শিশুর নাকে এলার্জির সমস্যা? অনেক দিন ধরেই সর্দি, হাঁচি, কাশি যাচ্ছে না? গেলেও দু-একদিন পর আবার হচ্ছে? ঔষধ, যত্ন কোন কিছুতেই অসুখ সারছে না? তাহলে এবার শিশুর খেলনা গুলোর দিকে নজর দিন। সমস্যার গোড়ায় শিশুদের প্রিয় টেডি বিয়ার বা এই জাতীয় কোন নরম পশমি খেলনা থাকতে পারে। খেলনা নিয়ে অনেক বেশি সময় থাকার ফলে ও শিশুর খেলনা জড়িয়ে ঘুমানোর ফলে শিশুর নাক অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হতে পারে।
নরম পশমি শিশুর খেলনা কেন ক্ষতিকর?
শিশুদের ফুসফুস রোগ বিশেষজ্ঞরা বলেন “শিশুর সবচেয়ে প্রিয় টেডি বিয়ার নিয়মিত পরিষ্কার করুন নয়তো শিশুর থেকে তা দূরে রাখুন”। এই বাক্য থেকেই বোঝা যায়, খেলনা শিশুদের কতটুকু ক্ষতি করতে পারে! খোলা জায়গায় থাকার ফলে, দীর্ঘদিন পরিষ্কার না করার ফলে শিশুর খেলনা’র মধ্যে ব্যাকটেরিয়া ও বিভিন্ন জীবাণু থাকতে পারে, যা নিঃশ্বাসের সাথে শিশুর নাকে প্রবেশ করে। যেসব শিশুরা নরম পশমি খেলনা নিয়ে বেশি সময় কাটায় ও পশমি খেলনা নিয়ে ঘুমাতে যায় তাদের রাইনাইটিস সহ অন্য অনেক এলার্জি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। রাইনাইটিস সাধারণ ধুলার মধ্যে থাকা অতি ক্ষুদ্র পরজীবী, সিগারেটের ধোঁয়া ইত্যাদির মাধ্যমে ছড়ায় সেই রাইনাইটিসই পশমি খেলনার মাধ্যমেও ছড়াতে পারে। নাকে রাইনাইটিস হওয়ার ফলে নাকে অস্বাভাবিক হারে এলার্জির প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। ফলে নাকে ক্ষত হয়ে ইনফেকশন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেখান থেকে সর্দি, হাঁচি, কাশি ইত্যাদি রোগ শিশুর পিছু ছাড়তে চায় না।
ঝুঁকি
গবেষণায় দেখা গেছে প্রায় ২৯ শতাংশ শিশুর মাঝে রাইনাইটিস জাতীয় এলার্জিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বিশেষ করে যে বয়সের বাচ্চারা টেডি বিয়ার জাতীয় খেলনার প্রতি আগহী থাকে তারা বেশি ঝুঁকিতেও থাকে। দোকানে সাজিয়ে রাখা সুন্দর সুন্দর শিশুদের প্রিয় খেলনাগুলোতেও থাকতে পারে এমন ঝুঁকি। সাধারণত অনেক দিনের অপরিচ্ছন্ন স্থান ও মানুষের মৃত ত্বকের মধ্যে জন্ম নেয় অতি ক্ষুদ্র পরজীবী, যা পরবর্তীতে রাইনাইটিসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। শিশুরা তাদের খেলনার সাথে অনেক ঘনিষ্ঠ হয়ে থাকে বলে এই সব পরজীবী তাদের শরীরে প্রবেশ করার সুযোগ পায়। সবচেয়ে বড় ঝুঁকির বিষয় হচ্ছে, রাইনাইটিস জনিত সমস্যার কারণে পরবর্তীতে শিশুদের অ্যাজমাও হতে পারে।
সমাধান
শিশুদের জন্য ওয়াশেবল খেলনা পছন্দ করতে হবে। শিশুর খেলনা ধোয়ার মাধ্যমে এই ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। তবে ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে যেন, খেলনা সম্পূর্ণরূপে জীবাণুমুক্ত হয়। শিশুদের খেলনা পরিষ্কার করার সময় আরো কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে।
• মেশিন ওয়াশেবল খেলনাগুলোও প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার গরম পানিতে ৪৫ মিনিট রেখে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে।
• খেলনা মেশিন ওয়াশেবল না হলে, হালকা ডিটারজেন্ট ব্যবহার করে গরম পানিতে ভিজিয়ে ভালো ভাবে মেজে ধুয়ে ফেলতে হবে। এরপর সূর্যের আলোতে ভালোভাবে শুকাতে হবে। সম্ভব হলে পলি মুড়িয়ে ফ্রিজে রাখতে হবে কিছুক্ষণ।
• খেলনা নিয়ে ঘুমাতে না দেয়াই উত্তম।
• নরম, পশমি খেলনা শিশুকে যত কম দেয়া যায় ততই ভালো।
শিশুদের খেলনা হোক নিরাপদ। আমরা একটু সচেতন হলে শিশুদেরকে নিরাপদ রাখা সম্ভব।
আপনি কি জানেন, রাইনাইটিস দুধরণের হয়ে থাকে? সিজনাল রাইনাইটিস ও পেরেনিয়াল রাইনাইটিস।
সাধারণত বসন্ত কাল ও বসন্ত কালের শেষের দিকে আবহাওয়ার পরিবর্তনের ফলে যে রাইনাইটিস হয় তা সিজনাম রাইনাইটিস নামে পরিচিত। আর সরাসরি এলার্জির প্রতিক্রিয়ায় যে রাইনাইটিস হয় তা পেরেনিয়াল রাইনাইটিস নামে পরিচিত। আগামি পর্বে আমরা রাইনাইটিসের প্রতিরোধ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানবো।
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
1,536 total views, 2 views today