষার মাধ্যমে। আর ক্যাটাগরি অনুযায়ী ঠিক করলেন কোন ধরণের মানুষের ভেতর থেকে কীভাবে তার সেরাটা বের করে আনা যাবে! আর তারা দুজন একই কাজটা করলেন বাচ্চাদের জন্য। পরীক্ষার মাধ্যমে বাচ্চাদের পার্সোনালিটি প্রোফাইল বের করে সে প্রোফাইল অনুযায়ী তারা দুজন মিলে বাচ্চাদের মাঝ থেকে সেরাটা বের করে আনার জন্য অনেকগুলো পরামর্শ বা কৌশল বের করেছেন। বের করেছেন, কোন ধরণের বাচ্চার সাথে কীভাবে আচরণ করতে হবে তাও। এক কথায় বলতে গেলে, শেখার বা সফল করার একটা ন্যাচারাল উপায় তিনি বাতলে দিয়েছেন। লিখেছেন একটি বইও। এই মহান শিক্ষাবিদের সেই বই অবলম্বনে আমরা বিজ্ঞানবাক্স ব্লগের পাঠকদের জন্য একটা সিরিজ লেখা শুরু করেছি। আগের ব্লগের মাধ্যমে আপনি আপনার সন্তানের পার্সোনালিটি টাইপ বের করতে পারবেন। আর আমরা ধাপে ধাপে সব পার্সোনালিটির বাচ্চাদের জন্য আপনাকে পরামর্শ দিবো ও জানাবো আপনার বাচ্চার সেরাটা বের করে আনার জন্য আপনার ভূমিকা কেমন হতে হবে। আপনার বাচ্চার পার্সোনালিটি প্রোফাইল জানা না থাকলে জেনে নিন আমাদের এই টেবিলটা দেখে। আর আজকে জেনে নিন ENFJ প্রোফাইল এর বাচ্চাদের জন্য পরামর্শ।
ENFJ প্রোফাইল কে এককথায় উদ্যমী বলা যায়। ENFJ প্রোফাইল এর শিশুদের ডিল করার ক্ষেত্রে সবসময় দুটো জিনিস মাথায় রাখতে হবে। সেগুলো হলো, এরা অনেক অনুভূতিপ্রবণ ও ক্রিয়েটিভ হয়ে থাকে। ENFJ প্রোফাইল শিশুরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয় ফিলিংসকে বা তাদের অনুভূতিকে। তাদের সিদ্ধান্ত নেয়া, তাদের চারপাশের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে তারা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয় ফিলিংসকে। তারা সম্পর্কের ব্যাপারে অনেক আন্তরিক হয়ে থাকে। ভালোবাসা প্রকাশ করতে চায় ও একই সাথে তার প্রতি মানুষের আগ্রহকে দেখতে চায়। নিজের কাজের প্রশংসা শুনতে ভালোবাসে। আপনি যদি তার কোন কাজের জন্য তার প্রশংসা করেন সে অনেক বেশি উদ্যম পায়। সোজা কথা তাদেরকে দিয়ে দারুন কিছু করাতে চাইলে তাদের প্রশংসা করতে হবে।
তারা অনেক ক্রিয়েটিভও হয়ে থাকে। সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে তারা নিজের মতো করে নতুন কোন পদ্ধতি অনুসরণ করতে পছন্দ করে। এদের ক্রিয়েটিভিটিকে কাজে লাগাতে চাইলে তাদের এই সমস্যা সমাধানের ক্ষমতাকে উৎসাহিত করতে হবে। তাদেরকে নিজের মতো করে ভাবার ও চিন্তা করার সুযোগ দিতে হবে। তাহলেই তাদের ভেতর থেকে সেরাটা বের হয়ে আসবে।
প্রি-স্কুলার ENFJ প্রোফাইল ( জন্মসাল থেকে ৪ বছর বয়স পর্যন্ত)
