Show Categories

শিশুর হাঁটার বয়স; কখন আপনার চিন্তিত হওয়া উচিত?

শিশুর হাঁটার বয়স

একটি শিশুর কত বছর বয়সের মধ্যে  হাঁটতে না পারলে অভিভাবক হিসেবে আপনার চিন্তিত হওয়া উচিত ও ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত? কিংবা এটা কি জানেন, একটি শিশুর কত বছর বয়সের মধ্যে হামাগুড়ি দিতে শেখা উচিত? প্রথম প্রশ্নের উত্তর আমরা অনেকেই জানি। কিন্তু দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আমরা খুব একটা ভাবি না। শিশুর হাঁটার বেশ কিছু পর্যায় আছে। একটি শিশু হুট করে হাঁটতে শুরু করে দিবে না। হাঁটার আগের প্রতিটা  ধাপ সম্পন্ন করেই তবে সে হাঁটতে শিখবে। হামাগুড়ি দেয়া, পা দিয়ে জোরে বাতাসে লাথি দেয়া, শোয়া থেকে ওঠার চেষ্টা করা, কোন কিছু ধরে দাঁড়াতে শেখা, দাঁড়ানো থেকে বসার চেষ্টা করা; এভাবে অনেকগুলো ধাপ সম্পন্ন করেই সে জীবনের প্রথম কদম দিতে শিখবে। কিন্তু শিশু যদি এই মাইলফলকগুলোর কোনটা সঠিক সময়ের মধ্যে না করে তাহলে তার হাঁটাতে সমস্যা হবে। আসলে হাঁটতে শেখার আগের কার্যক্রমগুলো একটি শিশুর পেশীকে ধীরে ধীরে হাঁটার জন্য প্রস্তুত করে। আর হাঁটার আগের বিকাশগুলো ঠিকঠাক না হলে শিশুর পেশীও হাঁটার জন্য প্রস্তুত হবে না। ফলে শিশু সঠিক সময়ে হাঁটতে পারবে না। সেজন্য শিশুর বিকাশের ধাপগুলো সম্পর্কে অভিভাবকের একটি স্বচ্ছ ধারণা থাকাটা জরুরী। এতে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়াটা সহজ হবে।আজকের ব্লগে আমরা শিশুর হাঁটার আগের বিকাশ ও শিশুর হাঁটার বয়স সম্পর্কে জানবো।

জন্ম থেকে ৬ মাস পর্যন্ত

জন্মের পর থেকেই হাঁটার জন্য শিশুর পেশী ধীরে ধীরে প্রস্তুত হয়। সাধারণত ২ মাস বয়সের মধ্যে শিশু হাত ও পা ছোড়াছুড়ি করে। শুয়ে থাকা অবস্থায় পা-কে সাইকেল চালানোর ভঙ্গিতে নাড়াবে। একটু শক্ত করে ধরে দাঁড় করালে পা-কে হাঁটার ভঙ্গিতে নাড়াবে।

৩-৪ মাস বয়সের বাচ্চা বিছানায় শুয়ে থাকা অবস্থাতেই পেটের উপর ভর দিয়ে হাত পা নাড়ানোর চেষ্টা করবে। এই চেষ্টাটি হাঁটার জন্য পেশীকে শক্তিশালী করতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

৫ মাস বয়সী শিশুকে শক্ত করে ধরে পায়ের উপর বা কোন কিছুর উপর রাখলে শিশু লাফালাফি করার চেষ্টা করবে। নিজে নিজে শোয়া থেকে উঠে বসতে চেষ্টা করবে।

৬ মাস-৯ মাস পর্যন্ত

এই সময়ের মধ্যে শিশু কোন ধরণের সাহায্য ছাড়াই নিজে নিজে বসতে পারবে। এতে শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করার যোগ্যতা অর্জন করবে শিশু। এর ফলে হাঁটার জন্য শিশুর পেশীগুলো বেশ শক্তিশালী হবে।

বেশিরভাগ শিশুই ৯ মাসের মধ্যে নিজে নিজে হামাগুড়ি দিতে শিখে ফেলবে। হামাগুড়ি দিয়ে সামনে এগুনোর চেষ্টা করবে। আশেপাশে কোন কিছুতে ধরতে চেষ্টা করবে।

