ছোটবেলা থেকেই আমরা সবাই স্বপ্ন দেখি কেউ ডাক্তার হবো, কেউ হবো ইঞ্জিনিয়ার, কিংবা কারো ইচ্ছা ক্রিকেটার বা ফুটবলার হওয়া। কিন্তু বড় হতে হতে আমাদের কারো স্বপ্নের বাস্তব হয়, কারো হয়তো বা হয় না। কিংবা কেউ কেউ তার স্বপ্নের কথা একদম ভুলে যায়।
আচ্ছা আমরা যদি আমাদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে চাই তাহলে কী করতে হবে? এর জন্য সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হচ্ছে আমাদের এখন থেকে অর্থাৎ ছোট বেলা থেকেই অল্প অল্প করে তার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। যদি আমরা ছোটবেলা থেকেই প্রস্তুতি নিতে থাকি তাহলে খুব সহজে স্বপ্নকে ভুলে যাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই বরং চূড়ান্ত প্রস্তুতিতে এটি দারুণ কাজে দিবে।
আজকে আমরা জানবো ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়তে গেলে ছোটবেলা থেকে কি কি জেনে রাখা ভালো এ সম্পর্কে। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ক্ষেত্রে এই সাবজেক্টের চাহিদা অনেক বেশি। ছোটবেলায় অনেকের স্বপ্ন থাকে এই সাবজেক্টে পড়াশোনা করার ও ক্যারিয়ার গড়ার।
সবচেয়ে মজার বিষয় হল এই ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে শুরুর দিকে যে এক্সপেরিমেন্ট গুলো পড়ায় তারই কিছু এক্সপেরিমেন্ট দেয়া আছে তড়িৎ তাণ্ডব বিজ্ঞানবাক্সে। তড়িৎ তাণ্ডব বিজ্ঞানবাক্সের এই এক্সপেরিমেন্ট গুলো এখন থেকে করতে থাকলে তার জন্য সহজ হয়ে যাবে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়া।
তাহলে চল জেনে আসি তড়িৎ তাণ্ডব বিজ্ঞানবাক্সের এক্সপেরিমেন্ট গুলো সম্পর্কে যেগুলো ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ার ক্ষেত্রে জানে রাখা ভালো-
সিরিজ ও প্যারালাল কানেকশন-
সিরিজ কানেকশন-
এই এক্সপেরিমেন্টের শুরুতে প্রথমে আমরা সিরিজ কানেকশন দিয়ে শুরু করি। সিরিজ কানেকশন বলতে বোঝায় বর্তনীর মধ্যে বিভিন্ন উপাদান একটার পর একটা সংযুক্ত হবে এবং সম্পূর্ণ বর্তনীতে একটাই তড়িৎ প্রবাহের পথ থাকবে। যেমন যদি ব্যাটারির পজেটিভ প্রান্তের সাথে এলইডির বড় পা অর্থাৎ পজেটিভ পাটি সংযুক্ত করি এবং অন্য প্রান্তে আমরা একটি বাজার সংযুক্ত করব এবং এটি যেহেতু পজেটিভ পা থেকে আসল তাই আমরা এটা বাজারের পজেটিভ পায়ে অর্থাৎ বড় পায়ে সংযুক্ত করব। তারপর আমরা অন্যপ্রান্ত থেকে একটি মোটর কে কানেক্ট করব। এবং মোটরের যেহেতু কোন পোলারিটি নেই তাই মোটরকে আমরা যেকোন ভাবে সংযুক্ত করতে পারি। এখন এই প্রান্তে কানেকশন দিলেই বর্তনী পূর্ণ মাপে এবং দেখা যাচ্ছে লাইট জ্বলে উঠছে, বাজার বাজছে। আমরা যদি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেই তাহলে আর কোনটাই জ্বলবে না বা কাজ করবে না।
