১৮৯৫ সালে সুইডিশ রসায়নবিদ ও বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেল তার একটা উইলে সারাবিশ্বে যথাক্রমে চিকিৎসাবিদ্যা, পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যা, সাহিত্য ও শান্তিতে অবদানের জন্য একটা পুরস্কার প্রদানের ঘোষণা দিয়ে যান। এই পুরস্কারটি নোবেল পুরস্কার হিসেবে পরিচিত। ১৯৬৮ সালে সুইডিশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের ৩০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে নোবেল ফাউন্ডেশনকে একটা বিরাট অংকের অর্থ অনুদান দেন নতুন একটা পুরস্কার প্রদানের জন্য। সেই ধারাবাহিকতায় নোবেল কমিটি তার পরের বছর থেকে পূর্বের ৫ টি পুরস্কারের সাথে অর্থনীতিতে নোবেল দেয়ার মাধ্যমে মোট ৬ টি শাস্ত্রে নোবেল প্রদান করে যাচ্ছেন। ১৯০১ সাল থেকে প্রায় প্রতি বছরই এইসব শাস্ত্রে অবদানের জন্য নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হচ্ছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪০ সাল থেকে ১৯৪২ সাল পর্যন্ত এই পুরস্কার স্থগিত ছিলো। নোবেল পুরস্কারকে বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। নোবেল পুরস্কার তাঁদেরকেই দেয়া হয় যাঁরা নতুন নতুন আবিষ্কারের মাধ্যমে পৃথিবীকে বদলে দিতে সাহায্য করেন। সেজন্য যাঁরা নোবেল পুরস্কার পান তাদেরকে নোবেল লরিয়েট বলা হয়। বাংলাদেশ থেকে ২০০৬ সালে গ্রামীন ব্যাংক ও গ্রামীন ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়।
আসুন জেনে নেই ২০১৯ সালে কোন কোন অবদানের জন্য কারা কারা পেলেন এই সম্মানজনক পুরস্কার।
মহাবিশ্ব নিয়ে গবেষণার জন্য পদার্থে নোবেল
মহাবিশ্ব নিয়ে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। মহাবিশ্বের উৎপত্তি, এর বিকাশ ও ভবিষ্যত নিয়ে পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে চলেছেন যুগ যুগ ধরে। আর পৃথিবীর বিকল্প গ্রহ আবিষ্কারের জন্য মরিয়াও হয়ে আছেন সবাই। এবার পদার্থ বিজ্ঞানের নোবেলও গেলো মহাবিশ্ব গবেষকদের হাতে।
বিগ ব্যাং, পৃথিবীর উৎপত্তি পরে ধীরে ধীরে মহাবিশ্ব ও পৃথিবী একটি চলমান প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। মানুষ এই চলমান প্রক্রিয়া সম্পর্কে সবসময় কৌতূহলী ছিলো! ধীরে ধীরে পৃথিবীও মানুষের বসবাসের উপযোগী হয়েছে। এই মহাবিশ্বের বিশালতার তুলনায় আমাদের জানার পরিধি যদিও অনেক কম। কিন্তু মহাবিশ্বের রহস্য সম্পর্কে আমাদের ধারণা দিনে দিনে আরো বেশি সমৃদ্ধ হচ্ছে। ১৯৬০ সাল থেকে জেমস পেবলস কাজ করছেন মহাবিশ্ব নিয়ে। সেখানে নতুন সফলতাও যোগ করেছেন জেমস পেবলস। মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের ধারণাকে আরো সমৃদ্ধ ও তাত্ত্বিকভাবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ কিছু ধারণা দেয়ার পুরস্কার স্বরূপ এবার পদার্থ বিজ্ঞানের নোবেলের অর্ধেকটা গিয়েছে এই বিজ্ঞানীর ঝুলিতে।
অপর দুই বিজ্ঞানী মিশেল মেয়র ও ডিডিয়েল কুয়িলজ সৌর জগতের বাইরে নতুন একটি গ্রহ আবিষ্কারের জন্য পদার্থ নোবেলের বাকি অর্ধেকের জন্য মনোনীত হয়েছেন। 51 Pegasi b নামের এই গ্রহটি সৌর জগতের বাইরে সূর্যের মতো অন্য একটি নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘুরছে।
