বাবা মার সাথে ঢাকার জাদুঘরগুলো দেখতে দেখতে ভালই কাটছে মাহিনের ছুটির দিনগুলো। এখন পর্যন্ত যে কয়টি জাদুঘর ঘুরে দেখেছে মাহিন তাঁর সবগুলোই নিজের ডায়েরিতে লিস্ট করে রেখেছে। শুধু জাদুঘরের নাম লিস্ট করেনি, এর পাশাপাশি প্রতিটি জাদুঘর পরিদর্শন করে, কোনটায় কী দেখলো, কী শিখলো সেগুলোও লিখে রেখেছে। মোট ১০ টি জাদুঘর পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা এবং বিবরণ লিখা হয়ে গেলে, সে ভাবলো এগুলো তার বাবা মাকে দেখালে নিশ্চই খুশি হবে। তাই এক ছুটির দিনে তাঁর ডায়রিটা নিয়ে গেল বাবা মায়ের কাছে। বাবা মাকে ডায়েরিটা দিতেই তারা খুব অবাক এবং আনন্দিত হল। তাদের সন্তান গুটিগুটি সুন্দর হাতের লেখায় বর্ণনা করেছে তার প্রতিটি অভিজ্ঞতা। তাদের সন্তানের এহেন কাজ দেখে তারা বুঝতে পারলো, মাহিনের বুদ্ধিমত্তা এবং বিচক্ষণতা আগের চাইতে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের সন্তানের মানসিক বিকাশ ও হচ্ছে সুন্দর ভাবে। তাই তারা মাহিনের সাথে জাদুঘরে ঘুরতে যাওয়া আর থামিয়ে দেয়নি। এরপর আরো পাঁচটি জাদুঘরের লিস্ট তৈরি করে, পরবর্তী ছুটির দিনগুলোতে তারা আবারো নেমে পড়লো ইতিহাস, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান এবং ঐতিহ্যের রহস্যময় সমাহার সেই জাদুঘরগুলোর ভেতর কী আছে তা জানার জন্য। চলুন তবে জেনে নেয়া যাক আরো পাঁচটি জাদুঘরের কথা!
সোহরাওয়ার্দি উদ্যান স্বাধীনতা জাদুঘর
নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর এসেছিল আমাদের স্বাধীনতা। মহান স্বাধীনতা অর্জনের প্রমাণ এবং পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের সমস্ত দলিলাদি নিয়ে সাজানো হয়েছে এই জাদুঘরটি। এই সোহরাওয়ার্দি উদ্যানেই, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিকেল ৩ টা ৩১ মিনিটে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কমান্ডার লেঃ জেনারেল আব্দুল্লাহ খাঁ নিয়াজি আত্মসমর্পণ দলিলে স্বাক্ষর করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের শুরু যেই ভাষণে, বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণটিও দিয়েছিলেন এই সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে বা তৎকালীন রেস্কোর্স ময়দানে। স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম থেকে স্বাধীনতা অর্জনের নানান প্রমাণ, ছবি, দলিল, প্রামান্য চিত্র সংরক্ষিত রয়েছে এই পাতাল জাদুঘরে। সন্তানকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ধারণায় উদ্বুদ্ধ করতে হলে তাঁকে নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন এই জাদুঘরে। শুক্র এবং শনিবার বাদে জাদুঘরটি প্রতিদিন খোলা থাকে বিকেল ৫ টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত।
শিশু জাদুঘর