এবার আমরা চাইলে একটি সুইচকে এই বর্তনীর সাথে যুক্ত করে দিতে পারি। এই সুইচটি কানেক্ট করার জন্য আমাদের আরো একটি ক্লিপ লাগবে। এখন এই বর্তনীটি এখন একটি সিরিজ সার্কিট। দেখা যাচ্ছে ব্যাটারি থেকে পজেটিভ প্রান্ত হয়ে এলইডির পজেটিভ প্রান্তে গেলো, তারপর নেগেটিভ প্রান্ত থেকে একটি বাজারের পজেটিভ প্রান্তে গেলো, বাজারের নেগেটিভ প্রান্ত হয়ে একটি মোটরে গেলো এবং মোটর থেকে সুইচ হয়ে ব্যাটারির নেগেটিভ প্রান্তে ফিরে আসল। তাহলে এখানে তড়িৎ প্রবাহিত হওয়ার একটি মাত্র রাস্তা এবং এই উপাদান গুলো একটার পর একটা কানেক্টেড।
তাহলে এটা হচ্ছে আমাদের সিরিজ সার্কিট। সিরিজ সার্কিটে চাইলে আমরা একটি সুইচ ব্যবহার করেই অন অফ করতে পারি। কারণ এই একটা সুইচ অন করলেই বর্তনীটা পূর্ণ হবে এবং কারেন্ট প্রবাহিত হবে, আবার এই সুইচটি অফ করে দিলে তা বন্ধ হয়ে যাবে।
এবার আমরা সুইচটি অন করে দেখি। দেখা যাবে লাইট জ্বলছে, সাথে সাথে বাজার বাজছে কিন্তু সিরিজ সার্কিটে আমরা একটার পর একটা যত যন্ত্রপাতি সংযোগ করব পুরো বর্তনীর রোধ তত বাড়তে থাকবে এবং কারেন্ট তত কমতে থাকবে। এবং এত কম কারেন্টে আমাদের মোটরটি ঘুরছে না। যদি যথেষ্ট পরিমানে কারেন্ট মোটরের ভিতর দিয়ে না যায় তাহলে মোটরটি ঘুরবে না। কিন্তু এই অল্প কারেন্ট লাইটটি জ্বালানোর জন্য এবং বাজারটি বাজানোর জন্য যথেষ্ট।
এখন এর মধ্যে যদি একটি নষ্ট হয়ে যায় তাহলে কি হবে। ধরি বাযারটি ঠিক এবং এলইডিটি নষ্ট হয়ে গেল তাহলে কারেন্ট আর এদিক দিয়ে যেতে পারবে না। তাহলে কিন্তু বাযার বাজবে না মোটর ঘুরবে না।
প্যারালাল কানেকশন-
এবার আমরা জানব প্যারালাল কানেকশন সম্পর্কে। এর আগে আমরা সিরিজ কানেকশনে দেখেছিলাম একটাই কারেন্ট প্রবাহের রাস্তা থাকতো বা একটাই লুপ থাকতো। কিন্তু প্যারালাল কানেকশনে একাধিক লুপ থাকবে। যেমন, প্রথমে ব্যাটারির সাথে একটি এলইডি কানেক্ট করতে পারি। তাহলে আমরা এলইডির বড় পা’টি ব্যাটারির পজেটিভ প্রান্তে এবং ছোট পা’টি নেগেটিভ প্রান্তে কানেক্ট করে দিলাম। কানেক্ট করে দিলেই এলইডি টি জ্বলতে শুরু করে দিবে।