তাদেরকে আগেই উদ্যমী বলা হয়েছে। একদম ছোট থেকেই তাদের এই গুণটি চোখে পড়বে। নতুন সবকিছুকে হাসিমুখে গ্রহণ করার একটা দারুন চেষ্টা থাকবে তাদের। ছোট থেকেই দেখা যাবে, নতুন নতুন বাচ্চাদের সাথে খেলায় তার ব্যাপক আগ্রহ। অপরিচিত কোন বাচ্চার সাথেও খুব সহজেই মিশে যাবে। বড়দের মাঝে কথা বলায়ও তার ব্যাপক আগ্রহ থাকবে। তাদেরকে কিছুটা এটেনশন সিকার মনে হবে। সবসময় এটেনশন পেতে চাইবে। তারা প্রায় ক্রিয়েটিভ কিছু করে বড়দের অবাক করে দিতে চাইবে। গান গাওয়া, নাচা, লাফালাফি করা, হুটহাট কোন মজার এক্সপ্রেশন দেয়া ইত্যাদির মাধ্যমে নিজের অবস্থান জানান দিবে ও তার প্রতি আগ্রহ ধরে রাখতে চাইবে। তার এই আচরণের জন্য বিরক্ত হওয়া যাবে না। বরং তার এইসব মজার কাজকর্মে মনোযোগের সাথে দেখতে হবে, তাকে আগ্রহ দেখাতে হবে, তার প্রশংসা করতে হবে। কারণ এটাই তার ন্যাচারাল এপ্রোচ। সে এভাবেই উদ্যম পাবে ও শিখবে। একটা জিনিস মনে রাখতে হবে, এই ধরণের বাচ্চাদের জন্য একা হয়ে যাওয়া বেশ যন্ত্রণাদায়ক। একা হয়ে গেলেই সে চুপসে যাবে ও বিরক্ত হবে।
তারা অনুভূতি দ্বারা তাড়িত হয় অনেক। ভালোবাসা প্রকাশ করে। তার আশপাশের অন্যকোন বাচ্চা বা তার কোন বন্ধু কোন কারণে আপসেট হলে বা কাঁদলে সে খুব দ্রুত তাকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে যাবে। তাকে খুশি করার জন্য নিজের খেলনা দিবে, তার সাথে খুঁটিনাটি দুষ্টামি করবে। তারা তাদের বয়সি বা তাদের চেয়ে ছোট বাচ্চাদের প্রতি আদুরে হয়। অভিভাবকসূলভ দায়িত্ব নিতে চায়।
তারা সবসময় মানুষের সাথে থাকতে চায়। একা হতে চায় না। বাবা-মা কিংবা বড় ভাইবোনের সাথে খুব নিবিড়ভাবে থাকতে পছন্দ করে। অনেকটা গায়ে গড়ানোর মতো। এজন্য স্বাভাবিকের চ্যে কিছুটা বেশি বয়সেও তাদেরকে আলাদা ঘুমাতে দিলে তারা তা পারবে না। তা করাও ঠিক নয়। অনেকের পোষাপ্রাণীর ও নিজের খেলনার প্রতি অনেক আগ্রহ থাকে। খেলনা সাথে করে ঘুমায়, বাইরে যাওয়ার সময় নিজের প্রিয় খেলনাটা সাথে নিয়ে নেয়। তারা এতটাই চঞ্চল হবে যে, অসুস্থ অবস্থায়ও তাদের মাঝ থেকে এই চঞ্চলতা ভাব যাবে না। ডাক্তার দেখাতে গেলে ডাক্তারের সাথেও সে মিশে যাবে, মজা করবে। এবং তাকে অবশ্যই তার কম্পোর্ট জোন দিতে হবে। বিরক্ত হওয়া যাবে না।
ENFJ প্রোফাইল এর বাচ্চারা শিল্প, সাহিত্য, ঐতিহ্যের প্রতি আগ্রহী থাকে অনেক। নাচ, গান, ছবি আঁকা এমন অনেক ক্রিয়েটিভ বিষয়ের প্রতি তাদের আগ্রহ থাকে। নতুন কিছু শিখলে সেটা কাউকে দেখানোর জন্য ও জানানোর জন্য তার ভেতরে একটা মরিয়া ভাব লক্ষ্য করা যায়। বাসার লোকজন থেকে শুরু করে স্বল্প পরিচিত, আত্মীয় স্বজন সবাইকে সে তার নতুন স্কিলটা দেখাতে চায়। তার এই উদ্যকমে ধরে রাখতে হবে তার প্রশংসা করে, তাকে উৎসাহ দিয়ে, অনুপ্রেরণা দেয়ার মাধ্যমে।
