বিজ্ঞান প্রজেক্ট সহজে বানাতে বিজ্ঞানবাক্সের জুড়ি মেলা ভার!
একটি বিজ্ঞান প্রজেক্ট বানানোর জন্যে যা যা প্রয়োজন, তার সবি বিজ্ঞানবাক্সে দেয়া থাকে ।
প্রজেক্টের জন্যে প্রায় ৩০০+ Component শুরু করে, বিজ্ঞান প্রজেক্ট বই অর্থাৎ ম্যানুয়াল এবং যে কেউ যাতে খুব সহজেই বিজ্ঞানবাক্স গুলো থেকে প্রায় ১০০+ প্রজেক্ট বানিয়ে ফেলতে পারে, এই জন্যে ভিডিও টিউটোরিয়াল সিডি পর্যন্ত বিজ্ঞানবাক্সে দেয়া থাকে।
বিজ্ঞানবাক্স যদি কারো কাছে থাকে, বিজ্ঞান প্রজেক্টের আইডিয়া নিয়ে তাকে আরো কখনো মাথা ঘামাতে হবে না।
চলো শুরুতে বিজ্ঞানবাক্স কি এটা আমরা একটু জেনে নেই ।
তার পর পরি আমরা বিজ্ঞানবাক্স দিয়ে কিভাবে অনেক অনেক অসাধারণ অসাধারণ বিজ্ঞান প্রজেক্ট সহজেই বানিয়ে ফেলা যাবে সেটা দেখবো ।
এবং সবশেসে থাকবে বিজ্ঞানবাক্স থেকে বাছাই করে নেয়া ৪ টি অসাধারণ বিজ্ঞান প্রজেক্ট .
বিজ্ঞানবাক্স কী?
বিজ্ঞানবাক্স হচ্ছে এমন একটি বাক্স, যেটার ভেতর বিজ্ঞান প্রজেক্ট করার জন্যে বিভিন্ন Component দেয়া থাকে ।
প্রতিটা বিজ্ঞানবাক্স বিজ্ঞানের একেকটা থিওরিকে কেন্দ্র করে বানানো ।
যেমন তড়িৎ তাণ্ডব বিজ্ঞানবাক্স টি তড়িৎ বা Electricity বিষয় এর ওপর বানানো।
অর্থাৎ তড়িৎ তাণ্ডব বিজ্ঞানবাক্সের উপকরণ বা Component গুলো দিয়ে Electricity নিয়ে বিভিন্ন বিজ্ঞান প্রজেক্ট বানানো যাবে।
একই রকম করে রসায়ন রহস্য বিজ্ঞানবাক্স দিয়ে রসায়নের বিজ্ঞান প্রজেক্ট, শব্দ কল্প বিজ্ঞানবাক্স দিয়ে শব্দের উপর বিজ্ঞান প্রজেক্ট বানিয়ে ফেলা যাবে।
মোট বিজ্ঞানবাক্স আছে ৭টি
আলোর ঝলক, চুম্বকের চমক, তড়িৎ তাণ্ডব, শব্দ কল্প, রসায়ন রহস্য, অদ্ভুত মাপজোখ এবং Class 5 বিজ্ঞানবাক্স।
এগুলো সবগুলো মিলিয়ে প্রায় ৩০০ + Component আছে, যেগুলো দিয়ে প্রায় ৫০০+ বৈজ্ঞানিক প্রজেক্ট করা যাবে।
তুমি যদি এমনিতে বিজ্ঞান প্রজেক্ট বানাতে চাও, দেখা যাবে তোমাকে প্রথমের প্রজেক্টের আইডিয়া বের করতে হবে।
তার পর সেই আইডিয়া অনুযায়ী যন্ত্রপাতি খুঁজে বের করতে হবে।
বিজ্ঞানবাক্সের মজাটা হচ্ছে, এখানে বাক্সের ভিতরেই প্রজেক্টের জন্যে আইডিয়া, এবং সেই আইডিয়া অনুযায়ী প্রজেক্ট বানানোর জন্যে যন্ত্রপাতি দেয়া আছে।
যেমন ধরা যাক শব্দ কল্প বিজ্ঞানবাক্সটা যদি তুমি কেনো
তাহলে শব্দ সম্পর্কে বিজ্ঞান প্রজেক্ট করার জন্যে মোট ১৭ টি প্রজেক্ট আইডিয়ার বিস্তারিত তুমি পেয়ে যাবে।
বিস্তারিত বলতে বুঝাচ্ছি প্রজেক্ট কিভাবে বানাতে হবে, এবং প্রজেক্টের পিছনের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় দুটোই।
এখন চলো দেখে নেয়া যাক বিভিন্ন বিজ্ঞানবাক্স থেকে ৪ টি অসাধারণ বিজ্ঞান প্রজেক্ট ।
যেগুলো বানিয়ে তুমি যেকোণ বিজ্ঞান মেলায় অংশগ্রহণ করে তাক লাগিয়ে দিতে পারবে ।
বিজ্ঞান প্রজেক্ট আইডিয়া ১ ঃ ম্যাজিক মোটর
