নিজেদের সুবিধার্থে বর্তমান সময়ে এ দেশের অনেক বাবা মা শিশুর জন্য নিজস্ব রুমের ব্যবস্থা করে থাকে এবং সে ঘরেই তাদের ঘুমানোর ব্যবস্থা করে থাকে। আবার অনেক মা বাবা আছেন শিশুর অসুবিধার কথা ভেবে একই বিছানায় নিজের কাছে নিয়ে ঘুমায়। কিন্তু গবেষকরা বলছেন শিশুকে মা বাবা যে বিছানায় ঘুমায় সেই একই বিছানায় রাখা যাবে না আবার অলাদা রুমেও রাখা যাবে না। তাহলে শিশুর ঘুমানোর উপযুক্ত জায়গা কোনটা? চলুন জেনে নেই-
একই শোবার ঘর তবে আলাদা বিছানায়
আমেরিকার একদল গবেষক মনে করেন, শিশুর মৃত্যুহার কমাতে ও তার মানসিক বিকাশে শিশুর সঙ্গে একই শোবার ঘরে এবং অবশ্যই আলাদা বিছানায় মা বাবার ঘুমানো উচিৎ। শিশুদের নিয়ে গবেষণা করা ‘আমেরিকান একাডেমি অব পেডিয়াট্রিকস্’ এর মতে, মা-বাবা যে শোবার ঘরে ঘুমান শিশু জন্মের প্রায় এক বছর পর্যন্ত প্রতি রাতে একই শোবার ঘরে আলাদা বিছনায় ঘুমানো উচিত। ওই একাডেমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলছে, বাবা-মা যে বিছানায় ঘুমান সে একই বিছানায় কোন ক্রমেই যেন শিশু না ঘুমায় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। কেননা, এতে শিশুর হঠাৎ মৃ্ত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। নিরাপদ ঘুম নিশ্চিতের জন্য শিশুদের একটি নির্দিষ্ট জায়গা করে দিতে হবে। বাজারে বাচ্চাদের জন্য তৈরি বিভিন্ন ক্রিব বা বেসিনেট পাওয়া যায়, যা শিশুদের জন্য বেশ উপকারী। তবে খেয়াল রাখা জরুরি, অত্যধিক নরম বিছানা বা অত্যধিক শক্ত বালিশে ঘুমালে বাচ্চাদের ক্ষতি হয়ে থাকে।
আরও পড়তে পারেন- শিশুর ঘুম নিয়ে চিন্তিত? দেখে নিন সমাধান
আমেরিকান গবেষক ডা. লরি ফেল্ডম্যান বলেন, শিশু মৃত্যু অনেকাংশে কমানো সম্ভব; যদি বাচ্চা ও মা-বাবা একই রুমে আলাদা বিছানায় ঘুমায়। ফেল্ডম্যান আরো বলেন, বাচ্চাদের সঙ্গে এক বিছানায় বাবা-মায়ের থাকা ঘুমানো ঝুঁকিপূর্ণ। কোন ক্রমেই চার মাসের কম বয়সী বাচ্চাদের সঙ্গে একই বিছানায় ঘুমানো যাবে না। বাচ্চাদের নিয়মিত মায়ের বুকের দুধ পান করালে শিশু মৃত্যুহার অনেকটাই কমে যায়। কিন্তু, মা-ও রাতে এক সঙ্গে একই বিছানায় ঘুমাতে পারবেন না বলে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন। এ.এ.পি’র এক প্রতিবেদনে প্রকাশ পায়, আমেরিকায় এক বছরে প্রায় ৩৫০০ শিশু মারা যায় ঘুমের মধ্যে। এর পেছনে ভিন্ন ভিন্ন কারন আছে, যেমন- মস্তিষ্কে অস্বাভাবিকতা, শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা এবং ঘুমের মধ্যে শিশুর মুখ নিচের দিকে গিয়ে দম বন্ধ হওয়া ইত্যাদি। ২০০৪ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত যে সকল শিশু মারা গেছে, তাদের নিয়ে গবেষকরা একটি গবেষণা চালান। যেখানে দেখা যায়, অনেক শিশুদের মৃত্যু হয়েছে মা-বাবার পেট বা হাতের আঘাত লেগে।
আলাদা বিছানা মানে আলাদা শোবার ঘর নয়
আমরা আগেই বলেছি পশ্চিমের সংস্কৃতি মেনে এ দেশেও অনেকেই সন্তানের জন্য আলাদা ঘরের ব্যবস্থা করে এবং সেই ঘরেই তাদের ঘুমোনোর ব্যবস্থা করে। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান কিন্তু বলছে, খুব ছোট বেলায় শিশুকে আলাদা শোবার ঘরে না দিয়ে একই শোবার ঘরে আলাদা বিছানায় ঘুমোনোর অভ্যাস শিশুর মানসিক বিকাশে সাহায্য করে। বুদ্ধিতেও প্রভাব ফেলে।
চলুন জেনে নেই কেন বাবা-মায়ের সঙ্গে ঘুমালে ভালো থাকবে শিশু-
নিরাপত্তাহীনতা
খুব ছোটবেলায় শিশুর ঘর বা বিছানা আলাদা করে দিলে সে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। গবেষণা বলছে, যেসব শিশুরা বাবা-মায়ের সাথে একই রুমে ঘুমায় তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ে। আবার শুধু যে এই কারণগুলো শিশুদেরই ভালো রাখে তা নয়। রাতে ঘুম ভেঙে শিশুর ঘরে যাওয়ার প্রবণতা থাকে না বলে বাবা মায়েরও ঘুম ভালো হয়। সুস্থ থাকেন অভিভাবকরাও। তাই আপনার শিশু সন্তানটির আলাদা জগত, ব্যক্তিগত বোধ না হওয়া পর্যন্ত তাকে নিজেদের সাথেই রাখুন।
বুদ্ধি ও মানসিক বিকাশ
অনেকেই ভাবেন সন্তানকে ছোটবেলা থেকেই অন্যঘরে থাকার অভ্যাস না করলে বড় হয়ে সে একা ঘরে থাকতে পারবে না। কিন্তু গবেষকরা জানাচ্ছে, বাল্যকালে শিশুর সঙ্গে মা-বাবার ঘুমোনোর অভ্যাস তার মানসিক বিকাশে সাহায্য করে এমনকি প্রভাব ফেলে বুদ্ধি বিকাশেও।
সহজ সরল সম্পর্ক তৈরি
সন্তানের বিছানা যদি নিজেদের ঘরে হয় তাহলে বাবা-মায়ের সঙ্গে খুব সহজ সরল একটা সম্পর্ক তৈরি হয় শিশুর। পরিবারের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। নিজেদের ভেতর শেয়ারিং এর ব্যাপার বৃদ্ধি পায়।
আরও পড়তে পারেন- প্যারেন্টিং টিপস- বাচ্চাদের গতি অসুস্থতা বা মোশন সিকনেস হলে করণীয়
অনেকেই মনে করেন, রাতে নিজস্ব সময়ে সন্তান কাছে থাকলে অভিভাবকদের ব্যক্তিগত পরিসর কমে। এ ব্যপারে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, তেমন প্রয়োজনে নিজস্ব সময় বরাদ্দ করুন। দরকারে নিজেদের জন্য ব্যবহার করুন অন্য কোনও ঘর।
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
1,471 total views, 2 views today