[emaillocker]
মুনতাসির সাহেব আর তার স্ত্রী দুজনেই চাকুরীজীবী। তাদের স্কুলগামী দুটি সন্তান। তবে অফিস টাইম টুকুতে সন্তানদের দেখাশুনা নিয়ে তাদের তেমন কোন চিন্তা করতে হয় না। কারণ, তারা যৌথ পরিবারে থাকেন। মুনতাসির সাহেবের বাবা-মা, দু ভাই এবং তাদের পরিবার সবাই মিলে মিশে থাকেন একসাথে। কিন্তু তারপরেও মুনতাসির সাহেবের দু সন্তান কে নিয়ে তিনি মাঝে মধ্যে বেশ দুশ্চিন্তায় পরে যান। কারণ, তারা সমাজে অন্য বাচ্চাদের সাথে তেমন মিশেই না বলা চলে। খুব লাজুক আর কেমন যেন ঘরকুনো স্বভাবের হয়ে যাচ্ছে তার সন্তানরা।
বস্তুত এরকম সমস্যা শুধু মুনতাসির সাহেবই নন, পৃথিবীর সব সমাজেই এরকম অনেক শিশু পাওয়া যাবে যারা সহজে সবার সাথে মিশতে ভয় পায়। বিশ্বের অনেক বড় বড় গবেষক ও বিশেষজ্ঞগরা অনেক উপায় ও টিপস দিয়েছেন। আসুন আজ আমরা জেনে নেই এরকম কয়েকটি টিপস।
শিশুদের নিয়মিত গল্প পড়ে শোনান
শিশুদের সাথে এমন সব গল্প করতে পারেন, যেখানে কোন ভাল রাজা তার প্রজাদের সাহায্য করছে। অথবা আলিফ লায়লার আলাদীন বা সিন্দবাদ শক্তিশালী দৈত্যের সাথে লড়াই করে তার থেকে সবাইকে মুক্ত করছে। তবে এরকম গল্প বলার পরে অবশ্যই বাচ্চাকে জিজ্ঞেস করবেন যে তারা যদি সেই পরিস্থিতিতে পরতো তাহলে তারা তখন কি করতো? আপনার বাচ্চা যদি বই পড়ার বয়সী হয় তাহলে অবশ্যই তাদের গল্পের বই পড়তে দেয়া উচিৎ, বিশেষ করে ছবিসহ গল্পের বই অথবা কমিক্স বুক।
সমাজের বাস্তব ঘটনাগুলো নিয়ে আপনার শিশুর ভাবনাগুলো জানুন
যদিও আপনার সন্তান কারও সাথে মিশতে পারে না তারপরেও প্রতিদিন সে স্কুলে যাচ্ছে। বাসায় বা কোচিং এ টিচারের কাছে পড়াসহ এরকম অনেক কাজই তাকে বাধ্যতামূলক ভাবে করতে হচ্ছে। আর এগুলোর মাধ্যমে সে অনেক অনেক বাস্তব অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হচ্ছে। যা হয়ত আপনার কাছে সাধারণ, কিন্তু তার কাছে অনেক তেতো। অর্থাৎ এখানে অভিভাবক হিসেবে আপনার করণীয় হচ্ছে, কেন তার কাছে তেতো, এর কারণটি তার থেকে শুনুন। এরপর সেটি নিয়ে তার সাথেই আলোচনা করুন। দেখবেন এভাবে অনেকটাই বিষয়টি হালকা হয়ে গেছে।
বাসার পোষা প্রাণী পালতে পারেন
অনেক বাসাতেই পোষা প্রাণী থাকে যেমন, বিড়াল বা খাঁচায় পালা পাখি ইত্যাদি। মনোবিজ্ঞানীদের মতে পোষা প্রাণী বাচ্চাদের এরকম সামাজিক ভাবে পিছিয়ে পরার শূন্যস্থানটুকু পূরণ করতে সাহায্য করে। গ্রাম অঞ্চলে বাচ্চাদের ভেতর মধ্যে এজন্যেই এ বিষয়টি দেখতে পাওয়া যায় না কারণ, গ্রামে প্রায় গৃহস্থের বাড়িতেই পোষা প্রাণী বা গৃহপালিত প্রাণী থাকে।