ম্যাজিক মোটর তড়িৎ তাণ্ডব বিজ্ঞানবাক্সের খুব মজার একটি এক্সপেরিমেন্ট। মোটর সম্পর্কে কম বেশি আমরা সবাই জানি। মোটর তড়িৎ শক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে পরিণত করে। মোটরে কারেন্ট দিলে মোটর সেই শক্তিকে ঘূর্ণন গতি শক্তিতে পরিণত করে। আমরা এখানে মোটর কিভাবে তৈরি করা যায় সেই এক্সপেরিমেন্টটি করবো।
বিজ্ঞান প্রজেক্ট আইডিয়া ১ ঃ ম্যাজিক মোটরএটি তৈরি করতে আমাদের লাগবে একটা রিং ম্যাগনেট, অন্তরিত তারের তৈরি একটি কয়েল, দুটি ক্রোকোডাইল ক্লিপ, ব্যাটারি এবং ব্যাটারি কেসিং। যার সবই তড়িৎ তাণ্ডব বিজ্ঞানবাক্সে আছে।
কয়েলের দুই প্রান্তের আবরণ উঠিয়ে নিতে হবে যাতে এর ভিতর দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হতে পারে। এটি বসানোর জন্য দুটি পেপার ক্লিপকে লম্বালম্বি করে দাঁড় করাতে হবে। এবার ব্যাটারি থেকে এই দুই ক্লিপে কানেকশন দিতে হবে যার ফলে এর ভিতর দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হতে শুরু করবে। আমাদের নিশ্চয় জানা আছে এই সলিনয়েড বা কয়েলের ভিতর দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হলে এটা তড়িৎ চুম্বকে পরিণত হবে। কানেকশন দেয়ার পর কয়েলের এক প্রান্ত হাত দিয়ে ঘুরিয়ে দিলেই মোটরটি ঘুরতে শুরু করবে এবং যতক্ষণ এর ভিতর দিয়ে কারেন্ট যাবে ততক্ষণ এটি ঘুরতে থাকবে।
আর এভাবেই অনেক বড় বড় কলকারখানায় অনেক বড়বড় মোটর দিয়ে যন্ত্রপাতি চালানো হয়।
বিজ্ঞান প্রজেক্ট আইডিয়া ২ চুম্বকের চমকের ম্যাগনেটিক সুইচ-
তোমরা নিশ্চয়ই সবাই জানো সুইচ দিয়ে লাইট বা ফ্যান অন অফ করতে হলে প্রথমে আমাদের সুইচের কাছে গিয়ে সুইচটাকে স্পর্শ করতে হয়। সুইচে চাপ দিয়ে লাইট অন করা যাবে অথবা অফ করা যাবে। কেমন হতো যদি হাতের কোন স্পর্শ ছাড়াই দূর থেকে একটি সুইচ অন অফ করা যেত? তাহলে আমরা দূর থেকেই একটি বাতিকে জ্বালাতে কিংবা নেভাতে পারতাম। এখন আমরা ঠিক এই কাজটা সম্পর্কেই জানবো। এই কাজটি করার জন্য আমাদের লাগবে একটা রিড সুইচ। এই সুইচটি আসলে একটি ম্যাগনেটিক সুইচ। যদি আমরা এই সুইচের কাছে একটি চুম্বক নিয়ে আসি তাহলে সুইচটা অন হয়ে যায় আর চুম্বকটাকে দূরে নিয়ে গেলে আবার অফ হয়ে যায়।
তো এই পরীক্ষাটি করার জন্য আমরা রিড সুইচকে ব্যাটারির সাথে কানেকশন দিব। তারপর তার সাথে আমরা একটি এলইডি যুক্ত করে দিব। এখন বিজ্ঞানবাক্সে থাকা ম্যাগনেটটাকে কাছে আনলেই এলইডি জ্বলে উঠবে আবার দূরে নিয়ে গেলে এলইডি নিভে যাবে। তারমানে এই রিড সুইচটা একটি সাধারণ সুইচের মতই কাজ করছে কিন্তু স্পর্শ করে চাপ দেয়ার বদলে চুম্বক ক্ষেত্রের সাহায্যে আমরা এটাকে অন করতে পারি আবার অফ করতে পারি। মজার না ব্যাপারটা? তো আসলে আমরা এই রিড সুইচকে কিভাবে ব্যবহার করতে পারি? এই রিড সুইচকে আমরা চুম্বক ক্ষেত্র নির্দেশক সেন্সর হিসেবে ব্যবহার করতে পারি। তাহলে এই সুইচ অন হওয়ার মাধ্যমে আমাকে জানান দিবে যে আশেপাশে চুম্বক ক্ষেত্র আছে কিংবা নাই। যদি থাকে তাহলে সুইচটা অন হয়ে যাবে আর যদি না থাকে তাহলে অফ হয়ে যাবে। অদ্ভুত না ব্যাপারটা!
