শিশু কিভাবে পরিশ্রমী হয়ে বেড়ে উঠবে ?
শিশু কিভাবে পরিশ্রমী হয়ে বেড়ে উঠবে সেটা কিসের ওপর নির্ভর করে? ধরুন, বাসায় পাস্তা রান্না করবেন। চাইছেন তাতে টমেটো সস দিতে। কিন্তু ক্যানের মুখ এতো টাইট হয়ে আটকে আছে যে কয়েক বার চেষ্টা করেও খুলতে পারলেন না। আরও কিছুক্ষণ চেষ্টা করেও যদি না পারেন আপনি ভাববেন- সস ছাড়া রান্না করব? কাউকে ডাকব খুলে দিতে? নাকি দোকান থেকে মিনি প্যাক কিনে এনে ঢেলে দেব?
কোনো কাজে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করার অর্থ অন্য আরেকটা কাজ থেকে কিছু সময় নিয়ে নেয়া। হতে পারে সেটা ঘুম, গোসল, মুভি দেখা, কিছু পড়া কিংবা কারো সঙ্গে কথা বলা। তাই আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়, কোন কাজে কতটুকু এ্যাফোর্ট দেয়ার পর সেটা ক্ষান্ত দেবেন।
আধুনিক কালের বিজ্ঞানীরাও এই বিষয়ে বেশ আগ্রহী। একটি শিশু প্রতিনিয়ত নতুন নতুন পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে। সেগুলো সে কিভাবে বিবেচনা করবে? কোনো কাজের ফল লাভের জন্য কতটা চেষ্টা করবে সে? শিশু কিভাবে পরিশ্রমী হয়ে বেড়ে উঠবে, সেই গবেষণার ফলাফল খুবই চমকপ্রদ! সেটাই বলতে যাচ্ছি।
কী বলছে সাম্প্রতিক গবেষণা?
সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রকাশিত হয়েছে, আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং অধ্যবসায় শিশুদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় আইকিউ-এর চেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে। এমনকি এ ব্যাপারে যার যার আত্মবিশ্বাসও অনেক প্রয়োজনীয়। যেসব শিশু চেষ্টার মাধ্যমে ভালো কিছু অর্জনে বিশ্বাসী তারা অন্যদের তুলনায় অনেক এগিয়ে থাকে। বিশেষ করে, সামর্থ্যকে যারা জন্মগত গুণ মনে করে, তাদের চেয়ে বেশি। তাই শৈশব থেকে শিশুদের চেষ্টার মানসিকতা তৈরি হওয়া অত্যন্ত জরুরি।
শিশুরা চেনা জগৎ দেখে সিদ্ধান্ত নেয়
আমরা জানি, শিশুরা খুব ভালো পর্যবেক্ষক। তারা তাদের চারপাশের জগৎ, ব্যক্তি, আচার-প্রথা, এগুলো পর্যবেক্ষণ করতে থাকে সারাক্ষণ। কিন্তু সেটা অযথা নয়। তারা তাদের পর্যবেক্ষণ থেকেই জাজমেন্টাল হয়ে ওঠে। ভালো-মন্দ, উচিত-অনুচিত নির্ণয় করে। তাদের পৃথিবীটা ছোট বলে অল্প কিছু উদাহরণ থেকেই তারা সিদ্ধান্তে পৌঁছে যায়। ১৫ মাসের একটা শিশুও এই কাজে একটা কম্পিউটারের মতো দক্ষ।
তাই বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, একটা শিশু কতটা পরিশ্রমী হবে সেটা নির্ভর করছে তার দেখা ব্যক্তি আর সামাজিক অবস্থার ওপর। সসের বোতলের মুখ খোলার জন্য সে নিজে কতবার চেষ্টা করবে, সেটা নির্ভর করছে তার সামনে কতবার চেষ্টা করা হয়েছে তার ওপর।
Massachusetts Institute of Technology’র Brain and Cognitive Science বিষয়ের পিএচডি শিক্ষার্থীদের কেইস স্টাডির ফলাফল এমনটাই বলছে। Julia Leonard তার একটি নিবন্ধে জানিয়েছেন, ১৮২ জন শিশুকে তারা একই রকমের একটি মিউজিক্যাল খেলনা দেন। খেলনাটির ওপরে একটা বড় বোতাম ছিল মিউজিক চালু করার জন্য। সেই বোতামটি তারা অকার্যকর করে দেন। কিন্তু বোতাম টিপে একটা লুকানো সুইচের মাধ্যমে মিউজিক বাজিয়ে শিশুদের বোঝানো হলো যে খেলনাটিতে মিউজিক বাজে। ১৮২ শিশুর এক দলকে বোতাম টিপে দেখানো হলো, অপর দলকে তা দেখানো হলো না। দেখা গেল, যাদের দেখানো হয়নি, মিউজিক বন্ধ হয়ে যাবার পর তা চালু করার জন্য তেমন চেষ্টা করেনি তারা। আর যাদের দেখানো হয়েছিল, তারা সেই নষ্ট বোতামটা অনেকবার টিপে মিউজিক চালু করার চেষ্টা করেছিল। কেইস স্টাডির দ্বিতীয়ভাগে অপর দলের শিশুদেরও একইভাবে মিউজিক চালু করার সিস্টেম দেখিয়ে দেয়া হলো। এবার কিন্তু মিউজিক বন্ধ হয়ে যাবার পর তারাও চেষ্টা করল প্রথম দলের শিশুদের মতোই।
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
শিশু পরিশ্রমী নয় বলে হতাশা নয়
অনেক মা-বাবাই অভিযোগ করেন, তাদের সন্তান খুব বেশি চেষ্টা করে না স্কুলের পড়া শেখার জন্য। অল্পতেই হাল ছেড়ে দেয়। গবেষকরা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন, যারা এমন অভিযোগ করেন, তাদের সন্তানরা নিজেদের চারপাশে চেষ্টা করার অনুশীলন কতটুকু দেখছে? সবচে’ বড় কথা, অভিভাবকের কাছ থেকে কতটুকু দেখছে?
পারিবারিক কষ্টের কথা শিশুদের জানা প্রয়োজন
তাহলে বলুন, শিশু কিভাবে পরিশ্রমী হয়ে বেড়ে উঠবে ? গবেষকদের চূড়ান্ত সাজেশন হলো, শিশুকে আত্মনিয়ন্ত্রণ, সংযম আর অধ্যবসায় শেখাতে হলে তাদের বুঝতে দিতে হবে আপনার জীবন ও জীবিকার কষ্ট; আপনার রক্ত ও ঘামের ইতিহাস। তাদের বুঝতে দিতে হবে, যা কিছু পাওয়া যায়, তা কষ্ট করে পেতে হয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে, তার কোনো ব্যর্থতার জন্য প্রতিনিয়ত খোঁচা দিচ্ছেন, এমনটা আবার যেন সে না ভেবে বসে।
2,168 total views, 1 views today