তোমরা নিশ্চয় মাঠে ডিম পাড়া হাট্টিমা টিম টিমের অথবা মাথায় শিং রয়েছে ঘোড়ার মত দেখতে অদ্ভুত প্রাণী ইউনিকর্নের নাম শুনেছো? দেখতে অদ্ভুত হলেও এগুলোর একটিও কিন্তু বাস্তবে নেই অর্থাৎ এরা সত্যিকার প্রাণী না। তবে এগুলো সত্যিকার না হলেও আজ আমরা এমন ৫ টি প্রাণীর সাথে তোমাদের পরিচয় করিয়ে দিবো যেগুলো দেখতে আসলেই অদ্ভুত। আর এদের সবার থাকার জায়গাই পানির নিচে।
তাহলে চলো পানির নিচে বসবাসকারী প্রাণীদের দেখে আসি,
১. ম্যানটিস শ্রিম্প (Mantis Shrimp)
ম্যান্টিস শ্রিম্প সাগরের রঙিন সব প্রাণীদের মধ্যে একটি। অর্থাৎ অনেক রঙে এই প্রাণীটিকে দেখতে পাওয়া যায়। তবে আবার ভেবো না যেন এটি ক্যামেলিয়ন এর মত রঙ বদলাতে পারে। আসলে এটি বাস্তবিক ভাবেই হরেক রকম রঙের হয়ে থাকে। দেখতে চিংড়ি মাছের মত নিরীহ মনে হলেও আসলে এটি কিন্তু মোটেই সেরকম নয়। ম্যান্টিস শ্রিম্প খুবই ভয়ংকর একটি সামুদ্রিক প্রাণী। ম্যান্টিস শ্রিম্পের সামনের বড় দুটি পা দিয়ে সে তার প্রতিপক্ষকে বন্দুকের গুলির গতিতে লাথি মারতে সক্ষম। লাথির গতিএতই দ্রুত হয় যে পানিতে ছোট ছোট বাবল এবং আলোর তৈরি হয়ে যায় যাকে সামুদ্রিক বিজ্ঞানী ক্যাভিটেশন বলে থাকেন।
২. টারডিগ্রেড (Tardigrade)
পানির নিচের অদ্ভুত প্রাণীদের মধ্যে টারডিগ্রেড অন্যতম। এরা সারা পৃথিবীতে পানির ভালুক নামেও পরিচিত। তবে শক্তিশালী ভালুকের চেয়েও কিন্তু টারডিগ্রেড অনেক শক্তিশালী। এদের যদি পানিতে জীবন্ত সিদ্ধ করা হয় বা ডিপ ফ্রিজে রেখে বরফ বানিয়ে ফেলা হয় কিংবা মহাকাশে নিয়ে গিয়ে বোমা দিয়ে ফাটিয়ে দেয়া হোক না কেন, এদের কিছুই হবে না বলা যায়। অর্থাৎ পানির নিচের এই অদ্ভুত প্রাণীটি যেকোনো পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকতে সক্ষম। আর এ জন্যই টারডিগ্রেড প্রায় ৫০০ মিলিয়ন বছর ধরে আজও পৃথিবীতে টিকে আছে। তার মানে ডাইনোসর থেকেও এরা পৃথিবীর অনেক পুরনো বাসিন্দা। তবে মজার বিষয় কি জানো, এই প্রাণীটি এতই ছোট যে অণুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া খালি চোখে দেখা যায় না।
৩. গ্লকাস এটলান্টিকাস (Glaucus Atlanticus)
পানির নিচে বসবাসকারী প্রাণীদের মধ্যে যতগুলো সুন্দর প্রাণী রয়েছে গ্লকাস এটলান্টিকাস সেগুলোর মধ্যে একটি। তবে দেখতে সুন্দর হলেও বাস্তবে এটি খুবই চতুর একটি সামুদ্রিক প্রাণী এবং এর পুরো শরীরে বিষাক্ত উপাদান রয়েছে। এখানে মজার বিষয় হল, গ্লকাসের শরীরের বিষ তার নিজের তৈরি নয়, সমুদ্রের অন্যান্য বিষ আছে এমন প্রাণী যেমন অক্টোপাস ইত্যাদির স্প্রে থেকে চুরি করে সে নিজের কাজে ব্যবহার করে থাকে। তবে এখানেই এর চতুরতার শেষ নয়। গ্লকাসকে বলতে গেলে কোন সামুদ্রিক প্রাণী এমন কী যেসব পাখি সমুদ্রের মাছ খায় যেমন এলবাট্রস, এরা খেতে পারে না। যদিও সে পানিতে ভেসে থাকে। এর কারণ হচ্ছে, তার শরীরের কালার দুদিকে দুরকম। এজন্যে পানির উপরে বা নিচ থেকে দেখলে সাধারণত শিকারি চোখে তারা পরে না। সমুদ্রের ঢেউ বা বাতাসের বেগ যেদিকে যায় গ্লকাস এটলান্টিকাসের গন্তব্যও সেদিকেই হয়। এজন্যে এই প্রাণীটিকে পৃথিবীর সব সমুদ্রেই পাওয়া যায়।
৪. পাকু মাছ (Pacu Fish)
এই মাছটি দেখতে মিঠাপানির অন্যসব সাধারণ মাছের মতই। তাহলে প্রশ্ন করতে পার যে কেন এটি অদ্ভুত হবে? এটি অদ্ভুত হচ্ছে এর দাঁতের জন্য। হ্যাঁ, এর দাঁতগুলো দেখতে অবিকল আমাদের অর্থাৎ মানুষের দাঁতের মতই। তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, কারণ এরা পানির নিচে থাকা লতা-পাতা খেয়ে বেঁচে থাকে এবং মানুষের জন্য পাকু ফিশ একেবারেই ক্ষতিকর নয়।
৫. নার-হোয়েল (Narwhal)
নার-হোয়েল দেখতে শুশুক মাছের মত হলেও এরা কিন্তু আসলে একপ্রকারের তিমি মাছ। এদের অদ্ভুত হওয়ার বিষয়টি হল ইউনিকর্নের মত এদের মাথায় থাকা শিং। আর এজন্যে এদের সমুদ্রের ইউনিকর্ন বলা হয়। তবে নার-হোয়েল তার মাথার শিংটি প্রয়োজনে ১০ ফিট পর্যন্ত লম্বা করতে পারে। তার মানে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক লম্বা মানুষের থেকেও লম্বা।
আরো কিছু মজার তথ্য :
> ম্যান্টিস শ্রিম্পের এন্টেনার মত দেখতে চোখ দুটো প্রত্যেকটি আলাদা আলাদা ভাবে নড়াচড়া করতে পারে।
> টারডিগ্রেড মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ৩০ বছর অনায়াসে বেচে থাকতে পারে।
> তুমি কি জানো যে, পৃথিবীতে প্রায় ৮.৭ মিলিয়ন প্রজাতি রয়েছে। যেগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র ১-২ মিলিয়ন প্রজাতি হচ্ছে প্রাণী বিশেষ।
সমুদ্রের সবচেয়ে বড় প্রাণী নীল তিমি ঠিক কতোটা বড়, তা কি বলতে পারবে? একটি নীল তিমির শুধু জিহ্বার ওজনই একটি বড় হাতির ওজনের সমান। তাহলে এবার ভেবে দেখ আস্ত নীল তিমি কত বিশাল আকারের হতে পারে!
আরো পড়তে পারো- প্রজাপতির জীবনচক্র
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
1,322 total views, 1 views today