১৮৯৫ সালে সুয়েডীয় বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেলের করে যাওয়া একটি উইল-এর মর্মানুসারে ও তার নামে নোবেল পুরস্কার প্রচলন করা হয়। গবেষণা, উদ্ভাবন ও মানবস্বার্থে অবদানের জন্য ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে নোবেল পুরস্কার প্রবর্তিত হয়। শান্তি, সাহিত্য, পদার্থ, রসায়ন ও চিকিৎসা সহ মোট পাঁচটি বিভাগে শুরুতে পুরস্কৃত করা হলেও ১৯৬৯ সাল থেকে অর্থনীতি সহ সর্বমোট ছয়টি বিভাগে পুরস্কার প্রধান করা হয়।

nobel-prize

নোবেল পুরস্কারকে বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার হিসেবে বিবেচিত করা হয় এবং পুরস্কারপ্রাপ্তদের নোবেল লরিয়েট বলা হয়। স্টকহোম, সুইডেনে এই পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান আয়োজন করা হলেও শুধুমাত্র শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয় অসলো, নরওয়ে থেকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য ১৯৪০ থেকে ১৯৪২ সাল পর্যন্ত টানা তিন বছর পুরস্কার প্রদান বন্ধ ছিল। পুরস্কারপ্রাপ্তদের প্রত্যেকে একটি স্বর্ণপদক, একটি সনদ ও নোবেল ফাউন্ডেশন থেকে কিছু পরিমান অর্থ পেয়ে থাকেন। ২০১২ সালে এই অর্থের পরিমান ছিল ৮০ লক্ষ্য সুইডিশ ক্রোনা। নোবেল পুরস্কার মৃত কাউকে দেয়া হয়না এবং লরিয়েটকে অবশ্যই পুরস্কার প্রদানের সময় জীবিত থাকতে হবে। কিন্তু খুব বেশী অবদানের জন্য মাঝেমধ্যে এর ব্যতিক্রম হয়ে থাকে। নোবেল পুরস্কারের দায়িত্বে আছে সুইডিশ অ্যাকাডেমি, সুইডিশ বিজ্ঞান অ্যাকাডেমি, নোবেল কমিটি অফ কারোলিন্সকা ইন্সিটিউট ও নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি

১ম পর্বের পর চলুন জেনে আসি ২০১৭ সালে নোবেল বিজয়ীদের কিছু তথ্য শেষ পর্ব-

সাহিত্যে কাজুয়ো ইশিগুরো

literature

একটি আদর্শিক জায়গা তৈরি করে সাহিত্যে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ১৯০১ সাল থেকে নোবেল সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করা হয়ে থাকে। সুইডিশ অ্যাকাডেমির পক্ষ থেকে এই পুরস্কার দেয়া হয়। বলা হয়ে থাকে নোবেল সাহিত্যের সবচেয়ে কলঙ্কিত দিক উপন্যাস ও নাটকের কিংবদন্তি লিও তলস্তয়হেনরিক ইবসেনকে এই পুরস্কার না দেয়া। কিন্তু সবচেয়ে দারুন ব্যাপার ২০১৬ সালে কিংবদন্তি সঙ্গীত শিল্পী বব ডিলানের সাহিত্যে নোবেল অর্জন। ফরাসী কবি সুলি প্রুধম সর্বপ্রথম ১৯০১ সালে সাহিত্যে নোবেল অর্জন করেন এবং ২০১৬ সাল পর্যন্ত ১১৩ জন সাহিত্যিক এই পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

আরও জানুন- শিশুদের জন্য শিক্ষণীয় ৫টি মজার টিভি সিরিজ

২০১৭ সালে সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন জাপানি বংশোদ্ভূত ব্রিটেনের লেখক কাজুয়ো ইশিগুরো। ১৯৫৪ সালে জাপানের নাগাসাকি শহরে জন্ম নেয়া এই লেখক সর্বমোট ৮টি বই লিখেছেন যা বিশ্বের ৪০টি ভাষায় অনূদিত হয়। ‘দি রিমেইনস অফ দি ডে’ উপন্যাসের জন্য তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন এবং একিই উপন্যাসের জন্য ম্যান বুকার পুরস্কার লাভ করেন। পরবর্তীতে এই উপন্যাস অবলম্বনে হলিউডে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। ১৯৮২ সালে তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘এ পেইল ভিউ অফ হিলস’ প্রকাশিত হয়। তাঁর কয়েকটি বিখ্যাত বই হলো নেভার লেট মি গো, অ্যান আর্টিস্ট অফ দি ফ্লোটিং ওয়ার্ল্ড, দি বেরিড জায়ান্ট, হোয়েন উই ওয়্যার অরফান। কাজুয়ো ইশিগুরো তাঁর চারটি উপন্যাসের জন্য চারবার ম্যান বুকার পুরস্কার অর্জন করেন।

চিকিৎসায় যুক্তরাষ্ট্রের তিন বিজ্ঞানী

 

চিকিৎসা বিজ্ঞানে অসাধারণ অবদানের জন্য প্রতিবছর সুইডেনের কারোলিন্সকা ইন্সিটিউট নোবেল পুরস্কার প্রদান করে থাকে। এই পুরস্কারের প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করে নোবেল ফাউন্ডেশন। সর্বপ্রথম ১৯০১ সালে জার্মান জীব বিজ্ঞানী এমিল ভন বেহরিং সিরাম থেরাপির জন্য নোবেল পুরস্কার গ্রহন করেন। প্রতিবছর ১০ ডিসেম্বর আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যু বার্ষিকীতে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পুরস্কার হিসেবে একটি সনদপত্র, একটি স্বর্ণপদক ও অর্থমূল্য প্রদান করা হয়।