এই তিন বিজ্ঞানীর এই আবিষ্কার মহাজগত সম্পর্কে জানার ক্ষেত্রে আমাদেরকে আরো বেশি সাহায্য করবে ও নতুন সম্ভাবনাময় পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
জেমস পেবলস কাজ করছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটিতে। সুইজারল্যান্ডের জেনেভা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষক ও শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন মিচেল মেয়র। অপর বিজ্ঞানী ডিডিয়েল কুয়িলস কাজ করেন জেনেভা বিশ্ববিদ্যালয় ও ইংল্যান্ডের ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে।
বৈশ্বিক দারিদ্রতা দূরিকরণে অবদানের জন্য অর্থনীতির নোবেল
সারাবিশ্ব ব্যাপী দরিদ্রতা একটা বিশেষ সমস্যা। আর এই বৈশ্বিক দরিদ্রতা সমাধানে বেশ কিছু পরীক্ষামূলক গবেষণার জন্য ২০১৯ সালে অর্থনীতিতে নোবেল পেলেন বাঙ্গালী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ ব্যানার্জি, মার্কিন অর্থনীতিবিদ এস্তার দুফলো ও মাইকেল ক্রেমার। অভিজিৎ ব্যানার্জি ও এস্তার দুফলো কর্মরত আছেন আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয় এমআইটি-তে। সম্পর্কে তারা দু-জন স্বামী-স্ত্রীও। অপর অর্থনীতিবিদ মাইকেল ক্রেমার কাজ করেন আমেরিকান অন্য এক বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই তিনজনের গবেষণা বিশ্বব্যাপী দারিদ্রতার সাথে লড়াই করতে আমাদেরকে অনেক সহযোগিতা করবে।
শান্তিতে নোবেল ইথিওপিয়ান প্রধানমন্ত্রীর
প্রতিবেশী দেশ ইরিত্রিয়ার সাথে ২০ বছর ধরে সীমান্ত যুদ্ধ চলছিলো ইথিওপিয়ার। ২০১৮ সালে ক্ষমতায় আসার পরই ইথিওপিয়ান প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ এই সমস্যা নিরসনে উদ্যোগী হন। অনেক আলোচনার পর ২০১৮ সালের ৯ জুলাই সীমান্ত যুদ্ধ বন্ধের জন্য ইরিত্রিয়ার সাথে ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তি করেন ইথিওপিয়ান প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ। এর ফল স্বরূপ ২০১৯ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন আবি আহমেদ। শান্তি চুক্তির পাশাপাশি বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় আবি আহমেদ-এর অবদান ও সহযোগিতার কথাও উল্লেখ করেন নোবেল কমিটি।
সাহিত্যে নোবেল পেলেন অস্ট্রিয়ান সাহিত্যিক পিটার হ্যান্ডকে
নানান বিতর্কে ২০১৮ সালের সাহিত্যে নোবেল স্থগিত ছিলো। তবে এবার একই সাথে ২০১৮ ও ২০১৯ সালের জন্য সাহিত্যে নোবেল বিজয়ীর নাম ঘোষণা করেন নোবেল কমিটি। অস্ট্রিয়ান সাহিত্যিক পিটার হ্যান্ডকে ২০১৯ সালের সাহিত্যে নোবেল পান। সাহিত্য কর্মে ভাষা ব্যবহারের সৌন্দর্যের জন্য ও মানবিক অভিজ্ঞতার প্রান্তিক এবং সুনির্দিষ্টতা উন্মোচনের ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি এই পুরস্কারে ভূষিত হন। ২০১৮ সালে স্থগিত থাকা সাহিত্যের নোবেলও দেয়া হয়ে এই বছর। পোল্যান্ডের লেখক ওলগা তোকার্তুক পান এই পুরস্কার। মানব জীবনের নানা সীমা-পরিসীমা তুলে ধরা ও কল্পনার তুলিতে নিজের লেখায় সেসব সীমা অতিক্রমের গল্প তুলে ধরার জন্যই পোল্যান্ডের এই লেখক নোবেল অর্জন করেন।
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
1,071 total views, 1 views today