আমরা সবাই জানি যে যেকোন রকমের বিষ থেকে ১০০ হাত দূরে থাকতে হবে। যেমন, মাত্র ২০০ মি.গ্রা. মারকুরি বিষ যদি পাকস্থলিতে যেতে পারে তাহলে মৃত্যু ছাড়া আর কোন গতি নেই। অথবা ধরে নেয়া যাক পোলোনিয়ামের কথা যেটাতে থাকা মাত্র ১ গ্রাম ভ্যাপোরাইজড্ সাবস্ট্যান্সই ৫০ মিলিয়ন মানুষ মেরে ফেলার জন্য যথেষ্ট।
আমাদের দৈনন্দিন খাবারের মধ্যে এমন অনেক খাবারই আছে যেগুলো মাত্রাতিরিক্ত গ্রহনে আমরা প্রাপ্তবয়স্কদেরই জীবনের ঝুকি রয়েছে আর যদি শিশুদের কথা ধরা হয় তাহলে ত কথাই নেই। তাহলে দেখে নেয়া যাক এরকম কিছু খাবার :
১। পানি
বিশুদ্ধ পানির অপর নাম জীবন হলেও মাত্রাতিরিক্ত গ্রহনে এই বিশুদ্ধ পানিও হতে পারে জীবন নাশের কারন। যদিও কথাটি শুনে প্রাথমিক ভাবে হজম করতে সমস্যা হয় তারপরেও প্রকৃত সত্য হচ্ছে, ৬ লিটার পরিমানের পানি পান করলে আমাদের মস্তিস্ক ফুলে যাওয়া, মাথা ব্যাথা হওয়া, হৃদরোগ, অজ্ঞান হওয়া এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। তাই জোর করে পানি না খাইয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সন্তানকে দৈনিক পরিমিত পানি খাওয়ান।
২। কফি
৭০ কাপ কফিতে যে পরিমান ক্যাফেইন থাকে তা ৭০ কেজি ওজনের একজন মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। কারন এই পরিমানের ক্যাফেইন হার্ট পালপিটেশন বা কার্ডিয়াক এটাক ঘটিয়ে থাকে। তাই সন্তানকে মাত্রাতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহন থেকে দূরে রাখুন।
৩। লবন বা লবনাক্ত খাবার :
স্বাভাবিক মাত্রায় লবন বা লবনাক্ত খাবার খেলে তা আমাদের শরীরে তেমন কোন ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে না। কিন্তু সেবনের মাত্রা যদি বেশি হয় তাহলেই বিপদ। অতিমাত্রায় লবন সেবন শরীরের সেলগুলোকে সংকুচিত করতে থাকে যাকে চিকিৎসকগন হাইপারনেট্রেমিয়া বলে থাকেন। চিকিৎসকদের মতে ৪৮ চামুচ লবন পরিমান লবনাক্ত খাবার যদি কেউ গ্রহন করে তাহলে তার হৃদরোগ, অচেতন অবস্থা কিংবা মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। বাজারে চিপস্ থেকে শুরু করে অসংখ্য ড্রাই ফুড রয়েছে যেগুলো বর্তমান শিশুদের অনেক পছন্দের খাবার। তাই, আপনার সন্তানদের এসব খাবার গ্রহনের দিকে আজই নজর দিন।
৪।চেরি ফল
চেরি ফল আমাদের মস্তিস্কে অক্সিজেন আসতে বাধা প্রদান করে। আর চেরির সবচেয়ে ভয়াবহ হচ্ছে এর ভেতরের দানা। যদি আপনি চেরির দানা গিলে ফেলেন তাহলে ভয়ের কিছু নেই, কিন্তু যদি দানাটিতে কামড় বসিয়ে গিলে থাকেন তাহলেই কর্ম সারা। এক বা দুটি চেরির দানায় পর্যাপ্ত পরিমানে সায়োনাইড থাকে যা আপনার জীবন শেষ করে দিতে যথেষ্ট। এই সায়োনাইড আয়ন আপনার শরীরের এনজাইম সাইটক্রম ডি-অক্সিডাইজ কে বাধা প্রদান করে যার জন্য আপনার শরীর অক্সিজেন ব্যাবহার করতে পারে না। তবে আপনি হয়ত মনে রাখতে পারেন চেরি ফলের দানার ভয়াবহতার কথা কিন্তু আপনার সন্তান যে মনে রাখবে তা কিন্তু নয়, এর দায়িত্ব আপনারই। তাই সন্তানের মাত্রাতিরিক্ত চেরিফল খাওয়ার দিকে নজর রাখুন।
৫।
মশলা :
রান্না করার সময় খাবারকে অপেক্ষাকৃত বেশি সুস্বাদু করতে আমরা প্রায়ই বেশি পরিমানে মশলা দিয়ে থাকি। প্রথমত চিকিৎসকদের মতে মশলা আমাদের সু-স্বাস্থের জন্য এমনিতেই ক্ষতিকর এর উপর যদি তা অতিরিক্ত মাত্রায় গ্রহন করা হয় তাহলে তা ভয়ের কারন বিশেষ করে শিশুদের জন্য। যেমন কয়েক চামচ জয়ফলের গুড়া সেবন সৃষ্টি করতে পারে হার্ট-পালপিটিশন, বমি বমি ভাব সম্ভবত হতে পারে মৃত্যুও।
