[emaillocker]
মাত্র এক দশক আগেও শিশুরা মাঠে খেলত। এখনকার সময়ে বিশেষ করে শহুরে শিশুদের জন্যে না আছে খেলার মাঠ, না আছে খেলার মত কোন জায়গা। তাই বর্তমান সময়ের শিশুদের অবসর সময়ের আদর্শ স্থান হচ্ছে নিজ বাসা। আর বাসায় বসে বাচ্চারা হয় টিভি দেখছে অথবা পিসিতে গেমস খেলছে আর না হয় স্মার্ট ফোনে সময় কাটাচ্ছে। এক কথায় তারা আটকে যাচ্ছ কম্পিউটার বা স্মার্টফোনের স্ক্রিনের মাঝে।
ফলে স্বাভাবিকভাবেই বাচ্চাদের মাঝে দেখা দিচ্ছে অনেক অদ্ভুত রকমের অসুখ। গবেষকগণ এই অসুখ গুলোকে সাইবার সিকনেস বলে আখ্যায়িত করে থাকেন।
তাহলে আসুন জেনে নেই এইসব এমন কিছু সাইবার সিকনেস সম্পর্কে-
> চোখ ব্যথা বা জ্বালাপোড়া করা
স্মার্ট ফোন, ট্যাব বা ল্যাপটপ স্ক্রিনের দিকে এক নাগারে বাচ্চারা অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকলে তাদের চোখ ব্যথা বা জ্বালাপোড়া ভাব তৈরি হয়। তবে চিকিৎসকদের নিকট এটা ডিজিটাল আই স্ট্রেইন নামে পরিচিত।
> অতিরিক্ত স্মার্ট ফোন ব্যাবহারে ব্রেইন টিউমার হতে পারে।
চোখ ব্যথা বা জ্বালাপোড়া ভাবের পরবর্তী ধাপ হচ্ছে মাথা ব্যথা শুরু হওয়া। এই মাথাব্যথা নিয়মিত হলে শিশুদের এমন কি ব্রেইন টিউমারও হতে পারে। এরকমই তথ্য দিলেন, মিনেসোটা ইউনিভার্সিটির কিনেসিওলজি ডিপার্টমেন্টের অধ্যক্ষ থমাস স্টফ্র্যাগেন।
আরো যেসব সমস্যা হতে পারে-
> সারাদিন ক্লান্ত ক্লান্ত ভাব আবার ঘুমের সময় ঘুম না আসা।
> প্রচন্ড খিটখিটে ও একরোখা স্বভাবের হয়ে যাওয়া।
> প্রচন্ড হতাশা, উদ্বিগ্নতা এমনকি আত্মহত্যার মানসিকতা সহ ইত্যাদি হাজারও সমস্যা এসে ভর করতে পারে আপনার সন্তানের উপর। যার পথ্য ডাক্তার বা ফার্মেসিতে নয়, বরং সমাধান রয়েছে আপনার হাতেই।
তাই আসুন, ডিজিটাল যুগে বাচ্চাদের এইসব ডিজিটাল অসুখ প্রতিরোধে উপায়গুলো জেনে নেই।
১। টিভি, ল্যাপটপ যাবতীয় স্মার্ট ডিভাইসের জন্য সময় নির্ধারণ করে দিন :
অভিভাবক-গন যখন বিভিন্ন স্মার্ট ডিভাইসের জন্য সময় নির্ধারণ করে দেন তখন তারা নিজের অজান্তেই সন্তানের একই সাথে দুটো উপকার করেন। প্রথমত, সন্তানের ডিজিটাল অসুখ-বিসুখের ঝুঁকি কমে গেল। দ্বিতীয়ত, অতিরিক্ত ফ্রি সময়টুকুতে সন্তান নিশ্চয় পরিবারের বিভিন্ন কাজে সময় দিবে ফলে পারিবারিক বন্ধন ও প্রবৃদ্ধির বিষয়টিও আরও জোরালো হল।
খেলাধুলা সম্ভব না হলে অবসর সময়ে বাচ্চাদের যতটা পারা যায় এমন সব কাজে যুক্ত করা যেখানে তাদের আনন্দ এবং শারীরিক দুটোই হবে। যেমন, বাচ্চাদের নিয়ে পার্কে ঘুরতে যাওয়া বা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে যাওয়া ইত্যাদি।
৩. বিছানায় ঘুমানোর সময় নির্ধারণ করে দিন :
