শিশুকে কখন থেকে মায়ের দুধের পাশাপাশি বাড়তি খাবার দিতে হবে? বাড়তি খাবার হিসেবে কোন কোন খাবারগুলো শিশুর জন্য উপকারী? বাড়তি খাবার দিলে কোন সমস্যা হবার সম্ভাবনা আছে কী না? অনেক বাবা-মার মনেই এইসব প্রশ্ন থাকে। চলুন আজকে জেনে নিবো, কখন থেকে বাড়তি খাবার দিতে হবে? কী দিতে হবে, কী দেয়া যাবে না? এবং কিছু সতর্কতা।
শিশুকে বাড়তি খাবার দেয়ার সঠিক সময়
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী শিশুর বয়স ৪-৬ মাস হলে তাকে মায়ের দুধের পাশাপাশি বাড়তি খাদ্য দিতে হবে। কিন্তু সাধারণত ৬ মাসের আগে শিশুকে বাড়তি কোন খাবার দেয়া উচিত নয়। কিন্তু কোন কোন শিশুর শারীরিক ক্রমবিকাশ দ্রুত হলে কেবল সেইসব শিশুকে ৪ মাসের পর থেকে সীমিত আকারে বাড়তি কিছু দেয়া যেতে পারে। বয়সের সাথে সাথে শিশুর শারীরিক উন্নতি দেখেও এই বাড়তি খাবার দেয়ার সঠিক সময় নির্ধারণ করা যায়।
• শিশু কারো সহযোগিতা ছাড়া শোয়া থেকে উঠে বসতে পারলে বুঝতে হবে সে বাড়তি খাদ্য গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত।
• শিশুর মুখে মায়ের দুধের পাশাপাশি চা-চামচে করে নরম জাতীয় খাবার দিলে যদি সে খাবার ফেলে না দিয়ে স্বাভাবিক ভাবে গ্রহণ করে তাহলে বুঝতে হবে শিশু বাড়তি খাবার গ্রহণে প্রস্তুত।
• শিশুর সামনে বড়রা কোন কিছু খেলে শিশু যদি সেই খাবারের প্রতি আগ্রহ দেখায় তখন থেকে শিশুকে বাড়তি খাদ্য দেয়া যেতে পারে।
• শিশুর ওজন জন্ম সময়ের থেকে দ্বিগুন হলে বাড়তি খাদ্য দেয়া যাবে। কিংবা শিশুর ওজন ১৩ পাউন্ড (প্রায় ৬ কেজি) হলেও শিশুকে বাড়তি অন্য খাবার দেয়া যাবে।
• শিশু যদি বাড়তি খাবার গ্রহণ করার জন্য পর্যাপ্ত হা করতে পারে, তখন তাকে বাড়তি খাদ্য দেয়া যাবে।
আরো জানতে পড়ুন-কোন খাবার কখন খাওয়া উপকারী
শিশুকে বাড়তি খাবার হিসেবে যে সব খাবার দেয়া যেতে পারে
তাজা ফল
শিশুর প্রথম বাড়তি খাবার হিসেবে তাজা ফল দেয়া যেতে পারে। আপেল, নাশপাতি, কলা, পেঁপে দেয়া যেতে পারে। আপেল ও নাশপাতির মতো একটু শক্ত ফলের চামড়া ছাড়িয়ে ভালোভাবে বিশুদ্ধ করে ব্লেন্ড করে দেয়া উচিত। প্রয়োজনে শক্ত ফলমূল ৩-৪ মিনিট সেদ্ধ করে নিতে পারেন। পাকা কলা ও পাকা পেঁপে শিশুর খাওয়ার মতো যথেষ্ট নরম হলে খাওয়ানো উচিত। মিষ্টি জাতীয় ফল শিশুর প্রথম বাড়তি খাবার হিসেবে অনেক কার্যকর।
সবজী
শিশুকে বাড়তি খাবার হিসেবে দেশীয় সবজী দেয়া যেতে পারে। মিষ্টিআলু, শালগম, মিষ্টি কুমড়া, লাউ ইত্যাদি দেশী সবজীগুলো মিষ্টি জাতীয় হওয়ায় শিশু খেতে চায়। এই সবজীগুলোকে ভালোভাবে সেদ্ধ করে ব্লেন্ড অথবা জুস করে দুধ কিংবা ফর্মুলার সাথে মিলিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে। মিষ্টি আলুর কথা আলাদাভাবে বলা উচিত। মিষ্টি আলুতে প্রচুর পরিমাণে বিটা-ক্যারোটিন রয়েছে যা শিশুর দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
মাংস
শিশুর প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করার জন্য মায়ের দুধের সাথে অতিরিক্ত খাবার হিসেবে মাংস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিশুকে মাংস সরাসরি না দিয়ে মাংসের স্যুপ বানিয়ে চা-চামুচে করে অল্প অল্প করে খাওয়ানো যেতে পারে। প্রোটিনের যোগানের জন্য দেশি মাছও খাওয়ানো যেতে পারে। মাছের সকল কাঁটা ছাড়িয়ে নিয়ে একেবারে নরম করে খাওয়ানো উচিত, যাতে শিশুর গলায় আটকে চোকিংয়ের মতো সমস্যা না হয়।
চাল ও সুজি
এইসময় শিশুকে একদম পাতলা করে সুজি অথবা চালের গুড়া খাওয়ানো যেতে পারে। চালের গুড়াকে পানি দিয়ে একদম সুজির মতো করে দুধের সাথে অথবা ফর্মুলা দুধের সাথে মিশিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে। শিশুর বয়স বাড়ার সাথে সাথে হালকা শক্ত খাবারও দিতে পারেন।
শিশুকে বাড়তি খাদ্য দেয়ার সময় কিছু কিছু খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। আগামী পর্বে আমরা জানবো, শিশুকে বাড়তি খাবার হিসেবে কোন কোন খাবারগুলোকে এড়িয়ে চলতে হবে। ততক্ষণ পর্যন্ত বিজ্ঞানবাক্সের সাথে থাকুন।
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
তথ্যসূত্র- Thebump
1,840 total views, 1 views today