প্রায় প্রত্যেক বয়সের মানুষের কোষ্ঠ্যকাঠিন্যের সমস্যায় পড়তে হয়। কিন্তু বেশির ভাগ শিশুর ক্ষেত্রেই কোষ্ঠকাঠিন্য একটি সাধারণ সমস্যা। বিশেষ করে বেশি সমস্যায় পরতে হয় যখন শিশু নতুন বা শক্ত খাবার শুরু করে। সাধারণত শিশু নতুন ও শক্ত খাবার খেতে শুরু করে ৩-৫ বছর বয়স থেকে। ঠিক এই সময়ে শিশুদের কোষ্ঠ্যকাঠিন্য প্রবল আকার ধারণ করে। তখন কোষ্ঠ্যকাঠিন্য নিয়ে মা বাবা কে দুশ্চিন্তায় পড়তে হয় কেননা তারা শিশুর এই সমস্যা বুঝতে পারেন না। তাই মা বাবার কোষ্ঠ্যকাঠিন্য ও তার লক্ষণ সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। পেট শক্ত হয়ে থাকা, পেট ফুলে থাকা, পেটে ব্যথা, ক্ষুধামন্দা, শিশু খেতে না চাওয়া কিংবা বমি করা এই লক্ষণ গুলোই কোষ্ঠ্যকাঠিন্যের প্রধান লক্ষণ।
শিশু সপ্তাহে তিনবারের কম মলত্যাগ করে ও মল যদি খুব শক্ত হয়ে মলদ্বারে ব্যথা সৃষ্টি করে তবে তাকে কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হয়।
চলুন জেনে আসি শিশুর কোষ্ঠ্যকাঠিন্য রোধে ৬ টি করনীয়-
১। পরিমাণ মত পানি পান-
কোষ্ঠ্যকাঠিন্য রোধে প্রথম করনীয় হচ্ছে শিশুকে পরিমাণ মত পানি খাওয়াতে হবে। কেননা পানি খাবার হজম করতে সাহায্য করে। পানি মলাশয় দ্রুত পরিষ্কার করে। শিশু পানি পানে অনীহা দেখালে তাকে ফলের জুস, স্যুপ কিংবা শরবত খাওয়াতে পারেন। তবে অতিরিক্ত পানি পানে সাবধান থাকতে হবে।
আরও পড়তে পারেন- শীতকালে শিশুকে রোগ মুক্ত রাখুন। জেনে নিন ৮ টি পরামর্শ।
২। আঁশ জাতীয় খাবার দেওয়া-
শিশুর খাদ্য তালিকায় পুঁইশাক, ডাঁটাশাক, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, কচুশাক, কলমি শাক, মিষ্টি আলুর শাক, মুলা শাক জাতীয় আঁশ জাতীয় খাবার রাখুন। কেননা আঁশ জাতীয় খাবার হজমে দারুন উপকারী এবং মল নরম করতে সাহায্য করে। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে দারুন ভূমিকা রাখে।
৩। ফাস্টফুড ও জাঙ্ক ফুড পরিহার করা-
ফাস্টফুড ও জাঙ্কফুড হজমের সমস্যা করে এবং হজম হতে দেরী হয়। চিপস, চকোলেট, আইসক্রিম, পিৎজা, বার্গার এই জাতীয় খাবার শিশুরা বেশি পছন্দ করে। কিন্তু এসব খাবার হজমের প্রচণ্ড ক্ষতি করে এবং হজম হতেও দেরী হয়। তাই এই জাতীয় খাবার যত এড়িয়ে যাওয়া যায় ততই উত্তম।
৪। গরম দুধ ও ইসুপগুলের ভূষি-
রাতে ঘুমানোর আগে শিশুকে হালকা গরম দুধের সাথে ইসুপগুলের ভূষি মিশিয়ে খেতে দিন। এতে শিশুর হজমে সাহায্য করবে। তবে সতর্ক থাকতে হবে শিশুকে যেন বেশি দুধ খেতে না দেয়া হয়। কারন দুধে প্রচুর পরিমাণ পুষ্টিগুন থাকে যার ফলে বেশি দুধ খেলে সে অন্য খাবার খেতে চায় না। এতে কোষ্ঠকাঠিন্য বেশি পরিমাণে বেড়ে যেতে পারে।
আরও পড়তে পারেন- শিশুর রুমে এসি ও এয়ারকুলার ব্যবহারে সতর্কতা ও কিছু পরামর্শ।
৫। শিশুকে মলত্যাগে অভ্যস্ত করে তোলা-
শিশুর মলত্যাগের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। মলত্যাগ করছে না বলে বকাবকি না করে সময়মতো মলত্যাগ করতে তাকে উৎসাহ দিতে হবে। এক্ষেত্রে পুরস্কারের মাধ্যমে তাকে উৎসাহিত করা যেতে পারে। অনেক বাচ্চা মলত্যাগ করতে প্রাইভেসি পছন্দ করে। সেক্ষেত্রে তাকে সে সুযোগ করে দিতে হবে।
আবার অনেক শিশু তার পছন্দের টয়লেট ছাড়া অন্য কোথাও মলত্যাগে সাচ্ছ্যন্দ বোধ করে না। তাই শিশুকে তার পছন্দের টয়লেট ব্যবহার করতে দিন।
৬। শারীরিক পরিশ্রমে-
সব বয়সী মানুষের হজম ক্রিয়া স্বাভাবিক রাখতে শারীরিক পরিশ্রমের বিকল্প নেই। শিশুদের বেলায়ও তাই। কোষ্ঠকাঠিন্য রোধে শিশুদের প্রতিদিন খেলাধুলা করা উচিৎ। শিশু যদি সারাদিন শুয়ে বসে সময় পার করে সেক্ষেত্রে তার অন্ত্রে নড়াচড়াও হয় না। এক্ষেত্রে তার খাবার হজম হতে দেরী হয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। এজন্যে প্রতিদিন কমপক্ষে ১ ঘণ্টা শিশুকে নড়াচড়া করে খেলতে দিন কিংবা অন্য কোন কাজে লাগান যাতে শিশু আনন্দ পাবে এবং শারীরিক কার্যক্রমও সম্পন্ন হবে।
যদি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থায় কাজ না হয় তখন অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন। মা-বাবা একটু সচেতন হলেই শিশুর অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যা থেকে সহজেই মুক্তি পেতে পারেন।
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
তথ্যসূত্র- https://www.mayoclinic.org/
1,733 total views, 3 views today