Show Categories

পৃথিবী সমতল নয় গোলাকার , তুমি জানো তো?

 

ছুটির দিন সকাল। মাহিনের বাবা পার্কে হাঁটতে যাচ্ছে। এমন সময়ে মাহিনের ঘুম ভেঙেছে দেখে; মাহিনকেও সাথে নিয়ে নিলো। সকাল সকাল স্কুলে যাওয়ার জন্য উঠে, কিন্তু আজ সে উঠলো পার্কে হাঁটতে যাওয়ার জন্য। পার্কে হাঁটতে হাঁটতে মাহিন ভাবতে লাগলো, যেই পথে সে হাঁটছে সেই পথ তো সোজা, সমতল ভূমি। এমন কি সামনের দিকে ফাঁকা যায়গা পেলে যতদূর দেখা যায়, মনেহয় পুরোটাই সমান। তাহলে, পৃথিবী গোলাকার; এই কথা কি ভুল? মাথায় এই প্রশ্ন আসতেই মাহিন তাঁর বাবাকে জিজ্ঞেস করলো,“বাবা, পৃথিবী গোলাকার হলে, হাঁটতে হাঁটতে সামনের দিকে একটু দূর এগুলে পড়ে যাই না কেন? পৃথিবী কি সমতল?”

মাহিনের বাবা মাহিনের প্রশ্ন শুনে কিছুক্ষণ ভাবলেন। তারপর বললেন, “না, পৃথিবী সমতল নয়, পৃথিবী আসলেই গোলাকার। কিন্তু আমরা যে হাঁটি, দাঁড়িয়ে থাকি তা নির্ভর করে মধ্যাকর্ষণ শক্তির উপর। মধ্যাকর্ষন শক্তি পৃথিবীর ঠিক কেন্দ্রের দিকে আমাদেরকে টেনে ধরে রাখে বলেই আমরা সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারি। পৃথিবী তাঁর গোলাকার পৃষ্ঠের সবকিছুকে এই শক্তির মাধ্যমে টেনে ধরে রাখে বলে সেগুলো শুন্যে পড়ে যায় না”

মাহিন আবারো জিজ্ঞেস করলো,“কিন্তু পৃথিবী সমতল হলে তো আমাদের হাঁটতে চলতে আরো সুবিধা হতো। তাইনা বাবা?”

মাহিনের বাবা হাঁটা থামিয়ে,একটা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে বলল,”পৃথিবী সমতল হলে আমরা এত সহজে হাঁটতেই পারতাম না। কারণ, মধ্যাকর্ষণ শক্তি তাহলে আমাদেকে পিছন দিক থেকে টেনে ধরে পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে নিয়ে যেতো। কেন্দ্রের বিপরীত দিকে হাঁটলে মনে হতো পাহাড় বেয়ে উঠছি।আর কেন্দ্রের দিকে হাঁটলে মনে হতো পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়ে যাব। আর এইযে লম্বা গাছটির নিচে দাঁড়িয়ে আছি, এটিও লম্বা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো না। পৃথিবী সমতল হলে, গাছটি নুয়ে বা কাঁত হয়ে পড়তো!

মাহিন বলল তাহলে তো মানুষের জন্য অনেক সমস্যা হয়ে যেত! গাছের ফাক দিয়ে সকালের সূর্যের আলো মাহিনের চোখে এসে লাগলো, তাই তারা আবার হাঁটতে শুরু করলো। এবার মাহিন বাবাকে জিজ্ঞাস করলো, পৃথিবী যদি সমতল হতো, তাহলে সূর্য কীভাবে আমাদেরকে আলো দিতো!