কিছু কিছু শিশু এই সময়ের মধ্যে নিজে নিজে হামাগুড়ি দিবে না। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কিছু শিশু হামাগুড়ি দেয়া ছাড়াই সরাসরি হাঁটতে পারে।

৯ মাস-১২ মাস পর্যন্ত

এই সময়ের মধ্যে শিশু কোন কিছু ধরে উঠে দাঁড়াতে পারবে। নিজে নিজে বসতেও পারবে। শরীরের ভারসাম্য রক্ষায় আরো বেশ পাকাপোক্ত হবে। বড় কেউ এক হাত ধরে রাখলে নিজে নিজেই সামনের দিকে পা ফেলতে পারবে। কেউ কেউ এই সময়ে সাহায্য ছাড়া একটু এলোমেলো ভাবে হাঁটতেও পারবে।

১২ মাস- ১৫ মাস বয়স পর্যন্ত; শিশুর হাঁটার বয়স

বেশিরভাগ শিশুই এই বয়সের মধ্যে নিজে নিজে কিছুটা এলোমেলোভাবে হাঁটতে শিখে যায়। কিন্তু পুরোপুরি শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে না। এমনভাবে হাঁটবে, দেখে মনে হবে এই বুঝি পড়ে গেলো। মাঝে মাঝে পড়েও যাবে। আবার নিজে নিজে উঠে দাঁড়াতেও পারবে।

১৬ মাস- ২৪ মাস

১৬-১৯ মাসের মধ্যে বেশীরভাগ বাচ্চারই পুরোপুরিভাবে হাঁটতে পারা উচিত। কেউ কেউ গানের সুরে দাঁড়ানো অবস্থায় নাচতে পারবে। ১৯-২৪ মাসের মধ্যে শিশুর হাঁটার গতি বাড়বে। শরীরের ভারসাম্য রক্ষায় আগের চেয়ে কিছুটা পোক্ত হবে। হাঁটা অবস্থায় ছোট কিছু নিয়ে খেলতেও পারবে এই সময়ে।

কত মাস বয়সের মধ্যে শিশু না হাঁটলে ডাক্তার দেখাবেন?

শিশুর সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে সাধারণত শিশুর হাঁটার বয়স-এর গড় হওয়া উচিত ১৪ মাস। বেশিরভাগ শিশুই এই সময়ের মধ্যে হাঁটা শিখে যায়। কিন্তু যদি কেউ এই সময়ের মধ্যে হাঁটা সম্পূর্ণ ভাবে না  শেখে, তাহলে তার বয়স অনুযায়ী অন্যান্য মোটর স্কিলগুলোর দিকে একটু খেয়াল করুন। যদি অন্যান্য মোটর স্কিল স্বাভাবিক থাকে তাহলে খুব একটা চিন্তার কিছু নেই। শীঘ্রই আপনার সন্তান হাঁটতে শুরু করবে। আর যদি অন্যান্য মোটর স্কিলের বিকাশ সঠিকভাবে না হয় তাহলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

স্বাভাবিক শিশুর হাঁটার বয়স-এর সর্বশেষ ধাপ হলো ১৮ মাস। সব ধরণের মোটর স্কিল ঠিক থাকার পরও যদি শিশু ১৮ মাসের মধ্যে হাঁটা শুরু না করে তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে হবে।

আরো পড়ুন
শিশুর হাঁটা শেখাতে আপনার ভূমিকা
বেবি ওয়াকার; আপনার সন্তানের ক্ষতি করছে না তো?
শিশু হাঁটা শিখেছে? এই সময়ে শিশুর জন্য আপনার বাসা নিরাপদতো?

ও হ্যাঁ। আরেকটা কথা! আপনার সন্তান হাঁটতে হাঁটতে ৪ কিংবা ৫ বছরের কিউট, দুষ্টু, মিষ্টি আর প্রশ্নের পাখি হয়ে গেলে তার সৃজনশীলতা বিকাশের জন্য কিন্তু তাকে বিজ্ঞানবাক্স দিতে পারেন। অথবা আপনার  যদি ইতোমধ্যে ৪ বছরের বড় কোন বাচ্চা থাকে তাকেও দিতে পারেন বিজ্ঞানবাক্স। শুধু ৪-৫ বছরের বাচ্চার জন্য না। বিজ্ঞানবাক্স আছে ৪-১৬ বছর বয়সী সবার জন্য।

বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।

 5,688 total views,  11 views today

What People Are Saying

Facebook Comment