আচ্ছা, বৃষ্টি পড়লে তোমরা কে কি করো? ময়ূরের মতো পেখম মেলে নাচো, নাকি বৃষ্টির অজুহাতে স্কুল ফাঁকি দেয়ায় চিন্তায় থাকো? নিশ্চয় পরের টা না, তাই না !  তবে আমরা ময়ূর না হলেও কিন্তু রিমঝিম বৃষ্টি আমাদের মনকে ময়ূরের মতোই পেখম মেলে নাচার আবহ তৈরি করে দেয়। চলো আজ জেনে নেই পানিচক্র বিষয়ে।

প্রাণ জুড়ানো শীতল ঠাণ্ডা হাওয়া, সাথে বৃষ্টির পানি। মনে হচ্ছে এখনই গিয়ে একটু বৃষ্টিতে ভিজে আসি। ‘আয় বৃষ্টি ঝেঁপে’ ‘ঝড় এলো এলো ঝড়’ কতই না ছড়া-কবিতা মনে আসতে থাকে তখন !

আচ্ছা, কখনো কি মনে হয়েছে যে এই বৃষ্টিগুলো আকাশ থেকে কীভাবে আসছে? অথবা কীভাবে মেঘ তৈরি হচ্ছে? কীভাবে ওপরে বৃষ্টির পানি তৈরি হচ্ছে? এখনই কেন পড়ছে, একটু আগে বা আরও পরে কেন না? এরকম হাজারও প্রশ্নের হয়ত স্কুলের বইয়ে উত্তর পেয়েছো, কিন্তু আজ আসো আমরা একটু ভিন্নরকম ভাবে জেনে নেবো যে মূলত পানির এই বিষয়টি আসলে কী ! সাথে জানবো আরও মজার কিছু পানি-সৃষ্টি বিষয়ক নিয়ম, আর এটাকেই বইয়ের ভাষায় বলে পানিচক্র

আকাশে মেঘের সৃষ্টি, তারপর সেই মেঘ থেকে বৃষ্টি পানি হয়ে আমাদের কাছে আসা ইত্যাদি যাই প্রতিনিয়ত দেখছি এগুলোর সবকিছুকে পানিচক্র (water cycle) এর অন্তর্ভূক্ত।

সূর্যের তাপে যখন নদী আর সমুদ্রের পানি উত্তপ্ত অর্থাৎ গরম হয় তখন পানি আস্তে আস্তে বাষ্পে পরিণত হয় এবং সে বাষ্প আকাশে উড়ে যায়। চুলায় মা যখন ভাত বা যেকোনো খাবার রান্নার জন্য পানি দেয়, কিছুক্ষণ পর সে পানি থেকে ধোঁয়া মতন উঠতে থাকে, তাই হচ্ছে বাষ্প। বাষ্প অনেক হালকা তাই উপরে চলে যায়, ঠিক যেমন গ্যাসের বেলুনের মতো।

কী, ভালো লাগছে পানিচক্র নিয়ে পড়তে? পড়তে থাকো, সামনে আরো মজার বিষয় আছে!

আর সূর্যের তাপে এভাবে পানি পৃথিবী থেকে বাষ্প হয়ে উড়ে যাওয়া কে বিজ্ঞানের ভাষায় বাষ্পীভবন (Evaporation) বলে। মনে থাকবে তো? ‘বাষ্পীভবন কি’ জিজ্ঞেস করলে আবার বলো না ‘‘যে ভবনে বাষ্প উৎপন্ন হয় তাহাকে বাষ্পীভবন বলে’’  আর এই বাষ্পীভবন হচ্ছে পানি চক্রের প্রথম ধাপ।

আগেই বলেছি যে তোমরা বাসায় পানি বাষ্প হতে দেখেছো। আর না দেখে থাকলে বা এখন একে মজার কিছু মনে হলে আবার দেখে নিতে পারো। শুধু মাকে বলো যে চুলোয় পানিভর্তি কোন পাত্র বসিয়ে গরম দিতে। দ্রুত বাষ্প দেখতে চুলোর আগুন বাড়িয়ে দাও।

কিছুক্ষন পর দেখবে বাষ্প ধোঁয়ার মতন হয়ে উপরে উঠে যাচ্ছে। তবে ভুলেও মনে করবে না যে ধোঁয়া আর বাষ্প একই জিনিস। মনে রাখবে বাষ্পে হাত ধরলে হাত ভেজা ভেজা লাগবে কারন বাষ্প পানি থেকে তৈরি কিন্তু ধোয়াতে তা হবে না। কিছুক্ষণ বাষ্পে হাত লাগিয়ে দেখই না কথাটা সত্য কি না?

যখন পানি বাষ্প হয়ে আকাশে উড়ে যায় তখন তা বিন্দু বিন্দু পানির ফোটায় পরিনত হয়। একে তোমাদের বইয়ে জলীয় কণা নামেও লেখা দেখবে। এখন আকাশে এই জলীয় কণাগুলো যখন নানারকম গ্যাস আর ধুলাবালির সংমিশ্রনে আসে তখনই মেঘের সৃষ্টি হয়। আকাশে মেঘ সৃষ্টির এই প্রক্রিয়াকে বলে ঘনীভবন(Condensation). এটি পানি চক্রের (Water Cycle) এর দ্বিতীয় ধাপ।

