আলোর ঝলক বিজ্ঞানবাক্সে যে কাগজ ও আয়না দেয়া আছে সেটা দিয়ে আমাদের ছোট্ট বিজ্ঞানী সজল অনেক আগেই পেরিস্কোপ বানিয়ে ফেলেছে। কিন্তু এবারের লম্বা স্কুল ছুটিতে সজল দারুণ একটা কাজ করে তার আব্বু আম্মুকে চমকে দিল। সজল কারো কোন হেল্প ছাড়াই এক্সপেরিমেন্ট করতে করতে বিজ্ঞানবাক্সে দেয়া পেরিস্কোপ থেকেও অনেক বড় একটা পেরিস্কোপ বানিয়ে ফেলল। কী চমৎকার ব্যাপার! সজল বিজ্ঞানবাক্সের এক্সপেরিমেন্ট নিয়ে আরও নতুন নতুন কিছু এক্সপেরিমেন্ট নিয়ে ভাবছে। তোমার কী খবর বলতো?
আলোর ঝলক, চুম্বকের চমক, রসায়ন রহস্য, তড়িৎ তাণ্ডব, অদ্ভুত মাপজোখ, শব্দ কল্প এবং একদম নতুন পঞ্চম শ্রেণির বাক্স সহ সবগুলো বিজ্ঞানবাক্সে রয়েছে ২০০+ এক্সপেরিমেন্ট। আমরা ঠিক করেছি এই এক্সাইটিং এক্সপেরিমেন্ট গুলোর মধ্য থেকে নির্বাচিত কিছু এক্সপেরিমেন্ট নিয়ে এখানে বিস্তারিত জানাব। আজ রইল তার দ্বিতীয় পর্ব।
চুম্বকের চমকের ম্যগনেটিক নিক্তি
ম্যাগনেটিক নিক্তি চুম্বকের চমক বিজ্ঞানবাক্সের একটি এক্সপেরিমেন্ট যেটা ২৪ নাম্বার পরীক্ষণে গেলে খুঁজে পাওয়া যাবে। আমরা এখন জানবো কিভাবে ম্যাগনেটিক নিক্তি তৈরি করা যায়।
চুম্বকের চমক বিজ্ঞানবাক্স থেকে প্রথমে ৩ টি রিং ম্যাগনেট, পেন্সিল এবং পেন্সিল সাইজের লম্বা এক টুকরো সাদা কাগজ নিতে হবে। এখন পেন্সিলটাকে একটা কার্ড বোর্ডে দাড়া করাতে হবে। পরিমাপের জন্য সাদা কাগজে দাগ কেটে নিতে হবে। এখন সাদা কাগজটাকে পেন্সিলের গায়ে লাগাতে হবে। এবার আমরা ম্যাগনেটিক স্প্রিং যেভাবে তৈরি করেছিলাম সেভাবে ৩ টি ম্যাগনেট পেন্সিলের ভিতর দিয়ে আটকে দিব। তাহলে এখন যদি উপরের রিং ম্যাগনেটের উপর কোন বস্তুকে রাখা হয় সেটি নিচের দিকে নেমে যাবে এবং যে দাগে এসে থামবে সেই দাগ অনুযায়ী আমরা চাইলে তার ভর মাপতে পারব বা ওজন মাপতে পারব।
আমরা যত বেশী ভারী বস্তু উপরের স্প্রিং ম্যাগনেটের উপর রাখব স্প্রিংটি তত বেশী নিচে নেমে যাবে এবং যত হাল্কা বস্তু রাখবো তত কম নামবে। এভাবে চাইলেই আমরা বিভিন্ন বস্তুর ওজন তুলনা করতে পারি।
তড়িৎ তাণ্ডবের ফল সবজির ব্যাটারি
আমরা সবাই জানি আমাদের ঘড়িতে ব্যাটারি থাকে, ক্যালকুলেটরে ব্যাটারি থাকে অথবা আমাদের ল্যাপটপ কিংবা মোবাইলও ব্যাটারিতে চলে। কিছু কিছু ব্যাটারির চার্জ একবার শেষ হয়ে গেলেই শেষ, সেটাকে আমরা আর ব্যবহার করতে পারি না। আবার কিছু কিছু ব্যাটারি আমরা বারবার চার্জ করে ব্যবহার করতে পারি। তো আমরা এখন কিভাবে ব্যাটারি তৈরি করতে হয় সে ব্যাপারে জানবো।
