দুরন্ত বাচ্চাকে কথা শোনাতে, বাধ্য আচরণ করাতে কিংবা নিয়মের মধ্যে রাখতে সবসময়ই শাসন করেন। কখনো কি ভেবে দেখেছেন এই অতিরিক্ত শাসন আপনার সন্তানের জন্য সুফল না কুফল বয়ে আনছে? শাসনের বেড়াজালে আবদ্ধ করে রাখলেই সন্তান আদর্শ মানুষ হয়ে বেড়ে উঠে না। বরং আপনার রুক্ষ রূপ ও আচরণ তার সাথে আপনার দূরত্ব আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। সে মানসিকভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছে এবং পাশাপাশি তার মননশীলতার বিকাশও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
এক্ষেত্রে ভেবে দেখেছেন কি আপনার অজান্তেই আপনি তার কতটা ক্ষতি করে চলেছেন! আপনার সন্তানের অন্যায় আচরণের জন্য তাকে আপনি সীমিত শাসন করতেই পারেন। তবে তা যেন কখনোই মাত্রা ছাড়িয়ে না যায়। সব সময় শাসনের ভাষা দিয়ে সব ঠিক করা যায় না। বরং ভালবাসা আর মমতা দিয়েও বখে যাওয়া সন্তানকে পথে আনা যায়।
অতি শাসন আপনার সন্তানের উপর যেসব ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে, একটু দেখে নিনঃ
১। মানসিক বিকাশের পথ রুদ্ধ করে দেয়
অতি শাসন বাচ্চাদের সাবলীল বিকাশের পথ রুদ্ধ করে দেয়। তার সৃজনশীলতা বিকশিত হওয়ার ক্ষেত্রে বাঁধা সৃষ্টি করে থাকে। সে হীনম্মন্যতায় ভোগে এবং যেকোন বিষয়েই সিদ্ধান্ত নিতে ভয় পায়। অনেকসময় অনেক শিশু হতাশায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে।
২। বাচ্চা ভীরুতা নিয়ে বেড়ে উঠে
অনেকসময় অতিরিক্ত শাসনের ভয় বাচ্চাকে ভীতু বানিয়ে দিচ্ছে। সে সারাক্ষণ ভয়ে ভয়ে কাটানোর ফলে ভীরুতা নিয়ে বেড়ে উঠছে। এছাড়াও আপনার প্রতি তার বিরূপ ধারণা জন্ম নিচ্ছে।
৩। বেশি একরোখা আচরণ করে
অনেক সময় অতি শাসনে শিশু বখে যায়। অবাধ্য আচরণ বেড়ে যায়। জেদ করে একরোখা হয়ে গড়ে উঠে। সে কথা তো শুনেই না বরং আরও সহিংস কাজকর্মে জড়িয়ে পড়ে।
৪। শারীরিক শাস্তি বিরূপ প্রভাব ফেলে
বাচ্চাকে বশে আনার জন্য শারীরিক শাস্তি প্রদান করা হোল। সে মনে করবে এটাই সঠিক পন্থা কাউকে বশে আনার ক্ষেত্রে। সে মন মানসিকতায় সহিংসতাকে সাপোর্ট করে বেড়ে উঠবে। আর তার মধ্যে ধারণা জন্মাবে যে, সবলরা দুর্বলের উপর সহিংস আচরণ করতেই পারে।
৫। লেখাপড়ায় মনোযোগ কমে যাবে
শারীরিক শাস্তির ভয়ে পড়তে বসলেও তা ঠিকমত আত্মস্থ করতে পারবে না। ফলে পড়া ভালভাবে মনে রাখতেও পারবে না। সেক্ষেত্রে স্কুলেও আশাপ্রদ রেজাল্ট করতে পারবে না। যার ফলে পড়ালেখার প্রতি অমনোযোগী হয়ে পড়বে।
৬। মিথ্যে কথা বলা শিখবে
শাস্তির ভয়ে হয়তো আপনার কাছে কথা গোপন করবে বা মিথ্যে বলবে। আর এই মিথ্যে থেকেই সকল অসততার বীজ বপন শুরু হয়ে থাকে। ফলে তার নৈতিকতার ভিত দুর্বল হয়ে গড়ে উঠবে।
৭। মা-বাবার সাথে দূরত্ব বেড়ে যাবে
অতিরিক্ত শাসন মা-বাবার সাথে সন্তানের দূরত্ব বাড়িয়ে দেয়। অনেকসময় তিক্ত সম্পর্কের সূচনা হয়। যা খুবই দুঃখজনক ব্যাপার। আর এই তিক্ত সম্পর্ক, দূরত্ব ইত্যাদির কারণে সুন্দর সাবলীল সম্পর্কগুলো নষ্ট হয়।
সুতরাং এসব সমস্যা যাতে না হয়, সেদিকে আপনার সতর্ক দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। আর এক্ষেত্রে আপনার করণীয় বিষয়গুলো, দেখে নিনঃ
