প্রত্যেকটা শিশুর মানসিক ও শারীরিক উন্নতির ক্ষেত্রে খেলনা একটা বিশেষ ভূমিকা পালন করে। একই সাথে খেলনা শিশুর বেড়ে ওঠার সময়টাকে অনেক আনন্দময়ও করে তোলে। শিশুরা স্বভাবগতভাবেই তার খেলনার প্রতি অনেক আকর্ষণবোধ করে! এই আকর্ষণবোধ থেকেই তারা তাদের খেলনার সাথে অনেক বেশি সময় কাটায়। টেডি বিয়ারের মতো খেলনা ছাড়া অনেকে ঘুমায়ও না। খেলনার অনেক ইতিবাচক দিকতো আছেই। একই সাথে আছে অনেক নেতিবাচক দিকও। খেলনা থেকে জীবাণু ছড়িয়ে এলার্জিক রাইনাইটিসে শিশুরা অহরহ আক্রান্ত হচ্ছে! আর নিজের অজান্তেই ছোটখাটো কিছু গিলে ফেলে চোকিংয়ে আক্রান্ত হওয়া শিশুর সংখ্যা বেড়েই চলছে! তাছাড়া খেলনার ধরণের উপরও শিশুর মানসিক বিকাশ অনেকাংশে নির্ভর করে। আপনি শিশুর খেলনা হিসেবে বন্দুক জাতীয় কিছু দিলে তার বিকাশে যে প্রভাবটা পড়বে, যদি খেলনা হিসেবে সায়েন্স কিট বা সৃজনশীল কিছু দেন তাহলে সন্তানের বিকাশে ঠিক তার উল্টো প্রভাবটা পড়বে। মোট কথা খেলনা শুধু কিনে ফেললেই হবে না। খেলনা কেনার সময় মনে রাখতে হবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেমন খেলনা কেনা উচিত? খেলনা কেনার সময় কোন কোন বিষয় খেয়াল রাখা উচিত? এইসব নিয়ে সাজানো হয়েছে বিজ্ঞানবাক্সের আজকের ব্লগ।
বয়স অনুযায়ী খেলনা কিনুন
খেলনা শুধু খেলার জন্য না। খেলনা একই সাথে শিশুর মেধা বিকাশেও সাহায্য করে। সেজন্য বয়স অনুযায়ী শিক্ষামূলক খেলনা শিশুকে দেয়ার চেষ্টা করুন। সুন্দর কিংবা কালারফুল দেখেই খেলনা কিনবেন না। কেনার আগে শিশুর বয়সের সাথে খেলনাটা যায় কি না? শিশু খেলনা থেকে কিছু শিখতে পারবে কি না? এই বিষয়গুলো খেয়াল করুন। যেমন, ৩ বা ৪ বছরের বাচ্চার জন্য সায়েন্স কিট নিলে সে কিন্তু কিছুই বুঝবে না তেমন। আবার ১০ বছর বয়সী বাচ্চার কাছে খেলনা গাড়ি বিরক্তই লাগতে পারে।
খেলনার সাইজ খেয়াল করুন
শিশুদের একটা সাধারণ অভ্যাস হলো কোন কিছু পেলেই তা মুখে দেয়া, চোষা। মুখে দেয়া ও চোষার কারণে দুটো সমস্যা হতে পারে। যদি খেলনা বা খেলনার কোন পার্টস ছোট হয় তাহলে শিশু তা গিলে ফেলতে পারে, ফলে তা গলায় আটকে গিতে চোকিং এর সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। আর চোষার ফলে শিশুর পেটে জীবাণু প্রবেশ করে অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। তাই মুখে দিতে পারে বা গিলে ফেলতে পারে শিশুর জন্য এত ছোট কোন খেলনা কিনবেন না। তবে একটু বড় বাচ্চাদের জন্য খেলনার সাইজ নিয়ে খুব একটা ভাবতে হবে না। খেলনা যদি সৃজনশীল হয় তাহলে সাবধানতা বুঝিয়ে দিয়ে তাকে যেকোন ধরণের খেলনা দেয়া যাবে।
উচ্চ শব্দের খেলনা দিবেন না
শিশুদের শারীরিক অনেক অংশই গঠন প্রক্তিয়াধিন থাকে। তাই তাদের জন্য করা সবকিছুতে একটু নমনীয় ভাব বজায় রাখতে হয়। খেলনা যদি উচ্চ শব্দের হয় তাহলে তা শিশুর কানের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। সেজন্য উচ্চ শব্দ সৃষ্টি করে এমন খেলনা (যেমন-সাইরেন, বাঁশি, মিউজিক্যাল খেলনা) ইত্যাদি পরিহার করাই উত্তম।
রাসায়নিক উপাদান সমৃদ্ধ খেলনা দিবেন না
রাবার, প্লাস্টিক, পেইন্ট, রাসায়নিক উপাদান আছে এমন কোন খেলনা শিশুকে দিবেন না। এইসব খেলনা থেকে রাসায়নিক পদার্থ শিশুর পেটে গেলে মারাত্মক কোন ক্ষতি হতে পারে। তাছাড়া প্লাস্টিকে অসাবধানতা বসত আগুন ধরে গেলে তা বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে। এই জাতীয় খেলনা শিশুকে দিলেও একটা নির্দিষ্ট বয়সের পরে দিন। অন্তত ৩ বছরের আগে দিবেন না।
ওয়াশেবল খেলনা কিনুন
শিশুর খেলনা একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর পরিষ্কার করা উচিত। এতে খেলনায় জীবাণু থাকে না। শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধিন থাকার ফলে খুব সামান্য ও নিরীহ কোন জীবাণু দ্বারাও সে আক্রান্ত হতে পারে। পুতুল বা টেডি বিয়ার জাতীয় খেলনা কেনার সময় খেলনা যেন অবশ্যই মেশিন ওয়াশেবল হয় সে দিকে খেয়াল করুন। নিয়মিত পরিষ্কার না করলে ও মেশিন ওয়াশেবল না হলে খেলনা থেকে জীবাণু ছড়িয়ে শিশুর এলার্জিক রাইনাইটিসের মত সমস্যাও হতে পারে।
বন্দুক জাতিয় খেলনা পরিহার করুন
মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, খেলনা হিসেবে শিশুকে বন্দুক কিনে দিলে তা শিশুর বিকাশে একটা বড় ধরণের নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। আমরা অনেকেই সন্তানের বায়না মেটানোর জন্য কোন কিছু না ভেবেই তাকে বন্দুক কিনে দেই। এই ধরণের ত্যাগ করতে হবে।
শিশুর খেলনা নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমাদের এই বিষয়গুলো মাথা রাখা উচিত। এতে শিশু নিরাপদ থাকবে, সৃজনশীলতা বাড়বে।
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
1,511 total views, 1 views today