এই এক্সপেরিমেন্ট তড়িৎ তাণ্ডব বিজ্ঞানবাক্সে খুঁজে পাবে। আমরা এখন যে ব্যাটারি বানাবো সেটা কিন্তু বারবার চার্জ দেয়া যাবে না। একবার ব্যবহার করলেই শেষ। এই ব্যাটারি তৈরি করতে আমাদের লাগবে কয়েকটি লেবু। এখন প্রত্যেক লেবুতে ছোট্ট একটা কপার বা তামার তৈরি রড বা দণ্ড এবং একটা এল্যুমিনিয়ামের তৈরি পেরেক গভীর করে গেঁথে নিতে হবে। এবার যেকোন একটা লেবুর এ্যালুমিনিয়ামের পেরেকের সাথে তার দিয়ে পরের লেবুর কপারের সাথে কানেক্ট করব। এভাবেই আবার পরের লেবুর এ্যালুমিনিয়ামের সাথে তার পরের লেবুর কপারের কানেক্ট করব। এভাবে সবগুলো লেবুর সাথে কানেকশন গুলো দিতে হবে।
এখন এক প্রান্ত থেকে আমরা তারটা বের করে নিলাম অর্থাৎ এল্যুমিনিয়াম থেকে যেটা নেগেটিভ বা ঋণাত্মক এবং অপর প্রান্তে কপার থেকে যে তার বের করে নিলাম সেটা পজেটিভ বা ধনাত্মক প্রান্ত। এবার আমরা একটা এলইডি নিয়ে ধনাত্মক প্রান্ত বড় পায়ের সাথে ও ঋণাত্মক প্রান্ত ছোট পায়ের সাথে কানেক্ট করলেই দেখা যাবে এলইডিটা জলে উঠবে। আবার ডিসকানেক্ট করলেই নিবে যাবে। তারমানে বোঝা গেল এই লেবুর মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হচ্ছে।
তবে এটি লেবু ছাড়াও হতে পারে। সেক্ষেত্রে আমরা আলুর ব্যবহার করতে পারি।
শব্দ কল্পের সুতা টানা টেলিফোন
শব্দ কল্পের খুবই মজার একটা এক্সপেরিমেন্ট এই সুতা টানা টেলিফোন। এটি শব্দ কল্প বিজ্ঞানবাক্সের ৬ নাম্বার এক্সপেরিমেন্ট।
সুতা টানা টেলিফোন তৈরি করতে লাগবে দুটি পেপার কাপ, সুতা এবং ছোট কাঠি যেগুলো শব্দ কল্প বিজ্ঞানবাক্সে দেয়া আছে।
এবার পেপার কাপের তলায় ছোট্ট ছিদ্র করে তার মধ্য দিয়ে সুতা দিয়ে সুতাটি কাঠি দিয়ে আটকে দিতে হবে। তৈরি হয়ে গেল সুতা টানা টেলিফোন। এখন জানতে হবে এই টেলিফোনে কথা বলার নিয়মাবলী।
কথা বলার জন্য প্রথম নিয়ম হচ্ছে কাপের ভিতর দেয়া এই সুতা সবসময় টানটান থাকতে হবে। যেহেতু এখানে দুই প্রান্তে দুটো কাপ সেক্ষেত্রে যে প্রান্তে কথা বলবে সে প্রান্তের কাপ মুখের সামনে এবং অন্য প্রান্তের কাপ শোনার জন্য কানে রাখতে হবে।
দেখলেতো কি সহজেই টেলিফোন তৈরি করা যায়। তবে এক্ষেত্রে মনে রাখা উচিৎ সুতা যত লম্বা হবে তত দূরে থেকে কথা বলা যাবে এবং সুতা সব সময় টানটান করে রাখতে হবে।
রসায়ন রহস্যের রঙ হারানো, রঙ উদ্ধার (হলুদ)
