ঘরে ও বাইরে শিশুর সাথে কিছু দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। একদম ছোট থেকে শুরু করে কিশোর বয়সের শিশুরাও নানান ভাবে কিছু দুর্ঘটনার শিকার হয়। কেটে যাওয়া, পুড়ে যাওয়া, মাথায় আঘাত পাওয়া, হাড় ভেঙ্গে যাওয়া এইসব দুর্ঘটনার মধ্যে অন্যতম। আজকের ব্লগে থাকছে শিশুর এমন ৭ টি অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনার প্রাথমিক চিকিৎসা।
কেটে যাওয়া এবং আঁচড় লাগা
প্রথমে কেটে যাওয়া স্থানে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে চেপে ধরে রক্ত বন্ধ করুন। এরপর কুসুম গরম পানিতে এন্টিসেপটিক লিকুয়েড মিশিয়ে আক্রান্ত স্থান পরিষ্কার করে নিন। তৃতীয়ত কেটে যাওয়া স্থানে এন্টিসেপটিক মলম লাগিয়ে হালকা করে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে নিন। সুস্থ হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন অথবা দুই দিন অন্তর অন্তর আক্রান্ত স্থান এন্টিসেপটিক লিকুয়েড দ্বারা পরিষ্কার করে নতুন ব্যান্ডেজ লাগিয়ে নিন। কাটার পরিমাণ বেশি হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
পুড়ে যাওয়া
প্রথমে পুড়ে যাওয়া স্থান ঠান্ডা পানিতে কিছুক্ষণ চুবিয়ে রাখুন। অথবা ক্ষতস্থানে কিছুক্ষণ ঠান্ডা পানি ঢালুন। ক্ষতস্থানে কখনোই সরাসরি বরফ ব্যবহার না করাই উত্তম, বরফ আক্রান্ত স্থানে রক্ত চলাচল বন্ধ করে দিয়ে ক্ষতির কারণ হতে পারে। ক্ষতস্থানে এন্টিসেপটিক ক্রিম লাগিয়ে হালকা করে ব্যান্ডেজ করে দিন। ভিনেগার, মধু, অ্যালোভেরার জেল এগুলো প্রাকৃতিক এন্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে। এন্টিসেপটিক মলম না পেলে এসব ব্যবহার করতে পারেন। পুড়ে যাওয়ার পরিমাণ গুরুতর হলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন।
নাকে আঘাত লাগা ও নাক দিয়ে রক্ত পড়া
নাকের রক্তনালী অগভীর ও ঝিল্লি আবরণী পাতলা হওয়ায় সামান্য আঘাতেই নাক দিয়ে রক্ত পড়ে। শিশু নাকে আঘাত পেলে তাকে হালকা সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে বসান, নাকের ছিদ্র চেপে ধরে বন্ধ করে মুখ দিয়ে অন্তত ১০ মিনিট জোরে শ্বাস নিতে বলুন, এতে রক্ত পড়া বন্ধ হবে। যদি ১৫ থেকে ২০ মিনিটেও রক্ত পড়া বন্ধ না হয় তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন। যেকোন ধরনের নাকের আঘাতের পর পরীক্ষা করে নাকের হাড় ভেঙ্গেছে কি না জেনে নিন। নাক দিয়ে রক্ত পড়া অবস্থায় কখনোই শিশুকে শোয়াবেন না। এতে রক্ত ফুসফুসে গিয়ে জটিল কোন সমস্যা হতে পারে।
হাড় ভাঙ্গা ও মচকে যাওয়া
