তোমাদের কি তড়িৎ তাণ্ডবের ফল সবজির ব্যাটারির কথা মনে আছে? নিশ্চয় মনে থাকার কথা। একবার আমাদের ক্ষুদে বিজ্ঞানী সজল এই এক্সপেরিমেন্ট করতে গিয়ে বাসায় হুলুস্থুল কাণ্ড ঘটিয়ে ফেললো। হয়েছে কী সেদিন সজল এক্সপেরিমেন্ট করতে তড়িৎ তাণ্ডব বিজ্ঞানবাক্স নিয়ে বসলো। তারপর কাউকে কিছু না বলেই রান্না ঘর থেকে অনেক গুলো আলু নিয়ে আসলো। সজলের আম্মু তার এই কাণ্ড দেখে খুবই অবাক। ব্যাপার টা কি? ‘তুমি এতো গুলো আলু দিয়ে করবে টা কী’? আম্মু সজলকে জিজ্ঞেস করে। সজলও খুব রহস্য নিয়ে উত্তর দেয়- ‘ওয়েট অ্যান্ড সি’। তারপর সে আলু দিয়ে তার এক্সপেরিমেন্ট শুরু করে দেয়। তড়িৎ তাণ্ডবের ফল সবজির ব্যাটারি এক্সপেরিমেন্ট দেখে দেখে সে আলু দিয়ে লাইট জালিয়ে দিল। সবাই সজলের এই এক্সপেরিমেন্ট দেখে খুবই অবাক। তারপর একে একে সবাই সজলের এই অবাক করা আবিষ্কার দেখে তার প্রশংসা করতে লাগলো। সজলও এভাবে সবার প্রশংসা পেয়ে দারুণ খুশি হল। সামনে সজল প্ল্যান করছে নতুন কোন এক্সপেরিমেন্ট করে আবার সবাইকে চমকে দেয়ার।
ফল সবজির ব্যাটারির মতই আলোর ঝলক, চুম্বকের চমক, রসায়ন রহস্য, তড়িৎ তাণ্ডব, অদ্ভুত মাপজোখ, শব্দ কল্প এবং একদম নতুন পঞ্চম শ্রেণির বিজ্ঞানবাক্স সহ সবগুলো বিজ্ঞানবাক্সে রয়েছে ২০০+ এক্সপেরিমেন্ট। আমরা ঠিক করেছি এই এক্সাইটিং এক্সপেরিমেন্ট গুলোর মধ্য থেকে নির্বাচিত কিছু এক্সপেরিমেন্ট নিয়ে বিস্তারিত জানাব। আজ রইল তার ৩য় পর্ব।
চুম্বকের চমকের ম্যাগনেটিক সুইচ
তোমরা নিশ্চয়ই সবাই জানো সুইচ দিয়ে লাইট বা ফ্যান অন অফ করতে হলে প্রথমে আমাদের সুইচের কাছে গিয়ে সুইচটাকে স্পর্শ করতে হয়। সুইচে চাপ দিয়ে লাইট অন করা যাবে অথবা অফ করা যাবে। কেমন হত যদি হাতের কোন স্পর্শ ছাড়াই দূর থেকে একটি সুইচ অন অফ করা যেত? তাহলে আমরা দূর থেকেই একটি বাতিকে জ্বালাতে কিংবা নেভাতে পারতাম। এখন আমরা ঠিক এই কাজটা সম্পর্কেই জানবো। এই কাজটি করার জন্য আমাদের লাগবে একটা রিড সুইচ। এই সুইচটি আসলে একটি ম্যাগনেটিক সুইচ। যদি আমরা এই সুইচের কাছে একটি চুম্বক নিয়ে আসি তাহলে সুইচটা অন হয়ে যায় আর চুম্বকটাকে দূরে নিয়ে গেলে আবার অফ হয়ে যায়। তো এই পরীক্ষাটি করার জন্য আমরা রিড সুইচকে ব্যাটারির সাথে কানেকশন দিব। তারপর তার সাথে আমরা একটি এলইডি যুক্ত করে দিব। এখন বিজ্ঞানবাক্সে থাকা ম্যাগনেটটাকে এখন কাছে আনলেই এলইডি জ্বলে উঠবে আবার দূরে নিয়ে গেলে এলইডি নিভে যাবে। তারমানে এই রিড সুইচটা একটি সাধারণ সুইচের মতই কাজ করছে কিন্তু স্পর্শ করে চাপ দেয়ার বদলে চুম্বক ক্ষেত্রের সাহায্যে আমরা এটাকে অন করতে পারি আবার অফ করতে পারি। মজার না ব্যাপারটা? তো আসলে আমরা এই রিড সুইচকে কিভাবে ব্যবহার করতে পারি, এই রিড সুইচকে আমরা চুম্বক ক্ষেত্র নির্দেশক সেন্সর হিসেবে ব্যবহার করতে পারি। তাহলে এই সুইচ অন হওয়ার মাধ্যমে আমাকে জানান দিবে যে আশেপাশে চুম্বক ক্ষেত্র আছে কিংবা নাই। যদি থাকে তাহলে সুইচটা অন হয়ে যাবে আর যদি না থাকে তাহলে অফ হয়ে যাবে। অদ্ভুত না ব্যাপারটা!
