যে ১০ টি কারণে আপনার সন্তানকে সাথে নিয়ে রান্না করতে পারেন
অনেকের মতে পৃথিবীতে ২ ধরনের মানুষ বাস করে;একদল খাবার জন্যে বাঁচে,অপর দল বাঁচার জন্য খায়।তা সে যাই হোক, খাদ্য আমাদের ৫ টি মৌলিক চাহিদার একটি। ভোজনরসিক বাঙালির খাবার নিয়ে যত আগ্রহ, তার চেয়ে অনেকগুণ বেশি অনাগ্রহ সন্তানকে রান্নাঘরে নিয়ে যেতে। নিরাপত্তা ইস্যুই এর মধ্যে প্রধান; তাই ছোটদের শোনা নিয়ম নীতির মধ্যে “খবরদার রান্নাঘরে আসবে না”অন্যতম। পৃথিবীর অন্য অনেক দেশেই যেখানে প্রিস্কুলে কিচেন থাকে,আর সেখানে রান্না করতে করতে বাচ্চারা শেখে, সেখানে আমাদের দেশে এই বিদ্যা একেবারেই অপাঠ্য। গবেষণায় কিন্তু এই বিদ্যার প্রয়োজনীয়তা প্রমাণিত হয়েছে বেশ ভালোভাবেই।তাই বাচ্চাদের নিয়ে রান্নার সেই সুফলগুলো জানলে হয়ত আজকের বাবা মায়েরাও আগ্রহী হয়ে উঠবেন সন্তানের জন্য রান্নাঘরের দরজাটা খুলে দিতে।
১।সন্তানের সাথে কোয়ালিটি সময়
বর্তমানে প্যারেন্টিং এর ধারণায় বাবা-মার সন্তানকে কেবল সময় দেয়ার বদলে গুরুত্ব দেয়া হয় সন্তানকে কোয়ালিটি সময় দেয়ার ক্ষেত্রে। যেখানে আপনার সন্তানের সাথে আপনি প্রোডাক্টিভ কিছু করার মাধ্যমে তাকে কিছু শেখাতে পারবেন,তার সাথে আপনার যোগাযোগ আরো বৃদ্ধি পাবে,আপনাদের পারিবারিক বন্ধন আরো মজবুত হবে; সেখানে সন্তানের সাথে রান্না করা হতে পারে খুবই চমৎকার একটি পদ্ধতি।
২। গণিতের ভয়কে জয় করুন
রান্না একটি শিল্প কিন্তু সেখানে রয়েছে সত্যিকারের মাপজোখ।কখনও চা চামচের ৩ চামচ চিনি,অর্থাৎ ১ চা চামচের ৩ গুণ চিনি; কখনও ১/২ কাপ পরিমাণে ভাগের তত্ত্ব, একটি উপাদানের সাথে আরেকটি উপাদান পরিমাণমত যোগ করার মাধ্যমে যোগ,গুণ,ভাগের বিদ্যা রপ্ত করিয়ে দিতে পারেন আপনার সন্তানকে। তার সাথে লিটার, কেজি,ইঞ্চি প্রভৃতি পরিমাপ সত্যিকার অর্থে অনুভব করতে পারবে আপনার সন্তান,যা তার গণিতের ভয়কে তো দূর করবেই,হয়ত গণিতের প্রতি সৃষ্টি করবে এক অকৃত্রিম ভালোবাসা।
৩।বিজ্ঞানের এক্সপেরিমেন্ট
সুকুমার রায় তার কবিতায় বলেছেন, “গরম তেলে ফোড়ন দিলেই লাফায় কেন তা ধেই ধেই/সোডার বোতল খুললে কেন ফসফসিয়ে রাগ করে”; বাচ্চাদের মন এমনই কৌতূহলপ্রিয়,নতুন নতুন জিনিস জানার অদম্য ইচ্ছা তাদের। এমন অনেক বিজ্ঞানময় প্রশ্নের জন্ম হয় রান্নাঘরে; যা হয়ত আপনার শিশুকে করে তুলবে একজন সত্যিকার বিজ্ঞানমনস্ক। প্রকৃত অর্থেই একের পর এক বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার বাস্তব প্রমাণ যেন ঘটে চলেছে রান্নাঘরে। আগুনের তাপে কিভাবে একেকটা অনুর বাঁধন হাল্কা হয়ে পরিমাণে বেড়ে যায়,তাপ দিলে বাষ্প হয়ে পানির উড়ে যাওয়া আর বরফের গলে যাওয়ার মত তাপবিদ্যার সাধারণপাঠ আপনি দিতে পারেন রান্নাঘরেই।
৪।খাবারের প্রতি আগ্রহ তৈরি
আজকের যুগে বাবা-মায়েদের সবচেয়ে প্রচলিত অভিযোগ, “আমার বাচ্চা কিছু খেতে চায়না”। সন্তানের খাবারের প্রতি এই অনাগ্রহ নিয়ে বাবা মায়ের উৎকণ্ঠা খুবই স্বাভাবিক। সন্তানকে সাথে নিয়ে রান্না করুন,আপনি তার জন্য কতটা পরিশ্রম করে খাবার তৈরি করেন স্বচক্ষে দেখান। বিভিন্ন খাবারের সাথে পরিচয় করিয়ে দিন,জানান তাদের পুষ্টিগুণ,আমাদের শরীরের বৃদ্ধিতে তাদের অবদান। এতে করে সে হয়ত শুধু খাবারের প্রতিই নয়, খাবার তৈরির প্রতিও আগ্রহী হয়ে উঠবে।