আরও জানুন- শিশুদের জন্য শিক্ষণীয় ৫টি হলিউডের মজার সিনেমা

২০১৭ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিশেষ অবদানের জন্য নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের তিন বিজ্ঞানী জেফ্রি সি হল, মাইকেল রসবাসমাইকেল ডব্লিউ ইয়ং। সারকাডিয়ান রিদম নিয়ন্ত্রণে আণবিক প্রক্রিয়াগুলির আবিষ্কারের জন্য তাদের এই স্বীকৃতি দেয়া হয়। মানুষসহ সব প্রাণী ও উদ্ভিদের সব জীবিত কোষ যে সময়সূত্র মেনে চলে বিজ্ঞানীরা তাকে বলে সারকাডিয়ান রিদম বা দেহ ঘড়ি। মানুষের মনোভাব, হরমোনের মাত্রা, দেহের উষ্ণতা, ও সার্বিক বিপাকীয় কার্যাবলীর ওপর সারকাডিয়ান রিদমের বড় ধরনের প্রভাব রয়েছে। দেহের ভিতর লুকিয়ে থাকা অদৃশ্য ঘড়ি সময় মেনে দেহের সব কাজ সুশৃঙ্খলভাবে করে চলছে সেটাই প্রমান করেছেন তিন বিজ্ঞানী। নোবেল কমিটির মতে, জীবজগৎ পৃথিবীর আবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেয় দারুণভাবে। বিজ্ঞান জানে যে পৃথিবীর সকল প্রানির একটি বায়োলজিক্যাল ঘড়ি থাকে, যার মাধ্যমে দিনটি কেমন যাবে সেটা অনুমান করে দেহ মানিয়ে নেয়। এই বায়োলজিক্যাল কর্মপদ্ধতি ও এটি কিভাবে কাজ করে সেই বিষয়ে বিশদ ব্যাখ্যা দিয়েছেন জেফ্রি সি হল, মাইকেল রসবাস ও মাইকেল ডব্লিউ ইয়ং। গাছ, প্রাণী ও মানুষ কিভাবে পৃথিবীর আবর্তনের সঙ্গে তাদের জৈবিক ছন্দ মিলিয়ে নেয় সেটা এই তিন বিজ্ঞানীর আবিষ্কার দেখিয়েছে। প্রাণীর শরীর দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় বিভিন্ন তারতম্যের সঙ্গে মানিয়ে নেয়া ও দিন রাতের পরিবর্তনে আচরণগত ও শারীরিক স্তিতি নিয়ন্ত্রণের নেপথ্যে বায়োলজিক্যাল ঘড়ি কিভাবে কাজ করে তা দেখিয়েছেন এই বিজ্ঞানী ত্রয়ী। জেফ্রি সি হল ইউনিভার্সিটি অফ মাইনের শিক্ষক এবং মাইকেল রসবাস ও মাইকেল ডব্লিউ ইয়ং ব্রান্ডেইস ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করছেন।

রসায়নে ত্রিরত্ন 

chemistry

আলফ্রেড নোবেলের উইল অনুসারে যে পাঁচ শাখায় নোবেল দেয়ার কথা তার মধ্যে রসায়ন অন্যতম। নোবেল ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে ও রসায়ন নোবেল কমিটির পরামর্শে রসায়ন বিজ্ঞানে অসাধারণ অবদানের জন্য রয়্যাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স এই পুরস্কার প্রদান করে থাকে। প্রতিবছর ১০ ডিসেম্বর আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যু বার্ষিকীতে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ১৯০১ সালে নেদারল্যান্ডের জ্যাকবস হেনরিকাস ভ্যান্ট হফ সর্বপ্রথম রসায়নে নোবেল পুরস্কার গ্রহন করেন। পুরস্কার হিসেবে একটি সনদপত্র, একটি স্বর্ণপদক ও অর্থমূল্য প্রদান করা হয়।

আরও জানুন- ঢাকার জাদুঘর: সন্তানকে নিয়ে হারিয়ে যান আরেক জ্ঞানের জগতে (১ম পর্ব)

ক্রায়ো-ইলেকট্রন মাইক্রোস্কপি বিষয়ে গবেষণায় সাফল্যের জন্য ২০১৭ সালে রসায়নে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন সুইজারল্যান্ডের জ্যাকস ডোবেশেট, যুক্তরাষ্ট্রের জোয়াকিম ফ্রাংক ও যুক্তরাজ্যের রিচার্ড হ্যান্ডারসন। ক্রায়ো-ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপির মাধ্যমে জৈবিক অণুর পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যবেক্ষণ আগের চেয়ে অনেক বেশী সহজে করা যাবে। এই ত্রয়ীর উদ্ভাবনীর মাধ্যমে জীবদেহের জটিল সব কলকব্জা সম্পর্কে গভীরভাবে জানা সম্ভব হবে। ক্রায়ো-ইলেকট্রন মাইক্রোস্কপি প্রানরসায়নের ক্ষেত্রে বড় ধরনের অগ্রগতি নিয়ে আসবে। জীবদেহের আণবিক পর্যায়ের বহু কলকব্জার ছবি সম্পূর্ণভাবে পাওয়া সম্ভব ছিলনা। কিন্তু ক্রায়ো-ইলেকট্রন মাইক্রোস্কপি ঠিক এই জায়গাটি আমূল বদলে দিয়েছে। প্রাণরসায়নের পাশাপাশি জীবন রক্ষাকারী ওষুধ তৈরির গবেষণাতেও তিন বিজ্ঞানীর এই আবিষ্কার অবদান রাখতে সক্ষম।

আরও জানুন- নোবেল পুরষ্কার ২০১৭ এবং কিছু তথ্য (১ম পর্ব)

বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।

 1,350 total views,  1 views today

What People Are Saying

Facebook Comment