শব্দ কল্পের শব্দে শব্দে আলোর নাচ
আমরা তো সবাই শব্দ শুনি, কিন্তু শব্দ কি আমরা কেউ দেখেছি। শব্দ দেখার মজার একটা খেলা সম্পর্কে আমরা এখানে জানবো। আর এই এক্সপেরিমেন্টটি খুঁজে পাবে শব্দ কল্প বিজ্ঞানবাক্সে। এই এক্সপেরিমেন্ট করতে আমাদের লাগবে কাগজের তৈরি একটা টিউব। একটি খালি টিস্যু পেপারে রোলকে আমরা টিউব হিসেবে ব্যবহার করতে পারি। টিউবের মুখে একটা বেলুনের পর্দা লাগিয়ে নিতে হবে। একটা বেলুনকে কেটে টিউবের মুখে পরিয়ে দিলেই হবে। এবার এক টুকরা টেপ দিয়ে পেঁচিয়ে দিলেই বেলুনটা টানটান হয়ে থাকবে। এবার একটা কাঠপেন্সিলকে আমরা এই টিউবের সাথে টেপের সাহায্যে জুড়ে দিব। এই পেন্সিলের মাথায় একটা লেজার লাইটকে এমন ভাবে টেপ দিয়ে বসিয়ে নিতে হবে যাতে লেজার লাইটটা জ্বলে থাকে। লেজারের আলোটা যে বিন্দুতে পরে সেখানে আমরা ছোট্ট একটা আয়না বসিয়ে নিয়েছি। একটু আঠা কিংবা টেপের সাহায্যে চাইলে এই আয়নাটাকে বসিয়ে নেয়া যাবে। এবার আমরা এই টিউবের পেছনে যদি শব্দ করি তাহলে সেই শব্দের জন্য বেলুনের পর্দাটা কাঁপতে থাকবে এবং তার সাথে সাথে লেজারের আলোটাও কাঁপাকাঁপি শুরু করবে। এটা দেখেই বোঝা যাবে গলা দিয়ে যে শব্দ আমরা করি তার জন্য এর কম্পনটা কী ধরণের হয়। এখন শব্দ করলেই দেখা যাবে শব্দ অনুযায়ী লেজারের আলোটা কাঁপতে থাকবে এবং নানা রকম আলোর নকশা দেখা যাবে। তুমি চাইলেই কথা বলার সময় এটা মুখের উপর ধরে রেখে দেখতে পারো তোমার কথার তালে তালে এই লেজারের আলোটা কেমন করে নাচানাচি করে।
পঞ্চম শ্রেনির রংধনু ফুল
আমরা এখন যে এক্সপেরিমেন্ট সম্পর্কে জানব তার নাম হল রংধনু ফুল। এই এক্সপেরিমেন্টটি পঞ্চম শ্রেনির বিজ্ঞানবাক্সে আছে। এই এক্সপেরিমেন্ট করতে প্রথমেই আমাদের লাগবে ডাটা সহ সাদা রঙের কোন ফুল। এখন এই সাদা ফুলে আমরা বিভিন্ন রকম রঙ করব। কিন্তু এই ফুলে আমরা পেন্সিল কিংবা কালার ড্রপ দিয়ে রঙ করব না। আমরা কালারটা করব সম্পূর্ণ অন্যভাবে। এখন সাদা ফুলের সাথে আমাদের আরও লাগবে দুটি স্বচ্ছ কাঁচের গ্লাস বা বিকার। আরও লাগবে পছন্দ মত যেকোন কালারের ফুড কালার। মনে কর আমরা লাল ও নীল রঙের ফুড কালার নিলাম। এখন স্বচ্ছ কাঁচের গ্লাসের দুই পাত্রে দুটি রঙ মিশিয়ে দিব। এবার আমাদের কাছে থাকা ফুলের ডাটায় মাঝখান বরাবর কেটে নিতে হবে। এমন ভাবে কেটে নিতে হবে যাতে করে ডাটার দুই অংশ দুই গ্লাসে ডুবিয়ে রাখা যায়। তারমানে ডাটার একটা অংশ থাকবে লাল রঙ মেশানো গ্লাসে এবং আরেকটি অংশ থাকবে নীল রঙ মেশানো গ্লাসে।
আমরা নিশ্চয় জানি যে, গাছ পালা মাটি থেকে পানি তুলে তার খাবার তৈরি করে। তাহলে পানিতে যদি রঙ থাকে তাহলে সে রংটাকে বাদ দিয়ে পানি তুলতে পারবে না। রঙণসহই তুলবে। এখন একটু পরে ফুলের দিকে তাকিয়ে দেখবে ফুলটা ধীরে ধীরে হালকা হালকা লাল ও নীল রং ধারণ করছে। আর যতক্ষণ আমরা এই রঙের পাত্রে ফুলের ডাটা ডুবিয়ে রাখব তত বেশি এর রঙ আরও তীব্র আকার ধারন করবে।
আবার আমরা যদি শুধু একটি ফুলের ডাটা লাল রঙের পাত্রে ডুবিয়ে রাখি তাহলে ফুলটি ধীরে ধীরে লাল রঙে রূপ নিবে। তবে খেয়াল রাখতে হয় এই এক্সপেরিমেন্টটি করতে আমাদের অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে
আজ এই পর্যন্তই। পরবর্তী পর্বে আরও আরও কিছু মজার এক্সপেরিমেন্ট নিয়ে আমরা হাজির হব। ততক্ষনে এই এক্সপেরিমেন্টগুলো মনোযোগ দিয়ে করা যাক।
আরো পড়তে পারো
বিজ্ঞানবাক্সের নির্বাচিত কিছু এক্সপেরিমেন্ট (১ম পর্ব)
বিজ্ঞানবাক্সের নির্বাচিত কিছু এক্সপেরিমেন্ট (২য় পর্ব)
সবগুলি বিজ্ঞানবাক্স পাবে এখান থেকে
568 total views, 2 views today