মাহিনের বাবা বলল, পৃথিবী সমতল হলে তো সূর্যের চারপাশে ঘুরতে পারতো না। আগের দিনের মানুষ যখন ভাবতো পৃথিবী সমতল তারা ভাবতো, সূর্যই পৃথিবীর চারপাশে ঘোরে। কিন্তু সেই ধারণা ভুল প্রমান হলো যখন মানুষ রাত আর দিনের পার্থক্য দেখলো। কারণ সমতল পৃথিবীর উপরে যদি পৃথিবী ঘুরতো, তাহলে তো কখনো রাতই আসতো না। সবসময় দিনের আলো থাকতো। সূর্যের তাপে পৃথিবী পুড়েই যেত।

মাহিন তাঁর বাবার মুখে সূর্যের কথা শুনে নিজের ছায়ার দিকে তাকালো। দেখলো সূর্যের আলোর ফলে তাঁর যেই ছায়া পড়েছে, সেটি তাঁর চাইতে ছোট। এটা দেখে মেহিন তাঁর বাবাকে জিজ্ঞেস করলো, সমতল পৃথিবীতে সূর্যের আলোতে মানুষের ছায়া কেমন হতো?

মাহিনের বাবা বলল, তখন মানুষের অনেক লম্বা লম্বা ছায়া পরতো। কারণ, পৃথিবীর চারপাশে ঘুরতে থাকলে, সূর্য তখন সাইড থেকে থেকে আলো দিতো। কিন্তু পৃথিবী গোল বলে, এই সকালে তোমার ছায়া তোমার চাইতে ছোট, আর বিকেলে তোমার ছায়াকে তোমার চাইতেও বড় দেখাবে। কারণ সকালে সূর্য ওঠে, আর বিকেলের পর অস্ত যায়। মানে বিকেলের দিকে অস্ত যাবার আগে সূর্য এক পাশ থেকে আলো দেয়।

“বাবা তাহলে সমতল ভুমিতে সূর্যোদয় সূর্যাস্ত থাকতো না, আমরা দিক হারিয়ে ফেলতাম না? পূর্ব পশ্চিম কীভাবে বুঝতে পাতাম! আর অন্ধকার আকাশে তারাও দেখতে পেতাম না!

হ্যাঁ, তারা না থাকার কারণে তো দিক হারাতামই। এর পাশাপাশি সমতল পৃথিবীর ভূ-চুম্বকক্ষেত্র থাকতো না। ফলে কম্পাস ব্যবহার করেও কোন দিক নির্ণয় করা যেত না। আর ভূ-চুম্বকত্ব না থাকলে আমাদের বায়ুমণ্ডলও থাকতো না! সূর্যের বিকিরিত রশ্মিতে আমাদের ক্যান্সার হয়ে যেত!

পৃথিবী সমতল নাকি গোলাকার; এই বিষয়ে কথা বলতে বলতে কখন যে নাস্তা করার সময় হয়ে গেছে। মাহিনের আম্মু তাই মাহিনের বাবাকে ফোন করে বাসায় যেতে বলল। আম্মু তাদের জন্য নাস্তা বানিয়ে বসে আছে। একসাথে সবাই নাস্তা করবে। ফোন রেখে মাহিনের আব্বু ঘড়িতে দেখলো নয়টা বেজে গেছে। ঘড়ি দেখে মাহিনের আব্বু মাহিনকে জিজ্ঞেস করলো, “বলোতো বাবা পৃথিবী সমতল হলে আমরা সময় নির্ণয় করতে পারতাম?”

মাহিন বলল, পৃথিবী সমতল হলে তো রাত দিন বলে কিছুই থাকতো না, তাই আমাদের সময় নির্ধারণ করতেও সমস্যা হতো।

মাহিনের বাবা বলল হ্যাঁ, এইযে তোমার আম্মু ফোন করে আমাদের বাসায় যেতে বলল; পৃথিবী সমতল হলে ফোন করতে পারতো না। ফোনে কথা বলা, বা টেলিযোগাযোগ সম্ভবই হতো না। আর টিভিতে কার্টুনও দেখা যেত না।

মাহিন এবার একটু চিন্তিত হয়ে বলল, “কার্টুন দেখা যেত না কেন? আর ফোনে কথা বলতে না পারলে দাদুর সাথে কীভাবে বলতাম!”

