“বাচ্চাকে টেলিভিশনের সামনে থেকে সরানো যাচ্ছে না” সন্তানকে নিয়ে এখনকার দিনে অধিকাংশ বাবা-মায়ের নিয়মিত অভিযোগ। আমাদের প্রতিদিনের জীবনে টেলিভিশন একটা বিশাল অংশ জুড়ে আছে। কেউ বলছে টেলিভিশন শিশুদের জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে আবার কেউ বলছে টেলিভিশন নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। কিন্তু টেলিভিশনের নেতিবাচক ও ইতিবাচক দু-ধরণের প্রভাবই রয়েছে। বিজ্ঞানবাক্সের ব্লগে আমরা গতপর্বে শিশুদের উপর টেলিভিশনের ইতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে জেনেছি ও আজকের পর্বে টেলিভিশনের নেতিবাচক প্রভাব ও টেলিভিশনের প্রভাব কীভাবে ইতিবাচকভাবে কাজে লাগানো যাবে তা সম্পর্কে জানবো।
টেলিভিশনের নেতিবাচক প্রভাব
টেলিভিশনের যেমন অনেক ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে তেমনি রয়েছে অনেক নেতিবাচক প্রভাব। সাধারণত সঠিক সিদ্ধান্ত ও মনোযোগের অভাবেই শিশুর উপর টেলিভিশনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। চলুন টেলিভিশনের কিছু নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে জেনে নিই।
অলসতা ও স্থূলতা বাড়ায়
টেলিভিশনের প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি শিশুদের মাঝে অন্যকিছু করার আগ্রহ নষ্ট করে ফেলে। অনেকেই আছে যারা সারাদিন টেলিভিশন নিয়েই পড়ে থাকে। ফলে তারা অনেক অলস হয়ে থাকে। অনেক বেশি সময় ধরে বসে বসে টেলিভিশন দেখার ফলে শিশুদের স্থূলতা বেড়ে যায়।
অসামাজিক করে তোলে
টেলিভিশনের প্রতি আসক্তি বেড়ে গেলে শিশুরা বাকি কারও সাথে মিশতে চায় না, খেলতে চায় না, বন্ধুদের সাথে কোথাও যেতে চায় না। ফলে তারা অনেক বেশি অসামাজিক হয়ে পড়ে। জন হোপকিংস ইউনিভার্সিটির গবেষণা বলছে, যেসব শিশুরা দিনে ২ ঘন্টার বেশি টেলিভিশন দেখে তাদের আচরণগত সমস্যা যেমন-স্কুল বুলিং, দুর্ব্যবহার ইত্যাদি দেখা যায়।
অনৈতিক আচরণে উদ্বুদ্ধ করে
টেলিভিশনের শো গুলো আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। রিমোটে একটা চাপ দিলেই চলে আসে অন্য কোন চ্যানেল। অনেক অনুষ্ঠান, চ্যানেল, মুভি কিংবা নাটক আছে যেখানে নায়ক বা অন্য কাউকে মাদক নিতে দেখা যায়। এটার ক্ষতি বোঝার মতো পর্যাপ্ত পরিপক্বতা শিশুদের থাকে না। ফলে মাদকের প্রতি শিশুদের আগ্রহ বাড়তে পারে। তাছাড়া এমন অনেক নেতিবাচক কন্টেন্টের ফলে শিশুদের মাঝে অনৈতিক আচরণ গড়ে উঠার প্রবণতা দেখা যায়।
অবাস্তব ধারণা ও হিংস্রতা বাড়াতে পারে
টেলিভিশনে অনেক সিনেমা, কার্টুন ও কন্টেন্টে অবাস্তব ও হিংসাত্মক অনেক কিছু দেখানো হয়। অতিরিক্ত টেলিভিশন দেখার ফলে শিশুদের মাঝে এর অনেক প্রভাব পড়তে পারে। সিনেমার ধ্বংসাত্মক ও হিংসাত্মক আচরণে প্রভাবিত হয়ে বন্ধুদের সাথে মারামারিতে জড়িয়ে পড়তে পারে।
বাবা-মার করণীয়