সন্তানের সামনে ইতিবাচক কথা বলুন
সন্তানের সামনে বাবা-মা হিসেবে আপনি যেরকম আচরণ করবেন সন্তান সেটিই সবার আগে গ্রহণ করবে। ধরুন সন্তানের সামনে কোন অভিভাবক তাদের নিজেদের মধ্যে পাশের কোন প্রতিবেশীকে নিয়ে সমালোচনা করছে। এখন, প্রথমত তাদের সন্তানের মধ্যে সেই লোকটির ব্যাপারে একটি নেতিবাচক প্রভাব পরবে যার ফলে সেই প্রতিবেশীর বাচ্চার সাথে সে নিজ থেকেই স্বচ্ছন্দ-ভাবে মিশতে পারবে না।
সুতরাং সিদ্ধান্ত এখন আপনার হাতে।
স্কুলের প্রতিযোগিতামুলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ
আপনার সন্তান যখন কারও সাথে মিশতে পারছে না, তখন তাকে সরাসরি জোর জবরদস্তি করে লাভ নেই। বরং একটু ঘুরিয়ে দিন এ বিষয়টিকে। যেমন, সন্তানের স্কুলে নিশ্চয় বিভিন্ন রকম প্রতিযোগিতা মূলক অনুষ্ঠান -গান, নাচ, ছবি আঁকা ইত্যাদি নিয়মিত হয়, সেখানে সন্তানকে অংশ গ্রহণে উৎসাহিত করুন। কারণ, গান, ছবি আঁকা এসবের উপরে কমবেশি সব বাচ্চাদেরই আগ্রহ থাকে। তাই, তাদের এ আগ্রহটি কে যথাযথ কাজে লাগানোর এখনই সময়।
( পড়ুন স্কুলে বুলিইং যেভাবে আপনার সন্তানের ক্ষতি করে )
স্মার্ট ফোন, ট্যাব ইত্যাদি থেকে দূরে রাখুন
বাচ্চাদের সময় দেয়ার পরিবর্তে আমরা প্রায়ই বাচ্চাদের হাতে স্মার্ট-ফোনটি তুলে দেই। স্মার্ট-ফোন হয়ত বাচ্চাদের একাকীত্ব দুর করে, তবে সেটি একেবারে সাময়িক সময়ের জন্য। কিন্তু সাথে সাথে স্মার্ট-ফোন বাচ্চাদের মধ্যে অনেক মানসিক সমস্যার জন্ম দিয়ে যায়। আর বাচ্চারা কারও সাথে মিশতে না পারার বিষয়টিও এর মধ্যে একটি।
আপনার সন্তানের মোবাইল ফোনের আসক্তি কমানোর উপায় জানার জন্য এই ব্লগটি পড়তে পারেন।
উন্নত বিশ্বের প্রি-স্কুলগুলোতে বাচ্চাদের জন্যে অনেক সামাজিক কার্যক্রম চালু থাকে। বলতে গেলে শিশুরা যেন সামাজিকভাবে সবার সাথে পারস্পারিক সহযোগিতামুলক নিয়ে তাদের শিক্ষাজীবন শুরু করতে পারে, এটিই তাদের মূল উদ্দেশ্য। আমাদের দেশেও অনেক প্রি স্কুল রয়েছে, যাদের স্কুল-কারিকুলামও এরকম। তাই, বাবা-মায়েরা বাচ্চার অধিক মানসিক সফলতার জন্য এরকম প্রি-স্কুলে বাচ্চাকে ভর্তি করতে পারেন।
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
[/emaillocker]
1,012 total views, 3 views today