প্রি-স্কুলার ENFJ প্রোফাইল -দের একটা সমস্যা হলো, এরা খুব দ্রুত কষ্ট পায় ও আপসেট হয়ে যায়। ০-৪ বছর বয়সিদেরকে সামান্য উঁচু গলায় বা রাগান্বিত হয়ে কিছু বললেও সে কেঁদে দিবে, আপসেট হয়ে যাবে। কখনো কখনো তারা ভয় পেলে বা রাগান্বিত কোন আচরণের শিকার হলে শারীরিক ভাবে অসুস্থও হয়ে যেতে পারে। তবে একটা মজার বিষয় হচ্ছে, একটু আহ্লাদ পেলে এরা খুব দ্রুত এই সমস্যা কাটিয়েও উঠতে পারে। তার সাথে এমন কোন আচরণ হওয়ার পর যদি তাকে একটু আদর করা হয়, একটু আহ্লাদ দেখানো হয় সে দ্রুত আবার তার আগের চরিত্রে ফিরে আসে। এজন্য এরা কখনো আপসেট হয়ে গেলে তাদেরকে একা করে দেয়া যাবে না। দ্রুত কোন পারিবারিক আবহে নিয়ে আসতে হবে। এমন উদ্যমী গ্রুপ পেলে, পারিবারিক আবহ পেলে এই টাইপ বাচ্চারা উদ্যমও পায়।
স্কুল পড়ুয়া ENFJ প্রোফাইল (বয়স ৫-১০ বছর)
স্কুল নিজেকে উপভোগ করার একটা দারুন মঞ্চ ENFJ দের জন্য। অনেক বন্ধু, অনেক বৈচিত্র্য, নতুনভাবে শেখার সুযোগ, নতুন নতুন মানুষের সাথে মেশার সুযোগ এমন অনেক সুযোগ থাকার কারণে স্কুলকে তারা নিজেকে মেলে ধরার দারুন এক মঞ্চ হিসেবে আবিষ্কার করে। এই ধরণের বাচ্চারা গ্রুপ অ্যাক্টিভিটি পছন্দ করে। সাহায্য করতে ও সাহায্য পেতে পছন্দ করে। স্কুলে খুব দ্রুতই শিক্ষক ও ক্লাসের বন্ধুদের সাথে এদের একটা ভালো বন্ধন তৈরি হয়। যদি কোন কারণে তা নাও হয়, তাহলে তাদেরকে স্কুলের কোন গ্রুপ অ্যাক্টিভিটির সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিতে পারলে তারা খুব সহজেই স্কুলের প্রেমে পড়ে যাবে।
কিছু ENFJ প্রোফাইল-রা পারফরমিং আর্টের প্রতি আগ্রহী থাকে। স্কুলের সৃজনশীল ও শিল্প সম্পর্কিত গ্রুপগুলোর সাথে তাদের একটা বন্ধন তৈরি হয় দ্রুত এবং তারা এটাকে উপভোগও করে। ক্রিয়েটিভ লেখালেখি, থিয়েটার, মিউজিক ইত্যাদির প্রতি এদের আগ্রহ থাকবে। অনেকের আগ্রহ থাকবে গ্রুপ স্পোর্টসের প্রতি। ENFJ টাইপরা অনেক দারুন গ্রুপ মেম্বার হয়ে থাকে। এবং মজার বিষয় হলো এরা নেচারিলি স্পোর্টসের জন্য বেশ স্কিলফুল হয়। মজা ও বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে টিমের সবাইকে ফুরফুরে করে রাখা, টিমের মধ্যে একটা উৎসব উৎসব ভাব রাখা ইত্যাদি কাজে এরা বেশ পটু। অনেক বাবা-মা মনে করেন এই আগ্রহের কারণে তার পড়ালেখায় সমস্যা হতে পারে। কিন্তু মজার বিষয় হলো, তারা যখন এমন গ্রুপে থাকবে তখনই তারা অন্যসব কাজে আগ্রহ পাবে, অন্যান্য কাজের জন্য এনার্জি পাবে। যদি তাদেরকে এসব কাজে বাধা দেয়া হয় কিংবা তাদের পরিসরটা ছোট করে দেয়ার চেষ্টা করা হয় তাহলে তারা উৎসাহ ও উদ্যম হারিয়ে চুপসে হয়ে যাবে।
এক্ষেত্রে একটা সমস্যা হতে পারে। তা হলো, এই টাইপ বাচ্চারা যদি টিম থেকে কোন কারণে মানসিকভাবে দূরে সরে যায় কিংবা টিমের সাথে কোন দূরত্ব সৃষ্টি হয় তাহলে তারা দ্রুত আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এবং এটা তাদের জন্য বেশ ক্ষতিকর। সেজন্য তার টিমমেট, গ্রুপের প্রধান বা স্পোর্টসের কোচদের বন্ধুভাবাপন্ন হওয়া জরুরী। কিংবা এই সমস্যা সমাধানের জন্য টিমমেটস, কোচদের সাথে আলোচনাও করা যেতে পারে।