বিজ্ঞান প্রজেক্ট আইডিয়া ৩ঃ পঞ্চম শ্রেণি বিজ্ঞানবক্সের সোলার প্যানেল
আচ্ছা তোমরা কি জানো আমরা শক্তি পাই কোথায় থেকে? আমরা শক্তি পাই সূর্য থেকে। তাহলে সূর্য থেকে যদি সরাসরি বিদ্যুৎ শক্তি পেতে চাই তাহলে কি লাগবে আমাদের? আমাদের লাগবে সোলার প্যানেল। আমরা এখন জানবো কিভাবে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন করা যায়।
এখন এই এক্সপেরিমেন্ট করতে আমাদের পঞ্চম শ্রেণির বিজ্ঞানবাক্স থেকে সোলার প্যানেল, হোয়াইট এল ই ডি মডিউল এবং রেড এল ই ডি মডিউল নিতে হবে। প্রথমে এই মডিউলে লাইটের কানেকশন দিতে হবে। এবার আমাদের একটি এল ই ডির সাথে সোলার প্যানেলের কানেকশন দিতে হবে। তবে খেয়াল করলে দেখা যাবে কানেকশন দেয়ার সাথে সাথে কিন্তু লাইট জ্বলবে না। তার মানে এখানে এখনো কোন বিদ্যুৎ নেই। এবার আমাদের ছোট্ট একটি কাজ করতে হবে। আর সেটা হলো সোলার প্যানেলের উপরের অংশে কোন লাইট বা সূর্যের আলো ফেলতে হবে। এবার দেখা যাবে ঠিকই এল ই ডি টা জ্বলে উঠলো।
যেহেতু আমাদের সোলার প্যানেলটা অনেক ছোট তাই এলইডি টাও জ্বলবে অনেক কম। আবার তোমরা একটা বিষয় খেয়াল করবে যে সোলার প্যানেলটা যদি উলটে দাও তাহলে সাথে সাথে লাইট বন্ধ হয়ে যাবে। তারমানে সোলার প্যানেলে যদি আলো পরে তবেই কিন্তু আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারব।
যদি আমরা আরও বড় একটা সোলার প্যানেল ব্যবহার করতে পারতাম তাহলে কিন্তু আমরা অনেক বেশি কারেন্ট ব্যবহার করতে পারতাম। তখন আমরা বড় বড় বাতি জ্বালাতে পারতাম। আমরা ফ্যান ঘুরাতে পারতাম। তো এই সোলার প্যানেল যত দিন বিদ্যুৎ পাবে ততদিন আমাদের কারেন্ট দিয়ে যেতে পারবে। এর জন্য কিন্তু আর কোন বাড়তি খরচ হবে না। এজন্যে এটাকে আমরা বলি নবায়নযোগ্য শক্তি।
বিজ্ঞান প্রজেক্ট আইডিয়া ৪ ঃ শব্দ কল্পের শব্দে শব্দে আলোর নাচ
আমরা তো সবাই শব্দ শুনি, কিন্তু শব্দ কি আমরা কেউ দেখেছি? শব্দ দেখার মজার একটা খেলা সম্পর্কে আমরা এখানে জানবো। আর এই এক্সপেরিমেন্টটি খুঁজে পাবে শব্দ কল্প বিজ্ঞানবাক্সে। এই এক্সপেরিমেন্ট করতে আমাদের লাগবে কাগজের তৈরি একটা টিউব। একটি খালি টিস্যু পেপারে রোলকে আমরা টিউব হিসেবে ব্যবহার করতে পারি। টিউবের মুখে একটা বেলুনের পর্দা লাগিয়ে নিতে হবে। একটা বেলুনকে কেটে টিউবের মুখে পরিয়ে দিলেই হবে। এবার এক টুকরা টেপ দিয়ে পেঁচিয়ে দিলেই বেলুনটা টানটান হয়ে থাকবে। এবার একটা কাঠপেন্সিলকে আমরা এই টিউবের সাথে টেপের সাহায্যে জুড়ে দিব। এই পেন্সিলের মাথায় একটা লেজার লাইটকে এমন ভাবে টেপ দিয়ে বসিয়ে নিতে হবে যাতে লেজার লাইটটা জ্বলে থাকে। লেজারের আলোটা যে বিন্দুতে পড়ে সেখানে আমরা ছোট্ট একটা আয়না বসিয়ে নিয়েছি। একটু আঠা কিংবা টেপের সাহায্যে চাইলে এই আয়নাটাকে বসিয়ে নেয়া যাবে। এবার আমরা এই টিউবের পেছনে যদি শব্দ করি তাহলে সেই শব্দের জন্য বেলুনের পর্দাটা কাঁপতে থাকবে এবং তার সাথে সাথে লেজারের আলোটাও কাঁপাকাঁপি শুরু করবে। এটা দেখেই বোঝা যাবে গলা দিয়ে যে শব্দ আমরা করি তার জন্য এর কম্পনটা কী ধরণের হয়। এখন শব্দ করলেই দেখা যাবে শব্দ অনুযায়ী লেজারের আলোটা কাঁপতে থাকবে এবং নানা রকম আলোর নকশা দেখা যাবে। তুমি চাইলেই কথা বলার সময় এটা মুখের উপর ধরে রেখে দেখতে পারো তোমার কথার তালে তালে এই লেজারের আলোটা কেমন করে নাচানাচি করে।
17,185 total views, 2 views today