খেলতে গিয়ে অথবা পড়ে গিয়ে শিশুদের হাড় ভেঙ্গে যেতে পারে অথবা মচকে যেতে পারে। যদি ভাঙ্গার সাথে রক্ত বের হয় প্রথমে রক্ত বন্ধ করুন। এরপর কাপড়ের ব্যাগে বরফ কুচি অথবা ঠান্ডা পানি নিয়ে হালকাভাবে আঘাত পাওয়া স্থানে মালিশ করুন। অনেকে তথাকথিত ভাঙ্গার কবিরাজ দিয়ে শক্ত ভাবে মালিশ করে অথবা হাত দিয়ে নেড়েচেড়ে ভাঙ্গা ঠিক করে ফেলতে চান, এটা অনেক বেশি ক্ষতিকর। যেকোন ধরণের ভাঙ্গার ক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নিন। যত দ্রুত ভাঙ্গা হাড় সনাক্ত করে সঠিক চিকিৎসা দেয়া যাবে তত দ্রুত হাড় জোড়া লাগবে। দেরি করলে হাড় জোড়া লাগার সম্ভাবনা কমে যায়।
মাথায় আঘাত পাওয়া
অনেক সময় শিশুরা খেলতে গিয়ে অথবা কোথাও থেকে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পেয়ে থাকে। প্রথমে কাপড়ের ব্যাগে হালকা বরফ নিয়ে অথবা ঠান্ডা যেকোন কিছু নিয়ে আঘাতের স্থানে হালকা করে ধরুন। রক্ত বের হলে রক্ত পড়া বন্ধ করুন। শিশু যদি গুরুতর আঘাত পায়, আঘাত পাওয়ার পর যদি অজ্ঞান হয়ে যায়, ঘন্টা খানেকের মধ্যে বমি করে ও খিঁচুনি আসে তাহলে দ্রুততার সাথে নিকটস্থ কোন হাসপাতালে যান অথবা ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
মৃগী রোগ
মৃগী রোগের প্রধান লক্ষন খিঁচুনি। শিশুর মৃগী রোগের ফলে খিঁচুনি উঠলে তাকে যেকোন অবস্থা থেকে সাবধানে নিচে শুইয়ে দিন, মাথার নিচে বালিশ অথবা নরম কোন কাপড় দিন। খিঁচুনি চলাকালীন জোর করে চেপে ধরে থামাতে যাবেন না। তার আশপাশ থেকে আগুন, শক্ত বস্তু অথবা ক্ষতিকর যেকোন কিছু সরিয়ে রাখুন। পাঁচ মিনিটের বেশি খিঁচুনি হলে অথবা কম সময়ের ব্যবধানে দুই বার খিঁচুনি হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এক্ষেত্রে খিঁচুনির ধরন মনে রাখার চেষ্টা করুন এবং তা ডাক্তারকে জানান। এতে রোগের ধরন নির্ণয় করা ডাক্তারের জন্য সহজ হবে।
আরো পড়ুন- শিশুর মোশন সিকনেসে করণীয়।
হিট স্ট্রোক
অতিরিক্ত গরমে হিট স্ট্রোক হয়। শিশু ও বৃদ্ধদের শরীরে তাপ নিয়ন্ত্রন ক্ষমতা কম থাকে বলে তারা হিট স্ট্রোকে বেশি আক্রান্ত হয়। হিট স্ট্রোকের আগে রোগী বমি করে, ত্বক শুষ্ক ও লালচে হয়ে যায়, ঘাম বন্ধ হয়ে যায়, নিশ্বাস দ্রুত নেয়, শরীরের তাপমাত্রা দ্রুতই ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে যায়, মাথা ঝিমঝিম করে, প্রস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারে। এই অবস্থাকে বলে হিট ক্র্যাম্প। এই লক্ষনগুলো দেখা দিলে রোগীকে ঠান্ডা কোন স্থানে নিয়ে যান, ঠান্ডা পানি দিয়ে গা মুছে দিন, কাপড়ের ব্যাগে বরফ নিয়ে তা ঘাড়ে, বগলে, কুচকিতে দিতে পারেন। রোগীর জ্ঞান থাকলে খাবার স্যালাইন দিন এবং দ্রুত হাসপাতালে নিন।
আরো পড়ুন- শিশুদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলবেন যেভাবে।
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
তথ্যসূত্র
3,235 total views, 2 views today