বাংলাদেশ শিশু একাডেমীর মূল চত্বরে অবস্থিত এই শিশু জাদুঘর। প্রাচীন কাল থেকে সময়ের সাথে সাথে বাংলাদেশের অভ্যুদয় এবং বিবর্তনের ইতিহাস সাজানো আছে এই জাদুঘরে।থ্রিডি শিল্পকর্মের মাধ্যমে মোট ৭২ টি শোকেস জুড়ে রয়েছে বাংলাদেশের ইতহাস, সংস্কৃতি এবং ইতিহাস। শুধুমাত্র দেশের ইতিহাসই নয়, শিশুদেরকে দেশের বাইরের ইতিহাস এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা দেয়ার জন্য ২৪ টি দেশের ইতিহাস সংস্কৃতি এবং খেলনা নিয়ে সাজানো হয়েছে ২৪ টি শোকেস। এবং নাম দেয়া হয়েছে ‘দেখব এবার জগতটাকে’।শুক্র এবং শনিবার বাদে সপ্তাহের বাকি পাঁচদিন সকাল নয়টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে এই জাদুঘরটি এবং এখানে প্রবেশের জন্য কোন টিকেট লাগে না।
চিড়িয়াখানা প্রাণী জাদুঘর
ঢাকার জাতীয় চিড়িয়া খানার শেষ প্রান্তের দিকে এই প্রাণী জাদুঘরটি অবস্থিত। এই প্রাণী জাদুঘরে রয়েছে মৃত ডলফিন, বিভন্ন প্রানীর কংকাল এবং মমি প্রভৃতি। চিড়িয়াখানায় প্রবেশের সময় টিকেট কেটে ঢুকলেও, এই জাদুঘরে ঢুকবার জন্য অতিরিক্ত একটি টিকেট কিনতে হয়। প্রায় পৌনে দুইশ বর্গমিটারের এই প্রানী জাদুঘরে ১১৮ টি প্রাণীর মনি স্টাফিং এবং ১৬০ টি প্রাণীকে ফরমালিন দিয়ে রাখা হয়েছে।
উদ্ভিদ জাদুঘর
স্বাধীনতা পূর্ববর্তী ষাট এবং সত্তর দশকে গোড়াপত্তন হয়েছিল আমাদের এই উদ্ভিদ জাদুঘরের। এটির আরেক নাম বাংলাদেশ ন্যাশনাল হার্বেরিয়াম। এই নামটি রাখা হয়েছিল স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ১৯৭৫ সালে। এর আগে এর নাম ছিল বোটানিক্যাল সার্ভে অফ বাংলাদেশ। নানা জাতের নানান প্রজাতির প্রায় এক লাখ নমুনা এবং শুকনো বীজ সংরক্ষিত রয়েছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল হার্বেরিয়ামে।
টাকা জাদুঘর
এই বাংলা ভূখণ্ডের বিভিন্ন সময়ে প্রচলিত বিভিন্ন রকম মুদ্রার সমাহার নিয়ে, ঢাকার মিরপুর সেকশন-২’এ গঠিত হয়েছে দেশের একমাত্র টাকা জাদুঘর। এই জাদুঘরে দুটি গ্যালারিতে সাজানো আছে নানা রকমের প্রাচীন সব মুদ্রা। প্রথম গ্যালারিতে রয়েছে প্রাচীন ছাপা মুদ্রা। ছাপা মুদ্রার প্রচলন শুরু হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে। গুপ্তযুগ এবং গুপ্তযুগ পরবর্তী মুদ্রা, খ্রিস্টীয় সপ্তম থেকে নবম শতকের রৌপ্য মুদ্রা এবং উনিশ শতকের শুরুর দিকে ধাতব মুদ্রা বাদে যে কড়ি মুদ্রা ব্যবহার করা হত সেগুলোও আছে এই টাকা জাদুঘরে। দ্বিতীয় গ্যালারিতে রয়েছে বিদেশী সব মুদ্রা। এবং মুদ্রা কিয়স্ক। কেউ চাইলে স্বারক নোটে নিজের ছবি আঁকিয়ে নিতে পারবেন। অবশ্যই সেটি স্মারক মুদ্রা। জাদুঘরটিতে প্রযুক্তির ব্যবহার সর্বোচ্চ এবং আধুনিকতার দিক দিয়ে অনেক খানি এগিয়ে। সকাল ১১ টা থেকে বিকেল পাঁচটা যেকোন দিন এবং শুক্রবার বিকাল ৪ টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকে টাকা জাদুঘর।
জাদুঘর যে শুধু ঘুরতে যাওয়ার বা সময় কাটানোর জায়গা তা না। জাদুঘর এমন একটি জায়গা যেখানে সময় থমকে থাকে, ইতিহাস ঘুরে ফিরে আসে, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য অটুট রাখে। এটি বেড়ানোর জায়গা তো বটেই, পাশাপাশি সন্তানের শিক্ষা এবং জ্ঞান বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশের জন্য একটি অনন্য জায়গা।
ঢাকার পাঁচটি জাদুঘর : সন্তানকে নিয়ে আপনিও হারিয়ে যান জ্ঞানের জগতে (১ম পর্ব)
ঢাকার পাঁচটি জাদুঘর : সন্তানকে নিয়ে আপনিও হারিয়ে যান জ্ঞানের জগতে (২য় পর্ব)
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
1,723 total views, 2 views today