এবার আমরা যদি আরও কিছু সংযুক্ত করতে চাই যেমন আমরা একটি বাজার এলইডির সাথে সংযুক্ত করে দিব আরেকটি লুপে। এবার বাজারের পজেটিভ প্রান্ত এবং নেগেটিভ প্রান্ত সংযুক্ত করে দিলে বাজারটি বেজে উঠবে। তাহলে দেখা যাবে এলইডিও জ্বলছে বাজারও বাজছে।
এবার আমরা এর সাথে একটি মোটর সংযুক্ত করব। মোটরটি সংযুক্ত করার সাথে সাথে দেখা যাবে সেটিও ঘুরছে। আমরা যদি মোটরটি ঘুরছে তা বোঝাতে চাই তাহলে মোটরের সাথে একটি পাখা সংযুক্ত করে দিব। এবার দেখা যাবে এলইডি জ্বলছে, বাজার বাজছে, এবং মোটরও ঘুরছে।
তাহলে দেখা গেলো এখানে তিনটি লুপ। আমরা যদি কোন একটি লুপ বন্ধ করে দেই যেমন এলইডিটাকে বিচ্ছিন্ন করে দেই তাহলেও বাকি দুটো কাজ করবে। এবার আমরা যদি প্রথমে মোটর বিচ্ছিন্ন করে দেই তাহলে দেখা যাবে বাযার আরও জোরে বেজে উঠবে। তারপর যদি বাযার বন্ধ করে দেই তাহলে এলইডি আরও বেশি জ্বলে উঠবে।
তাহলে বোঝা গেলো প্যারালাল কানেকশনে প্রত্যেকটা যন্ত্রের জন্য আলাদা আলাদা লুপ থাকে এবং তারা আলাদা আলাদা ভাবে কাজ করে। কোন একটা যদি নষ্ট হয়েও যায় বাকিদের কিছু যায় আসে না। তারা তাদের মত চলতে পারবে। আমরা চাইলে প্রত্যেকটি যন্ত্রের সাথে একটি করে সুইচ কানেক্ট করে দিতে পারতাম তাহলে প্রত্যেকটি যন্ত্র আলাদা আলাদা ভাবে অন অফ করা যেত। যেমন আমরা যদি সিরিজে কানেক্টেড অনেক গুলো যন্ত্রপাতি একসাথে অন অফ করতে চাই তাহলে আমরা একটা সুইচ দিব। যেমন স্টেডিয়ামের বাতিতে অনেকগুলো বাতি থাকে একটি সুইচ দিয়ে চাইলে সবগুলো অন বা অফ করা যায়। কিন্তু অসুবিধা হচ্ছে একটা বাতি যদি নষ্ট হয়ে যায় সবগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। আর প্যারালাল কানেকশন আমরা কাজে লাগাই বাসায়। যেমন লাইট ফ্যান এগুলোর আলাদা আলাদা সুইচ থাকে এবং এরা প্যারালালই কানেক্টেড থাকে তাহলে লাইটের সুইচ দিলে লাইট অন হয় আর ফ্যানের সুইচ দিলে ফ্যান অন হয়। এভাবেই আমরা সিরিজ এবং প্যারালাল কানেকশনকে কাজে লাগাই।
রেজিস্টর বা রোধের খেলা-
আমরা এখন জানবো রোধের খেলা সম্পর্কে। এই এক্সপেরিমেন্টটি তড়িৎ তাণ্ডব বিজ্ঞানবাক্সে রয়েছে। প্রথমে বিজ্ঞানবাক্সে তিনটি রোধ নিতে হবে। রোধের একক হচ্ছে ওহম। এখানে একটি রোধ আছে ১০০০০ ওহমের। এটি এখানে সবচেয়ে বড় রোধ। আরেকটি আছে ১০০০ হাজার ওহমের। এটি এখানে মাঝারি রোধ। এবং আরেকটি ২২০ ওহমের রোধ যেটি এখানে সবচেয়ে ছোট রোধ। বড় রোধের মধ্য দিয়ে কারেন্ট যেতে সবচেয়ে বেশি বাধা পাবে এবং সবচেয়ে কম কারেন্ট যাবে। মাঝারি রোধের ভিতর দিয়ে তারচেয়ে বেশি কারেন্ট যাবে এবং সবচেয়ে ছোট রোধের ভিতর দিয়ে সবচেয়ে বেশি কারেন্ট যাবে। তাহলে যদি আমরা এই রোধের সাথে বিজ্ঞানবাক্সে দেয়া বাতিটাকে সিরিজ কানেকশনে কানেক্ট করি তাহলে দেখা যাবে বড় রোধের সময় সে খুব কম জ্বলবে বা একেবারে জ্বলবেই না বলা চলে। মাঝারি রোধের ভেতর দিয়ে যদি কারেন্ট যায় তাহলে আরেকটু বেশি জ্বলবে এবং সবচেয়ে ছোট রোধের ভেতর দিয়ে কারেন্ট গেলে লাইটটি সবচেয়ে বেশি জ্বলবে।