সকালে সময়মত ঘুম থেকে উঠে স্কুলে যাওয়া যেমন বাধ্যতামূলক, তেমনি রাতেও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঘুমটুকুও বাধ্যতামূলক করে দিন। ফলে, শরীরও ভাল থাকবে এবং ডিজিটাল অসুখ থেকেও রেহাই পাওয়া যাবে।
৪. সন্তানের মানসিক বৃদ্ধির দিকে লক্ষ্য রাখুন :
বর্তমান সময়ের অনেক গবেষকই একমত হয়েছেন যে, যেসব বাচ্চা সোশাল মিডিয়া অর্থাৎ তথ্যপ্রযুক্তির উপর বড় হচ্ছে, তাদের মাঝে হতাশা, আত্মহত্যার ঝুঁকি ইত্যাদির প্রবণতা বেশি মাত্রায় থাকে। তাই, সন্তানের মানসিক উন্নতির দিকটিতে খেয়াল রাখুন।
এ সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন এই লিংকে
৫. বাচ্চাদের মানসিক চাপ বৃদ্ধি করে এমন কাজ থেকে বিরত থাকুন :
দি গ্লোবাল ওয়েলনেস এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বর্তমান ডিজিটাল যুগে শিশুদের মানসিক চাপ বৃদ্ধির জন্য শুধু তথ্যপ্রযুক্তির উপকরণই দায়ী নয়, সাথে অভিভাবকদের অবহেলাও রয়েছে।’ বর্তমান সময়ের অভিভাবক-গন সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তাদের নিয়ে একরকম প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব প্রকাশ করে থাকেন। তাই, যতটা সম্ভব সন্তানকে অতিরিক্ত দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়া থেকে বিরত থাকুন।
৬. সন্তানের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলুন :
শুনতে খুব হালকা মনে হলেও এ বিষয়টি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বর্তমান ব্যস্ত সময়ে একটি পরিবারে অর্থ উপার্জনে যখন বাবা-মা দু’জনেই বাসার বাহিরে থাকেন, তখন খুব স্বাভাবিক ভাবেই পরিবারের সন্তানদের মাঝে এক প্রকার একাকীত্ব এসে ভর করে। যেহেতু, একটি শিশুর প্রথম বন্ধু তার বাবা-মা, তাই এ জায়গাটুকু তে ব্যস্ততার জন্য যে শূন্যস্থান টুকু হয় তা যেন, যথাসময়ে পূরণ হয় সেদিকে নজর দিন। যেমন, ছুটির দিনে বা অবসর সময়ে সন্তানকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়া বা একসাথে বসে গল্প করা, মুভি দেখা ইত্যাদি।
৭. ডিভাইসের অপকারিতা নিয়ে গল্প করুন :
শাসন বা জবরদস্তি নয়, এমনভাবে সন্তানের সামনে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যাবহারের নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে যাতে করে তারা নিজেরাই এর থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত হয়। এমনটিই মনে করছেন গবেষকগণ। যেমন, সন্তানদের সাথে প্রযুক্তির এইসব ডিভাইস ব্যাবহার করলে কি কি অসুখ হয়ে থাকে তা নিয়ে বন্ধু-সুলভ উপায়ে গল্প করুন। ফলে আপনার নিষেধাজ্ঞাগুলো তারা খুব সহজেই মেনে নিতে পারবে।
আরো পড়তে পারেন- আপনার সন্তান পড়া মনে রাখতে পারছে না? খেয়াল করুন!
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
[/emaillocker]
890 total views, 1 views today