রাতে ঘর অন্ধকার থাকলেই চিৎকার করে ওঠা কিংবা দিনের বেলা রুমে কেউ না থাকলে গা ছম ছম করা। অথবা, বাহিরে কুকুর ‘ঘেউ-শব্দ করার আগেই ভয়ে মুর্ছা যাওয়া আবার স্কুলে যাওয়া বা হোম টিউটরের নাম শুনলেই ভয়ে আধমরা অবস্থা হওয়া ইত্যাদি এরকম বহু অহেতুক ভয়ের আমাদের সমাজের একটি জায়গাতেই বসবাস করে। হ্যা, সে জায়গাটি হল, বাচ্চাদের মনে। বাচ্চারা কারনে অকারনে ভয় পেয়ে থাকে এটি স্বাভাবিক। কিন্তু এ ভয়ের মাত্রা যদি খুব বেশি হয় তবে তা অবহেলা না করে অভিভাবকদের বরং সতর্ক হওয়া উচিৎ।
আসুন আমরা জেনে নেই বাচ্চাদের ভয়ের বিষয়ের কিছু কথা, কারন এবং এর সমাধানের কিছু উপায়।
বয়স অনুযায়ী বিভিন্ন ধাপে শিশুদের ভয় সমুহ :
শিশুর ধরন | সম্ভাব্য ভয় সমূহ | বয়স |
নবজাতক (infant) হামাগুড়ি শিশু (Todler)হাটা শেখা শিশু (Todler) |
> জোরে শব্দ হলে > আচমকা তাদের সামনে উপস্থিত হলে। > সম্পুর্ন অচেনা কাউকে দেখলে। > তাদের থেকে আলাদা হলে। > বাসা পরিবর্তন হলে। |
০-২ |
স্কুলে ভর্তি হওয়ার বয়সে | > অন্ধকার। > রাতে শব্দ হলে। > মুখোশ দেখলে। > ভুত-প্রেতে। > কুকুর বা হিংস্র জানোয়ারে। |
৩-৬ |
স্কুল পড়ুয়া দের | > সাপ বা মাকড়সা। > ঝড় বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে। > বাসায় একাকী থাকলে। > রাগী শিক্ষকদের। > ভয়ের কোন সংবাদ। > ভৌতিক কোন টিভি শো। > ইন্জুরি, অসুস্থতা, ডাক্তাদের > হেরে যাওয়া কিংবা প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ভয়। |
৭-১২ |
এ বিষয়ের উপর বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন :
সমাধানে করনীয় :
১. শিশুর ভয়গুলো কে বুঝুন :
আপনার শিশু শুধু ভয় পাচ্ছে; এ পর্যন্তই এসে থেমে যাবেন না। সে কেন ভয় পাচ্ছে অর্থাৎ তার ভয়ের বিষয়ের পুরো গল্পটি আগে শুনুন। অতঃপর তার মত করে বিষয়টি বুঝতে চেষ্টা করুন। নতুবা সঠিকভাবে এর সমাধান করা যাবে না।
২. শিশুর সাথে কথা বলুন :
হতে পারে আপনি ভীষন ব্যাস্ত থাকেন। তারপরেও যতক্ষন ফ্রি থাকেন টিভি, সিরিয়াল, সোশাল-মিডিয়া ইত্যাদিতে সময় নষ্ট না করে আপনার শিশুর সাথে কথা বলুন। এমন কি আপনার অবর্তমানে আপনার শিশুর সাথে যারা থাকে, তাদেরও বলে দিন কথা বলার জন্য।
৩. শিশুর ভয়কে গুরুত্ব দিন :
কখনই আপনার শিশু আপনাকে তার ভয়ের কথা বললো আর আপনি হো-হো করে হেসে দিলেন, এমনটি যেন না হয়। তার ভয় শুনতে আপনার কাছে যত হাস্যকরই হোক না কেন, তার কাছে এটি খুবই গুরুত্বপুর্ন।
