ধরুন, বাজারে আসা নতুন একটি পণ্যের বাজারজাতকারীরা আপনাকে বলছে, তাদের পণ্য আপনাকে সিগারেটের আসক্তি থেকে মুক্তি দিবে। আপনি সিগারেটের অনুভূতিও পাবেন কিন্তু ক্ষতি হবে সিগারেটের চেয়ে কম। স্বাদে বর্ণে তাদের পণ্য সিগারেটের চেয়ে বেশি লোভনীয়ও হবে। সিগারেট ছাড়তে চাওয়া আপনি তখন কী করবেন? নিশ্চই প্রথম শোনা মাত্রই তার ক্ষতিকর দিক চিন্তা করার আগেই ব্যবহার শুরু করে দিবেন। হ্যাঁ, বলছি ভ্যাপিং বা ই-সিগারেটের কথা। ২০০৭ সালে বাজারে এমন বেশ কিছু লোভনীয় বিষয় নিয়েই বাজারে আসে ই-সিগারেট । কিন্তু তাদের দাবী করা স্বাস্থ্যের কম ঝুঁকির পক্ষে তারা শক্ত কোন প্রমাণও দাঁড় করাতে পারেনি। কিন্তু সম্প্রতি বেশ কিছু গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে ভ্যাপিং বা ই-সিগারেটের ক্ষতিকর দিক।
সিগারেটের বিকল্প হলেও ই-সিগারেট যে কোন বয়সের মানুষের জন্য ভয়াবহ ক্ষতিকর। ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন ইতোমধ্যে ই-সিগারেটকে বিষের সাথে তুলনা করেছেন। তাছাড়া হৃদরোগ, ক্যান্সারসহ প্রায় অনেক রোগের ঝূঁকিও থাকে ই-সিগারেট গ্রহণ করলে। তার উপর বর্ণ, সুগন্ধের অনেক বৈচিত্রময় হওয়ায় এটি গ্রহণের মাত্রাও বেশি। ইতোমধ্যে ভারত ও নিউইয়র্কে ই-সিগারেট নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। নিষিদ্ধি করা হতে পারে বাংলাদেশেও।
সিগারেটের বিকল্প হিসেবে বাজারে আসলেও ই-সিগারেট এখন কিশোরদের নতুন ফ্যাশন
অনেক বেশি ধোঁয়া, বিভিন্ন ফ্লেভারের স্বাদ, বিভিন্ন রকমের বর্ণ ও সাথে স্মার্ট গ্যাজেট নাম জুড়ে দেয়ার ফলে খুব দ্রুতই ভ্যাপ বা ই-সিগারেট কিশোরদের কাছে ফ্যাশনের নতুন অনুষঙ্গ হয়ে উঠে। ঢাকায় প্রাপ্ত বয়স্কদের চেয়ে ১২-১৭ বছরের কিশোররাই ভ্যাপের প্রতি বেশি আসক্ত। আমাদের দেশে এ বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোন গবেষণা না হলেও আমেরিকান একাডেমি অফ পেডিয়াট্রিক আমেরিকাতে একটা জরিপ চালান। সেখানে তারা বলেন, কলেজ ও হাইস্কুল পড়ুয়া কিশোরদের মাঝে ই-সিগারেটের জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। ও পুনরায় কেনার ক্ষেত্রেও তারাই এগিয়ে। আমাদের দেশেও আপনি রাস্তায় বের হলে প্রায়ই ভ্যাপ বা ই-সিগারেট হাতে কিশোরদের দেখতে পাবেন। খুব স্বপ্ল সময়েই ভ্যাপ বা ই-সিগারেট অনেক বেশি সহজলভ্য হয়ে পড়েছে। অনেক দামি দামি ব্র্যান্ড থেকে শুরু করে লোকাল অনেক ব্র্যান্ডও এখন কম দামে বাজারে নিয়ে আসছে ই-সিগারেট। শহর, মফস্বল কিংবা গ্রাম সব জায়গায়ই পাওয়া যায় ভ্যাপ। ফলে দিনে দিনে আসক্তির সংখ্যাও বাড়ছে। আমরা আজকের ব্লগে ই-সিগারেটের ক্ষতিকর দিক ও কিশোর সন্তানকে ই-সিগারেট থেকে দূরে রাখতে বাবা-মার করণীয় সম্পর্কে জানবো।
ই-সিগারেট কেন ক্ষতিকর?