টেলিভিশনের যেহেতু ইতিবাচক ও নেতিবাচক দু-ধরণের প্রভাবই রয়েছে সেক্ষেত্রে আমরা শিশুকে টেলিভিশনের নেতিবাচক প্রভাবগুলো থেকে রক্ষা করে ইতিবাচক প্রভাবে প্রভাবিত করতে চাইবো । সেক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে হবে বাবা-মাকেই। চলুন জেনে নেই তেমনই কিছু কৌশল, যার মাধ্যমে আমরা শিশুকে নেতিবাচক প্রভাব থেকে রক্ষা করে তাদের উপর ইতিবাচক টেলিভিশনের প্রভাব গুলোর প্রতিফলন ঘটাতে পারবো।
শিশুদের উপযোগী অনুষ্ঠান পছন্দ করতে হবে
শিশুদের জন্য উপযোগী অনুষ্ঠান বাছাই করার মাধ্যমে টেলিভিশনের ক্ষতিকর প্রভাব অনেকাংশে কমিয়ে ফেলা সম্ভব। এক্ষেত্রে একটু গবেষণা করে শিশুদেরকে আমরা যা দেখাতে চাই বা যা শিশুদের জন্য উপকারী হবে সেসব অনুষ্ঠান বা কন্টেন্ট পছন্দ করা উচিত। সেক্ষেত্রে কিছু জিনিস মনে রাখতে হবে
• শিশুদের জন্য শিক্ষণীয় অনুষ্ঠান পছন্দ করতে হবে।
• এমন অনুষ্ঠান পছন্দ করতে হবে যার সময়সীমা কম থাকবে। বেশি সময়সীমা থাকলে শিশুদের টেলিভিশনে আসক্তি চলে আসতে পারে।
• শিশুদের বয়সের সাথে সামঞ্জস্য রেখে অনুষ্ঠান বাছাই করতে হবে।
নির্দিষ্ট সময় ও ক্ষণ ঠিক করে দিতে হবে
টিভি দেখার জন্য একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ সময় ও একটা নির্দিষ্ট ক্ষণ ঠিক করে দেয়া যেতে পারে। সাধারণত দিনে ২-৩ ঘন্টার বেশি টেলিভিশন না দেখাই উত্তম। সন্তানের কোন পছন্দের প্রোগ্রাম থাকলে কিংবা কোন নির্দিষ্ট শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান থাকলে ওই সময়টায় টিভি দেখার জন্য নির্বাচন করতে হবে।
খাওয়ানোর সময় টিভি দেখা যাবে না
অনেকেই শিশুকে খাওয়ানোর সময় টিভি চালু করে রাখেন। এতে শিশু টেলিভিশনের দিকে বেশি মনযোগী হয়। ফলে সে খাবারের স্বাদ পায় না। এবং অন্য মনস্ক থাকায় অনেক বেশি খেয়ে ফেলে। বেশি খাওয়ার কারণে শিশুর মাঝে স্থূলতা বাড়তে পারে।
শোবার ঘরে টিভি রাখা যাবে না
শোবার ঘরে টিভি রাখলে শিশুদের ঘুমের সমস্যা হতে পারে। সেজন্য শোবার ঘরে টিভি রাখা যাবে না। তাছাড়া শোবার ঘরে টিভি রাখার ফলে শিশু টিভিতে কোন ধরণের প্রোগ্রাম দেখছে সে বিষয়ে বাবা-মার কোন নিয়ন্ত্রণ থাকে না।
শিশুর সাথে একসাথে টিভি দেখতে হবে
রিমোট হাতে নিয়ে একটা চাপ দিলেই টিভি চলে যাবে অন্যকোন দেশে কিংবা অন্যকোন জগতে। সেজন্য সন্তানকে একা টিভি দেখতে না দিয়ে সন্তানের সাথে একসাথে বসে টিভি দেখা উচিত। এতে সন্তান কী দেখছে তা নিয়ন্ত্রণ করা যায় ও তার জন্য শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান পছন্দ করতে হয়। ফলে টেলিভিশনের প্রভাব শিশুদের উপর ইতিবাচক প্রতিফলন ঘটাবে।
প্রতিটা জিনিসের মতো আমাদের জীবনে টেলিভিশনের প্রভাব’ও ইতিবাচক ও নেতিবাচক দু-ভাবেই রয়েছে। কিন্তু আমরা শিশুদের উপর টেলিভিশনের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে না দিয়ে ইতিবাচক প্রভাবকে কাজে লাগাবো।(1)
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
1,859 total views, 1 views today