টয়লেট বা ওয়াশরুমকে বলা হয় সবচেয়ে বেশি জীবাণুযুক্ত স্থান । কিন্তু আমাদের আশেপাশে এমনকি আমাদের ঘরেও এমন কিছু স্থান আছে যেখানে ওয়াশরুমের চেয়েও বেশি জীবাণু কিলবিল করে। এবং প্রতিদিনই কোন না কোন ভাবে আমরা এইসব জীবাণুর সংস্পর্শে আসি। যদিও সেখানে সব জীবাণু বা ব্যাকটেরিয়া আমাদের ক্ষতি করতে পারে না। কিন্তু শিশুদের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় জীবাণুযুক্ত স্থান এর সংস্পর্শে আসলে অনেক সময় শিশুরা বিভিন্ন ব্যাক্টেরিয়াজনিত অসুখে ভুগতে পারে। সেজন্য আপনার আশেপাশের জীবাণুযুক্ত স্থান চিনে রাখা ও এইসব স্থানের সংস্পর্শে আসার পর শিশুদের সাথে সাথে পরিচ্ছন্ন হয়ে নেয়া ও এইসব স্থান কিছু দিন পর পর ভালোভাবে পরিষ্কার করে নেয়া জরুরী। চলুন জেনে নেয়া যাক সেইসব স্থান কোনগুলো!
টুথব্রাশ হোল্ডার
টুথব্রাশ হোল্ডার আপনার ঘরের অন্যতম জীবাণুযুক্ত স্থান। তার উপর টুথব্রাশ হোল্ডার যদি টয়লেট বা বাথরুমের মধ্যে থাকে তাহলে সেখানে জীবাণু থাকার সম্ভাবনা ও পরিমাণও বেড়ে যায়। মূলত একটি হোল্ডারে অনেকগুলো টুথব্রাশ থাকার ফলে অনেকের হাতের জীবাণু একই স্থানের জড় হয়। আর টয়লেটের মধ্যে থাকলে টয়লেটের ফ্ল্যাশ ও টয়লেটের অন্যান্য কাজের সময় পানির ছিটকে পড়া ফোঁটার মাধ্যমে হোল্ডারে জীবাণু আসতে পারে। টুথব্রাশের জীবাণু থেকে সুরক্ষিত থাকতে টুথব্রাশ ধরার পর কুলি করার আগে হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে নেয়ার চেষ্টা করুন। প্রতি সপ্তাহে একবার করে গরম পানি দিয়ে টুথব্রাশ হোল্ডার পরিষ্কার করে ফেলতে পারেন।
পোষাপ্রাণী, পুতুল ও শিশুর খেলনা
শিশুরা পোষাপ্রাণীদের গা-ঘেষা হয়ে থাকে। আপনার বাসায় একটা পোষাপ্রাণী থাকা মানে আপনার সন্তানের বেশিরভাগ সময় এই পোষাপ্রাণীর সাথেই কাটবে। টেডি বিয়ার টাইপ খেলনার ক্ষেত্রেও একই। মূলত যে কোন খেলনার সাথেই শিশুদের সময়টা একটু বেশিই কাটে। কিন্তু পোষাপ্রাণী ও টেডিবিয়ার সহ অন্যান্য খেলনার মধ্যে ফিডো, ফিফো ও ই-কোলাই ভাইরাস থাকে। এরা খুব সহজেই পোষাপ্রাণী থেকে আপনার সন্তানের শরীরে চলে আসতে পারে। সেক্ষেত্রে পোষাপ্রাণী, তাদের খাবার পাত্র, টেডিবিয়ার বা অন্যান্য খেলনার সাথে সময় কাটানোর পর আপনার সন্তানের হাত ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিন। খেয়াল রাখুন, আপনার সন্তান যেন পোষাপ্রাণীকে চুমু না খায়।
বাড়ির উঠোন
গবেষণা বলছে, বাড়ির উঠোন বা বাড়ির আশেপাশের কাদামাটিতে যেসব ব্যাক্টেরিয়া থাকে সেগুলো শিশুদের জন্য কিছুটা উপকারী। সেজন্য শিশুদের কাদামাটিতে খেলার পরামর্শও দিয়ে থাকেন তারা। তবে কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকা একটু জরুরী। শিশুরা যেখানে খেলবে সে জায়গাটা যেন জীবাণুমুক্ত থাকে। গ্রামের দিকে বাড়ির আশেপাশের কিছু জায়গায় পশু-পাখি ও বিভিন্ন প্রাণীর মল থাকে বা আমাদেরই ফেলা বিভিন্ন ময়লা, আবর্জনার কারণে সেখানে ক্ষতিকর জীবাণু থাকতে পারে। সেজন্য বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে ও বাচ্চারা বাইরে থেকে খেলে আসলে তার পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
ফ্রিজ
ফ্রিজ সাধারণ খাবার ভালো রাখে। কিন্তু ফ্রিজে রাখা অনেক খোলা বস্তু বা খাবার থেকে অন্য খাবারে বা ফ্রিজের দেয়ালে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া সংক্রমিত হতে পারে। এরমধ্যে সেলমোনেলা, কম্পিলোব্যাক্টর ও নরোভাইরাস অন্যতম। শিশুদের পেটের সমস্যা ও ডায়রিয়ার জন্য এইসব ভাইরাসকেই দায়ী করা হয়। সেক্ষেত্রে নিয়মিত ফ্রিজ পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করুন। ফ্রিজে জিনিসপত্র সঠিকভাবে রাখুন। শিশু যেন ফ্রিজ থেকে কোন কিছু নিয়ে খাওয়ার আগে তা ধুয়ে নেয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
