শিশুরা জন্ম থেকেই খুব কৌতূহলী। তাদের মধ্যে এই কৌতূহল ধরে রেখে গড়ে তোলাই সফল প্যারেন্টিং। একটি শিশু যখন জন্ম নেয় তখন তার কাছে সবকিছুই নতুন। এর ফলে তার মধ্যে অনেক প্রশ্নের তৈরি হয় এবং সে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে। যার কারনে সে বাবা মাকে প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে যায়। একটি পর্যায়ে বাবা মা হয়তো বিরক্ত হয়ে পরে এই কারনে। কিন্তু বাবা মায়ের জানা উচিত, এতে করেই একটি শিশুর জানার পরিধি বেড়ে উঠে এবং তার ভবিষ্যৎ পারসোনালিটি তৈরি হয়।
কৌতূহল তৈরি হওয়া শিশুদের জন্য কেন গুরুত্বপূর্ণ-
কৌতূহল বাচ্চাদের জানাশোনার জগতটাকে অনেক বড় করে তোলে। এতে করে শিশু জানতে কোনটা সঠিক প্রশ্ন এবং কোন ভুল। সে নতুন নতুন জিনিস সম্পর্কে জানতে ও বুঝতে সক্ষম হয়ে উঠে। আর এই কৌতূহলী মনই এক সময় তাকে নতুন নতুন জিনিস আবিষ্কারে আগ্রহী করে তোলে।
বয়সের সাথে সাথে কিভাবে শিশুর কৌতূহলে পরিবর্তন হয়-
অবশ্যই প্রত্যেক শিশুর বয়সের সাথে সাথে তার কৌতূহলের বিষয় পরিবর্তন হয়। যেমন-
১. ০-২ বছর-
এই বয়সের শিশুর কাছে সবকিছুই একদম নতুন। তাই সে প্রথমে তার খুব কাছের জিনিস পত্রের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠে। শিশু তার শরীরের ব্যাপারেই বেশি কৌতূহলী হয়ে উঠে। সে তার আশে পাশের কিছু মানুষকেও চিন্তে পারে।
২. ৩-৪ বছর-
এই বয়সে শিশু তার নিজের সম্পর্কে এবং তার আশে পাশের মানুষের সম্পর্কে একটা বোঝাপড়া তৈরি হয়। এখন তার নতুন জিনিস সম্পর্কে জানার আগ্রহ হয় এবং নতুন নতুন দারুণ কিছু প্রশ্ন করে থাকে। বৃষ্টি কেন হয়? বৃষ্টি কোথা থেকে আসে?
৩. ৫-৬ বছর-
এই বয়সে শিশু আরও বেশি প্রশ্ন করে থাকে। যেটা তাদের প্রশ্ন শুনেই বোঝা যায়। যেমন সে জানতে চায় বেবি কোথা থেকে আসে। পিঁপড়া কামড় দেয় কেন? কিংবা কামড় দিলে ব্যাথা লাগে কেন? ইত্যাদি।
কিভাবে শিশুর কৌতুহল ধ্বংস হয়-
কেউ কেউ বিশ্বাস করে ফরমাল শিক্ষা পদ্ধতি শিশুদের কৌতূহল ধ্বংস করে। আবার অনেককেই বলতে শোনা যায় শিশুকে প্রশ্ন করার পরিবেশ এবং প্রশ্নের সঠিক উত্তর না পেলে শিশুর কৌতূহল ধীরে ধীরে কমে যায়। যদি শিশুকে কৌতূহলী হয়ে উঠতে উৎসাহ দেয়া না হয় তবে সেটা ভবিষ্যতে তার পারসোনালিটিতে দারুণ ভাবে ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে।
কৌতূহলী শিশুকে কিভাবে উৎসাহিত করতে হবে-
শিশুকে কৌতূহলী করে গড়ে তোলার জন্য দারুণ কিছু সহজ উপায় রয়েছে। যেমন-
১. প্রত্যেক প্রশ্নের উত্তর দিন-
প্রতিদিন শিশুর করা ১০০০+ প্রশ্নের উত্তর দেয়াকে বাবা মায়ের চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে উত্তর গুলো যেন যুক্তি যুক্ত ও সঠিক হয়। ‘আমি বলছি তাই’ কিংবা ‘কারণ এটা এভাবেই হয়’ এই ধরনের জবাবে শিশুরা কনফিউজড হয়, হতাশ হয়ে পরে এবং জানার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।
২. প্রশ্ন করুন-
