শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা বা হাঁপানি শিশুর শ্বাসনালীর প্রদাহ জনিত সমস্যা। এটার সাথে আমরা সবাই কম-বেশি পরিচিত। সহজ কথায় আমরা এটাকে হাঁপানি বলেই জানি। প্রায় ৭০ শতাংশের মতো শিশু হাঁপানির সমস্যায় ভোগে। সাধারণত শীতকালে হাঁপানির প্রকটতা বেড়ে যায়। শিশুর হাঁপানি হলে ৫ বছরের মধ্যে তার লক্ষণ দেখা দেয়। হাঁপানি একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের জন্য একটা কষ্টকর অভিজ্ঞতা। আর শিশুর হাঁপানি হলে বুঝতেই পারছেন তার জন্য এটা কতটা কষ্টকর! বিজ্ঞানবাক্স ব্লগ থেকে শিশুর হাঁপানি’র লক্ষণ জেনে নিন, আপনার সন্তানের মাঝে সে সব লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
লক্ষণ
শ্বাসকষ্টই মূলত অ্যাজমা বা হাঁপানির প্রধান লক্ষণ। আপনার সন্তানের মাঝে মাত্রাতিরিক্ত শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে তার মাঝে অ্যাজমার অন্যান্য লক্ষণগুলোও চেক করে নিন। শ্বাসকষ্ট ছাড়াও আর যেসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে-
• শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় শিশুর পেট অতিরিক্ত উঠানামা করে। একটু খেয়াল করলেই এমন কিছু লক্ষণ চোখে পড়বে।
• লাগাতার কাশি হতে দেখা যায়।
• খুব অল্প কোন পরিশ্রমের কাজেও সন্তান হাঁপিয়ে যায়, বড় বড় নিঃশ্বাস নেয়। সচরাচর যেসব কাজে কেউ ক্লান্ত হয় না, সেসব কাজেও।
• নিঃশ্বাস নেয়ার সময় বাঁশির মতো ভয়াবহ রকমের শব্দ হয়।
• শিশুর মাঝে প্রচুর অবসাদ লক্ষ করা যাবে। এমন কি সে তার প্রিয় কোন কাজেও আগ্রহ পায় না।
• কোন কিছু খেতে কষ্ট হয়।
• মুখ ও ঠোঁট ফ্যাকাশে রঙ ধারণ করবে। কিছুটা নীল হয়ে যায় অনেকের।
• হাঁপানির লক্ষণগুলো অনেক ক্ষেত্রে রাতে সন্তানের মাঝে দেখা যায়।
কাশি ও হাঁচি অনেক কারণে হতে পারে। সব হাঁচি ও কাশিকে অ্যাজমার লক্ষণ হিসেবে ধরা যাবে না। অ্যাজমার অন্যান্য লক্ষণগুলো দেখা দিলেই নিশ্চিত হতে পারেন। তবে সাধারণত ২-৫ বছরের মধ্যে শিশুদের মাঝে অ্যাজমার লক্ষণ পুরোপুরি ভাবে দেখা যায়।
কারণ
সাধারণত পারিবারিক ইতিহাসে আগে কারও অ্যাজমা বা এলার্জির সমস্যা থাকলে সেসব শিশুর হাপাঁনিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। গর্ভাবস্থায় মা সিগারেট খেলেও সন্তানের অ্যাজমা বা হাঁপানি হতে পারে।
পারিবারিক ইতিহাসে কারও অ্যাজমা বা হাঁপানি না থাকলেও এলার্জিক রাইনাইটিসের প্রভাবে শিশুরা সহজেই অ্যাজমা ও হাঁপানিতে আক্রান্ত হতে পারে। এলার্জিক রাইনাইটিস সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন আমাদের এই ব্লগ থেকে।
চিকিৎসা
শিশুদের অ্যাজমা বা হাঁপানি বেশিরিভাগ ক্ষেত্রেই ১৫ বছরের মধ্যে সেরে যায়। এই সময়টাতে অ্যাজমাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে নেবুলাইজারের ব্যবহার করে থাকেন ডাক্তাররা। এতে শিশুর কষ্ট কিছুটা কমে। রোগের ধরণ দেখে ডাক্তাররা বিশেষক্ষেত্রে ঔষধও দিয়ে থাকেন। অ্যাজমা নির্ণয় করার পর শিশুর শ্বাসকষ্ট হলে বাসায় কিংবা কোন ফার্মেসিতেও নেবুলাইজার ব্যবহার করা যায়। কিন্তু পরিস্থিতি অনেক খারাপ হলে দ্রুত হাসপাতালে নেয়া উচিত।
কখন ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবেন?
• বিশ্রামরত অবস্থায় শ্বাসকষ্ট হলে।
• নেবুলাইজার ব্যবহার করার পরও শ্বাসকষ্ট না কমলে।
• শ্বাসকষ্টের কারণে খেতে না পারলে কিংবা বমি হলে।
• শ্বাসকষ্টের সময় কথা বলতে না পারলে কিংবা বাক্য সম্পন্ন করতে না পারলে।
এই ধরণের কোন লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুততার সাথে রোগীকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
প্রতিরোধ
পারিবারিক ইতিহাসে কারো অ্যাজমা না থাকলে মূলত কিছু প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি করে অ্যাজমা থেকে শিশুকে রক্ষা করা যায়।
• সপ্তাহ অন্তত একবার বিছানা, বালিশ ও অন্যান্য জিনিস ভালো করে ধুয়ে রোদে শুকাতে দিন।
• শিশুকে নরম পশমি জাতীয় খেলনা না দেয়ার চেষ্টা করুন।
• বাসায় বাইরে গেলে ধুলাবালি থেকে বাঁচতে মাস্ক ব্যবহার করুন।
• শিশুর কোল্ড এলার্জি থাকলে এয়ার কন্ডিশন থেকে দূরে রাখুন।
• বাড়ি ও বাসার আশপাশ কিংবা ঘরদোর পরিষ্কার রাখুন।
• শিশুকে সিগারেটের ধোঁয়া থেকে দূরে রাখুন।
সাধারণত এইসব সাবধানতা অবলম্বন করলে শিশুকে হাঁপানি বা অ্যাজমা থেকে রক্ষা করা যায়।
ভালো থাকুক আপনার সন্তান, ভালো থাকুক আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম। এমন আরো তথ্যপূর্ণ বিষয় জানতে বিজ্ঞানবাক্সের সাথেই থাকুন।
তথ্যসূত্র-webmd
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
1,771 total views, 1 views today