১। অতি শাসন বন্ধ করুন
অতিরিক্ত কোন কিছুই ভাল না। আর তাইতো শাসনের ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করবেন না। বাচ্চার অন্যায় আচরণের জন্য তাকে বুঝিয়ে বলুন কিংবা সীমিত ভাবে শাসন করুন। কিন্তু কখনোই গায়ে হাত তুলবেন না। চেষ্টা করুন আপনার সন্তান যেন ভালবেসেই আপনার কথা শুনে, বাধ্য হয়।
২। সন্তানের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলুন
সন্তান যেন বন্ধুর মত সব কিছু আপনার সাথে শেয়ার করতে পারে, সেই আস্থার জায়গা তৈরি করুন। তার সমস্যাগুলো সমাধান করতে চেষ্টা করুন। তার সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলুন। তার মতামতের মূল্য দিতে চেষ্টা করুন।
৩। ভাললাগা-খারাপ লাগার দিকে খেয়াল রাখুন
আপনার সন্তানের ভাললাগা, খারাপ লাগা ইত্যাদির দিকে খেয়াল রাখুন। তার উপর কোন কিছু চাপিয়ে দিতে যাবেন না। মন থেকে কোন বিষয় মেনে নিতে না পারলে, সে তাতে ভালও করতে পারবে না। সুতরাং তার পছন্দ অপছন্দ গুরত্বের সাথে বিবেচনা করুন।
৪। অন্যের সাথে তুলনা করবেন না
এই পৃথিবীতে কেউই কারো মতো নয়। আর সব বাচ্চা একরকম হয় না। সেক্ষেত্রে মেধা, যোগ্যতা, দক্ষতা বিষয়ে অন্য কারো সাথে তুলনা না করাই ভাল। এসব তুলনা করলে বাচ্চা হীনম্মন্যতায় ভুগবে। বরং কিভাবে বাচ্চার যোগ্যতা, দক্ষতা বাড়ানো যায় সেদিকে সচেষ্ট হোন।
৫। অপমানসূচক কোন কথা বলবেন না
বাচ্চাকে সবার সামনে অপমানসূচক কোন কথা বলা বা গায়ে হাত তোলা থেকে বিরত থাকুন। ছোট্ট বাচ্চারা অনেক বেশি সংবেদনশীল হয়। এবং ওদেরও ভীষণ অপমানবোধ আছে। আর আপনার এই আচরণ তাকে আরও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে দিচ্ছে।
৬। বাচ্চাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে কথা শোনান
আপনার সন্তানকে বিভিন্ন বিষয়ে বকাঝকা বা গায়ে হাত না তুলে বরং বুঝিয়ে বলুন। তাকে আপনার মতো করে কেউই বোঝাতে পারবে না। তার কোন কোন আচরণ সঠিক নয়, সেটা তাকে উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিন। এবং আস্তে আস্তে তা সংশোধন করতে চেষ্টা করুন।
৭। ধৈর্য ধরে বাচ্চার ভুল শোধরাতে চেষ্টা করুন
অনেকসময় ধৈর্য ধরে মমতার পরশ দিয়ে অবাধ্য সন্তানকে বাধ্য করতে হয়। সময়ের সাথে সাথে তার ভুলগুলো শুদ্ধ করতে সচেষ্ট হতে হবে। আজ যে অবুঝ কাল সে ঠিকই বুঝতে পারবে। আর তাইতো সে যেন উদার মনের ভাল মানুষ হয়ে গড়ে উঠে সে চেষ্টা করতে হবে।
সব সম্পর্কের ক্ষেত্রেই ধৈর্য ধরে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা নিয়ে জীবনের পথে হাঁটতে হয়। এক্ষেত্রে মা-বাবা তো সন্তানের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেই থাকেন। আপনার সন্তানের ভালমন্দ সবকিছুই আপনার উপর নির্ভর করে। আর তাইতো আপনার মমতা মাখা হাতের ছোঁয়ায় সে বেড়ে উঠুক একজন শুদ্ধ মানুষরূপে।
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র সায়েন্স কিট অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স আপনার সন্তানের অবসর সময় সুন্দর করবে, এবং তার মেধা বিকাশে সাহায্য করবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
3,419 total views, 1 views today