Show Categories

ভারী স্কুল ব্যাগ; বৃদ্ধি করছে সন্তানের স্বাস্থ্য ঝুঁকিও

ভারী স্কুল ব্যাগ

মার্কিন কনজ্যুমার প্রোডাক্ট সেফটি কমিশনের এক তথ্য মতে, প্রতি বছর ১৪০০০ এরও বেশি শিশু ভারী স্কুল ব্যাগ বহন করার কারণে ইনজুরির শিকার হচ্ছে। ইনজুরিগুলোতে স্বাভাবিক ব্যাকপেইন থেকে শুরু করে ক্রনিক ব্যাকপেইনও থাকে। সাধারণত আমাদের দেশে এভাবে রেকর্ড রাখা হয়না বলে, নির্দিষ্ট করে আমরা হয়তো সমস্যার কারণ ধরতে পারি না। তবে শিশুদের ভারী ব্যাকপ্যাক বা স্কুল ব্যাগ সংক্রান্ত স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে সারাবিশ্বই এখন বেশ সচেতন। বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ক্যারন জেকবস মনে করেন, ভারী স্কুল ব্যাগ অস্বস্তি, অবসাদ, কাঁধে ও মেরুদন্ডের ব্যাথার ঝুঁকি তৈরি করে। বাংলাদেশ হাইকোর্ট শিশুদের ভারী স্কুল ব্যাগ বহনে নিরুৎসাহিত করতে ও প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ভারী স্কুল ব্যাগ বহন নিষিদ্ধ করতে ২০১৫ সালে একটি রুলও জারি করেন। ভারতের মহারাষ্ট্র সরকার এই বছরই স্কুল পড়ুয়া শিশুদের জন্য স্কুল ব্যাগের ওজন নির্ধারণ করে দিয়েছেন!

ভারী স্কুল ব্যাগ শিশুদের জন্য ক্ষতিকর এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু শিশুদের কোমল পিঠে, কাঁধে স্কুল ব্যাগের ভার বাড়ছে কেন? কে বাড়াচ্ছে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে গেলে আঙুলটা আমাদের দিকেই আসবে। আসুক! আঙুল আমাদের দিকে নিয়েই চলুন আজকে সমাধান খুঁজি।

স্কুল ব্যাগ কতটুকু ভারী হবে?

স্কুল ব্যাগ হোক কিংবা ব্যাক প্যাক। আমেরিকান একাডেমি অফ অর্থোপেডিক সার্জনের মতে, শরীরের মোট ওজনের ১০-১৫ শতাংশের বেশি ভারী ব্যাগ কোন ভাবেই শিশুদের বহন করতে দেয়া যাবে না। মানে আপনার সন্তানের ওজন যদি ৪০ কেজি হয় তাহলে তার স্কুল ব্যাগের ওজন ৪-৫ কেজির কম রাখাই স্বাস্থ্যসম্মত। বাংলাদেশ হাই কোর্ট ও ভারতের মহারাষ্ট্র সরকার যদিও উপমহাদেশের বাচ্চাদের শারীরিক গঠন বিবেচনায় সীমাবদ্ধতাটি ১০ শতাংশর মধ্যেই রাখার ব্যাপারে মত দিয়েছেন।

ভারী স্কুল ব্যাগের স্বাস্থ্যঝুঁকি

ভারী স্কুল ব্যাগের প্রভাব শিশুর সম্পূর্ণ শরীরের উপর পড়ে। শরীরের বিভিন্ন সংযোগ স্থলে ভারী স্কুল ব্যাগের প্রভাব সরাসরি পড়ে। বিশেষ করে শিশুর মেরুদন্ডের গড়নে প্রভাব ফেলার পাশাপাশি শিশুর মেরুদন্ডে দীর্ঘমেয়াদী ব্যথা ও ইনফেকশনের জন্য ভারী স্কুল ব্যাগ অনেকাংশে দায়ী। তাছাড়া কাঁধে ব্যথা, ব্যাকপেইন, শরীরের স্বাভাবিক গড়নে প্রভাবও ফেলে ভারী স্কুল ব্যাগ।  শিশুর শরীর গড়নের এই সময়টাতে আঘাতগুলো শিশুকে ভোগাতে পারে সারাজীবন। বিশেষ করে ৫০ বছর বয়সের পরে ছোট বেলায় পাওয়া এই ব্যাথাগুলোই মারাত্মক আকার ধারণ করে ফিরে আসে। তাছাড়া প্রতিনিয়ত ভারী স্কুল ব্যাগ বহনের ফলে শিশু মানসিক বিষাদে ভোগে ও পড়ালেখার প্রতিও আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।

ক্লাস অনুযায়ী স্কুল ব্যাগের সর্বোচ্চ ওজন কতটুকু হবে? কী বলছেন চিকিৎসকরা?

