আমরা যখন মানুষের মস্তিষ্কের ক্ষমতা নিয়ে ভাবি বা আলাপ করি তখন সাধারণভাবে মনে করি বুদ্ধিমত্তা আর জ্ঞানই হচ্ছে মস্তিষ্কের ক্ষমতা। কিন্তু সাইকোলজিস্টরা বলেন অন্য কথা। বিশেষ করে যখন শিশুদের প্রসংগ আসে-তাদের জীবনের প্রয়োজনীয় দক্ষতা শিখতে যা কাজে লাগে তা হচ্ছে এক্সিকিউটিভ ফাংশন, যাকে আমরা বলতে পারি কাজ বাস্তবায়ন করার ক্ষমতা। এটিকে বিশ্লেষণ করলে কয়েকটি জিনিস আমরা দেখতে পাব-

মনোযোগ

নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা

কার্যকরী স্মৃতিশক্তি

পরিকল্পনা

বাচ্চাদের এইসব ক্ষমতা শুধু স্কুলের ফল ভাল করার জন্য দরকারী নয়, এটি তাদের জীবনে সফল হওয়ার জন্য আবশ্যক।

যেমন নিজেকে নিয়ন্ত্রন করার ক্ষমতা সম্পর্কেই বলা যায়, কিছু পরীক্ষায় দেখা গেছে, সেসব শিশুরা তাদের প্রিয় কোন খাবার সামনে রেখে আরো বেটার কোন অপশনের আশায় ২০ মিনিট নিজেকে ধৈর্য ধরতে পারে তারা বড় হয়ে ক্যারিয়ারে অন্যদের চেয়ে ভাল করে। বাচ্চাদের আইকিউ হয়ত পরিবর্তন করা যায় না, কিন্তু তাদের ফোকাসিং করার ক্ষমতা আর ধৈর্য ধারণের ক্ষমতা বাড়ানো যায় পরিকল্পিত উপায়ে।

বাচ্চাদের বা বলা যায় মানুষের অনেক কিছুই প্রাকৃতিকভাবে পেয়ে থাকে ,কিন্তু এইসব এক্সিকিউটিভ ফাংশন ছোটবেলায় ট্রেনিং এর মাধ্যমে অর্জন করা সম্ভব হতে পারে। এই গুলোর উদ্দেশ্য বাচ্চাকে “অনুগত” বানানো নয়, যেখানে সে শুধু বসে বসে লেকচার শুনবে, বরং এই ধরণের নার্চারিং করা হয় যাতে তারা নিজেদের সমস্যা নিজেরাই সমাধান করতে পারে। কিছু কিছু খেলার মাধ্যমে বাবা-মায়েরাই বাচ্চাদের এইরকম প্রয়োজনীয় নার্চারিং করতে পারেন। মনোবিজ্ঞানীদের প্রস্তাবিত এরকম কিছু খেলার উল্লেখ এখানে দেয়া হল যেগুলো বাচ্চাদের এক্সিকিউটিভ ফাংশন বাড়িয়ে তুলে।

১। গল্প  বলা

গল্প শোনায় দীর্ঘ সময় মনোযোগ ধরে রাখতে হয়। এর ফলে শিশুদের মস্তিষ্কের কিছু অংশের উন্নতি হয়। ছবিওয়ালা গল্পের বই পড়ার চেয়েও গল্প শোনা বেশি কাজে দেয়। গল্প শোনার সময় এর চরিত্রগুলো ও পূর্বের ঘটনা মনে রাখতে হয় এবং নতুন কোন ইনফরমেশন পেলে সেটার সাথে গল্পের শোনা অংশের সম্পর্ক তৈরি করতে হয়। ফলে শিশুদের মস্তিষ্ককে খুব চমৎকার ও সৃজনশীলভাবে খাটানো যায়।

২। বাধা-বিপত্তি জয়

যেসব খেলার মধ্যে নানারকম বাঁধা বিপত্তি জয় করার ব্যাপার থাকে সেগুলো শিশুদের মানসিক বিকাশে সহায়ক। যেমন টানেলে ঢোকা, বা চিহ্ন ধরে কিছু খুঁজে বের করা ইত্যাদি। এইসব খেলার মাধ্যমে শিশুরা নানান চ্যালেঞ্জের সাথে পরিচিত হতে পারে।

এই ধরনের খেলার মাধ্যমে শিশুরা  শারিরীকভাবে এক্টিভ হয়ে থাকে এবং মস্তিষ্ক ও শরীরের সংযোগ ঘটাতে শিখে।


আরো পড়তে পারেন –  
বাচ্চাদের খেলনা কীভাবে তাদের সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী করে তোলে!