তোমাদের মনে নিশ্চয় এখন একটি ইচ্ছে জেগেছে যে, আকাশে বাষ্প থেকে জলীয় কণায় রূপান্তরের বিষয়টা কি ঘরে পরীক্ষা করে দেখা যেতো ! হ্যা, বন্ধুরা। এটাও ঘরে বসেই পরীক্ষা করে দেখতে পারবে যে বাষ্প থেকে কিভাবে আবার জলীয় কণায় রুপান্তর হয়।

বাসায়  চুলোয় পানির যে পাত্রটি বসিয়েছিলে এখন তার উপর একটা ঢাকনা রাখ। ঢাকনাটি শুকনো এবং স্বাভাবিক তাপমাত্রার অর্থাৎ তোমার বাসার ভেতরের যে তাপমাত্রা সে তাপমাত্রার হতে হবে।

কিছুক্ষণ পর যখন ঢাকনাটি উঠিয়ে উলটো অরে ধরবে দেখবে সেখানে বিন্দু বিন্দু পানির ফোঁটা দেখা যাচ্ছে। অর্থাৎ এখানে পাত্রের পানি চুলোর তাপে বাষ্প হয়ে ঢাকনায় লেগে আবার সেটা পানিতে রুপান্তর হচ্ছে। এই যে বাষ্পের এই পুনরায় পানি বা জলকনায় রুপান্তরকেই বলে ঘনীভবন (Condensation).

বন্ধুরা, আমরা তো এখন জানি যে মেঘ কী দিয়ে তৈরি ! হ্যা, ঠিক বলেছ, পানি। অর্থাৎ বলতে পারি মেঘ = পানি। এখন আকাশে এই মেঘ যখন অনেক অনেক পরিমাণে ভারি হয়ে যায় তখন তার জন্য ভেতরে আর মেঘ অর্থাৎ পানি ধারন করা সম্ভব হয় না। আর তখনই সে বজ্রপাতের সৃষ্টি করে। তারপর কখনো হয় বৃষ্টি, কখনো হয় শিল বা শিলা বৃষ্টি আবার কখনো সে হয়ে যায় তুষার।

মেঘ থেকে এভাবে পানি পুনরায় শিলা, শিলা বৃষ্টি, তুষার, বৃষ্টি ইত্যাদি বিভিন্নভাবে পৃথিবীতে ফিরে আসার প্রকৃয়াকে বলে অধক্ষেপন (Precipitation).

যখন বৃষ্টি হয়, বৃষ্টির পানি কোথায় যায় বলতে পার? বৃষ্টির পানি গিয়ে জমা হয় সমুদ্র, হাওড়, নদী বা এরকম জলাশয়ে। আর মাটিতে যে পানিগুলো পরে সেগুলো মাটি চুয়ে চুয়ে একেবারে মাটির অনেক গভীরে যেখানে পানি থাকে, সেখানে গিয়ে জমা হয়। এবং এভাবেই পানিচক্র বিষয়টি সম্পন্ন হয়।

মনে রাখবে পানিচক্র (Water Cycle) মোট তিনটি ধাপে শেষ হয়।

১. বাষ্পীকরন         (Evaporation)

২. ঘনীভবন           (Condensation) এবং

৩. অধক্ষেপন         (Precipitation)

বন্ধুরা, পানি চক্র সম্পর্কে আমরা  তো সবই জেনে গেলাম, কি বলো? এখন এর উপর আরও কয়েকটি মজার বিষয় নিয়ে আলোচনা করি এসো! হয়তো এগুলোর সবগুলোই তোমার অজানা!

(এই ফাঁকে দেখে নাও ঘরে বসেই সায়েন্স এক্সপেরিমেন্ট করতে তোমার কী কী বিজ্ঞানবাক্স প্রয়োজন) 

আচ্ছা, তোমরা যখন মাঠে ক্রিকেট, ফুটবল এসব খেলো তখন তো ঘামতে থাকো। তোমরা কি জানো, যে গাছও তোমাদের মতোই ঘামে! আচ্ছা গাছ তো হাঁটাচলা করে না, কিন্তু তারপরেও ঘামে কীভাবে? খুব সহজ, তোমরা ঘুমিয়ে থাকলে বা স্রেফ বিছানায় শুয়ে থাকলেও ফ্যান না চলার কারনে যেমন ঘামো গাছও তেমনই ঘামে। ঘামে মানে গাছ থেকে পানি বেরিয়ে যায় পাতা বা ফুলের মাধ্যমে।  সে যাই হোক, গাছের ঘেমে যাওয়ার এই বিষয়টিকে বলে ‘স্বেদন’ বা Transpiration.

আমাদের দেশ তো শীতপ্রধান দেশ না। তাই আমরা তুষার পড়তে দেখি না। কিন্তু যেসব দেশে তুষার পড়ে, সেসব দেশের তুষার পানি যে নিয়মে সূর্যের তাপে বাষ্পে পরিণত হয় অর্থাৎ বরফ গরম হয়ে পানিতে, তারপর পানি পর্যাপ্ত তাপ পেলে বাষ্পে পরিনত হয় সে নিয়মেই বাষ্পীভূত হয়। কিন্তু মাঝে মাঝে খুব অদ্ভুত ভাবে তুষার সরাসরি বাষ্পে পরিনত হয় কোনরূপ পানিতে পরিনত হওয়া ছাড়াই। একে বলে ঊর্ধ্বপাতন বা Sublimation.

তো আজ এ পর্যন্তই। পরবর্তী ব্লগে আবার  বিজ্ঞানের মজার কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে, কেমন?

আরো পড়তে পারো- Top 10 science base YouTube channels for young geniuses (Part- 1)

বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।

 1,472 total views,  2 views today

What People Are Saying

Facebook Comment