এবার আমরা রসায়ন রহস্যের মজার একটা এক্সপেরিমেন্ট সম্পর্কে জানব। এই পরিক্ষাটি এসিড, ক্ষার শনাক্তকরন সংক্রান্ত। এসিড কিংবা ক্ষার শনাক্ত করতে গেলে লাগে একটি নির্দেশক। হলুদের গুড়া একটি প্রাকৃতিক নির্দেশক।
এই এক্সপেরিমেন্ট করতে আমাদের লাগবে একটি স্বচ্ছ কাঁচের পাত্র সেটি হতে পারে কোন কাঁচের গ্লাস কিংবা বিকার। আর লাগবে পানি, হলুদের গুড়া, ডিটারজেন্ট এবং লেবুর রস।
প্রথমে কাঁচের পাত্রে পানি ঢেলে নিতে হবে। তারপর এই পানিতে একটু হলুদের গুড়া মিশিয়ে দিতে হবে। মনে রাখতে হবে হলুদের গুড়া এসিডিক পরিবেশে হলুদ রং ধারন করে এবং ক্ষারীয় পরিবেশে লাল রং ধারণ করে। এখন ক্ষার হিসেবে ব্যবহার করার জন্য পানিতে একটু ডিটারজেন্ট গুলিয়ে নিতে হবে। দেখা যাবে এই ক্ষার হলুদের গুড়ার সাথে মেশানোর সাথে সাথে এর রঙ পরিবর্তন হওয়া শুরু করেছে। যত বেশি ক্ষার আমরা এখানে মেশাবো এর রঙটা তত বেশি লালচে বর্ণ ধারন করবে। এই দ্রবন ভালো ভাবে মেশানোর জন্য নেড়ে দিতে হবে। তাহলে দেখা যাবে হলুদ রঙটা লালচে রঙে পালটে যাবে। এই লালচে রঙে পালটে যাওয়াই আমাদেরকে বলে দেয় যে এর মধ্যে এখন ক্ষার উপস্থিত।
এখন এই ক্ষার থেকে যদি আমরা আবার এসিডিক পরিবেশে ফেরত যেতে পারি বা অম্লীয় পরিবেশে ফেরত যেতে পারি তাহলে কিন্তু এই রঙটা লালচে রঙ থেকে হলুদ রঙে ফেরত যাবে। সেটা করার জন্য আমাদের লাগবে এসিড। এসিড হিসেবে আমরা লেবুর রস নিতে পারি। এবার আমরা অল্প অল্প করে এই পাত্রে লেবুর রস মিশিয়ে দিব। লেবুর রস মিশিয়ে দেয়ার সাথে সাথে দেখা যাবে রঙ আবার হলুদ হয়ে গেল। তারমানে এই বিকারের পরিবেশ কিন্তু আবার আগের মত এসিডিক বা অম্লীয় হয়ে গেল।
তাহলে এখন ঘরে বসেই এসিড এবং ক্ষার শনাক্ত করা যাবে। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে লেবুর রস যেমন এসিড, ঠিক তেমনই এসিড হিসেবে ভিনেগার ব্যবহার করা যাবে এবং ডিটারজেন্টের বদলে সাবান গোলা পানিও ব্যবহার করা যাবে যেটা ক্ষার হিসেবে কাজ করবে
তো কেমন লাগলো আমাদের এবারের এক্সপেরিমেন্ট গুলো। একবার করেই দেখো নিশ্চয় ভালো লাগার বিকল্প নেই। এই এক্সপেরিমেন্ট করে তুমি চাইলেই একটু ভেবে ভেবেই আরও নতুন কোন এক্সপেরিমেন্ট করে ফেলতে পারো। তোমার জন্য শুভ কামনা।
আরো পড়তে পারো বিজ্ঞানবাক্সের নির্বাচিত কিছু এক্সপেরিমেন্ট-১ম পর্ব
সবগুলি বিজ্ঞানবাক্স পাবে এখান থেকে
1,200 total views, 1 views today