Show Categories

ঢাকার জাদুঘর: সন্তানকে নিয়ে হারিয়ে যান আরেক জ্ঞানের জগতে (১ম পর্ব)

ক্লাস সিক্সে পড়ুয়া ছাত্র মাহিনের মাথায় সবসময় অদ্ভুত প্রশ্ন খেলা করে। যেমন, গেল স্বাধীনতা দিবসে সে টিভির সামনে বসে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ দেখছিলো। হঠাত তাঁর মাথায় অদ্ভুত এক চিন্তা এসে ভর করলো- বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক- এই ভাষণটি ছাড়া নিশ্চই যুদ্ধকালীন আরো ছবি, ভিডিও তথ্য রয়েছে, সেগুলো কোথায় পাওয়া যাবে? তার এই প্রশ্ন এবং ভাবনা নিয়ে যখন তার বাবার সামনে উপস্থিত হল, তাঁর বাবা তাকে বললেন, শুধুমাত্র স্বাধীনতা যুদ্ধই নয়; আমাদের দেশের অভ্যুদয় থেকে শুরু করে, ইতিহাস, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য সবকিছুরই অনেক নিদর্শন জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে। যেমন, মাহিনের দেখতে চাওয়া মুক্তিযুদ্ধের ছবি, ভিডিওচিত্র এমনকি মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত অস্ত্রও সংরক্ষিত আছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এবং সামরিক জাদুঘরে।

বাবার কাছে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন নিদর্শনের ঠিকানা পেয়ে মাহিনের জাদুঘর সম্পর্কে আগ্রহ আরো বেড়ে গেল। তার শিশুসুলভ মনে আরো প্রশ্নের জন্ম নিলো। ঢাকায় কতটি জাদুঘর আছে? জাদুঘরে কি কেবল মুক্তিযুদ্ধের নিদর্শন প্রদর্শিত হয় নাকি এই সংগ্রহশালায় আরো কিছু আছে? জাদুঘরগুলো কোথায় আছে? একের পর এক এসব প্রশ্ন শুনে মাহিনের বাবা ঠিক করলো মাহিনকে নিয়ে প্রতি ছুটির দিনে ঢাকা শহরের জাদুঘরগুলো ঘুরে দেখাবে।

সন্তানকে সঠিকভাবে বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিল্প-সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা দিতে শুধু মুখে মুখে প্রশ্নের উত্তর দিয়ে খুব একটা কাজ হবেনা। বরং তাকে নিয়ে জাদুঘরগুলো ঘুরে আসলে এইসব প্রামাণ্য নিদর্শনগুলো মাহিন নিজ চোখে দেখতে পারবে এবং তার জ্ঞান বিকাশের ক্ষেত্রে বাস্তবিক প্রভাব পড়বে। সন্তানের কথা চিন্তা করেই মাহিনের বাবা মাহিনকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার জন্য ঢাকা শহরের কয়েকটি জাদুঘরের নাম লিস্ট করলেন এবং ছুটির দিনগুলোতে সন্তানকে নিয়ে হারিয়ে যান অন্য এক জগতের মাঝে।

চলুন দেখা যাক মাহিনের বাবা মাহিনকে নিয়ে কোন কোন জাদুঘর ঘুরে দেখেছিলেন

১. জাতীয় জাদুঘর শাহবাগ

শহরের প্রাণকেন্দ্র শাগবাগ মোড়ে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য় চারুকলা ইন্সটিটিউটের পাশেই জাতীয় জাদুঘর অবস্থিত। চারতলা ভবনের এই জাদুঘরে রয়েছে প্রায় ৩০ হাজার নিদর্শন এবং এসব নিদর্শনের প্রদর্শনীর জন্য রয়েছে ৪৫ টি গ্যালারি। জাতীয় জাদুঘরের কয়েকটি বিভাগ রয়েছে। নিদর্শন এবং ইতিহাসের উপর ভিত্তি করে  সাজানো এই বিভাগগুলো হচ্ছে-

  • ইতিহাস ও ধ্রুপদী শিল্পকলা,
  • সমকালীন শিল্পকলা ও বিশ্বসভ্যতা,
  • জাতিতত্ত্ব ও অলঙ্করণ শিল্পকলা,
  • প্রাকৃতিক ইতিহাস বিভাগ এবং
  • সংরক্ষণ গবেষণাগার।

পহেলা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ছাত্রছাত্রী এবং শিশুরা এখানে বিনা টিকেটে প্রবেশ করতে পারে। বৃহস্পতিবার ব্যতিত জাতীয় জাদুঘর সপ্তাহের অন্যান্য দিন সকাল সাড়ে নয়টা থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত খোলা থাকে। শুক্রবার খোলা থাকে সকাল ৯ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত।

২. মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, সেগুনবাগিচা

বাংলাদের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক এই জাদুঘরে যুদ্ধকালীন প্রায় দেড় হাজার স্মারক প্রদর্শিত হয়। কিন্তু এই জাদুঘরের সংগ্রহশালায় রয়েছে প্রায় পনের হাজার স্মারক। মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট, ইতিহাস এবং বাংলাদেশের জন্মলগ্নের বহু নিদর্শন জায়গা করে নিয়েছে এই জাদুঘরে। বুধবার ব্যতিত সপ্তাহের অন্যান্য দিনগুলো মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর খোলা থাকে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত। শীতকালে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫ টা। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে প্রবেশের জন্য টিকেট ৫ টাকা।

৩. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্মৃতি জাদুঘর

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্মৃতি জাদুঘর।

স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ধানমন্ডির ৩২ নাম্বার রোডের যেই বাড়িটিতে বসবাস করতেন, সেই বাড়িটিই এখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্মৃতি জাদুঘর। মাহিন যে প্রশ্ন নিয়ে বাবার কাছে গিয়েছিল সেই প্রশ্নের উত্তর এই জাদুঘরে গিয়েই পেয়েছিলো। ৭ই মার্চের ভাষনের মূল ড্রাফট এই ভবনের কনফারেন্স রুমে বসেই লেখা হয়েছিলো। বাংলাদেশের অভ্যুদয় এবং মুক্তিযুদ্ধে শেখ মুজিবর রহমান এবং তাঁর পরিবারের বিস্তৃত অবদান সম্পর্কে জানাতে হলে আপনার সন্তানকে নিয়ে ঘুরে আসুন জাদুঘরটিতে। ৫ টাকার টিকেটের বিনিময়ে সকাল ১০ টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত যাদুঘরে অবস্থান করা যাবে। তবে খেয়াল রাখবেন, বুধবার জাদুঘর বন্ধ থাকে

৪. জাতীয় সামরিক জাদুঘর

দেশ রক্ষা এবং মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর সম্পর্কে আপনার সন্তানকে সম্যক ধারণা দিতে চাইলে তাকে নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন ঢাকার বিজয় সরণীতে অবস্থিত জাতীয় সামরিক জাদুঘর থেকে। মূলত বাংলার আবহমান ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর ইতিহাস, ঐতিহ্য, উন্নয়ন এবং সফলতার প্রচারের লক্ষ্যে এই জাদুঘর নির্মাণ করা হয়েছিল। বুধবার এবং শুক্রবার ছাড়া সপ্তাহের বাকি পাঁচদিন কোন টিকেট ছাড়াই ঘুরে আসতে পারবেন এই জাদুঘর থেকে।

৫. জাতীয় বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি জাদুঘর

শিশুদের মনে যেসব প্রশ্ন নয়মিত খেলা করে তার অধিকাংশই ‘কী এবং কেন’ প্রকৃতির প্রশ্নই বেশি। তাদের এই কী এবং কেন’র উত্তর দিতে গেলে বেশিভাগ সময়েই বিজ্ঞান বিষয়ক জ্ঞান এবং তথ্যের দরকার হয়। তাই আপনার শিশুকে বিজ্ঞানভিত্তিক জাদুঘর প্রদর্শনে নিয়ে যাওয়া উচিৎ। তার বিজ্ঞনমনস্ক মনের বিকাশ এবং বহু প্রশ্নের উত্তর প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে, তাকে নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন ঢাকার আগারগাঁওতে অবস্থিত জাতীয় বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি জাদুঘরে। সামগ্রিকভাবে তো বটেই, বিজ্ঞানের উৎকর্ষতা সাধনে বাংলাদেশিদের অবদান সম্পর্কে জানতে পারবে আপনার সন্তান এবং পাশাপাশি বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাও পাবে। বৃহস্পতি এবং শুক্রবার ছাড়া সপ্তাহের বাকি ৫ দিন দর্শনার্থীদের জন্য জাতীয় বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি জাদুঘর খোলা থাকে সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত। টিকেট মূল্য ৫ টাকা।

জাদুঘর আসলে কোন নির্দিষ্ট গন্তব্য নয় জাদুঘর হচ্ছে অন্য একটা পৃথিবীর প্রবেশদ্বার সময়ের যানবাহনে চড়ে সেই পৃথিবী থেকে ঘুরে আসা যায় কোন দিক নেই, দুচোখ যেদিকে যায় সেদিকেই নতুন পৃথিবী

-জেরি সল্টজ

ছুটির দিনে নির্মল আনন্দের জন্য এবং সন্তানের সঠিক বেড়ে ওঠা নিশ্চিত করতে, সন্তানের সাথে আপনিও হারিয়ে যেতে পারেন জানা অজানার অন্য এক পৃথিবীতে।

আপনার সন্তানের জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি এবং মননশীল বিকাশের কথা চিন্তা করে তৈরি করা জাদুঘরের বিশেষ তালিকা থেকে আজ  জানালাম পাঁচটি জাদুঘরের আদ্যোপান্ত। এই পাঁচটি জাদুঘরের পর আগামী পর্বে থাকছে ঢাকাশহরের অবস্থিত আরো পাঁচটি জাদুঘরের বিস্তারিত।

বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।

 1,774 total views,  1 views today

What People Are Saying

Facebook Comment