[emaillocker]
অনেক অভিভাবকের কমন অভিযোগ, বাচ্চা ঠিকমত পড়া মনে রাখতে পারে না। যার ফলে সে স্কুলেও ভাল নম্বর অর্জন করতে পারে না। এক্ষেত্রে অনেকেই চাপ দিয়ে পড়াতে চেষ্টা করেন, যার ফলাফল অনেক সময় হিতে বিপরীত হয়। আর আপনার ছোট্টসোনা যাতে ভালোভাবে পড়া মনে রাখতে পারে, সেক্ষেত্রে আপনি কিছু কার্যকর পদক্ষেপের সাহায্য নিতে পারেন।
ঠিক কোন উপায়ে পড়লে আপনার সন্তান ভালভাবে পড়া মনে রাখতে পারবে? দেখে নিনঃ
১। রুটিন করে পড়া
বাচ্চার পড়ার রুটিনে কিছুটা বৈচিত্র্য থাকলে তার পড়ায় মন বসবে। সকালবেলার পড়া খুব সহজেই মনে থাকে, এই সময় কঠিন বিষয় বুঝে পড়াতে পারেন। তাছাড়া সময়ভাগ করে বিভিন্ন বিষয়ের পড়া পড়ান। এক বিষয় নিয়ে একঘেয়েমি ভাবে সময় না কাটিয়ে, অন্যান্য সাবজেক্ট পড়লেও ভালো হয়।
২। মার্ক করে পড়া
বইয়ের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়গুলো সহজেই মনে রাখার জন্য কিছু কৌশলের সাহায্য নেয়া যেতে পারে। একই পড়া বারবার রিভাইস দিয়ে, মার্জিন টেনে রেখে, কালারফুল কলম দিয়ে মার্ক করে পড়তে বলবেন। এছাড়াও বিভিন্ন সূত্র কিংবা গ্রামারের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো রঙিন কাগজে লিখে সন্তানের পড়ার রুমের দেয়ালে লাগিয়ে দিতে পারেন। তাতে তা সহজেই চোখে পড়বে এবং এমনিতেই মনে থাকবে।
৩। মুখস্থ নয় বুঝে পড়তে বলুন
আপনার সন্তান পড়ার বিষয়বস্তু না বুঝে যেন মুখস্থ না করে। বরং ওকে গল্পের ছলে পড়া বুঝিয়ে দিন। বুঝে শুনে পড়লে, পড়ার বিষয়বস্তু অনেক দিন মনে থাকে। এবং গল্পের ছলে পড়া বুঝে, সেটা নিয়ে ভাবলে তার মধ্যে কল্পনাশক্তির বিকাশ হবে। এছাড়াও ইউটিউবে বিজ্ঞানবাক্সের বিভিন্ন বিষয়ের এক্সপেরিমেন্টের মজার মজার ভিডিও দেয়া আছে, সেগুলো দেখাতে পারেন। এতে আপনার সন্তান বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে গড়ে উঠবে এবং তার মধ্যে সৃজনশীলতাও বৃদ্ধি পাবে।
দেখুন-(https://www.youtube.com/channel/UCNB1ta3Sin1-TJOWSj8CK-A)
৪। পড়া আত্মস্থ করে লিখতে বলুন
জোরে জোরে শব্দ করে পড়লে পড়া খুব সহজেই আত্মস্থ হয়। এ সময় দুটি বিষয় একসাথে করা হয়, যেমনঃ চোখ দিয়ে দেখে পড়া আর কান দিয়ে শোনা। আর শব্দ করে পড়লে দ্রুত পড়ার ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। এছাড়া কথায় আছে, “দশ বার পড়া একবার লেখার সমান!” আর সেক্ষেত্রে যদি পড়ার বিষয়বস্তু পড়ার পর পরই লেখার অভ্যাস করা যায়। তবে তা নির্ভুলভাবেই মনে থাকবে।
৫। ডায়েরি লেখার অভ্যাস গড়ে তুলুন
বাচ্চা বইয়ের যে অধ্যায় পড়ছে, তার গুরুত্বপূর্ণ লাইন, বিশেষ বিশেষ শব্দগুলো ডায়েরিতে লিখে রাখতে বলুন। এভাবে লিখে রাখলে তা সহজেই মনে রাখতে পারবে। বইয়ের কোন অধ্যায়ে কোন কোন গুরুত্বপূর্ণ শব্দ আছে তা বাছাই করে কি-ওয়ার্ড হিসাবে ধরে পড়াতে পারেন। এক্ষেত্রে শব্দের অর্থ সহজভাবে ব্যাখ্যা করে বাচ্চাকে দিয়ে লিখিয়ে প্র্যাকটিস করাতে পারেন।
