ঘুম পাড়ানি মাসি পিসি – মোদের বাড়ি এসো – খাট নাই, পালঙ্ক নাই – খোকার চোখে বোসো। কিন্তু না, এতো কিছুর পরেও খোকার চোখে ঘুম নেই। তাই আপনাকেও থাকতে হচ্ছে নির্ঘুম। ঘরে নতুন শিশু, তাই আনন্দ, উচ্ছ্বাস আর ভালো লাগার অনুভূতি আছে আর সাথে আছে কিছু অভিযোগ। তার মধ্যে অন্যতম অভিযোগটি হলো, “ কত রাত একটু শান্তিতে ঘুমাই না! শেষ কবে ঘুমিয়েছি মনে করতে পারছি না!”
এইরকম অভিযোগ যে ঘরে শিশু রয়েছে সে ঘরের সব বাবা মায়ের কাছ থেকেই শুনতে পাওয়া যায়। কারন শিশুর ঘুমের রুটিন হয়ে থাকে খুব অগোছালো। কখন সে জাগবে আর কখন যে উঠবে সেটা সম্পূর্ণ শিশুর মর্জি মত চলে। সদ্যজাত শিশুর ঘুমের রুটিন আরো জটিল। ভালো ঘুম শিশুর মস্তিষ্ককে চাঙা করে। এতে সে দিনের বেলা তার চারপাশ ও পরিবেশ অবলোকন করতে পারে, শিখতে পারে। তাই অভিভাবক হিসাবে মানসিক ও শারীরিক বিকাশে শিশুর ঘুমের জন্য আপনি কিছু অভ্যাস ও রুটিন তৈরি করতে পারেন।
শিশুর আদর্শ ঘুমের জন্য নিচে কিছু উপায় দেয়া হল-
১। শিশুদের নিজে নিজে ঘুমিয়ে পড়ার অভ্যাস করান
শিশুকে সবসময় ঘুমাতে বাধ্য না করে তাকে নিজে নিজেই ঘুমিয়ে পড়ার অভ্যাস করতে সুযোগ দিন। সবসময় পিঠে হালকা চাপড়, ঘুমপাড়ানি গান কিংবা অন্যকোন পন্থা অবলম্বন করার দরকার নাই। শিশু ক্লান্ত হয়ে হাই তোলে, ঘুমঘুম চোখে তাকায়। তখন তাকে বিছানায় শুইয়ে দিন। তাকে নিজের ঘুম নিজেকেই ঘুমাতে দিন।
২। দিন ও রাতের পার্থক্য বুঝাতে সাহায্য করুন
শিশুর বয়স ২ সপ্তাহ পার হলে আপনি তাকে দিন রাতের পার্থক্য বুঝাতে সহায়তা করতে পারেন। দিনের বেলায় বাসায় লাইট না জ্বালিয়ে জানালা খোলা রেখে দিনের আলো ঘরে আসতে দিন। আর রাতের বেলা রুমে অল্প আলো রাখুন। এক্ষেত্রে শিশুর রুমে টিউবলাইট না জ্বালিয়ে ২০-৩০ ওয়াটের এনার্জি সেভিং বাল্ব ব্যবহার করুন। দিনের বেলা শিশুর সাথে খেলাধুলা এবং নানাভাবে তার মনোযোগ ধরে রাখুন। রাতে বেশি শব্দ করা থেকে বিরত থাকুন। খেয়াল রাখুন শিশুর রুমে যেন কোন টিভি না থাকে। এভাবেই শিশুর মধ্যে দিন-রাতের পার্থক্য বোঝার ক্ষমতা তৈরি হবে।
৩। ঘুমানোর কিছু সিগন্যাল তৈরি করুন
ছোটবেলায় আমরা সবাই চাঁদ মামার ঘুমপাড়ানি গান শুনেছি। তেমন ঘুমপাড়ানি গান আপনার শিশুকে রাতে ঘুমানোর আগে শুনান। ঘুমপাড়ানোর সময় তার গালে চুমু দিয়ে গুডনাইট বলুন। বুকে ও পিঠে আলতো চাপড় দিন। এই সবকিছুই তার কাছে ঘুমের সিগন্যালের মত মনে হবে এবং এতে তার মাথায় একটা রুটিন ডুকে যাবে। তখন সে ধীরে ধীরে ঘুমিয়ে পরবে।
আরও জানুন- শিশুদের জন্য শিক্ষণীয় ৫টি হলিউডের মজার সিনেমা
৪। দুলুনির মাধ্যমে ঘুম পাড়ানোর অভ্যাস পরিহার করুন