# ৬.
চিনি :
চিনি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের এমন একটি খাবার যা মানব দেহের অনেক রোগের সাথে সেতুবন্ধনকারি। মাত্রাতিরিক্ত চিনি সেবনে ক্লাসিক মেটাবলিক সিনড্রমের লক্ষন দেখা যায়। ফলে আমাদের শরীরের ওজন ও, মেদভূড়ি বৃদ্ধি পায়, শরীরের উপকারি উপাদান এইচ-ডি-এলের মাত্রা কমিয়ে ফেলে এবং ক্ষতিকর উপানাদ এল-ডি-এলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় ফলে দেহে কোলেস্টেরলের লেভেল বৃদ্ধি পায়, রক্তে সুগারের মাত্রা বেরে ট্রাইগ্লিসারাইড ও উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয়। ১৫০ পাউন্ড ওজনের একজন মানুষ যদি একসাথে ১০.৫ পাউন্ড পরিমানের চিনি খায় তাহলে মৃত্যু হওয়ার আশংকা থাকে। সুতরাং, সন্তানকে যত বেশি চিনিমুক্ত রাখতে পারা যায় ততই তার স্বাস্থের জন্য মঙ্গল।
# ৭.
টুথপেষ্ট :
টুথপেস্ট পৃথিবীর যেকোন শিশুর জন্য খুবই মজার একটি খাবার বললে অত্যুক্তি হবে না। দাঁত মাজতে গিয়ে টুথপেষ্ট গিলে ফেলায় আমরা কমবেশি সবাই ছোটবেলায় পারদর্শী ছিলাম। কিন্তু এই অতিরিক্ত গিলে ফেলা টুথপেষ্টই হতে পারে আপনার সন্তানের জীবনের জন্য হুমকি স্বরুপ। আমরা জানি যে, অল্পমাত্রায় ফ্লোরাইড আমাদের দাঁতের জন্য অনেক উপকারি এবং ক্যাভিটি নিয়ন্ত্রনে অনেক কার্যকরি। কিন্তু মাত্র ৬ আউন্স পরিমান টুথপেষ্ট গ্রহনে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জীবননাশের হুমকি থাকে।
# ৮.
ভিটামিন সি :
ভিটামিন সি’ এর কথা উল্লেখ করলেই মাথায় আসে কমলা লেবুর কথা। কমলা লেবু খাওয়া স্বাস্থের জন্য ভাল হলেও ভিটামিন সি’ যুক্ত ট্যাবলেট, সাপ্লিমেন্ট ইত্যাদি সেবন শুধু স্বাস্থহানিই নয়, প্রাণহানিও ঘটাতে পারে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, কেউ একসাথে ১১ হাজার কমলালেবু খেলে মারা যেতে পারে। তবে একসাথে এত পরিমানের কমলা সাধারনত কেউ না খেলেও ১১ হাজার কমলায় বিদ্যমান সমপরিমান কোন ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট খেলে একই প্রতিক্রিয়া হবে। আমরা দ্রুত সুস্থ থাকার আশায় প্রায়শই চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়েই এসব সেবন করে থাকি। বিশেষ করে বাচ্চাদের অতিরিক্ত ভিটামিন সি’ জাতিয় ট্যাবলেট খাওয়ানো হলে, ডায়রিয়া, বুকজ্বালা, পেটে ব্যাথা, মাথা ব্যাথা, বমি ভাব, অনেক বমি হওয়া, অনিদ্রা সহ বহু সমস্যা হতে পারে।
# ৯.
সবুজ আলু :
আলু আমাদের দেশে ভাতের মতই দৈনন্দিন একটি আহার। প্রতিদিন বাজার থেকে আলু কিনে নিয়ে আসলে তার মাঝে অবশ্যই কিছু আলু পাওয়া যাবে যেগুলোর চামড়ার রঙ সবুজ। স্বাভাবিকভাবে সবুজ চামড়া যুক্ত আলু খাওয়াতে কোন ক্ষতি নেই। কিন্তু অতিরিক্ত মাত্রায় সবুজ আলু খেলে জেনে রাখা ভাল যে বিপদ আপনার দরজায় কড়া নাড়ছে।
সবুজ চামড়ার মানে হচ্ছে, সে আলুর চামড়ার নিচে রয়েছে ক্লোরোফিল যা মূলত বিষাক্ত নয়। কিন্তু সোলানিন নামে সাথে আরও একটি বিষাক্ত উপাদান সেখানে বিদ্যমান যা মুলত কীট নাশক হিসেবে ব্যাবহৃত হয়। আপনি হয়ত একটা সবুজ আলু খেয়ে অসুস্থ হবেন না, তবে একসাথে ২৫ টি মাঝারি সাইজের সবুজ আলু আপনার জীবন নাশের কারন হতে পারে। সুতরাং ধারনা করতে পারছেন যে, আপনার ছোট্ট সোনামনির ছোট্ট শরীরে এর অতিরিক্ত গ্রহন কতটা ঝুকিপর্ন।
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
2,509 total views, 1 views today