২০১৯ সালের শুরুর দিকে বিশ্বের স্বনামধন্য এক প্রসাধনী কোম্পানির বেবি পাউডারের বিরুদ্ধে মামলা করেন এক ভারতীয় নাগরিক। তিনি অভিযোগ করেন, ওই কোম্পানির বেবি পাউডার ব্যবহার করেই তিনি ম্যাসোথেলমিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। এই মামলা পরে আদালতে গড়ায়। সকল পরীক্ষানিরিক্ষা ও তথ্যের ভিত্তিতে আসলেই অভিযোগ প্রমাণিত হয়। বেশ বড়সড় জরিমানা গুনতে হয় ওই কোম্পানিকে। এরপর ধীরে ধীরে প্রায় ১৩০০০ এর বেশি অভিযোগ জমা পড়ে ওই একই কোম্পানির বেবি পাউডারের বিরুদ্ধে। ভারত সরকার বিভিন্ন পরীক্ষানিরিক্ষার পর পুরো ভারতে ওই ব্র্যান্ডের বেবি পাউডার বিক্রি নিষিদ্ধ করে। বেবি পাউডারের ক্ষতিকর দিক নিয়ে যদিও অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন সংস্থার গবেষকরা গবেষণা করেছেন। জানিয়েছেন এর ক্ষতিকর দিক। বিশ্বের প্রায়ই দেশই নামিদামি কোম্পানির বেবি পাউডার থেকে শুরু করে লোকাল সব কোম্পানির বেবি পাউডার নিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষানিরিক্ষা চালিয়েছেন। সেইসব পরীক্ষায় উঠে আসে বেশ চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্যও। প্রায় সব কোম্পানির বেবি পাউডারেই বেশ কিছু ক্ষতিকর রাসায়নিক পাওয়া যায় যা সরাসরি ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
শিশুদের পাউডারে কী ধরণের রাসায়নিক থাকে?
শিশুর জন্য বেবি পাউডার হিসেবে আমরা যে পাউডারগুলো ব্যবহার করি সবগুলোই মূলত বেবি ট্যালকম পাউডার। আর ট্যালকম পাউডার তৈরিতে ব্যবহার করা হয় ট্যাল্ক নামের এক ধরণের মিনারেল। ট্যাল্ক মিনারেলে থাকে এসবেসটস নামক এক ধরণের উচ্চ তাপ শোষণকারী খনিজ পদার্থ। তাছাড়া বেশ কিছু বেবি পাউডার ও বেবি শ্যাম্পুতে কারসিনোজেনিক, ফরমালডিহাইডের মতো বিষাক্ত পদার্থও পাওয়া যায়। ফরমালডিহাইড মূলত এক ধরণের বর্ণহীন ও ঝাঁঝালো রাসায়নিক। নানা ধরণের আঠা তৈরির কাজে এটি ব্যবহার করা হয়। গবেষকরা বলছেন, ট্যালকম পাউডারের এসবেসটস ও ফরমালডিহাইড দুটোই শিশুর ত্বকে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।
ট্যালকম পাউডার শিশুদের কতটুকু ক্ষতি করতে পারে?
শিশুদের জন্য পাউডারের ক্ষতিকারক রাসায়নিকের কথা, ক্যান্সারের ঝুঁকির কথাতো আগেই বলা হয়েছে। শুধু শিশু না, প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষও যদি নিয়মিত বেবি পাউডার ব্যবহার করে তারও ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। ক্যান্সারতো অনেক দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর দিক। বেবি পাউডারের আরো কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে যা শিশুর উপর তাৎক্ষনিক প্রভাব ফেলে। এমন কিছু তথ্যই দিয়েছেন আমেরিকান একাডেমি অফ পেডিয়াট্রিকের গবেষকরা। তাঁরা বেবি পাউডারকে শিশুর শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা ও অ্যাজমার জন্য দায়ী করেন। শ্বাসপ্রশ্বাসের সাথে বেবি পাউডার শিশুর শরীরে প্রবেশ করার ফলে শিশুর ফুসফুসেও বড় ধরণের ক্ষতির কথা উল্লেখ করেন গবেষকরা। বেবি পাউডারের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে একই ধরণের তথ্য দেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও সেন্টার অফ ডিজিস কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন। এছাড়াও বেবি পাউডার ব্যবহারের ফলে শিশুর ত্বকের ছিদ্র বন্ধ হয়ে ত্বকের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
বেবি পাউডার এর বিকল্প কী আছে?
