ছোট্ট সোনামণি ইদানিং খাটের কিনারা ধরে, কিংবা জানালার গ্রীল ধরে কাঁপো কাঁপো পায়ে দাঁড়িয়ে যায়। বীর বিক্রমে হাত-পা ছোটাছুটি করে। দেখে মনে হয় হেঁটে হেঁটে মায়ের কাছে আসার তর আর সে সইতে পারছে না। শুধু কি সোনামণি! তর সহ্য হয়না আপনারও। কবে হাঁটি হাঁটি পা পা করে সে আপনার কাছে আসবে, কবে ঝাঁপিয়ে পড়বে আপনার বুকে। আপনি কবে তাকে কোলে নিয়ে আনন্দে আটখানা হবেন। সন্তানের প্রথম হাঁটার স্মৃতি ধরে রাখার জন্য অস্থিরতাতো আছেই। শিশুরা স্বাভাবিক বিকাশে একটা সময় হাঁটতে শুরু করে। হাঁটার জন্য তার শরীরের পেশীগুলো ধীরে ধীরে পরিপূর্ণ হয়। কিন্তু উঠে দাঁড়ালে আবার কীভাবে বসতে হবে, কীভাবে এক পা ফেলার পর সুন্দরভাবে আরেকটা পা ফেলতে হবে; এইসব কিন্তু তাকে শিখিয়ে দিতে হয় একটু একটু করে। আর পরিপূর্ণভাবে শিশুর হাঁটা শিখতে তাকে সাহায্য করতে হবে আপনার।
আমরা আজকে সন্তানকে শিশুর হাঁটা শেখানোর জন্য এমনই দারুন ৫ টি কৌশল জেনে নিবো
কোলে নিয়ে খেলুন সাথে
হামাগুড়িতো সে দেয় টুকটাক। সেটা বিছানায় থেকে। আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠতে চায়। হামাগুড়ি দিয়ে নেমে যেতে চায় খাট থেকেও। হামাগুড়ি দেয়ার পরই কিন্তু নিজ পায়ে দাঁড়ানোর প্র্যাকটিসটা করাতে পারেন। বয়স ১০-১১ মাস হলে সে মোটামুটি দাঁড়ানোর ট্রেনিং নেয়ার জন্য প্রস্তুত। তাকে কোলের উপর বসান। আপনার বিশ্বস্ত হাত দিয়ে তাকে ধরে কোলের উপরই লাফাতে সাহায্য করুন। মজাও করুন তার সাথে। আদর করে দিন নাকের সাথে নাক দিয়ে। ঠোটের সাথে ঠোট মিলিয়ে পড়ুন দু-একটা ছড়া। শিশু স্বানন্দে লাফাবে। মাঝে মাঝে দেখবেন দাঁড়িয়েও যাবে নিজের পায়েই।
দাঁড়িয়েতো গেলো, এবার…
খাটের কিনার কিংবা জানালার গ্রীল ধরে কিংবা মায়ের কোলে খেলতে খেলতে দাঁড়িয়েতো গেলো। এবার? দাঁড়িয়ে যাওয়ার পর কী করবে তাতো সে জানে না। কী হবে এবার? ধুপ করে নরম বিছানায় পড়ে জুড়ে দিয়েছে কান্না। এইটুকু পর্যন্ত দেখুন। এরপর নিজের কিছু কাজ আছে তা করুন। তাকে ধরে বসিয়ে দিন। আবার দাঁড়ালে পড়ে যাওয়ার আগেই আবার বসিয়ে দিন। এভাবে ধীরে ধীরে সে দাঁড়ানো থেকে বসে যাওয়া শিখবে। এরপর ধীরে ধীরে হাত ধরে বাসার মেজেতে হাঁটাতে পারেন তাকে।
বাসায় পাশের পার্কেও হোক ঘুরাঘুরি
সকালে হাঁটতে গেলে, বিকেলের অবসরে কিংবা ছুটির দিনের একটু ঘোরায় সন্তানকে নিয়ে যেতে পারেন পার্কে। এরপর সুন্দর একটি জায়গা দেখে নামিয়ে দিন কোল থেকে। সে হামাগুড়ি খাক, এটা সেটা ধরুক। দু-একবার উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করুক। দু-এক বার পড়েও যাক। বিচলিত হবেন না। উঠে দাঁড়িয়ে পড়তে পড়তেই হাড়, পেশী শক্ত হবে। আর পার্কে একটু বড় বাচ্চাদের খেলা দেখে সেও খেলতে চাইবে। ধীরে ধীরে হাঁটার লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাবে সে।
দিতে পারেন বেবি চেয়ার
দ্রুত হাঁটা শেখাতে বা নিজে নিজে উঠে দাঁড়ানোর সাহস যোগাতে সন্তানকে বেবি চেয়ার দিতে পারেন। হাতলসহ অনেক বেবি চেয়ার বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। বেবি চেয়ারের হাতল ধরে শিশুরা নিজে নিজে দাঁড়াতে পারবে। ধাক্কা দিয়ে দিয়ে হালকা হালকা আগাতেও পারবে। তবে কোনভাবেই বেবি ওয়াকার দিবেন না। বেবি ওয়াকার শিশুদের দ্রুত হাঁটা শেখানোর বদলে ক্ষতি করে অনেক। শিশু স্বাভাবিকভাবে দাঁড়ালে যেমন তার পেশী ও হাঁড় শক্তিশালী হবে, বেবি ওয়াকারে তা হবে না।
প্রিয় খেলনাটার লোভ দেখান
শিশুর প্রিয় খেলনাটিকে একটু দূরে নিয়ে যান। এমন ভাব করুন যেন সে আসলেই তাকে প্রিয় খেলনাটি দেয়া হবে। দেখবেন ধীরে ধীরে সে খেলনার দিকে আসতে শুরু করেছে নিজে নিজেই। এভাবে কিন্তু দাঁড়ানোও শেখাতে পারেন। খেলনাটিকে একটু উপরে তুলে রাখুন, দেখবেন বসা থেকে সে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। তবে একটু সাবধান থাকুন। খেয়াল রাখুন যেন পড়ে গিয়ে ব্যাথা না পায়। চাইলে আশেপাশে শক্ত কিছু রাখতে পারেন, যেন সে তা ধরে দাঁড়াতে পারে।
অনেকেই শিশুর হাঁটা শেখার জন্য বেবি ওয়াকার ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু গবেষণায় উঠে এসেছে, বেবি ওয়াকার শিশুর জন্য মোটেও নিরাপদ নয়। বেবি ওয়াকার ব্যবহারের ফলে শিশুর হাড় ও পেশীর বিকাশ পরিপূর্ণ হয় না। সেজন্য স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতেই শিশুকে হাঁটা শেখান।
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
1,854 total views, 1 views today