শতভাগ বাবা-মা তার শিশুকে দুলুনির মাধ্যমে ঘুম পাড়ানোর অভ্যাস করে থাকেন। আপনার কাছে হয়তো মনে হয় একটু দুলুনি দিলেই ঘুমাবে, হ্যা ঘুমাবে ঠিকই কিন্তু পরবর্তীতে দুলুনি ছাড়া সে ঘুমাতে চাইবে না। ধীরে ধীরে দেখবেন শিশুকে ঘুম পাড়াতে দোলনা আরো জোরে দোলাতে হচ্ছে। একসময় আসবে যে দুলুনিতে আর কাজই হচ্ছে না।
৫। শিশুর খাওয়া-দাওয়ার প্রতি নজর রাখুন
শিশুর আদর্শ ঘুমে খাওয়া-দাওয়ার দারুন ভূমিকা রয়েছে। কখনই আপনার শিশুকে রাতে বেশি করে খাওয়াবেন না। কারন এর ফলে শিশু রাতে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। খেয়াল রাখতে হবে শিশুর রাতের খাবারে যেন কোন রকম ক্যাফিন না থাকে। শিশুর ৬ মাস বয়সের পর রাতে ঘুমানোর আগে বুকের দুধ খাওয়ানোর অভ্যাস থাকলে সেটা পরিহার করতে হবে।
৬। শিশুর রুমে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করুন
শিশুর রুমে নিরিবিলি ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করুন। ঘুমানোর জায়গায় একটি আরামদায়ক বিছানা তৈরি করুন। শিশুর আরামদায়ক ঘুমের জন্য ঘরের তাপমাত্রা ঠিক রাখুন। তাপমাত্রা কখনই খুব বেশি বা কম রাখবেন না। স্বাভাবিক তাপমাত্রায় শিশুকে ঘুমাতে দিন।
আরও জানুন- শিশুদের জন্য শিক্ষণীয় ৫টি মজার টিভি সিরিজ
এছাড়াও যা যা করতে পারেন,
ঘুমের জন্য নির্দিষ্ট সময়ের আগে গোসল করাতে পারেন, পাল্টে দিতে পারেন পোশাক, আঁচড়ে দিতে পারেন চুল।
তাছাড়াও সব বয়সের মানুষের জন্য ঘুমের নির্দিষ্ট একটা সময় সীমা রয়েছে। শিশুদের জন্য ঠিক তেমনি ঘুমের আদর্শ সময় সীমা রয়েছে।
নিচে শিশুর ঘুমের সময় সীমার একটি ছক দেওয়া হল-
বয়স | দিনের বেলায় ঘুম | রাতের বেলায় ঘুম | মোট ঘুমের সময় |
সদ্য নবজাতক | ২-৩ বারে সময় ভাগ করে মোট ৮ ঘণ্টা ঘুমানো দরকার শিশুর। | ৮ ঘণ্টা ৩০ মিনিট। | ১৬ ঘণ্টা ৩০ মিনিট। |
১-৩ মাসের শিশু | ৩ বারে সময় ভাগ করে ৭ ঘণ্টা। | ৮-৯ ঘণ্টা। | ১৪-১৬ ঘণ্টা। |
৩-৬ মাসের শিশু | ৩ বারে সময় ভাগ করে ৪-৫ ঘণ্টার ঘুম | ১০-১১ ঘণ্টা। | ১৪-১৬ ঘণ্টা। |
৬-৯ মাসের শিশু | ৩ বারে সময় ভাগ করে ৩ ঘণ্টা। | ১১ ঘণ্টা। | ১৪ ঘণ্টা। |
৯-১২ মাসের শিশু | ২ বারে সময় ভাগ করে ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট। | ১১ ঘণ্টা। | ১৩ ঘণ্টা ৩০ মিনিট। |
১২ মাসের শিশু | ২ বারে সময় ভাগ করে ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট। | ১১ ঘণ্টা | ১৩ ঘণ্টা ৩০ মিনিট। |
আরও জানুন- শিশুদের জন্য শিক্ষণীয় ৫টি বাংলাদেশী সিনেমা
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
1,982 total views, 1 views today