গ্লোবাল ইস্যু, নতুন নতুন টপিক, বিভিন্ন কালচার, জাতি, ধর্ম এইসবের প্রতি এদের বেশ আগ্রহ থাকে। এথিক্স, সৃষ্টি, ধর্ম ইত্যাদি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা এদের পছন্দ। সব ধরণের আলোচনায় নিজের দেখায় জায়গা থেকে নিজের মতামত জানাতে পছন্দ করে। একই সাথে ভিন্নমতের প্রতি তাদের সম্মনও থাকে। চারপাশেরকে আরো ভালো করা, মানবিকতা বোধ, মানুষকে সাহায্য করার প্রতি এদেরকে অনেক বেশি আগ্রহ থাকে। এইসব বিষয় নিয়ে ছোট থেকেই এদের আগ্রহের জন্য এদেরকে কিছুটা ইঁচড়েপাকা মনে হতে পারে। কিন্তু তাই বলে আগ্রহকে নিরুৎসাহিত করা যাবে না। বরং এদেরকে চিন্তার স্বাধীনতা দিলে এরা দারুন কিছু করে দেখানোর ক্ষমতা রাখে।
আগেই বলা হয়েছে ENFJরা অনেক বেশি আবেগি হয়ে থাকে। তারা কাউকে কষ্ট দিতে চায় না। বিপদে সবাইকে সাহায্য করতে চায়। সেজন্য তাদের কাছের কোন বন্ধু কিংবা পরিবারের কারো সমস্যার সাথে তারা প্রায় সরাসরি যুক্ত হয়ে যায়। তারা সম্পর্কের প্রতি অনেক বেশি দুর্বল থাকে। তাদের দ্বারা কেউ কষ্ট পাবে এই বিষয়টা তারা নিতে পারে না। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় তাদের বন্ধু বা আপন কারো জন্য এমন কোজ করতে যার প্রতি তাদের ব্যক্তিগতভাবে কোন আগ্রহ নাই। তারা তাদের বন্ধু ও আপন কারোর কোন বিপদে কিংবা খারাপ সময়ে নিজেও কিছুটা আপসেট হয়ে যায়। পারিবারিক সমস্যা, বাবা-মার ঝগড়া, বিবাহ বিচ্ছেদ কিংবা খুব কাছের কারো চলে যাওয়া, মৃত্যু ইত্যাদি তাদের উপর অনেক প্রভাব ফেলে। এই সমস্যা থেকে বের হতে তাদের একটু সময় লাগে। সেজন্য এই সময়গুলোতে তাদেরকে অনেক বেশি সময় দিতে হবে। তাদের অনুভূতি বুঝতে হবে। তাদেরকে বেশি বেশি করে সবার মাঝে রাখতে হবে।
ENFJ দের একটা সমস্যা বলা যেতে পারে, তারা অনেক কিছু একদম ব্যক্তিগতভাবে নিয়ে নেয়। তাদের কোন আইডিয়া, মতামত বা যুক্তিকে কেউ সরাসরি ক্রিটিসাইজ করলে, বিরোধিতা করলে এটা তাদের বেশ আঘাত করে। কখনো কখনো তাদের এমন আচরণকে একদম যুক্তিসঙ্গত মনে হবে না। এক্ষেত্রে তাদের কোন সমালোচনা করার ক্ষেত্রে বা তাদের কোন কাজে যৌক্তিত বিরোধিতা করার ক্ষেত্রেও খেয়াল রাখা উচিত সেটা যেন তাদেরকে আঘাত না করে। সরাসরি তাদের সাথে দ্বিমত পোষন না করে সময় নিয়ে যুক্তি সহকারে আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্ত পৌঁছানোই হবে বুদ্ধিদীপ্ত কাজ।