৪. ভয় দুরিকরনে সত্যটি বলুন :
শিশুরা স্বাভাবিক ভাবেই কৌতুহলী আর শত প্রশ্নকারী। অনেক সময় অভিভাবক গন তাদের প্রশ্নের পর প্রশ্নের হাত থেকে বাচতে কিছু একটা বলে তাদের আপাতঃ শান্ত করেন। যা, পরবর্তিতে তাদের ভয়কে আরও বড় করতে সাহায্য করে।
৫. সমস্যার সমাধান দিন :
শিশু ভয় পাচ্ছে। এ নিয়ে তার সাথে কথা বলে তাকে নিয়েই একটা সমাধান বের করুন। এতে প্রথমত সে একাকী থাকলে নিজেই চিন্তা করতে শিখবে আবার তার ভয়ের জায়গাটিও তখন অল্প অল্প করে কমে আসবে।
বাচ্চাদের অহেতুক ভয় ও সমাধান সম্পর্কে আরও জানতে এখানে ক্লিক করুন:
৬. হিরোদের মুভি/কার্টুন দেখান :
ছোটদের নিয়ে যত হিরোদের মুভি, কার্টুন এনিমেশন আছে এগুলো দেখাতে পারেন। এতে করে তাদের মাঝেও সাহসিকতার সঞ্চার হবে এবং ভয় কমে আসবে। বিশ্বের প্রায় শিশু বিশেষজ্ঞ গন এই কমন পরামর্শটি দিয়ে থাকেন।
৭. ভীতিকর টিভি অনুষ্ঠান থেকে বিরত রাখুন :
শিশুদের কে ভীতিকর কোন টিভি সিরিয়াল, মুভি ইত্যাদি দেখা বা দেখানো যাবে না। আবার তাদের সামনে ভয়ের বা ভৌতিক কোন গল্প-কাহিনী নিয়েও আলোচনা করবেন না।
৮. ভয়ের জায়গা গুলোতে তাদের সাথে থাকুন :
বাড়ির যে সমস্ত রুম, জায়গায় যেতে শিশুরা ভয় পায় তাদের নিয়ে সে সব জায়গা বা রুমে হাটুন। আবার অনেক শিশু বাহিরে নতুন কারও সাথে মিশতে বা কোন স্থানে যেতে ভয় পায়। এ অবস্থায় তাদের নিয়ে সে সমস্ত জায়গায় যান এবং নতুন দের সাথে বন্ধুসুলভ উপায়ে পরিচয় করিয়ে দিন।
৯. সন্তানকে ভালবাসুন :
অহেতুক ভয়-পাওয়া একটি মানসিক ব্যাধি। তবে এ জিনিসটি একদিনে তৈরি হয় না। বাচ্চাদের থেকে দূরে থাকায়, ব্যাস্ততার অযুহাতে তাদের সময় না দিতে পারায় তাদের মাঝে থাকা স্বাভাবিক ভয়টি একসময় অস্বাভাবিক মাত্রায় রুপ নেয়। তাই, সন্তানকে সময় দিতে হবে আর তখনই হবে তাদের প্রতি ভালবাসার প্রকৃত উদাহরন।
যদিও ভয় আমরা কমবেশি সবাই পেয়ে থাকি এবং এটি স্বাভাবিক একটি বিষয়। কিন্তু অহেতুক ভয় পাওয়ার বিষয়টি অস্বাভাবিক। প্রত্যেক অভিভাবকেরই তার সন্তানদের ভয়ের ব্যাপারে সঠিক পদক্ষেপ নেয়া উচিত।
বাচ্চাদের নিয়ে আমাদের লেখা আরও মজার মজার তথ্য সমৃদ্ধ লেখা পড়ুন:
১. নিজের সন্তানকে জানুন, তাকে জিজ্ঞেস না করেই।
২. খেলনা নিয়ে যত কথা, পড়ে নিন খেলনার ইতিহাস।
৩. Importance of Playing in child Development.
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
3,201 total views, 2 views today