“রহস্যসন্ধানী বিজ্ঞানবাক্স”-র এবারের পর্ব পৃথিবী গোল নাকি সমতল!
পৃথিবী গোল নাকি সমতল! এই প্রশ্ন অনেকদিন ধরেই ঘুরছে সামিউলের মনে। কয়েকদিন আগে টিভিতে দেখেছে পৃথিবী সমতল বলে কিছু মানুষ একটা পার্কে প্রোগ্রাম করেছে। কিন্তু সামির ভাইয়া বলেছে পৃথিবী গোল! যদিও সামিউলের কাছে পৃথিবী সমতলই মনে হয়! সে তো গোল দেখে না, দেখে সমতলই। সামিউল কোন কুল-কিনারা পাচ্ছে না এই প্রশ্নের। ঘরে বসে বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছে আর ভাবছে। এমন সময় রায়হান ডাকলো ক্রিকেট খেলার জন্য। খেলতেও ইচ্ছে করছে না! গোল সমতলের চিন্তায় খেলাধুলাও করতে ইচ্ছে করছে না সামিউলের, আবার পড়তেও ইচ্ছে করছে না। এমন দো-টানায় থেকেই শেষ পর্যন্ত ক্রিকেট খেলতে গেলো।
সামিউলের দল ফিল্ডিং পেয়েছে। সে দাঁড়িয়েছে থার্ডম্যানে। যদিও খেলায় খুব একটা মন নেই! এমন সময় দ্রুতগতির একটা বল সামিউলের পাশ দিয়ে চার হয়ে গেলো!বলটা গিয়ে পড়লো বাউন্ডারির বাইরের পুকুরে! মেজাজটাই গেলো গরম হয়ে। এখন বল আনার জন্য পুকুরে নামা লাগবে! রহস্য সমাধান না করে খেলতে আসাই উচিত হয় নি। পুকুর থেকে বলটা নিয়ে বোলারের কাছে মারতে গিয়ে হঠাৎ থেমে গেলো সামিউল! আরেহ! বলটার গা বেয়ে পানি নিচে পড়ে যাচ্ছে! পৃথিবী যদি বলের মতোই গোল হতো, তাহলেতো পৃথিবীর সব পানি পড়ে যেতো! কিন্তু পানিতো পড়ে যায় না! তাহলে কী পৃথিবী সমতল! সামিউলের ভাবনাই তাহলে ঠিক। পৃথিবী আসলে সমতল! সামির ভাইয়াকে এবার নিজের ধারণা সঠিক এই কথাটা জোর দিয়ে বলা যাবে।
খেলা শেষে সামিউল বাসায় গিয়েই সামির ভাইয়াকে বললো-ভাইয়া, পৃথিবী যে সমতল আমিতো তার প্রমাণ পেয়ে গেছি!
সামির ভাইয়া-বাহ! তুমিতো তাহলে অনেক জ্ঞানী হয়ে যাচ্ছো! শুনি তোমার প্রমাণ।
(আরো পড়তে পারো- অনেক উঁচু ভবন থেকে একটা কয়েন তোমার মাথায় পড়লে তুমি কি মারা যাবে? )
-একটা গোল বলের উপরে পানি ঢাললে সেই পানি বলের গা বেয়ে নিচে পড়ে যায়। কিন্তু একটা প্লেটের পানি পড়ে না! পৃথিবী যদি গোল হতো তাহলে পৃথিবীর সকল পানি নিচে পড়ে যেতো! আসলে পৃথিবী গোল না ভাইয়া। পৃথিবী সমতল! বুঝলে!
-অনেক ভালো যুক্তি! কিন্তু ভাইয়া সামিউল, পৃথিবীর কেন্দ্রের অভিকর্ষ বলের কথাতো তুমি ভুলে গেলে! পৃথিবী গোল হলেও পৃথিবীর কেন্দ্রের আকর্ষণের প্রভাবে পানিগুলো মহাবিশ্বে পড়ে যায় না।
-পৃথিবীর অভিকর্ষ বল কী আসলেই আছে? নাকি তুমি বানিয়ে বলছো?
-তুমি আজকে বিকেলে ক্রিকেট খেলেছো না?