ENFJ টাইপ বাচ্চারা স্বাধীনতা চায়। তাদেরকে স্বাধীনভাবে চলতে দিলেই তাদের মাঝ থেকে সর্বোচ্চ সম্ভাবনাটা বের করে আনা যাবে। আর তাদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা মানে তাদেরকে থামিয়ে দেয়া। এক্ষেত্রে বেশি সমস্যায় পড়ে ENFJ মেয়ে সন্তানেরা। কিছুটা বড় হওয়ার পরই তাদের সামাজিক কিছু রীতিনীতির সম্মুখীন হতে হয়। এবং আমাদের সামাজিক অবস্থানে তা বেশ শক্ত। এই স্বাধীনতা না পাওয়ার কারণে তারা ধীরে ধীরে তাদের ফ্যান্টাসির জায়গা, তাদের প্যাশনের জায়গা থেকে সরে আসে। কারণ তারা কোন ধরণের সংঘর্ষ পছন্দ করে না। তারা যখন বুঝতে তাদের স্বপ্নের সাথে তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশের সংঘর্ষ তৈরি হবে তখন তারা সবসময় নিজের স্বপ্নকে সেক্রিফাইস করার কথা ভাবে। এক্ষেত্রে যে সমস্যাটা হয়, তা হলো তারা তাদের প্রতিভাকে সর্বোচ্চ প্রকাশ করতে পারে না। আপনার অজান্তেই আপনার সন্তান তার ভালোলাগা, তার ফ্যান্টাসি থেকে সরে আসে।
টিনেজার ENFJ প্রোফাইল (বয়স ১১-১৬ বছর)
ENFJ প্রোফাইল একাডেমিক পড়ালেখায় ভালো হয়। পারফরমিং আর্ট ও সৃজনশীল লেখালেখিতে এদের আগে আগ্রহ থাকার ফলে এরা হিউমেনিটিস, লিটারেচার, সোস্যাল স্টাডিজ বিষয়গুলোকে উপভোগ করে। বিদেশী ভাষা শেখার ব্যাপারে এদের একটা আগ্রহ থাকে। তাদের এই সময়ের এক্টিভিটিজের দিকে বিশেষ নজর দেয়া উচিত। তারা অনেকক্ষেত্রে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া ও সম্ভাব বিকল্প নিয়ে না ভাবার কারণে তারা এই সময়ে কিছু ভুল করতে পারে। যেহেতু এই সময়েই তার ক্যারিয়ারের একটা টার্নিং পয়েন্ট সেজন্য এই সময়ে সিদ্ধান্তগুলো একটু ক্রস চ্যাক করতে হবে। তাদের সিদ্ধান্ত নেয়ার স্বাধীনতাতো থাকবেই। কিন্তু সেই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তার সাথে অভিভাবকের উচিত আলোচনা করা ও অন্যান্য সম্ভাবনা নিয়ে তাকে ভাবতে সাহায্য করা।
ENFJ প্রোফাইল রা অনেক বেশি স্বপ্নবাজ হয়ে থাকে। সবসময় নতুন আইডিয়া নিয়ে মেতে থাকে। কখনো কখনো ফ্যান্টাসি ও আইডিয়াগুলো সম্পূর্ন বাস্তবতাবিমুখ মনে হতে পারে। সে তার এই বিষয়গুলোকে নিজের ভেতর লালন করে। বিষয়গুলো অনেকটাই বাস্তবতাবিমুখ হওয়ায় সে সেটা খুব একটা শেয়ারও করতে চায় না। সেজন্য চাইলে তাকে এটা থেকে বের করা যাবে না। জোর করলে হিতে-বিপরীত হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে অনেকে পরামর্শ দিয়ে থাকেন তাকে একটা ডায়রি মেন্টেনের ব্যপারে উৎসাহিত করতে। তার ভাবনা, স্বপ্ন সব সে সেখানে লিখে রাখবে। এরপর কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রয়োজন হলে তার সাথে আলোচনা করে, প্রয়োজনের তার অনুমতিক্রমে তার ডায়রি দেখে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যেতে পারে।
এই সময়ে তাকে বন্ধুদের সাথে অনেক বেশি আড্ডা দিতে দেখা যাবে। এদিকসেদিক ঘুরাঘুরি, আড্ডা ইত্যাদিতে যুক্ত থাকতে দেখা যাবে। আসলে তারা অনেক বেশি আড্ডাবাজ হলেও তারা কিন্তু তাদের দায়িত্বের ব্যাপারে সচেতন। অনেকে এই সময়ে তাদের এই ধরণের জীবনযাপনে বাধা প্রদান করে। কিন্তু তা উলটো তাদের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাদেরকে স্বাধীনতা দিন। এবং একই সাথে তার সকল সমস্যা নিয়েও কথা বলার সুযোগ করে দিন। তার অনুভূতি বুঝে তাকে পর্যাপ্ত সময় দিন।