বিকল্প খোঁজার আগে আমরা শিশুদের জন্য বেবি পাউডার কেন ব্যবহার করি সে সম্পর্কে ভাবা যাক। অতিরিক্ত গরমে একটু আরাম বা শিশুর শরীর ঘেমে গেলে স্যাঁতস্যাঁতে ভাব দূর করার জন্য আমরা বেবি পাউডার ব্যবহার করে থাকি। অনেক সময় শিশুর ডায়াপার র্যাশ দূর করার জন্যও আমরা বেবি পাউডার ব্যবহার করি।
বেবি পাউডার ছাড়া এই সমস্যাগুলো সমাধান করা যায় কি না? তা সম্পর্কেও একটু ভাবা যাক।
শিশুর শরীরকে অতিরিক্ত ঘাম হওয়া থেকে রক্ষা করতে আপনি শিশুকে ঢিলেঢালা সুঁতি কাপড় পরাতে পারেন। ঢিলেঢালা সুঁতি কাপড়ে শিশু বেশ আরামও পাবে, খুব একটা ঘামাবেও না। শিশুর রুমে পর্যাপ্ত পরিমাণ আলো বাতাসের ব্যবস্থা রাখলেও শিশুর শরীর খুব একটা ঘামাবে না। আর যদি বাইরে গেলে কিংবা ঘরে থাকতেও কোন কারণে শিশুর শরীর হালকা ঘেমে যায় তাহলে পরিষ্কার কোন শুকনো কাপড় দিয়ে শিশুর শরীর মুছে দিতে পারেন।ডায়াপার র্যাশ থেকে শিশুকে রক্ষা করতে শিশুর অতিরিক্ত ডায়াপার নির্ভরতা কমাতে পারেন। কিংবা ব্যবহার করতে পারেন ক্লথ ডায়াপার। অতিরিক্ত ডায়াপার নির্ভরতা শিশুর জন্য এমনিতেও ক্ষতিকর। ডায়াপার র্যাশ ছাড়াও অতিরিক্ত ডায়াপার নির্ভরতার রয়েছে আরো বেশ কিছু নেতিবাচক দিক। তা জেনে নিতে পারেন এই লিংক থেকে।
এরপরও যদি বেবি পাউডার ব্যবহার করতে চান!
এত কিছুর পরও যদি কোন বিশেষ বিবেচনায় বেবি পাউডার ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়ে যায় সেজন্যও কিন্তু একটা সমাধান আছে।এক্ষেত্রে আপনাকে বেবি পাউডারের উপাদানের দিকে নজর দিতে হবে।সাধারণত বাজারে দু-ধরণের বেবি পাউডার পাওয়া যায়। একধরণের বেবি পাউডারে কাঁচামাল হিসেবে থাকে ট্যাল্ক, যাকে আমরা ট্যালকম পাউডার হিসেবে জানি।আপনার শিশুর সুরক্ষার জন্য সম্পূর্ণরূপে ট্যালকম পাউডারকে বাতিলের খাতায় রাখতে হবে।বাজারে আরেক ধরণের বেবি পাউডার পাওয়া যায় যা তৈরি হয় কর্ণ স্টার্চ দিয়ে।এই ধরণের পাউডারে সাধারণত ক্ষতিকারক রাসায়নিক থাকে না। তবে শিশুর শ্বাসক্রিয়ায় সমস্যা এই ধরণের পাউডার দ্বারাও হতে পারে। যদি কর্ন স্টার্চ পাউডার ব্যবহার করতে চান তাহলে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করার চেষ্টা করবেন। তার আগে শিশুর জন্য বেবি পাউডার কেনার সময় অবশ্যই বেবি পাউডারের উপাদান নিজ দায়িত্বে দেখে নিবেন।
- কোন অবস্থাতেই শিশুর মুখমন্ডলে পাউডার লাগাবেন না। মুখমন্ডল থেকেও পাউডার উড়ে শিশুর নাক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে পারে।
- ত্বকের সমস্যা এড়াতে শিশুর ত্বকের ভাঁজে জমে থাকা পাউডার একটি পরিষ্কার শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে দিবেন।
- পাউডার কৌটো থেকে খোলার সময় শিশুর থেকে একটু দূরে খুলে হাতে মেখে নিন। যেন শিশুর সামনে পাউডার না উড়ে।
সত্য কথা বলতে শিশু বলেন কিংবা প্রাপ্ত বয়স্ক সবার জন্যই যে কোন ধরণের প্রক্রিয়াজাত প্রসাধনী ক্ষতিকর।
কিন্তু আপনার সন্তানের ক্ষেত্রে কোন কিছু কেনার সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে অবশ্যই তা সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেয়ার চেষ্টা করবেন।
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
2,365 total views, 1 views today