Show Categories

অদম্য বিজ্ঞানীরা; রোগ আর সীমাবদ্ধতা থামিয়ে দিতে পারেনি যাদের

অদম্য বিজ্ঞানীরা

তোমাদেরকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, তোমাদের প্রিয় বিজ্ঞানী কে, তোমরা অনেকেই কিন্তু টমাস আলভা এডিসন, আলবার্ট আইন্সটাইন, আইজ্যাক নিউটন, আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল, স্টিফেন হকিং-এর নাম বলবে। কিন্তু, তোমরা কি জানো, আমাদের অদম্য বিজ্ঞানীরা অনেকেই ছোটবেলায় শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন জটিল সমস্যায় ভুগতেন। অবাক হচ্ছো! সত্যি সত্যি স্কুলে তোমার পাশের সিটে বসা একটু অন্যরকম বন্ধুটির মতোই আমাদের প্রিয় অদম্য বিজ্ঞানীরা অনেক সমস্যায় ভুগতেন! কিন্তু তারা সেই সমস্যাগুলোকে জয় করে তাদের অবাক করা বিভিন্ন আবিষ্কারের মাধ্যমে আমাদের পৃথিবীকে সহজ ও সুন্দর করে দিয়েছেন। চলো আজকে আমরা আমাদের প্রিয় বিজ্ঞানীদের ছোটবেলার সে সময় ও সমস্যার কথা জেনে নিই।

টমাস আলভা এডিসন
নামটা দেখে প্রথমে কী মাথায় আসছে বলো তো! আমার মাথায় যা আসছে, নিশ্চই তোমার মাথায়ও তাই আসছে! হ্যাঁ, আমাদের রুমে জ্বলতে থাকা বৈদ্যুতিক বাতি। বৈদ্যুতিক বাতি আবিষ্কার করে বিখ্যাত হয়েছেন আমাদের প্রিয় এডিসন। তোমরা তো জানো, ছোটবেলায় তাকে স্কুল থেকে বের করে দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু এটা কি জানো, ছোটবেলায় উনি দুই কানেই কম শুনতেন! হ্যাঁ, ছোটবেলায় একবার ওনার অনেক জ্বর হয়েছিলো, সেই জ্বরের পর থেকে উনি দুই কানেই কম শুনতেন। বড় হতে হতে উনি একপ্রকার বধির হয়ে যান। ছোটবেলায় এটা নিয়ে উনি অনেক সমস্যায় পড়লেও ওনার আবিষ্কারের নেশা কিন্তু থেমে থাকে নি।

আলবার্ট আইনস্টাইন
এই ভদ্রলোককেতো সবাই চেনো। আপেক্ষিক তত্ত্ব বা থিওরি অব রিলেটিভিটির ধারণা দিয়ে উনি কেমন বিখ্যাত হয়ে গিয়েছেন। মহাবিশ্বে আলো প্রতি সেকেন্ডে ২৯ কোটি ৯১ লাখ ৯২ হাজার ৪৫৮ মিটার পর্যন্ত যেতে পারে এবং আলোর চেয়ে বেশি গতি এই মহাবিশ্বে আর কোন বস্তুর নেই। এই তত্ত্বের আবিষ্কারকই আলবার্ট আইনস্টাইন। কিন্তু জানলে অবাক হবে, আইনস্টাইনেরও ছোটবেলায় ডিসলেক্সিয়া রোগ ছিলো। উনি ছোটবেলায় অনেক কিছু ঠিকমতো বুঝতে পারতেন না। কিন্তু এটা ওনাকে থামিয়ে রাখতে পারেনি। উনি ১৯২১ সালে পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কারও পান।