-হ্যাঁ, খেলেছি।
-ক্রিকেট খেলায় কেউ যখন ছয় মারে, তখন বলটা কিন্তু যত উপরেই উঠুক সেটা আবার নিচে ফিরে আসে। সবসময়ের জন্য উপরের দিকে চলে যায় না। পৃথিবীর কেন্দের অভিকর্ষ বলের ফলেই এমনটা হয়। কোন কিছু পৃথিবী থেকে দূরে চলে যেতে চাইলেই পৃথিবী তাকে নিজের দিকে টানতে থাকে। ক্রিকেট বলকে যেই শক্তিতে উপরের দিকে মারা হয়, সেই শক্তিকে পৃথিবীর অভিকর্ষ শক্তি ধীরে ধীরে কমিয়ে ফেলে বলটিকে আবার মাটিতে টেনে আনে।
-কিন্তু পৃথিবী সমতল হলে অভিকর্ষ বলের প্রভাব কেমন হতো?
-আমরা আগেই জেনেছি কোন বস্তু পৃথিবী থেকে দূরে যেতে লাগলেই পৃথিবীর অভিকর্ষ বল তাকে নিজের দিকে টানতে থাকে। যেমন, তুমি সিড়ি বেয়ে যখন বাসায় উঠো তখন তোমার যে কষ্ট হয় সমতলে হাঁটার সময় তোমার ততটা কষ্ট হয় না। কারণ তুমি পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে উপরে উঠতে চাচ্ছো! তখন তোমাকে পৃথিবী তার দিকে টানছে। আর পৃথিবীর এই আকর্ষণকে উপেক্ষা করে উপরে যাওয়ার জন্য তোমাকে একটু বেশি কষ্ট করতে হয়। কিন্তু এই কষ্টটা পৃথিবী পৃষ্ঠে হাটার সময় হয় না! কারণটা হলো পৃথিবী গোল আর ঠিক তার কেন্দ্রে রয়েছে অভিকর্ষ বল। সেজন্য পৃথিবীর সব পৃষ্ঠের দূরত্ব কেন্দ্র থেকে সমান। সমান হওয়ার আকর্ষন বলও সমান। কিন্তু ভাবো, পৃথিবী যদি সমতল হতো, আর পৃথিবীর কেন্দ্রে যদি অভিকর্ষ বল থাকতো তাহলে সব জায়গায় বল সমান থাকতো না। ধরো, সমতল পৃথিবীর কেন্দ্র যদি হয় বাংলাদেশ, তাহলে অভিকর্ষ বলের কেন্দ্রও থাকতো বাংলাদেশে আর আমরা আমাদের থেকে দূরে থাকা বাকি সবাইকে টেনে আমাদের কাছে নিয়ে আসতে চাইতাম। কেউ দূরে যেতে চাইলে তাকে বেশি শক্তি খরচ করা লাগতো। সেক্ষেত্রে নিচে হাঁটলেও তোমাকে সিড়ি দিয়ে উঠার মতো শক্তি খরচ করা লাগতো!
-তোমার কথা শুনেতো মনে হচ্ছে পৃথিবী গোল!
( আপনার সন্তানের মেধাবিকাশে বিজ্ঞানবাক্স হতে পারে অন্যতম মাধ্যম।)
-আরেকটা প্রমাণ দেই তোমাকে, পৃথিবী যদি একটা প্লেটের মতো চ্যাপ্টা হতো, তাহলে আমরা পৃথিবীর সকল মানুষ একই সাথে সূর্যকে দেখতাম। হয়তো হয়তো সবার কাছে একসাথে আলো আসতো না কিন্তু সব জায়গা থেকেই সূর্যকে দেখা যেতো! কিন্তু তাতো দেখা যায় না। সূর্য যখন আমাদের থেকে ঠিক উলটা পাশে থাকে তখন আমরা আর সূর্যকে দেখি না!
-তার মানে পৃথিবী আসলে গোল, সমতল না!
সামির ভাইয়ার সাথে কথা বলে সামিউল বুঝতে পারলো পৃথিবী আসলে গোল। পৃথিবী সমতল না। তোমার কী মনে হয়? পৃথিবী কী আসলে গোল নাকি সমতল? সামিরি ভাইয়ার যুক্তিগুলো খন্ডানোর মতো কোন যুক্তি কী আছে তোমার কাছে? থাকলে লিখো কমেন্ট বক্সে। যুক্তি ছাড়াও বিজ্ঞান নিয়ে তোমার যে কোন প্রশ্ন লিখতে পারো। আমরা তোমাকে আসল সত্য জানানোর চেষ্টা করবো!
পরবর্তী পর্বগুলি পড়তে আমাদের সাথেই থাকো।
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
1,654 total views, 1 views today