৩। সময় নির্ধারণ

শিশুরা কোন সময় কতটুকু তা বুঝতে পারে না, যেমন তাকে বলা হল ১ ঘন্টা অপেক্ষা কর তারপর আমরা বেড়াতে বের হব,সে আসলে জানে না ১ ঘন্টা কতটুকু সময়। তাই বার বার ঘ্যান ঘ্যান করে আপনাকে বিরক্ত করবে। তাই একটি কাজ করা যেতে পারে –শিশুর হাতে একটি ঘড়ি ধরিয়ে দিয়ে বলা যেতে পারে সময় কাউন্ট-ডাউন্ট করতে।

এর মাধ্যমে আপনার শিশু সময়ের ব্যাপারে সচেতন হবে এবং নিজে নিজে প্ল্যান করা শিখবে।

৪। অজানা অনুমান

কিছু পরিচিত খেলনা যেমন প্লাস্টিকের জন্তু ইত্যাদি একটি ব্যাগে রাখুন। তারপর শিশুকে বলুন বাইরে থেকে সেটা হাতে একটা লাঠি দিয়ে নেড়ে চেড়ে অনুমান করতে দিন সেটা কি বস্তু।

এই খেলার মাধ্যমে শিশুদের স্মৃতিশক্তির চর্চা হয় ,পাশাপাশি কোন প্রাণী দেখতে কেমন সেটা খোঁজতে যেয়ে সংবেদনশীলতারও চর্চা হয়।

৫। রান্না-বান্না

বাচ্চাদের কে সহজ কোন খাবার বানাতে  বলতে পারেন, বিশেষ করে তাদের প্রিয় কোন খাবার। বা রান্নার অংশ কঠিন হলে তাদেরকে রান্নার আগে প্রসেসিং এর কাজে লাগাতে পারেন।

রান্নাবান্নার কাজে জড়িত থাকলে শিশুরা প্ল্যান অনুযায়ী কাজ করতে শিখে। তার সাথে প্ল্যান অনুযায়ী কোন কাজের পর কি করতে হবে ,কি কাজের ফলে কি রেজাল্ট হলো এসব পর্যবেক্ষণ করতে শিখে।

এই রকমের এক্টিভিটি আসলে বাচ্চাদের নিজের মনকে ম্যানেজ করতে শিখায়, ডিসিপ্লিন্ড হতে শেখায়। বাচ্চারা যখন একেবারে ছোট থাকে তখন তারা ইমোশনাল সিগনালের মাধ্যমে শিখে। সব বাবা-মাই এই ব্যাপারটার সাথে পরিচিত। যখন কোন শিশু কিছু একটা দেখে এক্সাইটেড হয়,সেটার দিকে আঙ্গুল উচিয়ে বাবামাকে দেখাতে চায়, বাবামাও সেটা দেখে অবাক হওয়ার ভান করেন, তারপর শিশুকে সেটার সম্পর্কে বোঝানোর চেষ্টা করেন। এভাবে ইমোশনের আদান প্রদানের ফলে বাচ্চারা কৌতুহলী ও সৃজনশীল হয়।

বাচ্চারা ভয় পেলে বা কাদলে বাবামায়েরা যখন তাদের কান্না থামাতে চেষ্টা করেন, জড়িয়ে ধরেন সেটাও বাচ্চাদের শেখার ক্ষমতা বাড়ায়। এভাবে বাবামায়েরা বাচ্চাদের নেগেটিভ ইমোশন ম্যানেজ করেন। এর ফলেও বাচ্চারা আস্তে আস্তে নিজেদের ইমোশন নিয়ন্ত্রণ করতে শিখে।

বাচ্চাদের এইরকম এক্সকিউটিভ ফাংশন এর জন্য উপযোগী করে তোলা কোন ইদুরদৌড় নয়। এগুলোর ফল পাওয়া যাবে  ধীরে ধীরে সময় নিয়ে। বাচ্চাদের সাধারণ অনেক সমস্যা যেমন কেউ কেউ একটু অলস বা একটু রগচটা বা একটু বেশি সংবেদনশীল তাদের সমস্যাগুলো এই ধরণের এক্টিভিটি দিয়ে সারিয়ে তোলা সম্ভব।

বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।

 1,634 total views,  1 views today

What People Are Saying

Facebook Comment