৬। বাস্তবের বিভিন্ন বিষয়ের সাথে মিলিয়ে পড়ানো
দৈনন্দিন বিভিন্ন বিষয়ের সাথে মিলিয়ে বাচ্চাকে পড়াতে পারেন। এজন্য যতটা সম্ভব বাস্তব কোন বিষয়কে উদাহরণ হিসেবে ধরে পড়ান। ধরুন আকাশে বিশাল চাঁদ উঠেছে, একসময় হয়তো বাচ্চাকে চাঁদ মামার ছড়া শুনিয়েছেন। এখন শোনাতে পারেন চাঁদে প্রথম পা রাখা ‘নীল আর্মস্ট্রং’-এর চন্দ্র বিজয়ের গল্প। কিংবা রাতের আকাশে বাইনোকুলার দিয়ে দেখিয়ে শেখান, বিভিন্ন গ্রহের অজানা তথ্য। কিংবা বৃষ্টির সময় আকাশ থেকে কিভাবে বৃষ্টির ফোঁটা নেমে আসে সেই কথা। এভাবে বাস্তবের সাথে সাদৃশ্য করে তাকে বিভিন্ন বিষয় শেখানো হলে, দেখবেন তার সেগুলো খুব ভালোভাবেই মনে থাকবে।
৭। বার বার প্র্যাকটিস করানো
শিশুর কাছে কিছু কিছু সাবজেক্ট যেমনঃ ইংরেজি, গণিত প্রভৃতি কঠিন লাগতেই পারে। এক্ষেত্রে সেই বিষয়গুলো বার বার প্র্যাকটিস করানো দরকার। বাচ্চাকে অংকগুলো ভালভাবে বুঝিয়ে বার বার করতে দিন। সেক্ষেত্রে যদি সে অংক ভুল করে ফেলে, তবে শাস্তি দেয়া যাবে না। আর ভুল করলেই যে শাস্তি পেতে হতে পারে, এই ভয়েই সে আরও ভুল করতে পারে।
৮। বেশী বেশী করে উৎসাহ দিন
স্বাভাবিকভাবে বাচ্চা পড়া ভুলে যেতেই পারে। সেক্ষেত্রে বকা না দিয়ে বরং ধৈর্য ধরে বার বার পড়ান। সে যত বেশি পড়বে, ততই তার পড়া মনে থাকার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। তবে কখনো জোর জবরদস্তি করে পড়তে বাধ্য করবেন না। আর সে যদি স্বেচ্ছায় মন দিয়ে পড়ে, তবে তাকে বিভিন্ন ছোটখাট পুরস্কার, প্রশংসামূলক কথাবার্তা বলে উৎসাহ দিন। এতে তার আত্মবিশ্বাস অনেকটাই বেড়ে যাবে।
৯। পড়াশোনায় বৈচিত্র্য আবশ্যক
সারাক্ষণ পড়ার বই নিয়ে পড়ে থাকলে শিশু ক্লান্তবোধ করবে এবং মনোযোগ হারাবে। আপনার সন্তানের বয়স উপযোগী বিভিন্ন বই তার হাতে তুলে দিন। এছাড়াও ইউটিউবে বিভিন্ন শিক্ষামূলক সাইট আছে, যেগুলো তার শেখার পরিধি আরও বাড়িয়ে দিবে। এবং ভিডিও বা ছবি দেখে পড়াশোনা করলে তা তার মনে স্থায়ীভাবে গেঁথে থাকবে।
১০। পুষ্টিকর খাবার ও পরিমিত ঘুম আবশ্যক
শিশুকে পুষ্টিকর খাবার, যেমনঃ ডিম, দুধ, বিভিন্ন ফলমূল, শাকসবজি, বাদাম, সামুদ্রিক মাছ ইত্যাদি খেতে দিন। এসব খাবার তার স্মরণশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। এছাড়াও তাকে নির্দিষ্ট পরিমাণে ঘুমুতে দিন। ভালো ঘুম তার ব্রেনকে সতেজ রাখবে।
শিশুদের পড়ানোর ক্ষেত্রে আপনাকে অনেক বেশি যত্নশীল এবং ধৈর্যশীল হতে হবে। আর বাচ্চা পড়তে পড়তেই পড়া মনে রাখতে পারবে। এক্ষেত্রে অযথা টেনশন না করে, চাপ না দিয়ে বরং পড়ার ক্ষেত্রে কিভাবে বাচ্চার মনোযোগ বৃদ্ধি পায় সেই চেষ্টা করতে হবে। আর আশা করা যায়, মনোযোগের সাথে পড়লেই আপনার সন্তান ভালভাবে পড়া মনে রাখতে পারবে।
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
[/emaillocker]
3,787 total views, 1 views today