প্রি-স্কুল বয়সী শিশুরা যখন কোন ভাল কাজ করবে তখন তার এই ভাল কাজ গুলোকে বারবার উৎসাহ প্রদানের মাধ্যমে আস্তে আস্তে এগুলোকে অনুশীলনে রুপান্তর করতে হবে। এক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো করা যেতে পারে।
পরিকল্পনা যেকোন কাজের সফলতার জন্য খুবই গুরুত্বপুর্ণ একটি বিষয় এবং এটি প্রি-স্কুল বয়সী শিশুদের ভালকাজের অনুশীলনের জন্যও অত্যাবশ্যকীয়। এখানে খেয়াল রাখা আবশ্যক যে তাদের উন্নয়নের জন্য করা পরিকল্পনা গুলো তাদের মধ্যেই যেন শেষ না হয়। অর্থাৎ পরিকল্পনা হতে হবে বিভিন্ন মেয়াদের এবং অনেক কার্যকরী।
বস্তুত, এই পরিকল্পনায় গঠিত কার্যক্রমগুলো পূর্ণ থাকবে “কী” এবং “কিভাবে” এ দুটি বিষয়ের উপর চিন্তা করা এবং কথা বলা। এতে করে শিশুরা যা শিখবে তার থেকে তারা সঠিকভাবে জ্ঞানের মূল বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারবে। এবং জ্ঞানের উপলব্ধিই হচ্ছে পৃথিবীর সকল জ্ঞান-বিজ্ঞানের শেকড়।
উন্নত বিশ্বে প্রি-স্কুলার দের নিয়ে কাজ করা অনেক স্কুল আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে তিনটি পর্যায় বা ধাপে পরিকল্পনা তৈরি করা হয়।
- দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা
- মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা
- স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা
তবে এসব পরিকল্পনার একটি সাধারণ বৈশিষ্ট হচ্ছে, শুধু শিশুরাই নয়, তাদের অভিভাবক বা আশেপাশের অনেকেই এই পরিকল্পনার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। আর এই পরিকল্পনাগুলো কখনই অপরিবর্তনীয় নয় অথবা এর কার্যক্রম গুলোর কোনটি ‘ভুল’ প্রমাণ হওয়া মাত্রই দ্বিধাহীন ভাবে বাদ দিতে বলা হয়েছে।
১. দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা
দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা অনেক বিস্তৃত সময়কে ঘিরে তৈরি এবং এটি একটি শিশুর প্রি-স্কুল বয়সের প্রায় পুরো সময়টুকু জুড়েই বিদ্যমান থাকে। যেমন,
- জ্ঞানের প্রতিটি শাখায় শিশুরা যেন তাদের জ্ঞান আহরণ করতে পারে, আহরিত জ্ঞান থেকে দক্ষতা অর্জন করতে পারে এবং সে দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের মত করে নতুন নতুন ধারণা তৈরি করতে পারে; -এ পুরো বিষয়ের উপর বিশদ ব্যাখ্যা থাকা।
- এবং উক্ত ব্যাখ্যা মোতাবেক শিশুরা প্রকৃতপক্ষেই জ্ঞান আহরনের সুযোগ পাচ্ছে কি না তা নিশ্চিত করা।
- দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মধ্যে দেশে বাৎসরিক যেসব আচার অনুষ্ঠান হয় যেমন, ঈদ-পুজো, পহেলা বৈশাখ, পিঠা উৎসব ইত্যাদিও অন্তর্ভুক্ত; এবং
- দীর্ঘমেয়াদী থেকে মধ্যমেয়াদী পরিকল্পনায় যাওয়ার উপায় বর্ননা করা থাকে।
মধ্যমেয়াদী পরিকল্পনা হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদী আর স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনার সাথে সেতু বন্ধনকারী। এটি ৬ সপ্তাহ থেকে ১ মাস ব্যাপী হতে পারে।
স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা শিশুর প্রতিদিনকার খেলাধুলা ও অন্যান্য কার্যক্রম নিয়ে সাজানো। প্রতিটি শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো তারা পাচ্ছে কি না এবং প্রতিনিয়ত খেলাধুলা বা খেলার ছলে করা কাজকর্ম থেকে সে ইতিবাচক চিন্তা করতে পারছে কি না; এসব নিয়েই স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা সাজানো।
পরিস্থিতি ভেদে শিশুর প্রতিটি কাজের পর্যবেক্ষণ, অতঃপর সে কাজের সঠিক মুল্যায়ন করতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে প্রতিটি শিশুর কাজের ধরন এক নয় আবার একটি শিশু একেকদিন একেক রকমের কাজ করতে পারে। সুতরাং, একটি দুটি পর্যবেক্ষন করেই শিশুদের মুল্যায়ন করা উচিৎ নয়। জ্ঞানের প্রতিটি শাখায় শিশুর উন্নতি সঠিকভাবে হওয়ার জন্য প্রয়োজন একটি সু-পরিকল্পিত, নিয়মিত এবং দক্ষ পর্যবেক্ষন।
আপনার শিশু প্রতিদিনই খেলা করছে বা সাথে এটাসেটা অনেক কিছুই সে করছে। তার প্রতিদিনকার কাজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবকিছুই কি বসে বসে পর্যবেক্ষন করা হয়? অবশ্যই না। বরং, যেটুকু সময় সাধারনভাবে আপনি তাকে দিতে পারছেন সে সময়ের মাঝেই তার প্রতি খেয়াল রাখছেন। সুতরাং, এক্ষেত্রে আপনি তার কাজকর্মের মুল্যায়নের যে পরিকল্পনা করবেন তা হবে স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা। এখানে দ্বীর্ঘমেয়াদী বা অনেক ক্ষেত্রে মধ্যমেয়াদী পরিকল্পনায় মুল্যায়ন তৈরি এককভাবে সম্ভব নয়।
প্রি-স্কুল বয়সী শিশুদের কাজের পর্যবেক্ষন করা যেতে পারে এভাবে-
- একটি দিনে বা পুরো সপ্তাহে তারা কি খেলছে?