  • ১ম ও ২য় শ্রেণী-১ কেজি
  • ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণী-২ কেজি
  • ৫ম ও ৭ম শ্রেণী-৪ কেজি
  • অষ্টম ও তার উপরে-৫ কেজি
  • নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য ৬ কেজি পর্যন্ত নিরাপদ ধরা হয়।

স্কুল ব্যাগের ভার কমানোর জন্য করণীয় কী?

স্কুল ব্যাগ কাঁধে নিলে বাচ্চাদের সমস্যা হয় তাই বলেতো আর স্কুল ব্যাগকে বাদ দিয়ে দেয়া যাবে না। স্কুলে যেতে হবে, বই খাতা ব্যাগে রাখতে হবে সুতরাং ব্যাগতো লাগবেই। সন্তানের কাঁধে ব্যাগ থাকুক। সেটা সরানোর দরকার নেই। চলুন আমরা জেনে নিই কীভাবে ব্যাগের ওজন কমানো যায়।

  • সাধারণত আমাদের দেশের শিশুরা এক ব্যাগেই কোচিং ও স্কুলের সব বই খাতা নিয়ে বের হয়! এতে ব্যাগের ভারও বেড়ে যায় অনেক গুন। যদি স্কুল ও কোচিং এর জন্য আলাদা দুটো ব্যাগ করা যায় তাহলে কিন্তু ওজন অনেকাংশে কমে যায়।
  • স্কুল ব্যাগে পানির বোতল দিলে ব্যাগের ওজন বেশ কিছুটা বেড়ে যায়। এখন প্রায় অনেক স্কুলেই বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা আছে। যদি আপনার সন্তানের স্কুলেও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা তাকে তাহলে স্কুল ব্যাগে আর বাড়তি হিসেবে পানির বোতল দেয়ার দরকার নেই। যদি একান্তই দিতে ইচ্ছে করে তাহলে খালি বোতল দেয়ার চেষ্টা করুন। স্কুলে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা না থাকলে স্কুল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে অথবা অভিভাবকদের সাথে আলোচনা করে স্কুলে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
  • অনেক শিশু এক কাঁধে স্কুল ব্যাগ বহন করে। এটা একেবারেই ঠিক নয়। এতে এক কাঁধে বেশি চাপ পড়ে। সমস্যা হতে পারে কাঁধে ও মেরুদন্ডেও। স্কুল ব্যাগ দুই কাঁধে নেয়ার জন্য শিশুদের উৎসাহিত করুন। দুই কাঁধে সমান ভর থাকার কারণে শিশুদের মেরুদন্ডের ও শরীরের অন্যান্য অংশে তেমন চাপ পড়ে না।
  • সব বিষয়ের বাড়ির কাজের জন্য একটি খাতার ব্যবস্থা করতে পারেন। অনেকে প্রতি বিষয়ের জন্য আলাদা আলাদা নোট করতে পছন্দ করে। করুক। তবে সেটা বাসাতেই থাকুক। কিন্তু স্কুল থেকে দেয়া হোমওয়ার্কের জন্য কেবল একটি খাতা।
  • প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার আগে স্কুল রুটিন দেখে ব্যাগ থেকে অপ্রয়োজনীয় বই, খাতা ও অন্যান্য জিনিসপত্র বের করে রাখতে পারেন। যেদিন স্কুলে জ্যামিতির কোন কাজ নেই সেদিন জ্যামিতি বক্সটা নেয়ারই বা কী দরকার। ড্রয়িং ক্লাস না থাকলে রঙ পেন্সিলের বক্স ও ড্রয়িং খাতাটা বাড়তি ভারই শুধু যোগ করবে।
  • স্কুল ব্যাগ কেনার সময় ওজনে হালকা ব্যাগ কেনার চেষ্টা করুন।

“স্কুলের ব্যাগটা বড্ড ভারী, আমরা কি আর বইতে পারি। এও কি একটা শাস্তি নয়, কষ্ট হয়, কষ্ট হয়! আমার কষ্ট বুঝতে চাও, দোহাই পড়ার চাপ কমাও। কষ্ট হয়, কষ্ট হয়”

আপনার সন্তানের এই কষ্ট কবির সুমন বুঝেছে অনেক আগেই। আপনিও বুঝুন এবার।

বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।

 2,237 total views,  2 views today

What People Are Saying

Facebook Comment