তাহলে এবার আমরা ব্যাটারির সাথে এলইডির পজেটিভ প্রান্তকে কানেক্ট করব। তারপর একটি তার দিয়ে আমরা রোধকে কানেক্ট করব। এখন আমরা যে রোধকে কানেক্ট করব সে অনুযায়ী এলইডি কে জ্বলতে দেখবো। আমরা প্রথমে সবচেয়ে বড় রোধকে কানেক্ট করলে খুব ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে এলইডি খুব অল্প করে জ্বলে উঠবে। তারপর মাঝারি রোধ কানেক্ট করলে দেখা যাবে আরেকটু বেশি জ্বলে উঠবে এলইডি। এবার সবচেয়ে ছোট রোধ নিয়ে কানেক্ট করলে দেখা যাবে এলইডি সবচেয়ে বেশি জ্বলে উঠবে।
ক্যাপাসিটরে বন্দি চার্জ-
আমাদের এবারের পরিক্ষায় আমরা দেখবো ব্যাটারি থেকে কিভাবে কিছু চার্জ ক্যাপাসিটরে বন্দি করতে পারি এবং সেই চার্জকে আমরা পরবর্তীতে ব্যবহার করতে পারি। তড়িৎ তাণ্ডব বিজ্ঞানবাক্সে দেয়া ক্যাপাসিটরে দেখা যাবে একটি পা বড় এবং আরেকটি ছোট। বড় পা’টি পজেটিভ এবং ছোট পা নেগেটিভ। এই ক্যাপাসিটরের ভেতরে আসলে দুটি পরিবাহী পদার্থের তৈরি পাত থাকে। এবার আমরা দেখবো কিভাবে এই ক্যাপাসিটরটাকে চার্জ করা যায়।
আমরা প্রথমে ক্যাপাসিটরের সাথে ব্যাটারির পজেটিভ প্রান্ত সংযুক্ত করব এবং ছোট পায়ের সাথে ব্যাটারির নেগেটিভ প্রান্ত সংযুক্ত করব। সংযুক্ত করার প্রায় সাথে সাথে ক্যাপাসিটরটি চার্জ হয়ে যাবে কারণ এই ক্যাপাসিটরটি খুব অল্প চার্জ জমা করে রাখতে পারে। আমরা এই ক্যাপাসিটরটিকে হাত দিয়ে ধরব না কারণ হাত দিয়ে ধরলে চার্জটুকু আমাদের হাতে চলে আসতে পারে। এবার লাইটটি নিয়ে লাইটের বড় পা ক্যাপাসিটরের বড় পায়ের সাথে এবং ছোট পা ক্যাপাসিটরের ছোট পায়ের সাথে কানেক্ট করব। এবং লাইটটি জ্বলে উঠার সাথে সাথে নিভে যাবে। কারণ এই ক্যাপাসিটর খুব অল্প চার্জ জমা করে রাখতে পারে।
এই সবগুলো এক্সপেরিমেন্টই ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে গেলে তোমার কাজে লাগবে। এছাড়াও তড়িৎ তাণ্ডব বিজ্ঞানবাক্সে আরও কিছু এক্সপেরিমেন্ট আছে যেগুলো নিয়মিত প্র্যাকটিস করলে তোমার লক্ষ্যে পৌঁছানো আরও অধিকতর সহজ হয়ে উঠবে।
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
695 total views, 1 views today