Show Categories

কাটবে শিশুর মধুর বেলা, গণিত হলে মজার খেলা…

Parent teaching Bigganbaksho

ছেলেটা বা মেয়েটা বাংলা, ইংরেজি, বিজ্ঞান সবকিছুই মনোযোগ দিয়ে পড়ে, গণিতটা শিখতে গিয়েই তার যত গাঁইগুঁই। এর কারণ কী? গণিতের প্রতি কেন এই অনীহা বা ভীতি? এই অনীহা বা ভয়ের বীজ অতি শৈশবেই শিশুর (children) মধ্যে পুঁতে দিই আমরা- “মন দিয়ে অংক কর, অংক কঠিন!”  ২০১২ সালে শিকাগোর একটি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের গবেষণায় বলে, গণিত কোন কোন শিক্ষার্থীর কাছে এমনকি শারীরিক যন্ত্রণার মতো। কিন্তু শৈশবে একটা ছড়া বা গান যতটা আনন্দ নিয়ে শিশু উপভোগ করেছে, গণিতকেও যদি সেভাবে করতে পারত, তাহলে কি গণিতটা তার কাছে এতোটা ভীতিপ্রদ হত? কিন্তু গণিতকে কীভাবে এরকম মজার করে তোলা যায়? এটা একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, প্রতিদিন অনুশীলনের ব্যাপার, যা শুরু হতে পারে শিশুর পরিবার থেকেই।

তা তো বুঝলাম। কিন্তু কী করা যায়?

১। বিভিন্ন খেলার মধ্য দিয়ে গণিতকে উপস্থাপন করা যায়:

শিশুদের (children) কাছে গণিতকে একটা কাজ হিসেবে উপস্থাপন না করে মজার খেলা হিসেবে উপস্থাপন করতে পারি আমরা। যেরকমভাবে একটা শিশু স্মার্টফোনে বা কম্পিউটারে টেম্পল রান খেলে, সেরকমভাবেই তাকে দেয়া যেতে পারে সংখ্যা-সমাধান ভিত্তিক বা স্মৃতি-পরীক্ষা ভিত্তিক গেইম। নন-ডিজিটাল গেইমও অংক শেখার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে, যেমন- দাবা, লুডু, সাপ-লুডু ইত্যাদি খেলার ছলে সে শিখতে পারে সংখ্যা গণনা এবং চিন্তা করার পদ্ধতি। ‘এসো অংক শিখি’ বলে বই-খাতা নিয়ে না বসে এরকম বুদ্ধিবৃত্তিক বা সংখ্যাভিত্তিক গেইম খেলা যেতে পারে শিশুদের সঙ্গে।

২। দৈনন্দিন কাজই হতে পারে মজার অংক-খেলা:

আপনার সন্তান কি বাজারের পেটমোটা থলেটা থেকে এক এক করে কেনা জিনিসগুলো বের করতে চায়? কিংবা টমেটো কাটার সময় একটা একটা করে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় রাখতে পছন্দ করে? অথবা সে কি রান্না করতে বা দেখতে পছন্দ করে? এগুলোকে করে ফেলা যেতে পারে তার অংক শেখার ক্লাস। ভালো করে জেনে-বুঝে নিন, সে কোন কাজে বেশি উৎসাহ দেখায়। যেমন- কেক তৈরি করার সময় তাকে বলুন, ‘আমাদের পাঁচটা ডিম দরকার কেকটা বানাতে। তিনটা দিয়ে দিয়েছি, আর কয়টা ডিম ভাঙতে হবে, বলতো?’ কিংবা, ‘গুনে বলতো, কয়টা টমেটো কিনেছি?’, ‘শসার কয়টা টুকরো রেখেছি প্লেটে?’ বয়স একটু বেশি হলে তাকে বাজারের ফর্দ থেকে দামগুলো যোগ করে আপনাকে সাহায্য করতে বলুন। সে যদি ক্রিকেটপ্রেমী হয়, তাহলে স্কোর, ব্যাটিং অ্যাভারেজ, জেতার সম্ভাবনা কত পার্সেন্ট, রান পার ওভার, এগুলো সম্পর্কে শেখান বা আলোচনা করুন।

৩। গণিতকে বাস্তবসম্মত এবং অর্থবহ করে তোলার দিকে নজর দিতে হবে:

নামতা শিখে গুণ অংক করব, কিন্তু গুণ অংক করে লাভটা কী? কেনই বা অংক শিখতে হবে? না শিখলে কী এমন ক্ষতি হবে? এমন অজস্র প্রশ্ন শিশু-মনে উদয় হতে পারে। একটা শিশু খেলে কেন? খেলে সে আনন্দ পায়। তার খেলার উদ্দেশ্য আনন্দ পাওয়া। কিন্তু অংক শিখে সে কী করবে? উদ্দেশ্য যদি পরিষ্কার না থাকে, তাহলে সেই কাজে সে আদৌ কোন আগ্রহ পায় না। তাই গণিতকে তার কাছে বাস্তবসম্মত এবং অর্থবহ করে তুলতে হবে। চারদিকে ছড়ানো-ছিটানো জীবন-যাপনের অসংখ্য উপকরণের মাঝে কোন না কোন ভাবে অংক আছে। তাকে সেটা উপলব্ধি করাতে হবে। নিজের জন্মদিনে কী কী কিনতে হবে, ভেবে ভেবে সেই লিস্ট তাকেই করতে দিন না। শপিং মল-এ গেলে পণ্যের গায়ে দাম কত লেখা আছে, দেখতে বলতে পারেন। ডিসকাউন্ট হিসেব করে জিনিসটার দাম কত পড়তে পারে, আলোচনা করা যেতে পারে তার সঙ্গে। ঘড়ি দেখে সময় বলার জন্য অনুরোধ করা যেতে পারে। কোন জায়গায় ৫.৩০ এ পৌঁছানোর কথা, এখন বাজছে ৫.১০, তাহলে সেখানে যেতে আর কতক্ষণ সময় লাগতে পারে?- এভাবেও তাকে চিন্তা এবং গণনার সঙ্গে যুক্ত রাখা যেতে পারে।

৪। গাণিতিক থিম আছে এমন গল্প বা বই পড়ে শোনাই:  

শিশুকে গাণিতিক থিম আছে এমন গল্প বা বই পড়ে শোনালে গণিত বিষয়ে তার আগ্রহ সৃষ্টি হবে। শিশুদের (children) প্রশ্ন করার ক্ষমতাকে কাজে লাগাতে হবে। গল্পে সচেতনভাবে গণিত ঢুকিয়ে দেয়া যেতে পারে—“আটটি পাখি নীড় থেকে বের হয়েছিল খাবারের সন্ধানে, কিন্তু ফিরল মোটে চারটি…কয়টি পাখি ফিরল না তবে?”  চিরচেনা সেই বাঘ আর সারসের গল্পেও থাকতে পারে গণিত—“বাঘ ছিল একা, একদিন তার গলায় আটকাল একটি হাঁড়, সারস এলো সাহায্য করতে, বাঘ আর সারসে মিলে এখন তারা কয়জন হল?”  গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব শিশুর সংখ্যার সেন্স ভালো হয়, তারা সমস্যা সমাধানে বেশি অগ্রগামী হয়।

৫। গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতে পারলে পুরস্কার দেয়া উচিত:

গণিত বিষয়ে ছোটখাটো প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর দিতে পারলে পুরস্কারের মাধ্যমে তাকে উৎসাহিত করা যেতে পারে। খুব বড় কোন পুরস্কার হতে হবে এমন কোন কথা নেই। হতে পারে একটা ক্যান্ডি কিংবা আরও দশ মিনিট বাড়তি কার্টুন দেখার সুযোগ। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে, পুরস্কার যেন কোনক্রমেই অপ্রাসঙ্গিকভাবে না দেয়া হয়।

৬। শিশুকে নিজের চেয়ে বড় করে দেখানো যেতে পারে:

স্কুলে গণিত পরীক্ষায় সে কত নম্বর পেল, সেটা কোন বড় বিষয় না। যখনই সে কোন একটা সমস্যার সঠিক সমাধান করতে পারবে, তখনই তাকে উৎসাহিত করতে হবে। সমাধান না করতে পারলেও তাকে বকাবকি করার প্রয়োজন নেই। এই ক্ষেত্রে যে ভুলটা আমরা অনেকেই করে থাকি—“তোমার এই বয়সে থাকতে আমি অংকে নব্বই পেয়েছিলাম…”, এরকম বিবৃতি প্রমাণ করে, সে গণিতে তার মা বা বাবার চেয়ে ভালো নয়, সে ভালো করতে পারছে না, পারবে না। বরং এক্ষেত্রে, শিশুকে কিছুটা এগিয়ে রাখা যেতে পারে।

৭। মজার প্রতিযোগীতা:

একই বয়সের ছেলে-মেয়েদের (children) নিয়ে গণিতের মজার প্রতিযোগীতার আয়োজন করা যেতে পারে। পয়েন্ট ভিত্তিক কুইজ দেয়া যেতে পারে তাদের। সব মিলিয়ে যে জয়ী হবে তাকে একটা খেলনা বা ছোটখাটো শখের জিনিস পুরস্কার দেয়া যেতে পারে। এভাবে, দৈনন্দিন প্রতিযোগিতামূলক খেলার মধ্য দিয়ে শিশু গণিতকে নতুন নতুনভাবে আবিষ্কারে সচেষ্ট হয়ে উঠবে।

বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।

 1,064 total views,  1 views today

What People Are Saying

Facebook Comment