চিড়িয়াখানা ও পার্ক
চিড়িয়াখানায় বেড়াতে গিয়ে শিশুরা সাধারণতই চিড়িয়াখানার প্রাণীদেরকে স্পর্শ করে। ছুঁয়ে দেখে, তাদেরকে খাবার দেয়। করুক, তাতে কোন সমস্যা নেই। তবে চিড়িয়াখানা থেকে বেড়ানো শেষে গোসল করে ভালোভাবে পরিচ্ছন্ন হয়ে নিতে হবে। এবং হাত ধোয়া ছাড়া কোন কিছু খাওয়া যাবে না। চিড়িয়াখানার ভেতরে প্রাণীদের আশেপাশেও না খাওয়াই উত্তম। চিড়িয়াখানা ও পার্কের মতো জায়গায় প্রচুর মানুষ যাওয়ার ফলে এইসব স্থানে নানান রকম জীবাণু থাকার সম্ভাবনাও অনেক।
রান্নাঘরের মেঝে
বাসাবাড়ির মধ্যে রান্না ঘরের মেঝেতে কিছুটা বেশিই জীবাণু থাকে। আর শিশুরা মেঝেতে গড়াগড়ি করে খেলতেও পছন্দ করে। ঘরের অন্যান্য মেঝেতেও জীবাণু থাকলেও রান্না ঘরের মেঝেতে জীবাণু বেশি থাকায় রান্নাঘরের মেঝেতে শিশুদের খেলাধুলা না করাই উত্তম। আর বাসাবাড়ির অন্যান্য মেঝেতেও খেলাধুলা করার পর শিশুকে রোগ থেকে মুক্ত রাখতে পরিচ্ছন্ন করার দিকে নজর দিন।
জমে থাকা পানি
জমে থাকা পানি মানেই জীবাণুদের অভয়ারণ্য। বাড়ির আশেপাশে যেন কোনভাবেই পানি বেশিদিন জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখুন। ফুলের টব, ফ্রিজ, এসি, টায়ার ইত্যাদি যেসব জায়গায় পানি জমে থাকার সম্ভাবনা আছে সেগুলো নিয়মিত পরিষ্কার রাখুন। আর জমে থাকা পানি নিয়ে শিশুকে কোনভাবেই খেলতে দিবেন না।
স্কুল
গবেষণা বলছে স্কুলের পানির ট্যাপ, ঝর্না, টয়লেট এমনকি ক্যান্টিনের প্লাস্টিকের চেয়ার ও ট্রেতে স্কুলের অন্যান্য স্থানের চেয়ে বেশি জীবাণু থাকে। তবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করলে এইসব জীবাণু শিশুদেরকে তেমন আক্রমণ করতে পারে না। প্রতিটি স্কুলে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখার ব্যাপারে অনুরোধ করতে পারেন অথবা আপনি আপনার সন্তানকে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারে উৎসাহী করতে পারেন ও স্কুলে ব্যাগে তাকে একটা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিতেও পারেন।
শিশুদের শরীরেও থাকতে পারে জীবাণু
নাক খোটা, দাঁত কামড়ানো ইত্যাদির মাধ্যমে অনেক জীবাণু শিশুদের পেটে প্রবেশ করে শিশুদেরকে অসুস্থ করে দিতে পারে। সেক্ষেত্রে শিশুদের এইসব অভ্যাস থাকলে দূর করার চেষ্টা করুন। শিশুদের এই ধরণের কোন কিছু চোখে পড়লে তার হাত ধুইয়ে দিন, এবং এইসকল কাজ করার পর শিশুকেই হাত ধোয়ার কথা ভালোভাবে বুঝিয়ে বলতে পারেন। শুধুমাত্র এই সাবধানতাই আপনার শিশুকে ঠান্ডা, ফ্লু ও সংক্রামক বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি দিতে পারে।
আরো পড়ুন-রোগ-বালাই থেকে মুক্ত থাকতে শিশুর ১১ টি ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি।
সবসময় আপনি চাইলেও শিশুদের সব ধরণের জীবাণুযুক্ত স্থান থেকে দূরে রাখতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে সতটুকু সম্ভব জীবাণুযুক্ত স্থান ভালোভাবে পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করতে পারেন ও কোনভাবে শিশু এইসব স্থানের সংস্পর্শে আসলে তাকে ভালোভাবে পরিচ্ছন্ন করে নিতে পারেন। সূত্র-ওয়েবএমবি, দ্য বাম্প।
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
1,619 total views, 1 views today