শিশুর প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সাথে সাথে আপনিও তাদের কিছু গঠনমূলক প্রশ্ন করুন। এমন ধরনের প্রশ্ন করুন যেটা তাদের ভাবতে শেখায় এবং প্রশ্নের উত্তর জানতে তাকে কৌতূহলী করে তুলে। তার সব প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তাকে এমন ভাবে প্রশ্ন করুন যাতে করে সে নিজেই এর উত্তর খুঁজে বের করতে পারে।
৩. নিজেও কৌতূহলী হয়ে উঠুন-
শিশুরা তাদের বাবা মাকেই সবচেয়ে বেশি অনুসরণ করে থাকে। তাই কোন কাজ করতে গেলে তাদের সামনেই নিজেকে নিজে প্রশ্ন করুন এবং তাকে নিয়েই তার উত্তর খুঁজুন। যেমন ধরুন- রান্না করতে গেলে নুডলসে এই সসটা দিলে কেমন হবে সেটা জানতে চেষ্টা করুন তাকে নিয়েই।
৪. রুটিন ব্রেক করুন-
মাঝে মাঝে রুটিনে ব্রেক নিয়ে আসুন। এতে করে সে একঘেয়ে হয়ে উঠবে না। যেমন ধরুন- প্রতিদিনের ব্রেকফাস্টে পরিবর্তন আনুন। অমলেটের পরিবর্তে প্যানকেক নিয়ে আসুন। এবং তাদের কে জিজ্ঞেস করুন সকালের ব্রেকফাস্টে কোনটা ভালো হবে।
৫. শিশুর ভালো লাগাকে গুরুত্ব দিন-
কৌতূহল থেকে শিশু কিছু এক্টিভিটি ও বিষয়ের উপর আগ্রহী হয়ে উঠে। যেমন ধরুন গান করা, ছবি আঁকা। এই ধরনের কাজে তাকে বাধা না দিয়ে স্বাধীনতা দিন কারণ এই ধরনের কাজে সে নতুন কিছু শিখতে পারে এবং নতুন নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করে। ‘এখন ছবি আঁকা বন্ধ করে পড়তে বসো’ এধরনের কথা না বলে তাকে আরও বেশি উৎসাহিত করে তুলুন।
৬. নতুন নতুন গল্প শেয়ার করুন-
ঘুমানোর আগে তাকে গল্প শোনান। প্রতিদিন একই ধরনের গল্প না শুনিয়ে ভিন্নতা নিয়ে আসুন। কখনো সায়েন্স ফিকশন, কখনো রূপকথার গল্প আবার কখনো ভৌতিক গল্প শোনাতে পারেন। এমন গল্প শোনান যাতে করে তার চিন্তা শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং শিশু কৌতূহলী হয়ে উঠে।
৭. নতুন জায়গায় ভ্রমন করুন-
আপনার শিশুকে নিয়ে নতুন নতুন দর্শনীয় স্থানে ভ্রমন করুন। এতে করে সে নতুন নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করবে এবং কৌতূহলী হয়ে উঠবে। নতুন কালচার, ভিন্ন পরিবেশ এবং নানারকম মানুষ ও নতুন লাইফ স্টাইলের সাথে পরিচিত হয়ে সে আরও বেশি সমৃদ্ধ হবে এবং তার মধ্যে নতুন নতুন প্রশ্ন তৈরি হবে।
৮. সারপ্রাইজ দিন-
স্কুলের টিফিন বক্সে মাঝে মধ্যে খাবারের মেন্যুতে নতুন কিছু দিন এবং টিফিন বক্সে তার জন্য কোন চিঠি দিতে পারেন। কিংবা ডিনারে তাকে না জানিয়ে তার কোন বন্ধু বা তার কোন পছন্দের মানুষকে আমন্ত্রণ জানিয়ে তাকে চমকে দিন। এতে করে সে কৌতূহলী হয়ে উঠবে যে কখন তার বাবা মা তার টিফিন বক্সে এই চিঠি দিল কিংবা কিভাবে তাকে না জানিয়ে তার বন্ধুকে আমন্ত্রণ করল।
আপনার সন্তানের ভেতর কৌতূহল জাগাতে এবং সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটাতে বিজ্ঞানবাক্সের এক্সপেরিমেন্টগুলি দারুণ কাজে লাগতে পারে।
এখান থেকে দেখুন সবগুলি বিজ্ঞানবাক্স।
1,461 total views, 1 views today