- কিভাবে খেলছে?
- কার/কাদের সাথে খেলছে এবং মেলামেশা করছে?
- অন্যান্য শিশুদের সাথে কিভাবে খেলছে/মেলামেশা করছে।
- তারা কিভাবে প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে?
- বই এবং গল্পের প্রতি তাদের আগ্রহ।
- নিজ বাবা-মা ও বড়দের সাথে তাদের কেমন সম্পর্ক গড়ে উঠছে?
ইত্যাদি।
পর্যবেক্ষণ থেকে রেকর্ড সংরক্ষণ করা খুব ধৈর্য এবং সময়ের ব্যাপার। অর্থাৎ শিশুর কাজের মাঝে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন লক্ষ না করা গেলে তা রেকর্ড হিসেবে নথিভুক্ত করা উচিৎ নয়। আবার এ কাজটি সহজ মনে করে খাতায় না লিখে মুখে মুখেই মনে রাখাটাও ঠিক নয়। কারণ ছোট ছোট তথ্য হলেও, একসাথে, ক্রমানুসারে সব নাও মনে আসতে পারে।
এবং অবশ্যই এসব রেকর্ড সমুহ সংরক্ষন করতে হবে একটি সংক্ষিপ্ত, সিস্ট্যামেটিক ও ম্যানেজেবল ফরমে। ফরমের উদাহরন ও বিস্তারিত আরও জানার জন্য এই লিংকটিতে ক্লিক করুন।
তবে এক-দুটি শিশুর জন্য হলে সাধারন মানের যে নোটবুক বাজারে পাওয়া যায় সেসবে রেকর্ড সংরক্ষণ করলেও হবে। রেকর্ডে শিশুদের যে সমস্ত বিষয়গুলো উঠে আসতে পারে;
- শিশুরা যদি নিজে থেকে নতুন কিছু শিখে থাকে।
- পুর্বের তুলনায় যদি তাদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়। এবং
- তারা নির্দিষ্ট কোন কাজে অধিক আগ্রহী ও মনোযোগী হয়ে ওঠে।
- তারা যদি বারবার নির্দিষ্ট একটি সমস্যার সম্মুখীন হতে থাকে।
- তাদের থেকে যতটুকু আশা করা হয়েছিল সে যদি তার থেকেও বেশি পরিমানে কাজে পারদর্শিতা দেখাতে পারে।
- তার যদি তাদের খেলা/কাজের মাঝে কোন খুত/ভুল বের করতে পারে।
ইত্যাদি।
রিপোর্টিং বা প্রতিবেদন
একটি শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার আগে অর্থাৎ মুলধারার শিক্ষা কার্যক্রমে গমনের পূর্বে সে যদি প্রি-স্কুল কারিকুলামের মধ্য দিয়ে যায় তার মানে তার মাঝে মৌলিক অনেক শিক্ষার উপর মেধা রয়েছে। আর ঠিক এ বিষয়টিই প্রি-স্কুল কারিকুলামের মধ্য দিয়ে যাওয়া শিশুদের মেধা অন্যদের থেকে পার্থক্য তৈরি করে।
তাই এখানে শিশুদের কাজের রিপোর্টিং বা প্রতিবেদন তৈরি অনেক গুরুত্বপুর্ন। হোক সেটি বাসা কিংবা কোন প্রি-স্কুলিং প্রতিষ্ঠানে বেড়ে ওঠা শিশু। দীর্ঘ-মধ্য-স্বল্প প্রত্যেকটি পরিকল্পনার ধাপেই থাকবে রিপোর্টিং এর বিষয়টি যা উক্ত ধাপের বিধি অনুযায়ী তৈরি করা হবে।
প্রি-স্কুল প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে তাদের অবশ্যই রিপোর্টিং এর ব্যাপারে নিয়মিত এবং আনুষ্ঠানিকভাবে অভিভাবকদের সাথে আলোচনা আবশ্যক। কারণ এক্ষেত্রে পরবর্তী কার্যক্রম গুলো আরও পরিকল্পিতভাবে করা সম্ভব হবে। বাসায় এককভাবে অভিভাবকগন কাজটি করতে চাইলে, সন্তানকে দেখাশুনা করার দায়িত্বে যে থাকে তার থেকে সন্তানের দৈনন্দিন কাজকর্মের বিষয়ে অবগত হয়ে রিপোর্টিং করা যেতে পারের
(বাকি অংশ পরবর্তী পর্বে দেখুন।)
তথ্যসূত্রঃ
- প্রি-স্কুল কারিকুলাম; ডোনাল প্রাইমারি স্কুল (http://www.dundonaldprimaryschool.net/pre-school-curriculum/ )
- হাউ উই লার্ন; কিলেমন নার্সারি স্কুল (http://www.kylemorenursery.com/how_we_learn.html )
- এ প্রসেস অফ সেলফ ইভালুয়েশন অফ প্রি-স্কুল (http://www.belb.org.uk/Downloads/ey_together_towards_improvement_pre_school.pdf )
- আরলি ইয়ার প্রভিশন (http://www.niassembly.gov.uk/globalassets/documents/raise/publications/2013/education/6313.pdf )
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
1,557 total views, 2 views today