মাহিনের বাবা এবার মাহিনকে জিজ্ঞেস করলো, “বলোতো বাবা ফোন করার জন্য কোন তরঙ্গ ব্যবহার করা হয়? মাহিন শব্দকল্প বিজ্ঞানবাক্সটি থেকে জেনেছিল, টেলিফোন করার জন্য বেতার তরঙ্গ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তাই চট করেই বাবার প্রশ্নের উত্তরে সে বলল, ‘বেতার তরঙ্গ’

এবার তার বাবা বলল, “হ্যাঁ,এই বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে মহাকাশ স্যাটেলাইটে, কথাকে ইলেকট্রনিক সিগনালে রূপান্তর করে পাঠানো, হয় সেটি স্যাটেলাইটের মধ্যমে আরেকটি টেলিফোনে, বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে পুনরায় কথাটি রূপান্তর হয়ে প্রেরিত হয়। কিন্তু সমতল পৃথিবীর ভু-চুম্বকক্ষেত্র না থাকায়, এর চারপাশে কক্ষপথে কোন স্যাটেলাইট পাঠানো যেত না। আর স্যাটেলাইট না থাকলে বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে কথার সিগন্যালও পাঠানো যেত না!

মাহিন বলল, টিভির অনুষ্ঠানও তো বেতার বা মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গের মাধ্যমে প্রচারিত হয়ে থাকে। এই কারনেই কি সমতল পৃথিবীতে টিভি দেখা যেত না!কার্টুন দেখা যেত না!

এতক্ষণে তারা সকালের হাঁটা শেষ করে বাসায় চলে এসেছে। হাত মুখ ধুয়ে, আব্বু আম্মুর সাথে মাহিন নাস্তার টেবিলে বসল। নাস্তা সামনে নিয়ে মাহিন ভাবলো, যদি পৃথিবী সমতল হতো তাহলে মানুষের খেতে কোন সমস্যা হতো কিনা। ভাবতে ভাবতে সে আব্বুর দিকে তাকিয়ে বলল, বাবা, পৃথিবী সমতল হলে, উদ্ভিদ এবং প্রাণী ঠিকভাবে জন্মাতে এবং বেড়ে উঠতে পারতো না। তুমি না হাঁটতে হাঁটতে বললে,গাছপালা কাঁত হয়ে বা নুয়ে পড়তো! তাহলে তো আমরা খেতেও পারতাম না।

মাহিন আর মাহিনের আব্বুর মধ্যকার কথা বার্তা শুনে, তার আম্মুও তাদের আলোচনায় যোগ দিলো। বলল, তাতো পারতেই না,আর যদি কোনভাবে খাবার উৎপাদনও হতো সেই খাবার কিনতে, টাকা-পয়সা উপার্জন এবং পাওয়াও কষ্টকর হয়ে যেত। কারণ মহাকাশ স্যাটেলাইট না থাকলে ইন্টারনেট ব্যাংকিং থাকতো না। আর মানুষের অফিস আদালত স্কুলে যেতেও কষ্ট হয়ে যেত। প্রতিদিন সকালে তোমার স্কুলে যেতে আর বাবার অফিসে যেতে, আরো কয়েক গুণ বেশি সময় লেগে যেত।

নাস্তা শেষ করে মাহিন বলল, তাহলে তো জীবন ধারণই খুব অসম্ভব হয়ে পড়তো। সে বুঝতে পারলো, খালিচোখে পৃথিবীকে সমতল একটা ভূমি মনে হলেও, আসলেই পৃথিবী গোলাকার। আর এটা বুঝতে হলে, রকেট নিয়ে মহাকাশে যেতে হয় না। আমাদের প্রতিদিনের প্রতিটি পদক্ষেপেই এর ছোট ছোট প্রমান রয়েছে যে, পৃথিবী সমতল নয়, গোলাকার।

আরো পড়তে পারো- মজার বিজ্ঞান- পানিচক্র

বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।

বিজ্ঞানবাক্স বিষয়ক যেকোন প্রশ্নে কল করো 01847103102 নাম্বারে।

 1,029 total views,  1 views today

What People Are Saying

Facebook Comment