ই-সিগারেটকে নিয়ন্ত্রণহীন বলেছেন আমেরিকান একাডেমি অফ পেডিয়াট্রিক
যদিও তারা বলছে এখানে আগুনের কোন ব্যবহার নেই। রাসায়নিক তরলের সাথে মেশানো নিকোটিন লিথিয়াম ব্যাটারির শক্তির ফলে পুড়ে ধোয়া হয়ে মুখে প্রবেশ করে। সিগারেটের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ধোয়া উৎপন্ন হওয়ার ফলে এর আসক্তিও বেশি। আমেরিকান একাডেমি অফ পেডয়াট্রিক বলছে, সিগারেটের আসক্তির চেয়ে বৈচিত্রময়তার দরুন ই-সিগারেটের আসক্তি কয়েকগুন বেশি। এটা থেকে সহজে বের হওয়াও বেশ কষ্টসাধ্য। ফ্যাশনের দরুন ই-সিগারেটে আসক্ত হওয়া কিশোরদের সিগারেটে আসক্ত সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ।
ই-সিগারেটকে বিষ বলছেন ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন
ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন সম্প্রতি ই-সিগারেটের উপাদান নিয়ে গবেষণা চালিয়েছেন। তাদের মতে, ই-সিগারেট এক ধরণের বিষ। ই-সিগারেটের রাসায়নিকে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান, ক্ষতিকর ফরমালডিহাইড, ডাইঅ্যাসিটাইল ও বেশ কিছু ক্ষতিকর ধাতু রয়েছে। শীতের সময় এর তরল যাতে জমে না যায় সেজন্য ব্যবহার করা হয় বিশেষ এক ধরণের ক্যামিক্যাল। ধোয়ার মাধ্যমে এইসব কণা শরীরে প্রবেশ করে ক্যান্সারের সম্ভাবনা ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
স্মার্ট গ্যাজেট বলে কিশোররা সহজে বহন করতে পারে
ই-সিগারেটকে বাজারজাত করা হয়েছে স্মার্ট গ্যাজেট হিসেবে। প্রচুর বৈচিত্র থাকায় কিশোররা মজা ও আনন্দের সাথেই গ্রহণ করে। দেখতে ফ্ল্যাশ লাইট, লেজার লাইট কিংবা ছোটখাটো ইলেক্ট্রনিক গ্যাজেটের মতো হওয়ায় বাবা-মার কাছ থেকে সহজেই লুকানো যায় ও ভুল বোঝানো যায়। নির্ভয়ে বহন করতে পারে পকেটে বা ব্যাগে।
সন্তানকে মুক্ত রাখতে কী করবেন?
আমরা সাধারণত এমন সেসসেটিভ বিষয় নিয়ে সন্তানের সাথে কথা বলতে চাই না। এতে অবশ্য একটা ধারণা কাজ করে। আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষ মনে করেন, নিষিদ্ধ বা সেনসেটিভ বিষয় সন্তানের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখলে সন্তান তা সম্পর্কে জানবে না। এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। বরং সন্তান জানবেই। আপনি না জানালে হয়তো অন্যভাবে জানবে। ক্ষতিকর বিষয়ে আপনি সন্তানের সাথে কথা বললে সে ভালো বার্তাটি পাবে। আর বাইরের কারো থেকে জানলে আসক্ত হয়ে জানারই সম্ভাবনা বেশি। সেজন্যই প্যারেন্টিং এক্সপার্টটা সবসময় সন্তানের সাথে যেকোন বিষয়ে আলোচনার পরামর্শ দেন। সেটা সেনসেটিভ কিংবা নিষিদ্ধ হলেও।
ভ্যাপ বা ই-সিগারেটের ক্ষেত্রেও একই। আলোচনাটা আপনি শুরু করলে সে ক্ষতিকর বিষয়টি সহজে বুঝতে পারবে। আর বন্ধুদের সাথে বা অন্যকারোর কাছ থেকে জানলে ওই বিষয়টি সম্পর্কে কৌতূহল বাড়বে। ফলাফল, আসক্তি।
সাধারণত কলেজে উঠার আগেই কিংবা মাধ্যমিকে থাকার সময়টাতেই ই-সিগারেট নিয়ে সন্তানের সাথে আলোচনা করা উত্তম। কারণ এই সময়টাতেই ই-সিগারেটে আসক্ত হওয়ার সম্ভাবনাটি অনেক বেশি থাকে।
কথা শুরু করতে পারেন আড্ডার ছলে। সন্তানকে বলতে পারেন আপনি সম্প্রতি ই-সিগারেট সম্পর্কে জেনেছেন। সন্তান এই বিষয়ে কিছু জানে কি না? এরপর ই-সিগারেট সংক্রান্ত একটা আড্ডা সন্তানের সাথে দিয়েই দিতে পারেন। এর ক্ষতিকর দিক নিয়ে কথা বলতে পারেন। ই-সিগারেট মানুষের মনোযোগ নষ্ট করে, মন বিক্ষিপ্ত করে, ক্ষতি করে মস্তিষ্কেরও এই সব বিষয় নিয়েই আলোচনা করতে পারেন। তার কোন বন্ধু ই-সিগারেটে আসক্ত কি না তাও জানতে চাইতে পারেন। আর অবশ্যই তার উপর আপনার বিশ্বাস স্থাপনের বিষয়টি তাকে বলতে পারেন।
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
1,591 total views, 1 views today