কেমন হবে ENFJ-দের প্রতি আমাদের আচরণ! এক নজরে জেনে নিই।
• তার সাথে তার অনুভূতি নিয়ে সরাসরি কথা বলতে হবে, অনুমান করে সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না। এরপর একই সাথে ইতিবাচক ও নেতিবাচক অনুভুতিকে সাপোর্ট করুন।
• তাদের মতামত, অনুভূতি, সিদ্ধান্তকে সরাসরি আঘাত করা বা বিরোধিতা করা যাবে না। তাদেরকে লজ্জা দেয়া, হেয় করা যাবে না।
• তার সোসাল ইন্টারেকশনের উপর বিধি নিষেদ জারি করা যাবে না। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়া, ঘুরতে যাওয়া এইগুলোকে পজেটিভ ভাবে নিতে হবে।
• তাদের প্রতি ভালোবাসাকে প্রকাশ করতে হবে। তারা ভালোবাসা পেতে চায়। সবসময় তাদের কোন কাজকে উৎসাহিত করে যেতে হবে। উৎসাহ পেলে তারা দ্বিগুন বেগে কাজ করতে পারবে।
• তাদের সাথে ফিজিক্যাল টাচকে গুরুত্ব দিতে হবে। জড়ায়ে ধরা, চুমু খাওয়া, আদর করা, মজা করা ইত্যাদি এদেরকে অনেক বেশি চার্জডআপ করে।
• তাদের ফ্যান্টাসি, স্বপ্ন এইগুলো তারা শেয়ার করতে চাইলে আগ্রহ নিয়ে শুনতে হবে। কোনভাবেই ক্রিটিসাইজ করা যাবে না।
• আর্ট-কালচারের প্রতি যাদের আগ্রহ থাকায় তাদেরকেও পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে। যারা স্পোর্টসে আগ্রহী তাদেরকেও স্বাধীনতা দিতে হবে। তাদের ভালোলাগা ও আগ্রহের কাজগুলো থেকেই তারা সবচেয়ে বেশি এনার্জি পেয়ে থাকে।
• তাদের সাথে নিয়মিত কিছু সময় নিয়ে কথা বলতে হবে। অন্তত সপ্তাহে একদিন। তারা যে স্পেশাল আপনার কাছে এই বোধটা তার ভেতর ঢুকাতে হবে।
• তাদেরকে সিদ্ধান্ত নেয়ার স্বাধীনতা দিন। আপনার কাছে যদি মনেও হয় তার সিদ্ধান্তটা সঠিক নয় তবুও তার সিদ্ধান্তকে যথাযথ সম্মান করে আলচনার মাধ্যমে একটা সিদ্ধান্তে আসতে পারেন।
• তাদের কোন ভুলের জন্য দ্রুত তাদেরকে ক্ষমা করে দিন। রাগ করে কথা বন্ধ করে দেন অনেকে। এটা এদের জন্য ভয়াবহ ক্ষতির কারণ। এরা একা হলেই চুপসে যায়।
• তারা যেহেতু অনেক কিছুর সাথে সংযুক্ত থাকতে পছন্দ করে, সেজন্য তাদেরকে তাদের ভালোলাগার কাজগুলো করতে সাহায্য করুন।
• তাদের তাদের কথা বলার জন্য সুযোগ দিতে হবে, সাহস দিতে হবে, নিজের মতো চলার অধিকার দিতে হবে। সমাজ, চারপাশের পরিবেশ বা কারো দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তাদেরকে স্বাভাইক জীবনে বাধা প্রধান করা যাবে না।
আপনার সন্তানের কৈশোর ও শৈশব সুন্দর হোক। বিজ্ঞানবাক্স টিমের পক্ষ থেকে তার উজ্জ্বল ও সাফল্যমণ্ডিত ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা রইলো।
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
1,478 total views, 2 views today