স্টিফেন হকিং
হুইল চেয়ারে বসা একজন মানুষ, সামনে কম্পিউটার স্ক্রিন, চোখে পাওয়ারফুল চশমা, কথা বলেন কম্পিউটারের মাধ্যমে! মাত্র ২১ বছর বয়স থেকেই হকিং মোটর নিউরন রোগে আক্রান্ত হয়ে পেশিশক্তি হারিয়ে চলাচলে অক্ষম হয়ে পড়েন। অথচ এই লোকটাই কিনা বিংশ ও একবিংশ শতাব্দীর অন্যতম সেরা মেধাবী ও বিজ্ঞানী। বিশ্ববিখ্যাত কেম্ব্রিজ ও অক্সফোর্ড দুটো বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়াশোনা করেছেন তিনি। গবেষণা করেছেন মহাবিশ্বতত্ব নিয়ে। আর বিখ্যাত হয়েছেন কৃষ্ণগহ্বর তত্ব দিয়ে। লিখেছেন ‘A Brief History of Time; From The Big Bang to Black Holes’ নামের বই। বাংলাতে যাকে ‘কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস’ বলা হয়। এই বই বিক্রি হয়েছে এক কোটি কপিরও বেশি। তাকে নিয়ে কিন্তু ‘থিওরি অব এভ্রিথিং’ নামে একটা সিনেমাও আছে।

লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি
একজন মানুষের কথা চিন্তা করো, যিনি অসাধারণ ছবি আকেঁন, তিনিই আবার ইঞ্জিনিয়ার, স্থাপত্য শিল্পে রয়েছে বিশেষ দখল, গণিতবিদ,  আবার থ্রিডি পেইন্টিংও জানেন,  তিনি আবার ভালো লিখতেও পারেন! কী? অবাক লাগছে? মনে হচ্ছে ইনি তো সুপারম্যান ছাড়া আর কেউ না! কিন্তু ইনি সুপার ম্যান না। উনি আমাদের মতই একজন রক্ত মাংসের মানুষ। ইনিই লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি। তোমরা আরো অবাক হবে যখন জানবে লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি জন্মেছিলেন ডিসলেক্সিয়া রোগ নিয়ে। অরবিল রাইট ও উইলবার রাইট সর্বপ্রথম উড়োজাহাজ আবিষ্কার করলেও উড়োজাহাজের ডিজাইন কিন্তু করে গেছেন লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি।

আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল
তোমাদের সবার ঘরেই তো টেলিফোন আছে! মোবাইল আসার আগে টেলিফোনই ছিলো দূরের কারো সাথে সহজে কথা বলার মাধ্যম। টেলিফোনে যখন তোমার বন্ধুর কাছ থেকে হোমওয়ার্কের কথা জেনে নিচ্ছো তখন কী মনে হয়েছে, এই অদ্ভুত জিনিস কে আবিষ্কার করেছে? তাহলে শোন, এই অদ্ভুত জিনিস যিনি আবিষ্কার করেছেন উনি কিন্তু ছোটবেলায় লার্নিং ডিসেবিলিটিতে ভুগতেন। পড়া বুঝতেন না। তার উপর আবার তাঁর মা ছিলেন বাকশক্তিহীন। কিন্তু গ্রাহাম থেমে থাকেন নি। নিজের সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে উনি টেলিফোন আবিষ্কারের মাধ্যমে পৃথিবীকে এগিয়ে দিয়েছেন অনেক। তার মা ও স্ত্রী বাকশক্তিহীন থাকার ফলে উনি বাক প্রতিবন্ধীদের সাংকেতিক ভাষা শিখতে গিয়ে এতটাই পারদর্শী হয়ে গিয়েছিলেন যে, উনি একসময় তাদের সাংকেতিক ভাষার ট্রেনিং করানো শুরু করেছিলেন।

বন্ধুরা, এই বিজ্ঞানীদের এই অবাক করা তথ্যগুলো জেনে কী মনে হচ্ছে? এই অদম্য বিজ্ঞানীরা আসলেই কিছু করার ক্ষুধা থাকলে কোন সীমাবদ্ধতা কাউকে থামিয়ে দিতে পারে না। আর তোমাদের স্কুলে এমন সমস্যার যে বন্ধুরা রয়েছে তাদেরকে কোন ভাবেই ছোট করে দেখা যাবে না। তারাও তোমাদেরই মতো মেধাবী। হয়তো তোমার এমন বন্ধুদের কেউ কেউ হয়ে যাবে ভবিষ্যত বিজ্ঞানী। আর তুমিও কিন্তু লেগে থাকো। এক্সপেরিমেন্ট করো বিজ্ঞানবাক্স নিয়ে আর আবিষ্কার করো নতুন নতুন প্রযুক্তি।

বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। 

তথ্যসূত্র-Mentalfloss

 1,784 total views,  1 views today

What People Are Saying

Facebook Comment