৫।বৃদ্ধি করুন শিশুর শব্দভান্ডার
রান্নার বিভিন্ন উপকরণ,পদ্ধতির সাথে পরিচিত হতে গিয়ে অনেক নতুন নতুন শব্দ শিখে যাবে আপনার সোনামণি,যা তার শব্দভান্ডার কে করে তুলবে আরো সমৃদ্ধ।
৬।স্মৃতিশক্তিকে করে তুলুন আরো প্রখর
সন্তানের মেধার উন্নয়নে বাবা-মায়ের চেষ্টার কোনো অন্ত নেই। রান্নাঘরে আপনার সন্তান ওয়ার্ডবুকে পড়া বিভিন্ন মাছ,ফল,শাক-সব্জির নাম বাস্তবে দেখে গেঁথে রাখতে পারবে মাথায়। রান্নার পদ্ধতিগুলো ধাপে ধাপে মনে রাখার মধ্য দিয়েও স্মৃতিশক্তি যাচাই করতে পারেন। রান্নার বিভিন্ন উপাদান একবার ৬০-৯০ সেকেন্ডের জন্য দেখিয়ে পরেরবার তার নাম জিজ্ঞেস করে দেখতে পারেন আপনার সন্তান কতটুকু ধারণ করতে পারছে।এটি প্রকৃত পক্ষে একটি স্মৃতিশক্তি যাচাইয়ের খেলা,যার নাম “কিমস গেম”,বিস্তারিত জানতে https://en.wikipedia.org/wiki/Kim%27s_Game।
৭।রিডিং পড়ার দক্ষতাকেও শান দিয়ে নিন
সুন্দর করে রিডিং পড়া বাস্তব জীবনে খুবই কার্যকর,যা আপনার সন্তানের কমিউনিকেশন স্কিল বাড়িয়ে তুলবে। যেকোনো সাক্ষাৎকার বোর্ডে তাকে সাবলীল ভাবে উত্তর দিতে সাহায্য করবে। রান্নার সময় বিভিন্ন রেসিপি পড়ার ক্ষেত্রে সাহায্য নিন আপনার সন্তানের, একসাথেও পড়তে পারেন।এতে করে তার উচ্চারণ শুধরে দিতে পারবেন এবং রিডিং পড়ার চর্চাও থাকবে অব্যাহত।
৮।পরিচয় করিয়ে দিন টেকনোলজির সাথেও
রান্নাঘর কেবল আজকের দিনে হাড়ি,পাতিল,কড়াই আর মশলার ঘর নয়,এখানে আছে নানা ডিজিটাল অটোমেটিক ছোটখাটো মেশিন। আপনার সন্তানকে পরিচয় করিয়ে দিন সেইসকল মেশিনের সাথেও।তাদের কাজ করার পদ্ধতি সম্পর্কে জানান। কে জানে হয়ত অদূর ভবিষ্যতে এমন কোনো মেশিনের জন্ম হবে তার হাতেই।
৯।নিরাপত্তার প্রথম পাঠ
রান্নাঘরেই আপনার শিশুকে দিতে পারেন নিরাপত্তার সাধারণ সকল ধারণা।রান্নাঘরে ধারালো ছুরি,কাটার সামগ্রী থাকে,আগুন জ্বলে যার কারণে বেশিরভাগ বাবা-মা সন্তানকে রান্নাঘরে প্রবেশের জন্য নিষেধ করে থাকেন। কিন্তু এগুলো নিরাপত্তার সাথে ব্যবহার তাকে অনেক বেশি দক্ষ করে তুলবে বাস্তব জীবনে। আগুন নিভানোর কৌশল,আগুনে পুড়ে গেলে বা হাত কেটে গেলে,শরীরের কোথাও গরম পানি বা গরম পাত্রের আঁচ লেগে গেলে কি করনীয় সেই সকল প্রাথমিক প্রতিবিধানের বিষয়েও তাকে জানাতে পারেন।
১০।শিশু হয়ে উঠবে আত্মবিশ্বাসী
সাধারণত রান্না করা বড়দের কাজ,আপনার শিশু যখন রান্নার বিভিন্ন কৌশল জানার পরে নিজে কিছু তৈরি করতে পারবে বা আপনার সাথে রান্নার কাজে অংশ নিবে তখন তার নিজের মধ্যে একটা আত্মবিশ্বাস জন্মাবে যে সে বড়দের মত করে কাজ করতে পারে,নিজে নিজে কিছু একটা তৈরি করতে পারে।এটি তাকে একই সাথে দায়িত্বশীল ও করে তুলবে; যা তার ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য খুবই কার্যকর।
তাই এবার থেকে শিশুর সাথে কোয়ালিটি সময় কাটানোর তালিকায় ঘুরতে যাওয়া,তার সাথে খেলা করার সাথে যুক্ত করুন শিশুকে সাথে নিয়ে রান্না করাও। যাতে আপনার শিশুকে একই সাথে আত্মবিশ্বাসী,দায়িত্বশীল করে তুলবে এবং মেধা ও মননের বিকাশ ঘটাতেও সাহায্য করবে।
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
885 total views, 2 views today